Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অনেক অনেক শ্রদ্ধা মধুসূদন দত্তকে

Share on Facebook

প্রসঙ্গ – মধুসূদন
নির্মাল্য ব্যানার্জ্জীর লেখায়।

শ্রী মধুসূদন দত্তকে মাইকেল বলবো না । কারণ সব শেষে নিজের এপিটাফ-এ তিনি শ্রীমধুসূদন । তাঁর সম্পর্কে অনেক তথ্যই আপনাদের জানা আছে । কাজেই অকারণে তাঁর ওপর “রচনা” লিখতে বসবো না । শুধু একটু মনে করবো, ১৮২৪ সালে জন্মানো এই বিপথগামী জিনিয়াসকে ।

তাঁর মূল্যায়ন বোধ হয় এখনও আমরা ঠিক মতো করতে পারিনি । অসাধারণ তাঁর প্রতিভা । এক সাথে তিনজন কলমচিকে বসিয়ে ডিকটেশন দিয়ে কাব্যগ্রন্থ লেখানো – এই ক্ষমতা গোটা বিশ্বে আর কখনো কারোর ছিল বলে আমার জানা নেই । তাঁর কবিতা নিঃসন্দেহে অসাধারণ । কিন্তু স্যাটায়ার ধর্মী সাহিত্যে তিনি যে দুর্লভ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তা বিস্ময়কর ! দুর্ভাগ্য, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা তাঁর জীবনকে শেষ করে দেয় । সম্ভবত তাঁর জমিদারী বংশের রক্ত এর জন্যে দায়ী ।

যখন তিনি খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করায় সমাজে ভীষণ রকমের একা তখনও তাঁর বাবা তাঁকে মাসে একশো টাকা পাঠাতেন । তাঁর মাও গোপনে টাকা পাঠাতেন । সেই সময়ে অনেক সরকারী আমলার রোজগার মাসে একশো টাকা হতো না । কলেজ পড়ুয়া একটা ছেলের কাছে সেই টাকা যথেষ্ট । কিন্তু মধুসূদনের কাছে তা অতি সামান্য । কারণ তাঁর নিজের মতে, বছরে চল্লিশ হাজার টাকার কমে ভদ্রভাবে জীবনযাপন করা যায় না ।

তাঁর প্রথম বই “ক্যাপটিভ লেডি” । এই সময় তিনি ম্যাড্রাসে । এখন যার নাম চেন্নাই । এই বইটি প্রকাশ করে তার দাম ধার্য্য হয় দু’টাকা । প্রচুর প্রশংসা পেলেন কিন্তু বিক্রীর কোন নাম গন্ধ নেই । পরে “ম্যাড্রাস সারকুলেটর” নামক পত্রিকায় – “টিমোথি পেনপোয়েম” – এই ছদ্মনামে ক্যাপটিভ লেডি প্রকাশ পায় ।

মধুসূদন অনেককে বই পাঠিয়েছিলেন । তার মধ্যে বিখ্যাত বেথুন সাহেবও ছিলেন । বেথুন সাহেব কিন্তু বই পড়ে তাঁকে পরামর্শ দেন – বাংলায় লিখতে । সেই সময় তিনি বহু ভাষার চর্চা করতেন । অদ্ভুত সেই রুটিন । ৬টা থেকে ৮টা হিব্রু, ৮টা থেকে ১২টা স্কুল, ১২টা থেকে ২টো গ্রীক, ২টো থেকে পাঁচটা তেলেগু ও সংস্কৃত, পাঁচটা থেকে সাতটা ল্যাটিন আর সাতটা থেকে দশটা ইংরিজী । শুধু চর্চা হতো না বাংলা । তাই এই সময় তিনি এক বন্ধুকে লিখেছিলেন, পারলে কৃত্তিবাসী রামায়ণ আর কাশিদাসী মহাভারত পাঠাতে । কারণ – বাংলা তিনি ভুলে যাচ্ছেন ।

এর কিছুকাল পরে তিনি কলকাতা ফিরলেন । সেইসময় পাইকপাড়ার রাজারা “রত্নাবলী” নামে একটা নাটক মঞ্চস্থ করান । সে নাটক দেখতে আসবেন সাহেবরা । তাই তার ইংরিজী অনুবাদ করানোর জন্যে ডাক পেলেন মধুসূদন । অনুবাদ সকলের পছন্দ হলো । কিন্তু নাটকটা মধুসূদনের পছন্দ হলো না । তাই তিনি নিজে লিখতে শুরু করলেন বাংলা নাটক “শর্মিষ্ঠা” । নাটক লেখা হলো । এবং তা মঞ্চস্থও হলো । উচ্চ প্রশংসা পেলেন তিনি । সেই নাটকের গোড়ায় একটা বাংলা কবিতা লিখলেন তিনি । তার একটি লাইন আপনারা অনেকবার শুনেছেন । কিন্তু অনেকেই জানেন না সেটি মধুসূদনের লেখা ।

“কোথায় বাল্মীকি, ব্যাস, কোথা তব কালিদাস, / কোথা ভবভূতি মহোদয় । / অলীক কুনাট্য রঙ্গে মজে লোক রাঢ়ে, বঙ্গে / নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয় ।”

