Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর এক বছর পরের অবস্থান ! (২০২১)

Share on Facebook

ঠিক এক বছর (জানুয়ারী ০৩, ২০২০) পর ইরানে আবার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে নিয়ে মাতম উঠেছে। এটা স্বাভাবিক। ইরানের মুকুটের উজ্জ্বল পালক তিনি। কিন্তু চলমান মাতম শাসকদের ইন্ধনেও। জীবিত অবস্থায় প্রচারবিমুখ সোলাইমানির অভিযান থেকে এই শাসকেরা বিপুল ফায়দা নিয়েছে। এখন তাঁর মৃত্যুকে ব্যবহার করা হচ্ছে নিজেদের ব্যর্থতার আবরণ হিসেবে।
ইরানের নেতৃত্ব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ

সোলাইমানিকে হত্যা ছিল ইরানের হৃৎপিণ্ডে বর্শা নিক্ষেপতুল্য। কিন্তু এই খুনের নজরকাড়া বদলা নিতে পারেনি ইরান। আগুন ঝরানো বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া খামেনি-রুহানিরা ইরানের আহত অহংয়ে সামান্যই প্রলেপ দিতে পেরেছেন। এরপর দেশটি প্রায় একই প্রতিপক্ষের কাছে হারিয়েছে আরেক শ্রেষ্ঠ সন্তান পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে। সোলাইমানি খুন হন দেশের বাইরে, ফাখরিজাদেহ খোদ তেহরানে। প্রথমজন ইরানের প্রধানতম স্থলযোদ্ধা; দ্বিতীয়জন ছিলেন তাদের পরমাণু কৌশল ও মিসাইলবিদ্যার মেরুদণ্ডতুল্য।
এ রকম সুচিন্তিত ‘টার্গেট’ ইরানের শত্রুদের সমরনীতির উঁচুমানের বিবেচনাবোধের পরিচয় দেয়। এসব হত্যাকাণ্ড ইরানের নিরাপত্তাকাঠামোর চরম অকার্যকারিতা নির্দেশ করে। নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে ৩০ জুনের অন্তর্ঘাতও এই তালিকায় যুক্ত করা যায়।
সোলাইমানি ও ফাখরিজাদেহ প্রতিপক্ষের ঘোষিত নিশানা ছিলেন। দামেস্ক বা বাগদাদে সোলাইমানিকে নি, রাপত্তা দেওয়া না গেলেও তেহরানে যখন ফাখরিজাদেহকে নির্বিঘ্নে খুন করা যায়, তখন সেই ব্যর্থতার দায় শাসকদের ওপরও বর্তায়। রিপাবলিকান গার্ড সরাসরি তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ এই শাসকেরা দেশে গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমনে দশকের পর দশক বেশ সিদ্ধহস্ত। শিক্ষার্থী থেকে পরিবেশবাদী—কেউই বাদ যায়নি তাতে।

ইরানের কি আদৌ প্রতিশোধ নেওয়ার শক্তি আছে
সোলাইমানি কিংবা ফাখরিজাদেহ কাদের হাতে খুন হলেন, প্রচারমাধ্যমসূত্রে সেটা বিশ্ববাসী জানে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব তাঁদের হত্যাকারীদের ‘যথাসময়ে যথোপযুক্ত প্রতিশোধ’–এর হুমকি দিয়ে গেছে। তাদের প্রভাবিত মিডিয়ায় ‘চোখের বদলে চোখ’–নীতির কথাও শোনা গেছে। এ রকম উত্তেজক হুমকি গত এক দশকে অন্তত ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হারানোর পরও শোনা গেছে। বাস্তবে কোনো হত্যার বদলা নেওয়া হয়নি। দেশটির তেমন প্রতিশোধ–সামর্থ্য আছে কি না, সেটাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ‘প্রতিপক্ষ’–এর বিরুদ্ধে গত এক বছর ইরানের সর্বোচ্চ নেতাদের সব প্রতিক্রিয়া ছিল কাগুজে। তাঁদের কথিত ‘যথোপযুক্ত সময়’ আগে যেমন আসেনি, সর্বশেষ ১২ মাসেও আসেনি। শিগগির আসার সম্ভাবনাও কম। এসব হুমকি-ধমকি প্রচারযন্ত্রের খোরাক ছাড়া বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে না এখন।
সোলাইমানির মৃত্যুর পর ফলাফলহীন কয়েকটি মিসাইল ছোড়া হয় ইরাকে আমেরিকার স্থাপনা লক্ষ্য করে। এই হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগে আমেরিকার ৩৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তেহরান থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমেরিকাবিরোধী প্রচারণার বাইরে এসবের সামরিক মূল্য আছে বলে মনে হয় না।
ইরানের নেতারা বরাবরই তাঁদের সন্তানদের খুনের জন্য ইসরায়েল-আমেরিকা-সৌদি আরবকে দায়ী করে। এত শক্তিশালী মৈত্রী জোটের বিরুদ্ধে এককভাবে লড়াই কঠিন। কিন্তু দেশের ভেতরে মুজাহিদিন-ই-খালকের মতো গেরিলা প্রতিপক্ষও যে তারা সামান্যই দুর্বল করতে পেরেছে, সেটাও এক রূঢ় বাস্তবতা। অথচ এসব সংগঠনের সামান্যই জনভিত্তি রয়েছে।

