করোনা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি আগের চেয়ে সংকুচিত হয়েছে। ওই সব দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি ২০২১ সালে এসব বড় অর্থনীতির দেশে প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।
বড় অর্থনীতিগুলো এগিয়ে গেলে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। আইএমএফ বলছে, বড় অর্থনীতিগুলো আগামী বছর নাগাদ প্রাক্–মহামারি পর্যায়ে ফিরে যাবে। আর উন্নয়নশীল দেশগুলো ২০২৪ সালেও সেই পর্যায়ে যেতে পারবে না।
তবে আইএমএফ বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক পূর্বাভাসই দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এ বছর দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে মালদ্বীপ ও ভারত।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির এবারের প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো ‘মহামারির সময় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার’। আইএমএফ অবশ্য অর্থবছর নয়, পঞ্জিকাবর্ষ ধরে অর্থাৎ জানুয়ারি-ডিসেম্বর এভাবে হিসাব করে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গড় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গতবার তা মাইনাস ৩ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ব এক প্রলম্বিত অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। মহামারি দীর্ঘ হওয়ার কারণেই অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ অনিশ্চয়তার জের আগামী বছরেও কিছুটা থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে তা কমে আসবে।
আইএমএফ বলেছে, উন্নত অর্থনীতি ২০২২ সালের মধ্যে প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফিরবে। এমনকি ২০২৪ সালের মধ্যে তা থেকে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ এগিয়ে যাবে। অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ২০২৪ সালেও প্রাক্-মহামারি সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে। ফলে এসব দেশের মানুষের জীবনমান অনেকটাই পিছিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেন গীতা গোপীনাথ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আগে হবে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরে হবে। কারণ, উন্নয়নশীল দেশে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদানের গতি এখনো শ্লথ। এ ছাড়া তেল, গ্যাসসহ বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, যা বিনিয়োগকে অনিশ্চয়তায় ফেলছে।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তৃতীয়
সরকারি তথ্য-উপাত্ত বলছে, করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো করেছে। আইএমএফের পূর্বাভাস হলো, চলতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে মালদ্বীপে—১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, এরপর ভারতে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এ ছাড়া পাকিস্তান ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ১ দশমিক ৮ এবং ভুটানে মাইনাস ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে আফগানিস্তানের জন্য কোনো পূর্বাভাস দেয়নি আইএমএফ।
বাংলাদেশ সম্পর্কে আইএমএফের পূর্বাভাস অবাস্তব মনে করেন না জাহিদ হোসেন। তাঁর মতে, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমিয়ে দেয়।
বড় বড় উন্নয়ন সহযোগীরাও এবার বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ৭ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
বড়দের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর
করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানের মতো দেশে ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। চলতি বছরে এ নেতিবাচক ধারা কাটিয়ে এসব দেশে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি সংকুচিত হয়েছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে। গতবার যুক্তরাজ্য ও জার্মানির প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক ছিল। এবার যুক্তরাজ্যের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জার্মানির ৩ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।
অন্যদিকে করোনার উৎসস্থল চীনের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন হবে বলে মনে করছে আইএমএফ। দেশটির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আর এশিয়ার আরেক শক্তিশালী অর্থনীতি জাপানের প্রবৃদ্ধিও বেড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,