এর পরেই তিনি লেখেন দুটি প্রহসন । তাঁর লেখা এই দুটি বই “একেই কি বলে সভ্যতা” আর “বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ” – যাঁরা সাহিত্য ভালোবাসেন তাঁদের অবশ্যপাঠ্য । অনবদ্য বললে কম বলা হবে । প্রথমটায় ইংরেজদের অনুকরণকারী নব্যযুবকদের ব্যঙ্গ করেন । যদিও তিনি নিজেই সেই দলের অন্যতম ছিলেন । দ্বিতীয়টি – সমাজের প্রাচীনপন্থী লোকজনের নষ্টামিকে ব্যঙ্গ ।

এই সময়েই মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সাথে তাঁর তর্ক বাধে বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ লেখা নিয়ে । মহারাজা বলেন সম্ভব নয় । আর মধুসূদন বলেন, আমি লিখে দেখাবো । যতীন্দ্রমোহন বললেন, যদি পারেন, আমি নিজের খরচে তাকে ছাপিয়ে দেবো ।

কিছুদিনের মধ্যেই মধুসূদন লিখে পাঠালেন – “তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য” । আগাগোড়া অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা । মহারাজা তাঁর কথা রাখলেন ।

তিলোত্তমার সাথে সাথেই লিখলেন “ব্রজাঙ্গনা” । এরপর তিনি লিখলেন – লিখলেন বললে ভুল হবে । তিনি পায়চারী করতে করতে ডিকটেশান দিতে লাগলেন আর তা লেখা হতে লাগল । লেখা হলো বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি – “মেঘনাদ বধ কাব্য” । আর এই বইটি প্রকাশ পেলো ১৮৬১ সালে । ঠিক যে বছর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্ম হয় একটি শিশুর – যার নাম ছিল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । বিপুল জনপ্রিয়তা পেল বইটি । আবার অনেকে বিদ্রুপ করতেও ছাড়েনি । অনেকে তাঁর লেখাকে ব্যঙ্গ করে বলেছে – টেবিলিলা সূত্রধর, কাপড়িলা তাঁতি ।

এই সময় মেঘনাদ বধ কাব্যকে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছিল একটি বই । স্বামী বিবেকানন্দ তার সম্পর্কে লিখছেন – “এই যে মেঘনাদ বধ কাব্যকে ব্যঙ্গ করে ছুছুন্দর বধ কাব্য লিখেছে, একে কেউ মনে রাখবে ভেবেছিস ?” কিন্তু মেঘনাদ বধ কাব্য সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন – এটি কালজয়ী হবে ।

দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ এর ইংরিজী অনুবাদ করেছিলেন এই মধুসূদনই । যদিও সেটি রেভারেন্ড লং এর নাম দিয়ে প্রচার হয় ।

এত প্রতিভা তাঁর । কিন্তু কোথায় যেন এক সর্বনাশের বীজ লুকিয়ে ছিল তাঁর মধ্যে ! যে বিদ্যাসাগরের সাহায্যে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করে দেশে ফিরতে পারলেন, বিলেত থেকে ফেরার সময় সেই বিদ্যাসাগর তাঁর জন্যে বাড়ি ভাড়া করে রাখলেন । তিনি অক্লেশে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে হোটেলে গিয়ে উঠলেন । কারণ -নেটিভ পাড়ায় তিনি কখনও থাকতে পারেন ! তাঁকে শ্রী মধুসূদন লিখেছিলেন বলে বিদ্যাসাগরের চিঠি তিনি না পড়ে ফেরত পাঠিয়েছেন ।

ব্যারিস্টারি জীবনের প্রথম বছরে তাঁর মাসিক আয় ছিল দেড় থেকে দু’ হাজার টাকা । সেকালের হিসেবে অনেক টাকা । কিন্তু অসম্ভব উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের ফলে তা কর্পূরের মতো উবে যেত । স্পেনসার্স হোটেলে একা তিনখানা ঘর নিয়ে তিনি থাকেন । প্রতি মাসে ফ্রান্সে টাকা পাঠাতে হয় । আর বন্ধু এবং বন্ধুর ভান করা অজস্র লোক তাঁর পয়সায় পানাহার করে । কাজেই টাকার অভাব আর ধার করা চলতেই থাকে । আর টাকা ফুরোলেই মনে পড়ে “ভিদ্” অর্থাৎ বিদ্যাসাগরকে ।

এবং বিদ্যাসাগর এতো কিছুর পরেও তাঁকে অর্থসাহায্য করেছেন । কারণ ? গল্প শুনেছিলাম, এক মাতাল নাকি খেয়াল করে মাইকেল এসে বিদ্যাসাগরের কাছে টাকা নেয়, আর তারপর সোজা চলে যায় আবগারীর দোকানে । সেও এসে বিদ্যসাগরকে ধরে । তুমি মাইকেলকে মদ খাওয়ার টাকা দাও, আমাকেও দিতে হবে । বিদ্যাসাগর তাই শুনে বলেন – তুমি মেঘনাদ বধের মতো একটা কাব্য লিখে আনো, তোমাকেও দেবো ।

শেষ অবধি ১৮৭৩ সালে চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে আলিপুর দাতব্য হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় । এই প্রতিভাধর কবি-সাহিত্যিকের মৃত্যুদিন – ২৯শে জুন । তাঁর প্রতি আমার প্রণাম রইল । মৃত্যুর আগে তিনি বারবার আবৃত্তি করতেন – ম্যাকবেথ এর কয়েকটি লাইন । মনে পড়ছে সেই লাইনগুলোই –

“Life’s but a walking shadow, a poor player,
That struts and frets his hour upon the stage,
And then is heard no more. It is a tale
Told by an idiot, full of sound and fury,
Signifying nothing.”

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: জুন ২৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