প্রকাশকঃ গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড
১ম খন্ড প্রথম প্রকাশঃ ১ লা বৈশাখ ১৩৮৫
মূল্যঃ ২৫ টাকা
২য় খন্ড প্রথম প্রকাশঃ ৩১ শ্রাবণ ১৩৯১
মূল্যঃ ৩০ টাকা
৩য় খন্ড প্রথম প্রকাশঃ কলকাতা বইমেলা, ২০০৩/মাঘ,১৪০৯
মূল্যঃ ১২০ টাকা
প্রচ্ছদ শিল্পীঃ আনন্দরূপ চক্রবর্তী
জগদীশ গুপ্ত রচনাবলী’র তিনটি খন্ডে ‘লঘু-গুরু’,
‘অসাধু সিদ্ধার্থ’, ‘মহিষী’, ‘দুলালের দোলা’, ‘তাতল
সৈকতে’, নিদ্রিত কুম্ভকর্ণ’, ‘নন্দ আর কৃষ্ণা’, ‘রোমন্থন’, ‘রতি ও বিরতি’, ‘যথাক্রমে’, ‘চৌধুরাণী’
উপন্যাস, ‘বিনোদিনী’, ‘উদয়লেখা’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘স্বনির্বাচিত গল্প সংকলন’-এর অন্তর্গত গল্প ছাড়াও আরও অনেক গল্প আছে। এছাড়া নাটক ও পদ্য আছে।
বিংশ শতকের ত্রিশের দশকে শক্তিমান কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে জগদীশ গুপ্ত ছিলেন অন্যতম।
কল্লোল যুগের সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন ভিন্ন গোত্রের।তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার
প্রবর্তন করেন। দুঃখের বিষয়, আজকের বাঙালি পাঠকের কাছে তিনি সম্পূর্ণ অচেনা।যদিও তিনি জীবিতকালেই ‘অনুপস্থিত লেখক’, অন্তরালের সাহি
ত্যিক’ প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সমস্ত রচনারাজীর মধ্যে আমরা দেখতে পাই মানুষের স্বভাবের হিংস্রতা, নীচতা,লোভ,দৈন্য,কুশ্রীতা ও নোংরামি।
রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের সমস্ত সাহিত্যের ভিত্তি ছিল
মনুষ্যত্বে বিশ্বাস। কিন্তু জগদীশ গুপ্তের সমস্ত সাহিত্য ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত।তাঁর সাহিত্যের ভিত্তি ছিল মনুষ্যত্বে অবিশ্বাস।
জগদীশ গুপ্ত ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বসূরি।
জগদীশ গুপ্তের সাহিত্য সম্বন্ধে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “প্রভাতকুমার,শরৎচন্দ্রের যৌথ প্রয়াসে যে সাহিত্যরুচি গড়ে উঠেছিল,সেই আবহাওয়ার বিরুদ্ধে সার্থক শিল্পী প্রতিবাদ জগদীশ গুপ্তের”।
এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি কল্লোলের সাহিত্যিকেরা যদি horizontal extension ঘটিয়ে থাকেন, তিনি ঘটিয়েছেন vertical extension. তিনি তাঁর সমগ্র সাহিত্যে পরিচিত মানুষের অপরিচিত রূপটি মেলে ধরেছেন। Flabert থেকে
রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত প্রত্যেকে স্বীকার করেছেন নিরাসক্ত দৃষ্টি না থাকলে মানুষের অপরিচিত রূপ দেখা যায় না। এই হল প্রকৃত সাহিত্য সৃষ্টি। এই নির্মোহ বা নিরাসক্ত দৃষ্টির পরিচয় আমরা জগদীশ
গুপ্তের সাহিত্যে পাই।এখানে আমরা একথা বলতে পারি যে ইউরোপে অমানবতন্ত্রী সাহিত্যের পত্তন
হয়েছিল ডষ্টয়েভস্কি এবং বোদলেয়ারের হাতে।
বাংলা সাহিত্যে এই বৈশিষ্ট্য আমরা সর্বপ্রথম জগদীশ গুপ্তের সাহিত্যে দেখতে পাই।
জগদীশ গুপ্তের সাহিত্য সম্বন্ধে অধ্যাপক অনিলবরণ রায়,মোহিতলাল মজুমদার, ভূদেব চৌধুরী, সুকুমার সেন প্রভৃতি সমালোচকগণ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
জগদীশ গুপ্ত বহু গল্প, উপন্যাস ও কবিতা লিখেছেন। এবং এগুলি আনন্দবাজার পত্রিকা,
যুগান্তর, উত্তরা,প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বিজলী,বঙ্গশ্রী,