ইরানের দুর্বলতা কোথায়
প্রায় সব সামরিক বিপর্যয়ের পর ইরানের নেতারা ‘অশুভ হাত’-এর দোহাই দেন। ইরানিরা জানে, কাদের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি রুখতে ইরানের ব্যর্থতা তার শত্রুর অপরাজেয় চরিত্র প্রকাশ করে ভাবলেও ভুল হবে। ইসরায়েল বা আমেরিকার প্রচারযন্ত্র যদিও সে রকম মিথ গড়ে চলেছে; বাস্তবে এসব সামরিক বিপর্যয় ইরানের শাসকদের দুর্বলতারই চিহ্নমাত্র। ইসরায়েল যে বিশ্বব্যাপী তার সামরিক সামর্থ্য ও সক্ষমতা সম্পর্কে কল্পকাহিনি গড়ে তুলতে পারছে, তার জন্য ইরানের শাসকদেরও কিছু দায় আছে। এই শাসকেরা ‘বিপ্লব’ রক্ষার নামে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়োগ করেছে জনগণকে নজরদারিতে। এ রকম ‘নজরদারির রাষ্ট্র’ ক্রমে বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে অকার্যকর প্রমাণিত হয়। ধর্মীয় পর্দা থাকলেও সেই অবক্ষয় আড়াল করা যায় না। এ রকম রাষ্ট্রের ‘শত্রু-চিন্তা’ গ্রাস করে নিজ জনগণ। রাষ্ট্র বদলে যায় সন্দেহবাতিকগ্রস্ত সত্তায়। কে হিজাব পরেনি বা কে ফেসবুকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, এসব নজরদারিতে রাষ্ট্র যখন জনসম্পদের বিপুল অংশ খরচ করে ফেলে, তখন সে আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষকে কখন সামলাবে? ইরান বহুদিন এ রোগে আক্রান্ত। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শাসকও তাই। মুসলমানপ্রধান অনেক দেশে জনতাকে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভিত হতে দেওয়া হয়নি। সামরিক আমলাতন্ত্রের আড়ালে দমিত ও অবদমিত থাকা তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল এ সুযোগই নেয়।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের অসন্তুষ্ট নাগরিকদের মধ্যে ইসরায়েলের বহু এজেন্ট আছে। তারাই চোরাগোপ্তা খুনে কাজে লাগে। তাদের হাতেই ইরান হারাচ্ছে সেরা সন্তানদের। এভাবেই ২০১৮ সালে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার বিস্তারিত দলিল ইরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ চুরি করে। এসব সত্যিকার অর্থে প্রথাগত যুদ্ধে সামান্যই দক্ষতার স্মারক। কিন্তু ইসরায়েল এই ‘শক্তি’তে বলীয়ান। মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর শাসকেরা যে জনগণকে তার ভরসাস্থল করতে পারেনি, ইসরায়েল সেই কাজ করছে। ইরান যখন বলে ফাখরিজাদেহ হত্যায় কয়েক ডজন ইরানি ‘বিশ্বাসঘাতক’ সাহায্য করেছে, সেটা একই সঙ্গে তার জন্য লজ্জার ব্যাপারও হয়ে দাঁড়ায়। সোলাইমানিকে হত্যায় ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকার জন্যও ইরান ইতিমধ্যে ৪৮ জনকে ‘শনাক্ত’ করেছে বলে জানিয়েছে।
বিগত বছরে ইরান যেভাবে ‘ভুলবশত’ ইউক্রেনের বিমান ভূপাতিত করল, সেটাও প্রশাসকদের বিপজ্জনক অদক্ষতার অতি খারাপ নজির ছিল। মহামারি প্রতিরোধেও এই প্রশাসকেরা প্রথমে যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দেননি।
তবে এই শাসকেরা অনেক সংকটের জন্যই আমেরিকার ‘অবরোধ’কে দায়ী করতে পারেন এবং করছেনও। এ রকম দাবির সত্যতাও আছে। আইএমএফ থেকে ঋণ পেতেও ইরানকে বাধা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসবে কষ্ট বাড়ছে কেবল সাধারণের। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাননীতি কোনোভাবেই দেশটির শাসকদের সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। তাঁদের সিদ্ধান্তে এতে সামান্যই পরিবর্তন এসেছে।

