Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আজকের চেঙ্গিস খানের মঙ্গোলিয়া (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: কাজী আলিম-উজ-জামান।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মঙ্গোলিয়ার খবর কম আসে। আয়তনে বড়, জনসংখ্যায় ছোট মঙ্গোলিয়া যেন পৃথিবীর মানচিত্রে থেকেও নেই। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটির ভূমিকা বিশেষ সরব নয়। কারণ, মঙ্গোলিয়া অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ নয়। দেশটির উত্তরে রাশিয়া আর দক্ষিণে চীন। ওই দুটি ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যই মঙ্গোলিয়ার অর্থনীতির টিকে থাকার অন্যতম উপায়।

অনেক পর্যটকের কাছেই মঙ্গোলিয়া একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির পর এ খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। চীনের ‘জিরো-কোভিড নীতি’র কারণে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় বন্ধ ছিল। অপর দিকে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর ক্রেমলিনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই বললেই চলে।

মঙ্গোলিয়ার চারদিকে স্থলভাগ। গত বছরের হিসাবে, মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখের কিছু বেশি। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বাস করে রাজধানী উলানবাটোরে। মুদ্রার নাম তুগরিক। একটি ডলার পেতে খরচ করতে হয় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ তুগরিক। সব মিলে মঙ্গোলিয়া ভালো নেই।

৬ ডিসেম্বর মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে নেমেছিলেন। রাজধানীতে সেদিন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জমে যাওয়া আবহাওয়ার মধ্যে মোটা কাপড়চোপড় পরে যাঁরা কেন্দ্রীয় সুখবাতার স্কয়ারে প্ল্যাকার্ড হাতে নেমেছিলেন, তাঁদের প্রধান দাবি ছিল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার এবং দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ছিল বায়ুদূষণ, উচ্চ কর ও তীব্র বেকারত্ব থেকে মুক্তি। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ভেঙে পড়া থেকে আমাদের দেশটাকে রক্ষা করুন’।

কেবল শহরবাসীই নয়, অনেক পশুপালকও বিক্ষোভে অংশ নিতে সেদিন রাজধানীতে গিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীরা সেদিন পুলিশের অবরোধ ভেঙে সরকারি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। বেশ কিছু জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। বিক্ষোভকারীদের গন্তব্য ছিল ইখ তেনজার এলাকা, যেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ি অবস্থিত। এ সময় পুলিশ তাড়াতাড়ি করে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কয়েক ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা সুখবাতার স্কয়ার ছেড়ে চলে যান।

মূলত দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয় ৫ ডিসেম্বর। চলে টানা ১০ ডিসেম্বর অবধি। বিক্ষোভে অংশ নেন মূলত তরুণেরা, সঙ্গে আরও নানা শ্রেণির মানুষ ছিলেন। দেশটির সাংস্কৃতিক কর্মীরাও তরুণদের আন্দোলনে শামিল হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে অংশ নেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। আয়োজকেরা সফল হয়েছেন। শিগগিরই নতুন করে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন পর্যবেক্ষকেরা।
মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশের ওপরে

মঙ্গোলিয়ার অর্থনীতি এখন খুব খারাপ সময় পার করছে। মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১৫ শতাংশে। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর থেকে মূলত এমন দুর্দশা শুরু। এরপর চীনের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য কমে যাওয়া সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে।

দেশটির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘কারিতাস চেক রিপাবলিকে’র কান্ট্রি ডিরেক্টর জানা জিলকোভা। তিনি বলছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে মানুষ খুব দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। তারা ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত, কারণ তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দেশের সম্পদ রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হবে।’

দেশটির সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লাখনি কোম্পানি এরদেনেস তাভান তলগোই। এদের খনিতে মজুত আছে সাড়ে ৭ বিলিয়ন টন ‘কোকিং কয়লা’, ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়ায় এই উপাদানটি খুবই প্রয়োজনীয়। দেশটির রাজস্ব বাজেটের বড় অংশই এই খাত থেকে আসে। গত মাসে মঙ্গোলিয়ার দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীসহ অন্তত ৩০ জন কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ এখন অবধি পাওয়া যায়নি।

মঙ্গোলিয়া তার মোট রপ্তানির ৮৬ শতাংশ করে চীনে। রপ্তানি পণ্যের বড় অংশটিই কয়লা। দেশটির জিডিপির এক-চতুর্থাংশ আসে খনিজ সম্পদ রপ্তানি থেকে। অভিযোগ রয়েছে, দেশটির কিছু আইনপ্রণেতা, কয়লাশিল্পের সঙ্গে যাঁদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তাঁরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছেন। কেউ কেউ গোপনে চীনের সঙ্গে কয়লা ব্যবসায় জড়িত থেকে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। এসব কারণে সাধারণ জনগণের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
খনিজ সম্পদে বিদেশিদের আগ্রহ

মঙ্গলদের জাতির পিতা চেঙ্গিস খান। ১২০০ সালের শুরুর দিকে তিনি সব মঙ্গল গোত্রপ্রধানকে একত্র করেন। এরপর সাম্রাজ্য বাড়ানোর জন্য শুরু করেন একের পর এক অভিযান। একসময়ে চেঙ্গিস খান, তাঁর সন্তান ও নাতিপুতিরা হয়ে ওঠেন অর্ধবিশ্বের অধিপতি। চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান তো চীনের প্রাচীর পেরিয়ে চীনও দখল করে নিয়েছিলেন। কিন্তু কবির ভাষায়, ‘চিরদিন কাহারো দিন সমান নাহি যায়’। কমে যায় চেঙ্গিসের বংশধরদের ঘোড়ার খটখট আওয়াজ। ১৬৯১ সালে মঙ্গোলিয়া চীনের কিং রাজাদের শাসনাধীনে আসে। ১৯২১ সালে দেশটি চীনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। মূলত দেশটির দক্ষিণ অংশ, যেটি পরিচিত ইনার মঙ্গোলিয়া নামে, তা চীনের অধীনেই থাকে। আর উত্তর অংশ স্বাধীন হয় মঙ্গোলিয়া নামে। স্বাধীনতার পরও দেশটিতে কঠোর রুশ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। একদলীয় কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে শাসিত হতে থাকে দেশটি।

