Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

এটা এখন স্পষ্ট, দেশের সব নাগরিক সমান নয় (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:মহিউদ্দিন আহমদ।

রাষ্ট্র তো কোনো দৈব নির্দেশে বা কারও ইচ্ছায় তৈরি হয় না। এটি তৈরি করে জনগণ। পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্র হচ্ছে, যা জনগণ তৈরি করেনি। রাজার ক্ষমতায় কিংবা ঔপনিবেশিক শক্তির মর্জিমাফিক তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে আমরা গর্ব করে বলি, এই রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মানুষ, একটি জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। দেশ স্বাধীন হলেই যে মানুষ স্বাধীন হয় না, তার প্রমাণ আছে ভূরি ভূরি। জন্মের পাঁচ দশক পর বাংলাদেশের দিকে তাকালে এমনই মনে হয়। একাত্তরে যাদের ঘর পোড়েনি, ভিটেমাটি দখল হয়নি, স্বজন নিহত হয়নি, যারা নৃশংসতা দেখেনি, তারা বুঝবে না কত দাম দিয়ে এই স্বাধীনতা কিনতে হয়েছে।

দেশে সোয়া কোটি, দেড় কোটি বা তারও বেশি লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যা এর চেয়ে কম। এই বিরাট জনগোষ্ঠী মেজরিটি শভিনিজমের বলি। এখন তো আড়ালে-আবডালে নয়, মুখের সামনেই তাদের বলা হয় ‘মালাউন’। আর তাদের পক্ষে কেউ দু-চার কথা বললে, সে হয়ে যায় মুরতাদ। মালাউন আর মুরতাদের শাস্তি নাকি কতল করা, এ কথা শাস্ত্রে আছে বলে অনেক হুজুর বয়ান করেন। আমি শাস্ত্র ঘেঁটে দেখিনি, কিন্তু ‘অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার জন্য এদের কারও বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে বলে শুনিনি। মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে, যারা গুমর ফাঁস করে।

দুর্গাপূজা ঘিরে এবার সারা দেশে যে তাণ্ডব ঘটে গেল, নিকট অতীতে তার সঙ্গে তুলনা করা চলে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে। কেউ কেউ পাল্লায় মাপতে বসে যাবেন, কোনটা কয় ছটাক কম বা বেশি। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এ দেশের নাগরিকের সবাই সমান নন। এ দেশে গরিবের তো কোনো জায়গাই নেই, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বও বিপন্ন। তারা এখন বিলীয়মান প্রজাতি হয়ে যাচ্ছে। ১৯৪১-এ তাদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। সেটি কমতে কমতে এখন ৯ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের সবাইকে না তাড়াতে পারলে অনেকেরই ঘুম হচ্ছে না।

আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি, মূলধারার সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিউজ ব্ল্যাকআউট চলছে। যেটুকু ফেসবুকের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, তা গা শিউরে ওঠার মতো। উন্মুক্ত যোগাযোগের কল্যাণে এসব যে অন্যরা দেখছে না, তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। আমরা যতই চেঁচাই যে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে দিন দিন, বাইরের দুনিয়ায় আমরা ক্রমেই একটি অসভ্য জাতিতে পরিণত হচ্ছি। মন্দিরে কোরআন রাখার যে গল্পটি প্রচারিত হয়েছে, তার চিত্রনাট্য খুবই দুর্বল। এটি ক্রসফায়ারের তামাদি হয়ে যাওয়া গল্পকেও হার মানায়। কথায় বলে, দুরাত্মার ছলের অভাব নেই। পূজা উপলক্ষ মাত্র।
বিজ্ঞাপন

দুর্গাপূজা ঘিরে এবার সারা দেশে যে তাণ্ডব ঘটে গেল, নিকট অতীতে তার সঙ্গে তুলনা করা চলে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে। কেউ কেউ পাল্লায় মাপতে বসে যাবেন, কোনটা কয় ছটাক কম বা বেশি। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এ দেশের নাগরিকের সবাই সমান নন। এ দেশে গরিবের তো কোনো জায়গাই নেই, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বও বিপন্ন। তারা এখন বিলীয়মান প্রজাতি হয়ে যাচ্ছে।

এই যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো, এটা কিন্তু এক দিনে হয়নি। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা রমনার কালীমন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। বাহাত্তরে তার পুনর্নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়নি। এটি হয়েছে কয়েক দশক পর। পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা, একাত্তর বাদ দিলে, ১৯৬৪ সালের পর পাকিস্তান আমলে হয়েছে বলে শুনিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে এটি নব উদ্যমে শুরু হয় ১৯৭২ সালেই। তখনকার পত্রপত্রিকা ঘাঁটলেই এটা দেখা যাবে। ঢাকায় ভারতের উপহাইকমিশনার জে এন দীক্ষিত তাঁর লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড বইয়ে এর উল্লেখ করে তিনি আক্ষেপ করেছেন। পঁচাত্তরের রক্তাক্ত পালাবদলের পর তো এটা কাগজে-কলমেই হয়ে গেল মুসলমানের দেশ।

