লেখক: আরশাদ জামাল পরিচালক, বিজিএমইএ
করোনার ডেলটা ধরন এখন গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূলের মানুষও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দিন দিন সংক্রমণের হার বাড়ছে। পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। সে কারণেই সরকার কঠোর বিধিনিষেধের পথ বেছে নিয়েছে। বিশ্বের মোটামুটি সব দেশকেই এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বা হচ্ছে।
আমাদের দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে অধিকাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করতে আরও অনেক দিন লেগে যাবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেটি হলে টিকার জোগানে আবার টান পড়তে পারে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে টিকার একটি ভালো জোগান দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে। সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে, করোনা নিয়েই আমাদের আরও অনেক দিন চলতে হবে।
এদিকে আমাদের দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও আমাদের বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে। সেখানে ব্যবসা চলমান রয়েছে। চলতি জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন (উড়োজাহাজ) প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা ২০১৯ সালকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি একটি ইন্ডিকেটর। যখন বাজার খুলে যাবে, তখন যারা পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেবে, তারাই সুবিধা পাবে। আমরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও রপ্তানি পণ্য ও বাজারে বৈচিত্র্য আনতে পারিনি। ফলে এখনো পণ্য রপ্তানিতে আমাদের পোশাকের বিকল্প কিছু নেই।
বিশ্ববাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এমন একটা সময়ে টানা ১৯ দিন ব্যবসা বা কারখানা বন্ধ রাখা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত কাজ নয়। তাতে আমরা সুযোগ হারাব। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ায় সেখানে হঠাৎ করেই বিক্রি বেড়ে গেছে। তাতে করে বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ জন্য তারা সবাই দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য চাচ্ছে। অন্যদিকে বন্দরে কনটেইনার জটের কারণে পণ্য পৌঁছাতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। এর মধ্যে কারখানা বন্ধ থাকায় নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যবসার ভরা মৌসুমে সস্তায় পোশাক কেনার জন্য নিশ্চয়ই ক্রেতারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করবে না। দাম বেশি হলেও তারা অন্য উৎসের দিকেই যাবে।
অধিকাংশ বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পণ্য কিনে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটিই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হচ্ছে। সে কারণে গত ১৩ জুলাইয়ের পর পোশাক রপ্তানি সেভাবে হয়নি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন থাকলে রপ্তানিতে লম্বা ছেদ পড়বে। তাতে পরবর্তী সব ক্রয়াদেশেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে। পুরো ব্যবসায় নানা রকম জটিলতা তৈরি হবে। আমরা মনে হয়, সরকারকে বিষয়টি সেভাবে বোঝাতে পারিনি।
ঈদের ছুটিতে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিধিনিষেধের পর তৈরি করা পোশাক উড়োজাহাজে পাঠাতে হবে, না হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হবে। কারণ, তাদের দ্রুত পণ্য দরকার। তাদের কিছু করার নেই, তাদের হাত–পা বাঁধা। সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, এবারের বিধিনিষেধের ফলে আমাদের ১০-১৫ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমে যাবে।
করোনার শুরু থেকেই পোশাকশ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি আমরা। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের হার কখনোই ৩ শতাংশের বেশি হয়নি। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার কাজও শুরু করেছে সরকার।
চীন থেকে অনেক ক্রেতাই তাদের ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিচ্ছে। মিয়ানমারও সামরিক শাসনের কারণে ব্যবসা হারাচ্ছে। উভয় দেশের থেকে সরে যাওয়া ক্রয়াদেশের কিছু আমরা পাচ্ছিলাম। আর ব্যবসা ধরার জন্য আমাদের পোশাকশিল্প আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। এ অবস্থায় ৩১ জুলাইয়ের পর কারখানা বন্ধ থাকলে তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,