Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কমিশন হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে তো! (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:সোহরাব হাসান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হবে। কেননা, করোনা সংক্রমণের মধ্যে আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার মতো সময় নেই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। গত বুধবার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তবে আইনমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন, রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সেটি আইন না হলেও এর কাছাকাছি। সেমি আইন।

আমরা ধারণা করি, সম্প্রতি ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিক যে আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য তারই প্রতিক্রিয়া। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানের পর দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন।

গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য কোনো আইন করেনি। ফলে নির্বাহী বিভাগ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। কেননা, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের (৩)-এ বলা আছে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, কবর জিয়ারত ছাড়া তাঁর কিছু করার নেই। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট জয়ী হলে আওয়ামী লীগ নেতারা তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের সঙ্গে ব্রাকেটবন্দী করে তাঁকে যে ভাষায় গালাগাল করেছিলেন, এখন মনে করলে তাঁরাও লজ্জা পাবেন। আরেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি চৌধুরীকে ক্ষমতা প্রয়োগ নয়, নিজের পদের স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অপমানজনকভাবে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এই হলো আমাদের ক্ষমতাদর্পী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রচর্চার নমুনা।

আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিটি সামনে আসায় অনেকে ভেবেছিলেন, দাবি মেনে নিয়ে সরকার একটি চমক দেখাতে পারে। যে সংসদে সরকারি দল ও তাদের সহযোগীরা ৯৭ শতাংশ আসন নিয়ে আছে, সেখানে তারা নিজেদের সুবিধামতো আইন করতে পারবে। এ ব্যাপারে বিবৃতিতে সইদাতা একাধিক বিশিষ্ট নাগরিক তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেছেন, সরকার আইনটি করে ফেললে তাঁদের কিছু করার থাকবে না। জবাবে বলেছি, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, বিরোধী দলের বা নাগরিক সমাজের দাবি যত যৌক্তিকই হোক না কেন, ক্ষমতাসীনেরা তা মানবেন না। তাঁরা ভাববেন, নাগরিকদের দাবি পেশের পর আইন করলে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। এরপর তাঁরা নতুন কোনো দাবি সামনে নিয়ে আসবেন। কোনো সরকারই নাগরিকদের সেই সুযোগ দিতে চায় না। অথবা কোনো পক্ষের দাবির মুখে কোনো আইন করে ফেললেও সেটি কীভাবে বছরের পর বছর অকার্যকর রাখা যায়, সেই কৌশলও তাদের ভালো জানা আছে। উদাহরণ হিসেবে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর কথা উল্লেখ করা যায়।

আওয়ামী লীগের নেতারা হয়তো যুক্তি দেখাবেন, আইন ছাড়াই যখন এতগুলো নির্বাচন কমিশন হতে পেরেছে, তখন আরেকটি হলেও সমস্যা নেই। একটি আইনের জন্য জনগণ ৫০ বছর অপেক্ষা করেছে, প্রয়োজনে আরও ৫০ বছর অপেক্ষা করবে।

এখন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক, নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে সংবিধান কী বলছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের (১) উপধারায় বলা আছে, ‘প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এটি অর্জন করেছি। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্রের ১১ অনুচ্ছেদে বলেছি, ‘প্রজাতন্ত্র হবে এমন একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে [এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।]’ ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ’ কথাগুলো চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা বিলুপ্ত হইলেও জনগণের ইচ্ছায় সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর দ্বারা ১৯৯১ সালে পুনঃ সন্নিবেশিত হয়েছে।…‘প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে…নিয়োগদান করিবেন’ বিধানটি ৫০ বছর ধরে লঙ্ঘিত হয়ে আসছে।’

আইন লঙ্ঘনের জন্য নাগরিককে শাস্তি পেতে হয়। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদৌলতে অপরাধ না করেও অনেকে শাস্তি পাচ্ছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিতে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করে অর্থাৎ শাস্তি দিয়ে বলা হবে প্রমাণ করুন আপনি নির্দোষ। কিন্তু ৫০ বছর ধরে যে ক্ষমতাসীনেরা দেশের সর্বোচ্চ আইন লঙ্ঘন করলেন, নির্বাচন কমিশন আইনটি করলেন না, এ জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। ভবিষ্যতেও হবে না।

সংবিধান বলছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠন কিংবা নির্বাচন পরিচালনায় সেই জনগণের ভূমিকা দিন দিন গৌণ হয়ে আসছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এখন নির্বাচনের কথা শুনলে মানুষ ভয় পায়।

নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি নিয়ে কথা উঠলেই আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দুই সেনাশাসক মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। তাঁরা আন্দোলন–সংগ্রাম করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই ব্যবস্থাটিও খালেদা জিয়ার সরকার ধ্বংস করেছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নষ্ট করে থাকলে যে উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষের ভোটাধিকার তো কোনো দোষ করেনি। বিএনপি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। কিন্তু মানুষ কেন ভোট দিতে পারবে না?

আওয়ামী লীগ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে? আবার অন্য পক্ষ থেকে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, মানুষ কেন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে? কাকে ভোট দেবে, কাকে দেবে না—সেই বিতর্কের আগে ভোটের পরিবেশটা তৈরি করুন। এমন নির্বাচন কমিশন করতে হবে, যারা হুদা কমিশনের মতো বলবে না ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা আমাদের দায়িত্ব নয়। এমন নির্বাচন কমিশন হতে হবে, যারা ভোটের আমানত রক্ষা করবে।

সিইসি কে এম নূরুল হুদা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি প্রথমে আমেরিকানদের ভোট শিক্ষা নিতে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ রাশিয়ার ভোট দেখে রাশিয়ানদেরও আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন কি না, জানি না। কিন্তু তিনি পৌনে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর যে রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলেছেন, তার উত্তরে একটি কথাই বলতে হয়, এত দিন কোথায় ছিলেন। আপনি ও আপনার সহযোগীরা যে দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রাম করে গড়ে তোলা আমাদের ভোটব্যবস্থাটি ধ্বংস করে গেলেন, এর জন্য আইনের কাঠগড়ায় না হলেও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বীই মনে করেন না। আমরা ধরে নিলাম, আওয়ামী লীগের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বিএনপিকে কেউ ভোট দেবেন না, বিএনপির আন্দোলনের খোয়াবও অপূর্ণ থেকে যাবে।

কিন্তু ভোটাররা কী দোষ করলেন? কেন তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? কেন তাঁরা ভোটের মাধ্যমে পছন্দসই প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন না? মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে, সেই প্রশ্নের আগের প্রশ্নটি হলো মানুষ ভোট দিতে পারবে তো? আওয়ামী লীগ যদি তাদের ১২ বছরের উন্নয়নের প্রতি এত আস্থাশীল হয়ে থাকে, তাহলে জনগণের রায়ের প্রতিও একবার আস্থা রেখে দেখাক।

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ০৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