বসুমতী,প্রবর্তক প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।যদিও তিনি মূলতঃ ‘কালি কলম-এর লেখক ছিলেন।
এই স্বল্প-পরিসরে জগদীশ গুপ্তের সমস্ত সাহিত্য তুলে ধরা অসম্ভব। এখানে বিভিন্ন চরিত্রের কিছু ছোট গল্প শুধু পাঠকের সামনে তুলে ধরব।
জগদীশ গুপ্তের প্রথম গল্প ‘পেয়িং গেষ্ট’ বিজলী পত্রিকায় বাংলা ১৩৩১ সালের ২৯ শে ফাল্গুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। যদিও এই গল্পটি প্রকাশের আগে ১৩১৮ সালের ‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘মির্জার
স্বপ্নদর্শন’ নামে একটি অনুবাদ গল্প প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রথম গল্প সংকলন ‘বিনোদিনী’ ১৩৩৪ সালে পৌষ মাসে ‘দি মডেল লিথো এ্যান্ড প্রিন্টিং ওয়ার্কস’ ৬৬/১, বৈঠকখানা রোড,কলিকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
দুঃখের বিষয় এই বই অবিক্রীত থেকে যায়।তিনি নিজেই এক জায়গায় বলেছেন,”কানুবাবু যথাসময়ে টাকাটা দিলেন-‘বিনোদিনী’ গল্পের বই
ছাপা হইল।
৩০/৩৫ খানা বই এঁকে ওঁকে দিলাম।অবশিষ্ট হাজার খানেক বই আমার আর কানুবাবুর ‘বিনোদিনী’ প্যাকিং বাক্সের ভিতর রহিয়া গেল,পরে কীটে খাইল।”
কিন্তু এই প্রথম গল্প সংকলনটি তখনকার দিনে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের কাছে যথেষ্ট সমাদর পায়।
এই সংকলনটিতে তাঁর আশ্চর্য শক্তির পরিচয় আমরা পাই।
‘বিনোদিনী’ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন,”ছোটগল্পের
বিশেষ রূপ ও রস তোমার লেখায় পরিস্ফুট দেখিয়া সুখী হইলাম।” কবিশেখর কালিদাস রায় বলেন,”রূপে রসে অদ্বিতীয়।” কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার বলেন,”গল্প সাহিত্যে ‘বিনোদিনী’র স্হান বহু উর্ধ্বে।” এছাড়া কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক, ডঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রভৃতি কবি ও সাহিত্যিকেরা এই বইটি পড়ে যথেষ্ট প্রশংসা করেন।
‘বিনোদিনী’ গ্রন্থে দশটি গল্প স্হান পায়। এর পরের গল্প সংকলন ‘উদয় লেখা’।এটি ১৩৩৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
জগদীশ গুপ্তের কিছু গল্পে নিয়তিবাদ বা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসের পরিচয় আমরা পাই। এই গল্পগুলিতে আমরা দেখতে পাই মানুষের অলক্ষ্যে
অদৃশ্য কোন এক শক্তি ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে।
মানুষ যতই এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবার চেষ্টা করুক না কেন নিষ্ঠুর নিয়তির অঙ্গুলি হেলনে পরাজিত হচ্ছে। এই নিয়তির হাতে মানুষের সুখ-শান্তি সব কিছুই বিসর্জন দিতে হচ্ছে।
‘ভরা সুখে’ গল্পে দুটি ছেলের ছত্রিশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে গাঙ্গুলীর একান্ত সংসার।সবার ওপরে মা,হরমোহিনী।তিনি পথ্য গ্রহণ করছেন। সবাই সামনে দাঁড়িয়ে। পথ্যের রুটি মুখে ধরা রইল।গঙ্গাধর নাড়ী টিপে বলল,”মা আর নেই।”
‘অন্নদার অভিশাপে’ আত্মসম্মান রক্ষার জন্যে গুরু
চাকরিতে জবাব দেয়। দুুটো অন্নের জন্যে স্ত্রী’কে
নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে লাঞ্ছনা ভোগ করে।
অবশেষে মনের ধিক্কারে খ্রিস্টান হয় ও মিশনারী
স্কুলে চাকরি পায়।
