Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

“গালিব” অর্থাৎ বিজয়ী, মির্জা আসাদুল্লাহ বেইগ খান

Share on Facebook

মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ, ডাক নাম গালিব (২৭শে ডিসেম্বর,১৭৯৭ — ১৫ই ফেব্রুয়ারী,১৮৬৯) ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকের একজন উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি। সাহিত্যে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য তাকে দাবির-উল-মালিক ও নাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর সময়কালে ভরতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা পুরোপুরিভাবে মোঘলদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে, তিনি তাঁর লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মহাবিদ্রোহের সময়কার তাঁর লেখা সেই দিনলিপির নাম দাস্তাম্বু। তিনি জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে বর্ননা করেছেন ও গেয়েছেন। তাকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। আজ শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে।

গালিব কখনো তাঁর জীবিকার জন্য কাজ করেননি। সারা জীবনই তিনি হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে নতুবা কোনো বন্ধু উদারতায় জীবন যাপন করেন। তাঁর খ্যাতি আসে তাঁর মৃত্যুর পর। তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তাঁর গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দেবে। ইতিহাস এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। উর্দূ কবিদের মধ্যে তাঁকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে।

গালিব ১৭৯৭ সালে আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা আগ্রার আদি বাসিন্দা ছিলেন না৷ তার দাদা কাকান বেগ খান সামরিক উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি হিসেবে সমরকন্দ থেকে ভারতে আগমণ করার পর বিভিন্ন সময়ে পাঞ্জাবের গভর্নর, মোগল সম্রাট শাহ আলম ও জয়পুরের মহারাজার অধীনে সামরিক দায়িত্ব পালন করেন৷ কাকান বেগের বিরাট পরিবারের মধ্যে তার দুই পুত্র আবদুল্লাহ বেগ খান ও নসরুল্লাহ বেগ খান তার পদাংক অনুসরণ করে সৈনিকের পেশা গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন শাসকের অধীনে৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতে এই পেশা অত্যন্ত অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক ছিল৷ গালিবের পিতা আবদুল্লাহ বেগ খানের মৃত্যুর সময় তার বয়স মাত্র চার বছর৷ ভাই এর পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নসরুল্লাহ বেগ খান৷ ১৮০৬ সালে নসরুল্লাহ খান মারাঠাদের অধীনে আগ্রা দুর্গের অধিনায়ক হন এবং এক পর্যায়ে বৃটিশের কাছে দুর্গ সমর্পণ করলে তিনি বৃটিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুরস্কৃত হন৷ চাচার মৃত্যুর সময়ে গালিবের বয়স নয় বছর৷

মির্জা গালিবের পিতা আগ্রার এক অভিজাত পরিবারে বিয়ে করেছিলেন৷ সৈনিক জীবনের অনিশ্চয়তার কারণে তিনি তাঁর স্ত্রীকে আগ্রায় পিতার পরিবারেই অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন৷ মামার বাড়িতেই গালিবের জন্ম এবং তুলনামূলকভাবে তিনি আরামদায়ক শৈশব কাটান, যা তার পিতা ও কাকার মৃত্যুর পরও ব্যাহত ছিল৷ কিন্তু পিতা ও কাকার অকাল মৃত্যুতে তার মধ্যে বঞ্চনার স্থায়ী প্রভাব হয়নি৷ তাছাড়াও বংশের ঐতিহ্যের কারণে অহংকারী গালিবের মধ্যে তার মায়ের পিতৃগৃহে অবস্থানের প্রভাব নেতিবাচক ছিল৷ কিন্তু সৌভাগ্যবশত: শৈশবে তাঁর শিক্ষা এমন ছিল যে তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যাহত হয়নি৷ আগ্রার খ্যাতিমান পন্ডিত শেখ মোয়াজ্জেম তাঁর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ এছাড়া সম্ভবত: তিনি মীর আযম আলী পরিচালিত একটি মাদ্রাসায়ও যেতেন৷ তিনি যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিত্সাশাস্ত্র ও অধিবিদ্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা করেন৷ কিন্তু তার ঝোঁক ছিল ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি, এবং বিশেষত: ফার্সি ভাষার প্রতি৷ এসময়ে আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ আবদুস সামাদ নামে এক জ্ঞানী ব্যক্তি আগ্রা সফর করেন৷ গালিব তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন৷ আবদুস সামাদ গালিবের মামার বাড়িতে দুই বছর অতিবাহিত করেন৷ গালিব কখনো কাউকে তার ‘উস্তাদ’ বলে স্বীকার না করলেও পরবর্তীকালে আবদুস সামাদের উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার সাথে৷

