মস্কো অধিভুক্ত ক্রিমিয়ায় একটি অস্ত্রের ডিপোতে মঙ্গলবার বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর পরপরই সেখানে আগুন লেগে যায়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে ‘নাশকতা’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ১৬ আগস্ট সকালে নাশকতার ফলে ক্রিমিয়ার ঝাঁকোই এলাকায় সামরিক সংরক্ষণাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কিছু বেসামরিক স্থাপনারও ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের লাইন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেললাইন ও আবাসিক ভবন। তবে এ ঘটনায় কেউ নিহত কিংবা মারাত্মক আহত হননি।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সকাল পৌনে ছয়টার দিকে অস্থায়ী সামরিক রক্ষণাগারে আগুন লাগে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে বিস্ফোরণস্থল থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই এলাকা থেকে দুই হাজার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্রিমিয়ার আঞ্চলিক নেতা সের্গেই আকসিওনভ বিস্ফোরণের পর ওই এলাকায় জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছেন।
রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে। এরপর থেকে ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর লড়াই চলে আসছে। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করেন রুশ সেনারা।
এর আগে ৯ আগস্ট ক্রিমিয়ার একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে গোলাবারুদ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় একজন নিহত ও একাধিক ব্যক্তি আহত হন। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, ওই বিস্ফোরণের পেছনে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাত ছিল। অবশ্য ক্রিমিয়ায় কোনো আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি ইউক্রেন। তবে কর্মকর্তারা একাধিক মন্তব্য করেছেন, যাতে ইউক্রেনের বাহিনী এতে যুক্ত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত মেলে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা এই বিস্ফোরণকে ‘নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচি’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সংঘাত দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে পুতিন বলেন, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সংঘাতের ক্ষেত্রেও ইন্ধন জোগাচ্ছে ওয়াশিংটন।
মিত্রদের অস্ত্র দেবে রাশিয়া
পুতিন আরও বলেছেন, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকায় মস্কোর যেসব মিত্রদেশ রয়েছে, তারা রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেশকে যেকোনো সময় আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে মস্কো প্রস্তুত। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলছেন, অস্ত্র রপ্তানি চাঙা করতেই এ কথা বলেছেন পুতিন।
মস্কোর অদূরে রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্রে রাশিয়ার সক্ষমতা দেখানোর জন্যই এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে মস্কো। সোমবার ওই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা দিয়ে বলেন, সমমনা দেশগুলোকে অস্ত্র দিতে প্রস্তুত রাশিয়া।
ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত
রুশ সেনারা ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছেন। বিবিসি জানিয়েছে, উত্তর ইউক্রেনের জাইটোমির জেলায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন রুশ সেনারা। এ ছাড়া অবরুদ্ধ জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউক্রেনের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। জেলেনস্কি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে রুশ সৈন্যদের ওই এলাকা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সম্মুখযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে ১২০ জন সেনা পাঠানোর কথা বলেছে নিউজিল্যান্ড। যুক্তরাজ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,