‘এইবার লোকে ঠিক বলে’ গল্পে শিবপ্রিয় সুখের সংসার ছেড়ে সাধুর লোভে পা দেয়। অবশেষে সাধু
তাকে সর্বস্বান্ত করার পর সে ফিরে আসে। স্ত্রী ততদিনে মিথ্যা কলঙ্কে আত্মহত্যা করেছে।অবশেষে শিবপ্রিয় পাগল হয়ে যায়।
‘দিবসের শেষে’ গল্পে রতি নাপিতের পাঁচ বছরের ছেলে পাঁচু একদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে তার মা’কে জানায়,”মা,আজ আমায় কুমিরে নেবে।” সারাদিন তাকে চোখে চোখে রাখা হয়।
বিকেলে কামদা নদীতে গা ধুতে গেলে কুমিরে তাকে টেনে নেয়।
‘সবার শেষে গয়া’ গল্পে গয়ামণি ও রামের পুত্র
লব সর্পাঘাতে মারা যায়।যে গর্ত দিয়ে সাপ বেরিয়েছিল গয়ামণি সেখানে মাথা দিয়ে ঘুমোয়।কিন্তু সাপ তাকে কামড়ায় না।অবশেষে ফুল্লরার জলে সে নিজেকে বিসর্জন দেয়।
‘সত্যশিবের বিয়ে ও বৌ’ গল্পে সুশীলাসুন্দরী ছেলের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়।পুত্রবধূর হাতে
সেবা পাবে এই তার মনের একান্ত ইচ্ছা।অবশেষে একদিন ঝগড়া হয়।ছেলে বৌয়ের পক্ষ নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে।
‘যাহা ঘটিল তাহাই সত্য’ গল্পে জ্যোতিষী চন্দ্রিকার
দ্বিতীয় সন্তানের দীর্ঘ আয়ুর কথা জানাবার পর চন্দ্রিকা ওপরে ওঠে।দেখে ছোট খোকার শ্বাসের কোন লক্ষ্মণ নেই। বুকের ওপর সাদা কাঁথাটায়
প্রথম পুত্র দেড় বছরের মণ্টুর পায়ের ছাপ।
জগদীশ গুপ্তের কিছু গল্পে আমরা মানুষের আগ্রাসী
লোভের সন্ধান পাই।
‘প্রলয়ঙ্কর ষষ্ঠী’ গল্পে ধনী সদুখাঁ প্রতারণার সাহায্যে
জসীমের বউকে ঘরে এনে তোলে।তাকে নিয়ে দাঙ্গাও হয়।কিন্তু দরিদ্র জসীমের বৌ ধনী সধুখাঁর
ঘর ছেড়ে আর স্বামীর ঘরে যেতে চাইল না।
‘পয়োমুখম’ গল্পে কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত পুত্র ভূতনাথের পর পর দুটি স্ত্রী’কে চিকিৎসার ছলে কলেরার বিষ খাইয়ে হত্যা করে। তিনবার বিয়ে দিয়ে তিনবার পণ আদায় করে।তৃতীয় বধূটি কালো
বলে তার বাবার কাছ থেকে মাসে মাসে দশ টাকা
করে জরিমানা আদায় করত।এই বউটিকেও মেরে
ফেলার ষড়যন্ত্র হয়।কিন্তু সে পুত্রের সতর্কতায় বেঁচে
যায়।ভূতনাথ বাবাকে বলে,’ঐ বৌটার পরমায়ু আছে।তাই কলেরায় মরল না বাবা।…পারেন তো নিজেকেই মেরে ফেলুন।
‘রাণী শান্তমণি’ গল্পে শান্তমণির মালিক অক্ষয় তার বিরাট সম্পত্তি ভায়রাভাই যজ্ঞেশ্বরকে দিয়ে যায়।
শর্ত থাকে শান্তমণি যতদিন জীবিত থাকবে যজ্ঞেশ্বর ততদিন এই সম্পত্তির অধিকারী থাকবে।
মৃত্যুর পর অক্ষয়ের ভাই অনন্ত মালিক হবে। কিন্তু
শান্তমণি নামক বিড়ালটিকে প্রহার করার অপরাধে
যজ্ঞেশ্বর সপত্তির মালিকানা হারায়। অনন্ত অধিকারী হয়।এরপর একপক্ষের শান্তমণিকে মেরে ফেলার চেষ্টা ও অপরপক্ষের বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা।
‘মায়ের মৃত্যুর দিনে’ গল্পে’ কেশবলাল ছটফট করছে। কেননা সে চায় তার ছোট রামলাল বাইরে থেকে আসার আগেই যেন মায়ের মৃত্যু হয়। তাহলে মায়ের সমস্ত সম্পত্তি সে হস্তগত করতে পারবে। ছোট ভাইকে ভাগ দিতে হবে না।
‘চন্দ্র-সূর্য যতোদিন’ গল্পে দীনতারণ শ্বশুর স্বরূপচন্দ্রের সম্পত্তির লোভে শ্যালিকা প্রফুল্লকে
বিয়ে করে।
মানুষের স্বভাবের হিংস্রতা, নীচতা,নোংরামির পরিচয়ও আমরা জগদীশ গুপ্তের গল্পে পাই।
‘পামর’ গল্পে অপদার্থ পুত্র তমাল কুঁড়ে ও আয়েসি।
পিতার অসুস্থতা ও পিতার মৃত্যু সংবাদ বহন করে