নয় বছর বয়সেই গালিব ফার্সিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন৷ পুরো জীবন ধরে তিনি ফার্সিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু তিনি যে শৈশবেই উর্দুতে কবিতা লিখতেন তারও দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ কবি আলতাফ হোসেন হালীর বর্ণনা অনুসারে কানাইয়া লাল নামে এক লোক গালিবের একটি মসনবী সংরক্ষণ করেছিলেন যা গালিবের আট বা নয় বছর বয়সে লিখা৷ এটির অস্তিত্ব গালিব বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরে যখন তাকে এটি দেখানো হয় তখন তিনি অত্যন্ত ব্যগ্রতার সাথে সেটি পাঠ করেন৷

বলা হয়ে থাকে যে, আগ্রার এক অভিজাত ও কবি হোসাইন-উদ-দৌলা একবার কিছু তরুণ কবির কবিতা নিয়ে যান লক্ষ্ণৌর বিখ্যাত কবি মীর তকী মীরের কাছে৷ মীর তকী কবি খ্যাতির পাশাপাশি চড়া মেজাজের জন্যেও পরিচিত ছিলেন এবং ভালো কবিতা ছাড়া সবই বাতিল করে দিতেন৷ কেউ সাহস করে তাকে গালিবের কবিতা দেখায় এবং গালিবের মেধা সম্পর্কে অবহিত করে৷ গালিবের গজল পাঠ করে তিনি মন্তব্য করেন যে, কোন ভালো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে ছেলেটি বিরাট কবি হতে পারবে৷

১৮১০ সালের ৮ই আগস্ট তেরো বছরের কম বয়সে গালিব নওয়াব ইলাহী বখশ খানের কন্যা ওমরাও বেগমকে বিয়ে করেন এবং বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আগ্রা থেকে দিল্লিতে চলে আসেন৷ সম্ভবত তা ১৮১১ সালে এবং পরবর্তী একান্ন বছর ধরে তিনি দিল্লিতেই বসবাস করেছেন৷ অবশ্য সাত বছর বয়স থেকেই তিনি দিল্লিতে আসতেন বলে নগরীটি তার কাছে নতুন ছিল না৷ তার শ্বশুর দিল্লির অভিজাতদের অন্যতম ছিলেন৷ ‘মারুফ’ ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন তিনি৷ কবি হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্যে আগ্রার চাইতে দিল্লির পরিবেশ অনুকূল ছিল ৷ অবশ্য অব্যাহত রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তার পূর্বেকার কবি মীর তকী মীর ও সওদাকে দিল্লি ত্যাগ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনায় বৃটিশ উপনিবেশিক শক্তির উপস্থিতি দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শান্ত রেখেছিল৷

