করোনা পরিস্থিতিতে একটানা দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজের ছাত্রাবাস। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছাত্রাবাস খোলা হয়। করোনা পরীক্ষার শর্ত পূরণ করে ছাত্রাবাসে আসন পেয়েছেন মাত্র চারজন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নমুনা নেগেটিভ এলে রোববার আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এর আগে ছাত্রাবাসটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বিকেলে সাড়ে চারটার সময় এমসি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ ছাত্রাবাস খোলার পর কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাঠ করে শোনান। এরপর চারজন ছাত্র তাঁদের করোনা পরীক্ষার নমুনা নেগেটিভ দেখিয়ে ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দ নেন।
সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিন মোট চারজন ছাত্রাবাসে উঠলেও আরও ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়ে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। আগামী রোববার নাগাদ তাঁদের করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে আসন বরাদ্দ করা হবে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি ও ছাত্রাবাস কক্ষ দখল করে ধর্ষণকাণ্ডের পর এবার ছাত্রাবাস খোলার নির্দেশনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি অবলম্বন করে। গত রোববার ছাত্রাবাস খোলার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ছাত্রাবাসে উঠতে করোনার নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। নমুনা পরীক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। ছাত্রাবাসে মোট আসনসংখ্যা ৩৪৫। গত বছরের ১৭ মার্চ ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণার আগে ৩৪৫টি আসন পূর্ণ ছিল।
বিকেলে ছাত্রাবাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া চারজন দুটি কক্ষে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, করোনা নমুনা পরীক্ষার বিড়ম্বনায় তাঁদের ছাত্রাবাসে উঠতে বিলম্বিত হচ্ছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করায় এই বিড়ম্বনা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
করোনাকালে বন্ধ ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ দখল করে ছাত্রলীগের কর্মীরা সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। গত বছরের ( ২০২০) ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্রলীগের ছয় কর্মী এমসি কলেজের সামনে টিলাগড় মোড় থেকে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে তাঁর স্বামীর সামনে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলে একে একে গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগের ছয় কর্মী। ছাত্রাবাসের বাইরে থেকে সহযোগিতা করার অভিযোগে ছাত্রলীগের আরও দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দখল করা একটি কক্ষ থেকে পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি এখনো বিচারাধীন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেবল এক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ছাত্রাবাস খোলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজ প্রশাসন সূত্র। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশেষ নজরদারির জন্য সম্প্রতি কলেজের সীমানাপ্রাচীরের ভেতর মহানগর পুলিশের একটি ‘কনটেইনার বক্স’ (ফাঁড়ি) স্থাপন করা হয়েছে।
আগামী রোববার ছাত্রীনিবাসও খোলা হবে জানিয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা ও বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ বন্ধে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,