অর্থ সংগ্রহে সচেষ্ট। এই সংবাদে মর্মাহত হয়ে পিতা রাজীবলোচন বসু নিরুদ্দেশ হন।’কলঙ্কিত সম্পর্ক’ গল্পে নারীহরণের দায়ে জেল খাটার পর সাতকড়ি বাড়ি ফিরে এলে স্ত্রী মাখনবালা তার কাছে যেতে অস্বীকার করে।দুশ্চরিত্র স্বামীর জন্যে মাখনের অন্তরে ঘৃণার জন্ম হয়। কিন্তু শ্বাশুড়ি ছেলের এই চরিত্রহীনতার জন্য মাখনকে দায়ী করে ও তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
‘গতিহারা জাহ্নবী’ গল্পে কিশোরীর স্বামী অকিঞ্চন
বাসর ঘরে স্ত্রী’র সইকে দেখে পুলকিত হয় এবং মনে মনে তাকে বিছানায় কামনাও করে।কিশোরী এরপর বাপের বাড়ি চলে যায় ও স্বামীকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
‘আদিকথার একটি’ গল্পে সুবল বিধবা কাঞ্চনের শিশুকন্যা খুশিকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে কেননা
কাঞ্চনকে ভোগ করার ইচ্ছা তার মনে বিচরণশীল।
এ প্রসঙ্গে নবোকভের ‘লোলিতা’কে মনে পড়ে যায়।
‘পারাপার’ গল্পে ডোমের ঝি ‘সতী’ বাবুদের বাড়ি পা দিয়ে বাবুর জুতো সারিয়েছে বলে অপমানিত হয়।
সেই বাবুই গোপন অভিসারে ডোমকন্যার গা স্পর্শ করে।
‘পৃষ্ঠে শরলেশ’ গল্পে পুত্রের জন্যে নির্বাচিতা পাত্রীর
রূপে মুগ্ধ হয়ে পিতা তাকে বিয়ে করে।
‘লোকনাথের তামসিকতা’ গল্পে বাবা ছেলের জন্যে
সুন্দরী পাত্রী নির্বাচন করার পরেও তাকে বাতিল করে দেয়। কেননা এর পিছনে তীব্র ঈর্ষা কাজ করে।নিজের স্ত্রী যখন সুন্দরী নয়,তখন পুত্রবধূ
সুন্দরী হবে কেন?অবশেষে কালো মেয়ের সঙ্গেই পুত্রের বিয়ে হয়।
এছাড়া ‘পেয়িংগেষ্ট,’ ‘কর্ণধর পালের গমন ও আগমন’,’গণেশ সেনের ক্লেশ ও আয়েশ’, ‘ঊর্মিলার
মন, ‘গুরুদয়ালের অপরাধ’,’প্রতিক্রিয়া’,’শ্যামাচরণের
অনুষ্ঠ’, ‘ঠিকানায় বুধবার’, ‘দুঃসহ’ গল্পগুলিতে হিংস্রতা,নীচতা,নোংরামির পরিচয় পাই।
জগদীশ গুপ্তের কিছু গল্পে আমরা অভিযোগ আনতে পারি।আমরা জানি কাহিনি আপন গতিতে
এগিয়ে চলে।কিন্তু কিছু গল্পে আমরা দেখতে পাই
লেখক কিছু ঘটনা যেন জোর করে গল্পে চাপিয়ে দিয়েছেন।যেমন কামদা নদীতে কোনদিন কুমির দেখতে পাওয়া যায় নি।পাঁচু কুমিরে নেওয়ার কথা জানালে নদীতে কুমির ভেসে ওঠে ও তাকে ধরে
(দিবসের শেষে)। দেড় বছরের মন্টু জ্যোতিষীর ভবিষ্যৎবাণী ঘোষণা করার সময়েই তার ছোট ভাইকে হত্যা করে(যাহা ঘটিল তাহাই সত্য)। দেড় বছরের শিশুর মনে হত্যার আকাঙ্খা আমাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক করে।সীতাপতির মৃত্যুর পর
নাতির রক্ত চুষে খাওয়া (তৃষিত আত্মা),রতিকান্তের প্রেতযোনি প্রাপ্তি হরেন্দ্রের রটনা(প্রতিক্রিয়া) আমাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক করে।
এই ত্রুটি সত্বেও বলতে হয় জগদীশ গুপ্তই সর্বপ্রথম জটিল কুটিল মানব মনের সন্ধান দিয়েছেন।কল্লোল যুগ তথা বাংলা সাহিত্যে তিনি সর্বপ্রথম এই কৃতিত্বের অধিকারী।
জগদীশ গুপ্তের এই তিন খন্ডের রচনাবলী’তে বেশ
কিছু গল্প বাদ গিয়েছে।
ছাপা, বাঁধাই খারাপ নয়।তবে এই বই এখন হয়তো নতুন পাওয়া যায় না।কিন্তু আগ্রহী পাঠক কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানে খুঁজলে পেতে পারেন।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া
শোভন শেঠ
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ২৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,