দিল্লিতে আগমণের পর গালিব চাঁদনী চকের কাছে একটি প্রাসাদ ভাড়া নেন৷ শ্বশুরের প্রভাবের কারণে দিল্লির অভিজাত মহলের সাথে পরিচিত হতে তাকে বেগ পেতে হয়নি৷ কিন্তু তার কবি সূচনা খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না৷ তার প্রথমদিকের কবিতা ফার্সি ঘেঁষা ছিল৷ উর্দু সাধারণ মানুষের ভাষায় পরিণত হওয়ায় সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল৷ কিন্তু গালিবের ওপর ফার্সি কবি বুখারি, আসীর ও বেদীর প্রভাব ছিল৷ সমালোচকদের মতে গালিবের প্রথম জীবনের কবিতা তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই দুর্বোধ্য ও সামঞ্জস্যহীন ছিল৷ গালিব যদি কোন মুশায়রায় উপস্থিত থাকতেন, তাহলে খুব কমসংখ্যক কবিই অর্থহীন শব্দ সংবলিত কবিতা উপস্থাপন করতেন৷ একবার দিল্লির সুপরিচিত এক কবি হাকিম আগা খান একটি কবিতা আবৃত্তির সময় হাত-পা ছুঁড়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, গালিবের কবিতা একমাত্র আল্লাহ এবং স্বয়ং গালিবের পক্ষেই বুঝা সম্ভব৷ অন্যেরাও কমবেশি একইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন৷ রামপুরের মৌলভি আবদুল কাদের একবার গালিবকে বলেন, ‘আপনার উর্দু কবিতাগুলোর একটি আমি বুঝতে পারি না’, এবং তিনি তখন একটি কবিতা রচনা করে তাকে শোনান,

“প্রথমে মোষের ডিম থেকে গোলাপের নির্যাস নাও, এছাড়াও সেখানে অন্য যে সব ওষুধ আছে সেগুলোও মোষের ডিম থেকে বের করে নাও”

গালিব চমকে উঠে বলেন, ‘এটি অবশ্যই আমার কবিতা নয়৷’ মৌলভি কাদের রসিকতা বজায় রেখে বলেন, ‘আমি আপনার দিওয়ানেই এটি পেয়েছি৷ কপি থাকলে আনুন, আমি এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি৷’ অবশেষে গালিব উপলব্ধি করেন যে, তাকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে তার দিওয়ানে এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কবিতার উপস্থিতি আছে৷ অবশ্য বিরূপ সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন গালিব:

“আমি প্রশংসার কাঙ্গাল নই পুরস্কারের জন্যে লালায়িত নই আমার কবিতার যদি কোন অর্থও না থাকে তা নিয়েও আমার তোয়াক্কা নেই৷”

আরেকটি কবিতায় তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেন,

“ও, আমার হৃদয়, এটা তো সত্য যে আমার কবিতা খুবই কঠিন! খ্যাতিমান ও সফল কবিরা আমার কবিতা শুনে সেগুলো সহজ করতে বলে৷ কিন্তু কঠিন ছাড়া কোন কবিতা লিখা আমার জন্যেই কঠিন৷”

তা সত্ত্বেও গালিবের কবিতা অপূর্ব, ছন্দময় এবং সহজ ভাবসমৃদ্ধ৷ কিন্তু সমালোচনার প্রতি গালিবের অসহিষ্ঞুতাকে অনেকে পছন্দ করতে পারেননি৷ তার কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নিজের অহংকার এতো প্রচন্ড ছিল যে, তিনি মনে করতেন যে খুব কম লোকই তার কবিতাকে বিচার করতে সক্ষম৷

“আমার হৃদয়ের আগুন থেকেই আলো দিচ্ছে আমার কবিতা, আমি যা লিখছি তাতে একটি আঙ্গুল দেওয়ার সাধ্য নেই কারো৷”

গালিব নিজেকে দিল্লির অভিজাতদের মধ্যে গণ্য করতেন এবং সেভাবে চলতে ফিরতে ও আচার আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন৷ কবি আলতাফ হোসেন হালী লিখেছেন যে, গালিব কখনো পালকি ছাড়া কোথায়ও যেতেন না এবং যারা তার সাথে সাক্ষাতের জন্যে আসতেন, তিনিও শুধু তাদের কাছেই যেতেন৷

গালিব মদ্য পান করতেন এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে তার নিষ্ঠা ছিল না৷ অতএব, সেজন্যেও তাকে তীব্রভাবে সমালোচিত হতে হয়েছে৷ তার কবিতায় ধর্মীয় শব্দাবলী উঠে এসেছে প্রতীকি অর্থে, যা অনিবার্যভাবে ধর্মের প্রতি তার বিরূপতা নাও হতে পারে৷

