Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

গল্প নয় সত্য-সন্তান জন্ম দিয়ে চলে গেল গায়ে আগুন দেওয়া কিশোরী মা–ও (২০২১)

Share on Facebook

১৭ বছরের কিশোরী সুরাইয়া নেওয়াজ লাবণ্যর গর্ভে ভ্রূণের দৈর্ঘ্য বাড়ছিল, সেই সঙ্গে বাড়ছিল স্বামী–শাশুড়ির অত্যাচার। সইতে না পেরে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলেছে সে। শরীরের ৯০ ভাগ পোড়া নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে জন্ম দিয়েছে মৃত এক কন্যাসন্তানের। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় পৃথিবী থেকেও বিদায় নিয়েছে মেয়েটি।

ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সুরাইয়া নেওয়াজ লাবণ্যর মৃত্যু হয়। তাঁর মা আফরোজা ফাতেমা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে দুপুরের দিকে এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বাইরে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল সুরাইয়া নেওয়াজ লাবণ্যর বাবা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তখন লাবণ্যর দুনিয়া দেখতে না পাওয়া কন্যাসন্তানকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে ফিরেছিলেন তিনি।

আরিফুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছিল, লাবণ্যর বাচ্চাটা খুব ব্যথা পেয়েছে।’ এই বাবা বলেন, গত ৯ অক্টোবর কেরোসিন ঢেলে নিজের গায়ে আগুন দেয় লাবণ্য। এরপর থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে কথা বলেছে সে। মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ার পর লাইফ সাপোর্টে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর কথা বলেনি লাবণ্য।

লাবণ্যর স্বজনেরা জানান, ৯ অক্টোবর আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্বামী শেখ সাদী হোসায়েনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এরপরই গায়ে আগুন দেয় লাবণ্য। নেত্রকোনার কলমাকান্দা থেকে লাবণ্যকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। এক দিন পর থেকে সে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। খবরটা শ্বশুরবাড়িতে দেওয়া হয়েছিল, কেউ কোনো খোঁজ নেননি।

লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে লাবণ্য কেন এই পথ বেছে নিল, সে কথা জানিয়েছে তার মা–বাবাকে। তাঁরা প্রশ্ন করেছেন, মেয়ে জবাব দিয়েছে থেমে থেমে, অনেকটা বিরতি নিয়ে। তাদের ভাষ্যমতে, লাবণ্য বলেছে, ‘নিজেই দিছি…তুমরার জামাইয়ের কথার কারণে। অনেক খারাপ খারাপ কথা কইছে। বাঁচতে ইচ্ছা হইছিল না। এত খারাপ কথা বলে তো কী করমু? সাদীর সাথে কথা বলমু না। আসলেও দেখা করমু না। আমি চাই না হে এওনো আইয়ুক। আমি অনেক ভালা আছি।’

স্বামী টাকা চেয়ে অত্যাচার করছিল করেছিল বলে জানিয়েছে ধুঁকতে থাকা মেয়েটি। সে বলেছে, ‘তুমার জামাই কইছে দাদুর কাছে কইছিলি টাকার কথা? আমি কইছি, না। বলে তোর তো সংসার করার ইচ্ছা নাই। সংসার করার ইচ্ছা থাকলে প্রতিষ্ঠিত কইরা দিতি। যা নয়, তাই কয়ছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, জামাই। এমনও দিন গেছে দুই–তিন দিন না খায়া থাকছি।’ ভালো হলেও আর কোনো দিন সাদীর কাছে ফিরবে না জানিয়েছে মেয়েটি।

মেয়ের বরাত দিয়ে মা–বাবা জানান, লাবণ্যর গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর মাছ–মাংস–ডিম খাওয়া ছিল নিষেধ। ভাতের পাশে একটু ভর্তা আর ডাল। চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যায়নি ওরা। লাবণ্যর স্বামী জানিয়ে দিয়েছিল, চিকিৎসকের কাছে যেতে হলে দাদির বাড়িতে ফিরতে হবে। ওর বাবা কথা দিয়েছিলেন সাত–আট দিন পরে মেয়েকে নিয়ে যাবেন। সেই সময়ও তারা দিতে রাজি হয়নি। গর্ভবতী কিশোরীকে প্রচণ্ড মারধর করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে আরিফুল ইসলাম মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন। গত ১ আগস্ট থেকে সে দাদির কাছেই ছিল।

লাবণ্যর শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায়। লাবণ্যকে সেখান থেকে এনে কলমাকান্দার গাখাজোড়া গ্রামে দাদির কাছে রেখে এসেছিলেন বাবা আরিফুল ইসলাম। পাঁচ দিন আগে ওই বাড়িতে থাকা অবস্থায় ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা হওয়ার পর গায়ে আগুন দেয় মেয়েটি।

সুরাইয়া নেওয়াজ লাবণ্যর মা–বাবার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে তাঁর স্বামী শেখ সাদী হোসায়েনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর দুটি ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ওসি আবদুল আহাদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন।

লাবণ্য যখন বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে, তখন তার মা–বাবা, স্বজনেরা মেয়েটির জীবনের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে হিসাব কষছিলেন। তাঁরা একমত, ১৭ বছরের জীবনে মেয়েটি আসলে কিছুই পায়নি। মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পর দুজনই দুজনের নতুন সংসারে ব্যস্ত ছিলেন। দাদা–নানির কাছে বড় হওয়া লাবণ্য ভেবেছিল, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধলে জীবনটা অন্য রকম হবে। কিন্তু মাস দুয়েক পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয় তাঁর অসুখী জীবনের। যৌতুকের জন্য স্বামী, শাশুড়ি নানাভাবে অত্যাচার শুরু করেন। ১৬ মাসের সংসারে দফায় দফায় সালিস হয়েছে শুধু, মীমাংসা হয়নি।

বাবা আরিফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলার পর যদি একবার মেয়েটা আমার সঙ্গে কথা বলত, তাহলে এমন হতো না। বাবার জন্য সে পাগল ছিল। আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।’ বারবারই তিনি বলছিলেন, লাবণ্যই চায়নি তার স্বামীকে বাবা টাকাপয়সা দিক। মেয়ে তাঁর এই একটিই। পেশায় শিক্ষক আরিফুল পারিবারিকভাবে অবস্থাপন্ন।

মা আফরোজা ফাতেমা বললেন, ‘লাবণ্য গায়ে আগুন দেওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি থেকে আমাকে ফোন করেছিল। বলেছিল, লাবণ্য খুব কষ্টে আছে। আমি মা, আমার একটা কিছু করা দরকার।’ আফরোজা ঢাকায় সেলাইয়ের কাজ করে কোনো রকমে টিকে আছেন। তবু মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। মেয়ে আর সেই সময় দেয়নি।

পাঁচ দিন ধরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন লাবণ্য। লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগপর্যন্ত সন্তানের খোঁজ নিয়েছে সে। মা–বাবার হাত ধরে হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে একটু উঠে দাঁড়াতে চেয়েছে। সকাল আটটায় হঠাৎ রক্তক্ষরণ শুরু হয়, জন্ম হয় মৃত কন্যাশিশুর। এই খবরটাও সে পায়নি, তার আগেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সে আর চোখ মেলে তাকায়নি, কথাও বলেনি।

ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন আইউব হোসেন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ডাক্তারি যত রকমের চেষ্টা আছে, সবই চলছে। খুব বেশি আশা নেই।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