ভারতের চার রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু ও আসাম) বিধানসভার নির্বাচনে এবার বিজেপিবিরোধী একটা হাওয়া ছিল। সেই হাওয়ায় আসামে জিতে যেতে পারত কংগ্রেস, কিন্তু পারল না। আর এ জন্য কংগ্রেসের ভুল কৌশলকে দায়ী করছেন তাদের জোটের শরিক দলের নেতারা, এমনকি কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও।
আসামে মোট ১২৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস-জোট জিতেছে ৫১টি আসনে। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে ২৯টি আসন পায়। প্রধান জোটসঙ্গী, মূলত বাঙালি মুসলমানদের দল বদরুদ্দিন আজমলের অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) পেয়েছে ১৬টি আসন। অপর দুই জোটসঙ্গী বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট ৫টি ও সিপিআইএম পেয়েছে ১টি আসন। অপরদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জোট পেয়েছে ৭৫টি আসন, যার মধ্যে ৬০টিই বিজেপির।
তবে জয়ের পরপরই কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়েছে বিজেপি। ফল ঘোষণার চার দিন পরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানাতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন এর আগের মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এবারের ভোটের ভাগ্য নির্ধারণে একটা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে আসাম জাতীয় পরিষদ ও রাইজর দল। দল দুটির নেতৃত্বে রয়েছে মূলত ‘আপার’ আসামের সুশীল সমাজ। ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর আসামে যে আন্দোলন শুরু হয়, সেখান থেকে এ দল দুটির উত্থান। এবার ভোটে কেবল রাইজর দলের নেতা অখিল গগৈ একটি আসন পেয়েছেন। তবে দল দুটির প্রাপ্ত ভোট ১০ শতাংশের আশপাশে।
‘এই ভোটের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কংগ্রেসের হারের কারণ’ বলে মন্তব্য করেছেন আসামের দায়িত্বে থাকা জাতীয় কংগ্রেসের নেতা জিতেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, ওই দল দুটির ভোট কাটার কারণে কংগ্রেস অন্তত ১০টি আসন হারিয়েছে।
তবে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী এআইইউডিএফের এক নেতা, যিনি কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বৈঠকে ছিলেন, তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই দল দুটির কারণে নয়, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হার হয়েছে কংগ্রেসের গোঁয়ার্তুমির কারণে। তিনি বলেন, ‘তাদের বারবার আমরা বলেছিলাম, আসাম জাতীয় পরিষদ ও রাইজর দলের সঙ্গে জোট করে তাদের কিছু আসন ছেড়ে দিতে। আর আমাদের সঙ্গে জোট না করতে। আমাদের সঙ্গে জোট করায় ভোটের মেরুকরণ ঘটল। এর ফলে কংগ্রেসকে মুসলমানরা ভোট দিলেন, কিন্তু হিন্দুদের ভোট যতটা পাওয়া দরকার ছিল, ততটা পায়নি কংগ্রেস।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এআইইউডিএফের ওই নেতার মতে, ‘কংগ্রেস ৯৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে পেল ২৯টি, যার মধ্যে ১৬টি আসনে মুসলমান প্রার্থী। কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে জোট না করে যদি ওই দুই দলের (তারা আপার আসামের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে) সঙ্গে করত, তাহলে কংগ্রেসের বেশ খানিকটা হিন্দু ভোট বাড়ত। এতে মুসলমান ভোট ও আসন কমত। কিন্তু মুসলমান ভোট তো আমরাও পেতাম এবং নির্বাচনের পরে আমরা তো কংগ্রেসকেই সমর্থন করতাম। এই ফর্মুলায় দুই সম্প্রদায়ের ভোটই পাওয়া যেত। কিন্তু কংগ্রেসের রাজনীতি বোঝার ক্ষমতা চলে গেছে, তারা বুঝতে পারছে না যে শুধু মুসলমান ভোট পেয়ে টিকে থাকা যাবে না। তাদের হিন্দু ভোট দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ০৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,