“কা’বা তওয়াফের প্রয়োজন নেই আমার আমাকে জমজম কূপের কাছে থামতে হবে, কারণ আমার ইহরাম সুরায় ভিজে গেছে৷ গত রাতে আমি জমজমের পাশে বসে আকন্ঠ সুরা পান করেছি৷ প্রথম আলো ফুটতেই ইহরাম থেকে সুরার দাগ ধুয়ে ফেলতে হবে৷”

হালীর মতে গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন এবং তা প্রায়ই সন্ধ্যায়৷ একা বসে একটি সুতা নিয়ে খেলতেন৷ কবিতার একটি লাইন লিখার পর সুতায় একটি গিট দিতেন৷ যখন শুতে যেতে তখন সুতায় অনেকগুলো গিট থাকতো৷ সকালে তিনি গিটগুলো খুলতেন৷ লাইনগুলো তিনি মুখস্থও বলতে পারতেন৷ তার সৃজনশীলতা ও কল্পনার ক্ষেত্রে মদিরা সহায়ক ছিলো বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ সুরার প্রতি আসক্তিকে গালিব মনে করতেন আশীর্বাদ৷ তিনি লিখেছেন:

“ও আসাদ, সুরা পান করতে অস্বীকারকারী পুরোপুরিই অজ্ঞ; তার বেহেশতের সাকীর ভালোবাসা ছাড়া সুরা নিষিদ্ধ৷”

গালিবের আরেকটি দুর্বলতা ছিল জুয়া খেলার প্রতি৷ এ ব্যাপারে তার কোন রাখঢাক ছিল না৷ গ্রীষ্মের একদিন এবং তখন রমজান মাসও ছিল, গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশিষ্ট কবি ও ইসলামী আইনে বিশেষজ্ঞ মুফতি সদরুদ্দিন আজুর্দা গালিবের সাথে সাক্ষাত্ করতে গিয়ে দেখতে পান যে তিনি জুয়া খেলছেন৷ ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে এখন তার সন্দেহ হচ্ছে যে, পবিত্র গ্রন্থাদিতে যে বলা হয়েছে রমজান মাসে শয়তান কারারুদ্ধ থাকে, তা সত্য৷ গালিব তাকে স্বাগত জানিয়ে উত্তর দেন, গ্রন্থের বক্তব্য যথার্থ, শয়তান যথার্থই কারারুদ্ধ এবং তা এই কক্ষেই৷ গালিব কখনো রোজা রাখেননি এবং তিনি তা স্বীকার করেছেন৷ অন্যান্য দোষও তিনি স্বীকার করতেন এবং ধর্মের বাণী প্রচারকারীদের বিদ্রূপ করতেন৷ আর্থিক অনটন গালিবের জীবনকে বেপরোয়া করে তুলেছিল এবং নিজ বাড়িতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতেন জুয়া খেলতে৷ জুয়া খেলাকে নৈতিকভাবে অপরাধ মনে করতেন না তিনি৷ তখনকার বৃটিশ কর্তৃপক্ষ নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছিল এবং জুয়া খেলাকে ‘দেশীয়’দের বদভ্যাস বলে বিবেচনা করতো৷ জুয়াখেলার কারণে ১৮৪১ সালে গালিবকে সতর্ক করে দেয়া হয় এবং ১০০ রুপি জরিমানাও করা হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লির কোতোয়াল ফৈয়াজ হাসান খান গালিবের বাড়িতে হানা দিয়ে জুয়া খেলারত অবস্থায় তাকে পাকড়াও করেন এবং বিচারে তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও দু’শ রুপি জরিমানা করা হয়৷ জরিমানা দেয়া না হলে কারা মেয়াদ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ৫০ রুপি দেওয়া হলে সশ্রম কারাদন্ড বিনাশ্রম হওয়ার শর্ত ছিল৷

এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি উঠে৷ তখনকার সংবাদপত্রগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়৷ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর বৃটিশ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার পরও সরকার অনড় ছিল৷ সম্রাটকে জানানো হয় যে বিচারাধীন বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ না করাই ভালো৷

গালিবকে অবশ্য পুরো মেয়াদ কারাবাস করতে হয়নি৷ তিন মাস পরই তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ কারাগারে তাকে কোন শ্রম দিতে হয়নি৷ বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেতে দেয়া হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের সাথে সাক্ষাতও করতে দেয়া হয়েছে৷ অবশেষে দিল্লির সিভিল সার্জনের সুপারিশে মেয়াদ পূর্তির আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ কিন্তু গালিবের ওপর এই শাস্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল৷ অভিজাত, বুদ্ধিজীবী এবং দুঃখ ও আনন্দে অতি স্পর্শকাতর কবি হিসেবে তার যে অহংকার ছিল তা গুঁড়িয়ে যায় তার সাথে সাধারণ অপরাধীর মতো আচরণ করায়৷ শাসকদের দৃষ্টিতে তার গুরুত্ব রয়েছে বলে ধারণা ধুলিসাৎ হয়ে যায় এবং নামসর্বস্ব মোগল সম্রাটের অক্ষমতাও তার কাছে স্পষ্ট হয়৷ তার বিপদে বন্ধুরাও তাকে পরিত্যাগ করেছিল৷ গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুদ্দিন খান গালিবের সাথে তার সম্পর্কের বিষয় মুছে ফেলতে সংবাদপত্রে বিবৃতি পর্যন্ত দিয়েছেন৷ ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু মোস্তফা খান শেফতা নামে এক বন্ধু, যিনি তার কারাদন্ড লাঘবের চেষ্টা এবং প্রতিদিন তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন৷ গালিব জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো পর্যন্ত তার প্রতি ঋণ স্বীকার করে গেছেন৷

ফার্সি ভাষায় লিখা এক চিঠিতে তিনি পৃথিবীতে আর না থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কারামুক্ত হয়ে৷ যদি বাঁচতেই হয় তাহলে হিন্দুস্থানে নয়, রুম, মিশর, ইরান, বাগদাদে এমনকি মক্কায় গিয়ে থাকতে চেয়েছেন৷ তার আগে সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন তিনি৷

অবশ্য এ পরিস্থিতিতে বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর গালিবের সহায়তায় এগিয়ে আসেন৷ ১৮৫০ সালে তিনি গালিবকে ‘নাজমুদ দৌলাহ দাবির উল-মুলক নিজাম জং’ খেতাবে ভূষিত করে তাকে তৈমুরের বংশের ইতিহাস লিখার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন বার্ষিক ছয়শ’ রুপি ভাতায়৷ এতে গালিব মানসিকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হন৷ কিন্তু ইতিহাস রচনার কাজে যে পড়াশুনা ও ধৈর্য্যের প্রয়োজন গালিবের তা ছিল না এবং দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ছয় মাসে তিনি মোগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের চাইতে বেশি আর অগ্রসর হতে পারেননি৷ তার আর্থিক অবস্থা ছিল নাজুক এবং তাকে মাসিক ভিত্তিতে ভাতা দেয়ার জন্যে বাহাদুর শাহকে লিখেন৷ বাহাদুর শাহ এতে অনুমোদন দেন, কিন্তু ১৮৫১ সালের মধ্যে সম্রাট হুমায়ুনের জীবনকাহিনীর চাইতে বেশি আর লিখতে পারেননি৷ অতএব, প্রকল্পটি ভেস্তে যায়৷ তিনি যতটুকু লিখেছিলেন তা ‘মিহির-ই-নিমরোজ’ নামে ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয়৷

১৮৫৪ সালে গালিব বাহাদুর শাহ জাফরের উস্তাদ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন৷ তার বার্ষিক ভাতা চারশ’ রুপিতে দাঁড়ায়৷ গালিবের কবি খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পায়৷ গালিব একই সাথে অযোধ্যার নওয়াব ওয়াজিদ আলী শাহের ওপর তার প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন৷ এক পর্যায়ে তিনি তাকে বার্ষিক পাঁচশ’ রুপি ভাতা মঞ্জুর করেন৷ আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এলেও গালিবের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছিল৷ চোখে কম দেখছিলেন এবং কানেও কম শুনছিলেন৷ মোটামুটি এ সময়েই তার কবি বন্ধু মোমিন ও জওক এর মৃত্যু ঘটে এবং দু’জনের মৃত্যুতে তিনি ব্যথিত হন৷ ১৮৫৬ সালে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ অযোধ্যাকে বৃটিশ আওতায় নিয়ে আসে এবং একই বছরে পরবর্তী মোগল সম্রাট বলে নির্ধারিত মির্জা ফখরুদ্দিন ইন্তেকাল করেন৷ অতএব দুটি উত্স থেকেই গালিবের ভাতা প্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যায়৷

কিন্তু এর চাইতে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছিল৷ তা ছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, যার ফলে জীবনের পরিচিত সবকিছু তছনছ হয়ে যায় এবং বিদ্রোহের পর বৃটিশ কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা চালু করে তা ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়৷ মোগল বাদশাহ’র সময়ে তিনি যে ভাতা লাভ করতেন, তা বৃটিশ কর্তৃপক্ষ বাতিল করেন৷ ফলে মির্জা গালিবকে নতুন করে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়৷ ভাতা পুনর্বহালের জন্যে তিনি বৃটিশ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করেন, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি৷

১৮৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী মহান কবি গালিব মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়৷ বর্তমানে গালিবের সমাধিক্ষেত্রটি চরম অবহেলায় পর্যবসিত।

সারাটা জীবনই অর্থকষ্টে কাটানো কবির হাতে নিশ্চিত অর্থাগম এর এক রাস্তা প্রায় খুলে গেছিল।দিল্লি কলেজের ফার্সি ভাষাশিক্ষার চাকুরির প্রস্তাব এলো তার কাছে। দিল্লি কলেজের পরিদর্শক ছিলেন জেমস্ থমসন। ফার্সি ভাষায় কবির দক্ষতা শুনে তার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলো পড়ানোর জন্য। অর্থকষ্টে জর্জরিত কবিও প্রস্তাব মেনে থমসনের বাড়ি আসলেন। অপেক্ষা করলেন অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নেবার।

অপেক্ষা করছেন, কিন্তু কেউ ডেকে নিয়ে যাচ্ছে না বাড়ির ভিতরে; কবিও নিজে থেকে গেলেন না ভেতরে। কিছুক্ষণ পরে থমসন নিজে বেরিয়ে এসে জানতে চাইলেন, ভেতরে না যাবার কারণ। কবি বললেন, আগে প্রতিবারই তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে; এখন ব্যতিক্রম হবার কারণ কী? থমসন স্পষ্ট করে দিলেন বিষয়টি। আগে প্রতিবার কবি ছিলেন দরবারের অতিথি, আর এখন একজন চাকুরে। শুনে সাথে সাথেই চাকুরি না নিয়ে ফিরে আসেন কবি। এই ঘটনাই নির্ধারণ করে দেয় কবির আত্মসম্মান; অর্থের অভাব, কিন্তু মাথা-কলম বিকিয়ে অর্থ উপার্জন নয়!

এমনই ছিলেন ফার্সী সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা আসাদুল্লাহ বেইগ খান। যাঁকে আমরা চিনি গালিব নামে। “গালিব” অর্থাৎ বিজয়ী, জীবনের কাছে মার খেতে পারেন কবি; কিন্তু কালের বিচারে তিনি অমর।

সূত্র: সংগৃহিত
তারিখ: ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

(সৌজন্যে :উইকিপিডিয়া)

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