১৯৬০-এর দশকে জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশে সেক্যুলার রাজনীতি ও সংস্কৃতি বেগবান ও শক্তিশালী হয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। এটাও ছিল মধ্যবিত্তের ভ্রান্তিবিলাস। পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্র শোষণের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করত। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগান দিয়েছি। কিন্তু মনের ভেতরে শুধু নয়, প্রকাশ্যে বলেছি যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন চাই। লাহোর প্রস্তাবের সারমর্ম হলো, মুসলমানপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে কয়েকটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। অর্থাৎ পশ্চিমে একটা আর পূর্বে আরেকটা মুসলিম রাষ্ট্র হবে। ১৯৪৬ সালে বাংলার তখনকার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মেলনে জিন্নাহর সুরে সুর মিলিয়ে একাধিক রাষ্ট্রের বদলে ‘এক পাকিস্তানের’ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। মুসলমান আর হিন্দু যে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে না, এটা প্রমাণ করার জন্য দরকার ছিল একটি দাঙ্গার। সেটিও মঞ্চস্থ হলো ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে। সোহরাওয়ার্দী যখন বুঝে গেলেন যে তিনি আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না, তখন ১৯৪৭ সালে আওয়াজ তুললেন স্বাধীন বঙ্গদেশের। তাঁর প্রতি অমুসলিমদের আস্থা তত দিনে শূন্যের কোঠায়।

অতীত এ জন্যই ঘাঁটতে হচ্ছে যে এখনো বাঙালি মুসলমানের মনস্তত্ত্বে আছে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব’। আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইয়ে আবুল মনসুর আহমদ প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থাটা এই যে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পাকিস্তানও ভাঙে নাই, “দ্বিজাতি তত্ত্ব”ও মিথ্যা হয় নাই। এক পাকিস্তানের জায়গায় লাহোর প্রস্তাবমতো দুই পাকিস্তান হইয়াছে। ভারত সরকার লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমাদের সাহায্য করিয়াছে। তারা আমাদের কৃতজ্ঞতার পাত্র। দুই রাষ্ট্রের নামই পাকিস্তান হয় নাই, তাতেও বিভ্রান্তির কারণ নাই। লাহোর প্রস্তাবে “পাকিস্তান” শব্দটার উল্লেখ নাই। শুধু মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে। তার মানে, রাষ্ট্র-নাম পরে জনগণ দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার কথা। পশ্চিমা জনগণ তাদের রাষ্ট্র-নাম রাখিয়াছে “পাকিস্তান”। আমরা পূরবীরা রাখিয়াছি “বাংলাদেশ”। এতে বিভ্রান্তির কোনো কারণ নাই।’

একটি দৃশ্য কল্পনা করুন। স্থানীয় ওসি, ইউএনও, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, এমপি সবাই ভিজিল্যান্ট, সতর্ক। সবাই স্বাধীনতার চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এককাট্টা ও দৃঢ়সংকল্প। তাহলে কার এমন বুকের পাটা যে পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে হামলা চালাতে পারে? নাকি গল্পের গরু গাছেও চড়ে!

নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির নেতৃত্বে ভারত ক্রমেই একটি ধর্মরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কাছাকাছি এলেই তাদের মুসলিমবিদ্বেষ বেড়ে যায়। ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে হিন্দুরা ভারতে এসে আশ্রয় নিলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। নাগরিকত্বের আশায় চৌদ্দ পুরুষের ভিটা ছেড়ে কে দেশান্তরি হতে চায়? মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তারপরও হয়তো অনেকেই যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু ‘সেক্যুলার মুসলমান’দের কী গতি হবে? ‘মুরতাদের ফাঁসি চাই’ বলে বুলন্দ আওয়াজ তুলে তাদের ওপর জিহাদিরা আক্রমণ করলে তারা কোথায় যাবে?

আমার বন্ধু বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সের ক্যাপ্টেন (অব.) শচিন কর্মকার গতকাল রোববার সকালে একটা মেসেজ পাঠিয়েছেন। ‘গদি রক্ষার জন্য খাল কেটে কুমিরকে দাওয়াত করে আনার পক্ষে অনেক যুক্তি দেওয়া যায়। কিন্তু সেই ক্ষুধার্ত কুমির এখন শিকার মনে করে আমাদের তাড়া করছে।’

একটা কথা। ক্ষমতাসীনদের উসকানি বা প্রশ্রয় ছাড়া দুনিয়ার কোথাও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয় না। তা যেখানেই হোক—বসনিয়া, কলকাতা, দিল্লি, গুজরাট, রাখাইন, নাসিরনগর, নোয়াখালী। এখন শুধু একটি শব্দেই ধিক্কার জানাতে হয়—ছি!

***মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