১৯৯০ সালের পর থেকে মঙ্গোলিয়ায় এক ধরনের নতুন যুগের সূচনা হয়। ওই বছর দেশটিতে ৭০ বছর ধরে চলে আসা সোভিয়েত ধরনের একদলীয় শাসন বাতিল হয়। সূচনা হয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৯২ সালে পাস হয় প্রথম সংবিধান।

পাশাপাশি দেশটির মাটির নিচে পড়ে থাকা বিপুল খনিজ সম্পদের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। মঙ্গোলিয়ার ছোট্ট অর্থনীতির পালে কিছুটা হাওয়া-বাতাস লাগতে থাকে। কিন্তু একে ঘিরে পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বিবাদ শুরু হয়। পরবর্তী সময়েও সরকারও দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে। কিন্তু কখনো কখনো তা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো হয়ে দাঁড়ায়।
গণতন্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা কম

মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট উখনা খুরেলসুখ। গত জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য এক গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে আচমকা পদত্যাগ করে বসেন। এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মঙ্গোলিয়ান পিপলস পার্টির (এমপিপি) এই নেতা প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

ওই নির্বাচনে আরও দুটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত শতকের ৯০-এর পর কাগজে-কলমে মঙ্গোলিয়ার গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলেও দেশটির অভিজাতরা বরাবরই এই এমপিপিকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তাই নির্বাচনে বাকি দুটি দলের অংশগ্রহণ ছিল অনেকটা এমপিপির বিজয়কে বৈধতা দেওয়ার জন্যই। এই অভিজাতরা চীনে পণ্য রপ্তানি করে ধনী হতে পারলেই তৃপ্ত, গণতন্ত্র নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কম।

এমপিপি দলটি মূলত ৯০-পূর্ববর্তী সময়ে কমিউনিস্ট শাসিত দলটিরই উত্তরসূরি। অপর দিকে প্রেসিডেন্ট খুরেলসুখ রাশিয়া-চীন উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক জোরদার করার নীতি নিয়ে চলেন। তাঁর জন্য একদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ কম।
ভালো নেই পশুপালকেরা

জনসংখ্যার অন্তত ৩০ শতাংশ যাযাবর, যারা পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। যাযাবরদের ঘর স্থানীয়ভাবে ‘গের’ নামে পরিচিত। এটি দেখতে বৃত্তাকার তাঁবুর মতো। বহনযোগ্য এক কক্ষের এ ঘরের মধ্যে রান্নার চুলা থেকে শুরু করে টেলিভিশন, কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম রাখে তারা।

পশুপালন মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্য। সাম্প্রতিক বিক্ষোভে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে যাযাবর শ্রেণির মানুষেরা যোগ দিয়েছিলেন, সে কথা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু তারা কেন বিক্ষোভে যোগ দিলেন, সে কথায় আসা যাক।

রাজধানী উলানবাটোর থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পশ্চিমে সাখির উপত্যকাই মূলত পশুপালনের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে পরিচিত স্থান। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানকার অনেক স্থানেই ঘাস কমে গেছে। কারণ অনাবৃষ্টি। প্রবল হয়েছে পানির সংকট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতকালীন ঝড়। সব মিলে দেশটির ১১ লাখ যাযাবর মানুষের আয়রোজগার প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে দেওয়ার দশা হয়েছে এখন। অনেকেই শহরে এসে বসবাস শুরু করেছেন।

উত্তরে রাশিয়া আর দক্ষিণে চীন—কোনো দিক থেকেই তাদের জন্য বিশেষ সুখবর নেই। চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকায় মেষ, ইয়াক ও ভেড়ার লোমের দাম এ বছর সর্বনিম্ন। হরিণের শিংয়ের দাম নেমে এসেছে ৬ ডলারে। মঙ্গোলিয়ার একশ্রেণির মানুষ সারা দেশ থেকে হরিণের শিং কুড়িয়ে চীনে রপ্তানি করে। চীনে ঐতিহ্যগত একধরনের ওষুধ তৈরিতে এই শিং কাজে লাগে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট উখনা খুরেলসুখ সম্প্রতি মিসরের শার্ম আল শেখে কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এক বিলিয়ন বৃক্ষরোপণের ঘোষণা দিয়ে এসেছেন। দেশটির পশুপালন সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই বনায়ন খুবই জরুরি।

বৈষম্য মঙ্গোলিয়া সমাজে বড় উদ্বেগের জায়গা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে দেশটির ২৮ শতাংশ মানুষ। সাম্প্রতিক ক্ষোভ-বিক্ষোভের পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক শেষে সরকার এরদেনেস তাভান তলগোই কোম্পানির নয়টি প্রকল্পের খুঁটিনাটি জনগণের সামনে উন্মুক্ত করার প্রস্তাব পাস করেছে। তবে এতেও বিক্ষোভ সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে হয় না। জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেশটির শাসকেরা সামনের দিনগুলোতে কীভাবে মোকাবিলা করেন, সে বিষয়ে নজর থাকবে পর্যবেক্ষকদের।

*****সূত্র: বিবিসি, দ্য ডিপ্লোম্যাট, আল-জাজিরা
কাজী আলিম-উজ-জামান প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