ইরানের নীতি প্রতিপক্ষ দেশগুলোর মৈত্রী বাড়াচ্ছে
কেবল দেশের অভ্যন্তরেই নয়, ইরানের শাসকদেরও গত বছরের বিদেশনীতির সুফল-কুফল নিয়েও গভীর প্রশ্নের সুযোগ আছে। এই নীতি মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শত্রুর সংখ্যা বাড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যে একে একে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে ব্যাকুল, তাতে ইরানভীতির ভূমিকা আছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের শাসকদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে কাছাকাছি আসতে শিখিয়েছে ইরান, যা একই সঙ্গে ইরানকে বন্ধুহীন করছে। ইরানবিরোধীদের সামরিক সহযোগিতার পাটাতন গত এক বছরে অনেক বেড়েছে।
এ রকম পরিস্থিতিতে সোলাইমানিকে হারিয়ে ইরান ছদ্মযুদ্ধের সব ফ্রন্টে রক্ষণাত্মক নীতি নিতে বাধ্য। লেবানন ও ইরাকে তার সহযোগীরা চাপে আছে। লেবাননের রাজনৈতিক সংকট হিজবুল্লাহকেও গুটিয়ে রেখেছে। ইরাকে তার সমর্থক সরকারের প্রতি জনরোষ রয়েছে। সোলাইমানির সঙ্গেই নিহত হয়েছিলেন ইরাকে তাদের প্রধান ভরসা কমান্ডার আবু মাহদি, যাঁর শূন্যতা পূরণ করা যায়নি।

মৃত সোলাইমানিও ইরানের শাসকদের জন্য বড় সম্পদ

সোলাইমানি, মাহদি ও ফাখরিজাদেহদের হত্যার বদলা নিতে না পারলেও ইরানের শাসকেরা বাড়তি শোকের আবহে তাঁদের স্মরণসভাগুলো করছেন। এর মাধ্যমে একাধিক হাসিল হচ্ছে। প্রথমত, তাঁদের হত্যা রুখতে ব্যর্থতা আড়াল হচ্ছে। আবার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেশের জন্য শহীদ হওয়ার চেতনাও গড়া যাচ্ছে। ‘কারবালা’ থিমের সঙ্গে এ রকম কৌশল বেশ খাপ খায়। ইরানের নেতারা বরাবরই বলেন, ‘আমরা শহীদদের জাতি।’ এতে সিরিয়া-ইরাকসহ সব ফ্রন্টে মানবসম্পদের জোগানে সুবিধা হয়। দেশ কীভাবে চলছে বা চলবে, সে প্রশ্ন থেকেও এভাবে সাময়িক রেহাই মেলে।
তবে মাঠে সোলাইমানি না থাকার পরও ইরান কোনো বন্ধুশক্তিকে ছেড়ে যায়নি। তার আপাতত থমকে যাওয়া মূলত ডলার ও সোলাইমানির অভাবজনিত। প্রয়াত এই জেনারেলের যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পেতে সময়ের প্রয়োজন। গত এক বছরে তারা সেটা পারেনি।

ইরানের সামনে রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ
বিদায়ী বছরে ইরানের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে কেবল হোয়াইট হাউসের পালাবদলের ঘটনা। বাইডেন ট্রাম্পের মতো হবেন না, অন্তত ওবামার অবস্থান বজায় রাখবেন—এটাই আশা করছে তেহরান। সে জন্যই সোলাইমানি হত্যার আপাতত বদলা নেওয়ার অবকাশ নেই ইরানের তরফ থেকে। তেহরান একধরনের কূটনৈতিক ফাঁদে আছে। ইসরায়েলের আগ্রাসী আচরণ হজম করতে হচ্ছে আমেরিকার নমনীয় নীতির আশায়। ইরানিদের হয়তো আরও ধৈর্য ধরতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য। সেটা তেল আবিবের সঙ্গে বোঝাপড়ার স্বার্থেও।
তবে ইসরায়েলসহ দেশটির সব প্রতিপক্ষের এটা অজানা থাকার কথা নয়, ইরান এক অদম্য মেধাবী জাতি। সেখানে মেধা ও দেশাত্মবোধ নিয়ে বড় হচ্ছে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান স্টাডিজের অধ্যাপক হামিদ দাবশির ভাষায়, ‘দু–একজন সোলাইমানি বা ফাখরিজাদেহকে মেরে এ দেশকে দীর্ঘ মেয়াদে দমিয়ে রাখা অসম্ভব। মরিয়ম মির্জাখানির মতো গণিতবিদ ও পদার্থবিদ দেশটিতে বিস্তর। এ রকম জাতিকে চোরাগোপ্তা হামলা বা কিছু মিসাইল দমাতে পারে না।’
কিন্তু এ রকম মেধাবীদের দেশ গঠনে সুরক্ষা দিতে ইরানের প্রয়োজন রাষ্ট্রযন্ত্রের আমূল সংস্কার। জনতার সম্মিলিত স্বপ্নকে এক মালায় গাঁথতে না পারলে ক্রমে সব ‘বিপ্লব’ গুটিকয়েকের শাসনে পরিণত হয়। বিপ্লবের চার দশকের (১৯৭৯-২০১৯) ঠিক পরের বছরটি ইরানকে সেই বার্তা দিয়ে গেল।
‘অশুভ শক্তি’র বিরুদ্ধে জিততে যেকোনো দেশকে আগে তার জনগণকে বিজয়ী হতে দিতে হয়।

সূত্র: প্রথম আলো
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
তারিখ: জানুয়ারী ০৩, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