Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আবদুর রহিমদের কেন জাগে বড়লোক হওয়ার সাধ? (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: অর্ণব সান্যাল।

অর্থবিত্তের বিচারে বাংলা ভাষা ও সমাজে লোক প্রধানত দুই প্রকার। তা হলো বড় ও ছোট। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ছোট চাইলে বড় হতে পারে। আবার বড় হয়ে যেতে পারে ছোট। কিন্তু একটি সমাজ যদি শুধু বড়লোক হওয়াকেই ‘মোক্ষ’ বানিয়ে ফেলে, তখন সবাই ‘বড়’ হতেই চায় যেকোনো প্রকারে। না হলে যে সামাজিক ‘গালি’ হিসেবে ‘ছোটলোক’ তকমা জোটে কপালে। সাধ করে কে আর কপাল পোড়াতে চায়!
ঠিক এমনই একটি সমাজে আবদুর রহিমের বাস। তিনি একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিয়ন। কক্সবাজারের টেকনাফে ২০ হাজার ইয়াবাসহ তাঁকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইয়াবার বিকিকিনি করতেন। আটকের পর রহিম পুলিশকে বলেন, চোখের সামনে রিকশাওয়ালা, গাড়িচালক, দিনমজুরসহ অনেকে ইয়াবার কারবারে জড়িয়ে রাতারাতি বড়লোক বনে গেছেন। তিনিও হঠাৎ বড়লোক হওয়ার জন্য এই পথ বেছে নেন।

কিন্তু রহিমেরা কেন হঠাৎ বড়লোক হতে চান? কারণ, সমাজের চোখে মোক্ষ লাভের আশা। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় বিত্তই এখন সব প্রবৃদ্ধির একমাত্র প্রমাণ। জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার সংলাপ তুলে বলা যায়, এ সমাজে ‘চৌধুরী সাহেব’ (লোকের বিচারে বড়) যেমন আছে, তেমনি আছে ‘ছোটলোক’ দরিদ্র নায়ক। তবে নায়কের ধনী হওয়ার এবং চৌধুরী সাহেবের মুখের ওপর টাকার গরমই দেখানো হয়ে থাকে এমন ধারার সিনেমায়। চলচ্চিত্রের সিনেমাটিক হওয়ার উপাদানও আসলে বিদ্যমান সমাজ থেকেই আসে।

সুতরাং, হঠাৎ করে বা যেনতেন উপায়ে বড়লোক হওয়া এ ক্ষেত্রে গসিপের উপাদান হলেও, সেটিকে ঠিক পাপের দৃষ্টিকোণে দেখা হয় না। যে দেশে বছর বছর কালোটাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়, সেখানে কেন একজন ব্যক্তি কালোটাকা উপার্জনে ব্রতী হবেন না? আহা, তিনি তো দেখছেনই যে কালোটাকা থাকলেও পার পাওয়ার ‘ভিআইপি’ উপায় সরকারই বছর বছর দিচ্ছে। তা রহিম তেমন ভিআইপি হতে চাইলেন, তাঁকে কি আর শাপ দেওয়া যায়?

ওদিকে চলতি বছরই জানা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়েছে। এ বছরের জরিপের ভিত্তিতে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের করা ২০২১ সালের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪০তম ধনী দেশ। ম্যাগাজিনটি বলছে, ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন।

দেশ তখনই ধনী হবে, যখন সেখানে অবস্থাপন্ন লোকের সংখ্যা বাড়বে। সমাজ ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা উন্নতি চান। তা তো সবাই চায়। সমস্যা হলো, পন্থা নিয়ে। আইন তৈরি হয় নাগরিকদের ন্যায়ের পথে রাখতে। কিন্তু সেই আইনই যখন একজনের জন্য এক রকম আর রহিমদের জন্য অন্য রকম হয়, তখন হয়তো রহিমেরা ভেবে বসেন, একটু বাঁকা হলে ক্ষতি কি? দিনশেষে পাপ শুদ্ধির বৈধ উপায়ও যখন থাকে, তখন সেই ভাবনার প্রদীপের টিমটিমে আগুন দাবানল হয়ে ওঠে। সেই অনলে পুড়ে যায় সোজা পথে থাকার ইচ্ছা, ভূতের রাজার বরেও আর তা সজীব হয় না।

আবদুর রহিমদের ইয়াবা বেচে হঠাৎ বড়লোক হওয়ায় উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক আছে। বছর দুয়েক আগে কক্সবাজার অঞ্চলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটক, গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া শুরু হয়েছিল। শক্ত অবস্থানে ছিল সরকার। ফলে অনেক হেভিওয়েট ইয়াবা ব্যবসায়ী তখন আটক হয়েছিলেন। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কয়েক মাস পর তাঁদের অনেকেই ছাড়া পেয়ে গেছেন। অভিযোগ আছে, তাঁরা নাকি আবার ইয়াবা ব্যবসায় সক্রিয় হয়েছেন। এই হেভিওয়েটদের নিয়ে যদিও এখন আওয়াজ তেমন শোনা যায় না। অর্থাৎ, সমস্যার মূল সব সময়ই অধরা। ধরা খায় শুধু চুনোপুঁটিরা। এমন পরিবেশে পুঁটিদের যদি হৃষ্টপুষ্ট বোয়াল হতে মনে চায়, তবে কি আর সততার জাল দেখিয়ে তাদের আটকানো যায়?
আবার দুষ্টের শাসন করাতেও আছে শাঁখের করাত। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রামে দুই দশকে (২০০১ থেকে ২০২১) পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে ১৯টি ইয়াবাসংক্রান্ত। ইয়াবা ও অবৈধ সোনা লুটে আছে ৫৩ পুলিশের নাম। আসামির তালিকায় কনস্টেবল থেকে বড় কর্মকর্তাও রয়েছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, পুলিশ সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা আয়ের লোভে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

তা, চোখের সামনে এমন সব লোভনীয় দৃষ্টান্ত পেলে রহিমদের হঠাৎ বড়লোক হওয়ার সাধ কেন জাগবে না, বলুন?

আগে থেকেই পয়সার ঝনঝনানিতে মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া একটি সমাজে এখন আবার চলছে করোনাভাইরাসের মহামারি। দেশব্যাপী খানা পর্যায়ের জরিপের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম বলছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। আর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।

অর্থাৎ, দারিদ্র্য দেশজুড়ে বাড়ছে বৈ কমছে না। এর ওপর আছে যেনতেন উপায়ে ট্যাঁক গুছিয়ে ‘মাননীয়’ হওয়ার তাড়া। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নতুন-পুরোনো দরিদ্ররা যদি সবাই সিনেমার ‘চৌধুরী সাহেব’ হতে চায়, তখন কী হবে? এত ‘বড়লোক’ সহ্য হবে তো?

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