Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

জাতিসংঘে দাপ্তরিক বাংলা ভাষার দাবি: গরিবের ঘোড়ারোগ কী (২০২১)!

Share on Facebook

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে তিনি এ দাবি জানান। একই বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, টাকার অভাবে বাংলা দাপ্তরিক ভাষা হচ্ছে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিক আলোচনায় প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ পরিমাণ আমাদের বার্ষিক চাঁদার প্রায় দুই হাজার গুণ। বছর বছর এতগুলো টাকা দেওয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন। তবে অর্থনীতির আকার বিচারে জাপান, জার্মানি এমনকি ব্রাজিলের জন্য তুলনামূলক সহজ। কিন্তু এরা কেউই কেন তাদের ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার চেষ্টা করছে না, সে কথাটি বিবেচনা করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ছয়টি: ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, আরবি, রুশ ও চীনা। এই ছয় ভাষার বাইরেও অন্য ভাষাভাষী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশ আছে, জাতিসংঘে যাদের দেয় চাঁদার পরিমাণও বেশ। জাপান এখনো বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, (জাতিসংঘ বাজেটে অবদান প্রায় ৮ শতাংশ), জার্মানি পঞ্চম (অবদান প্রায় ৬ শতাংশ)। জাতিসংঘ বাজেটে বাংলাদেশের চাঁদা কমবেশি তিন লাখ ডলার, যা মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ। বাংলাভাষীর সংখ্যা অবশ্য জার্মান বা জাপানি ভাষাভাষীর চেয়ে বেশি। পর্তুগিজভাষীর সংখ্যা অনেকটা কাছাকাছি, আর ব্রাজিলসহ ১০টি দেশে পর্তুগিজ দাপ্তরিক ভাষা। ব্রাজিলের চাঁদার পরিমাণও বাজেটের প্রায় ৩ শতাংশ। এই ভাষাগুলোর একটিও জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা নয়। এমনকি ভারতের হিন্দিও নয়, যদিও হিন্দিভাষীর সংখ্যা বাংলাভাষীর চেয়ে বেশি। ভারত জাতিসংঘ বাজেটের শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ২৪ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দেয় প্রতিবছর।

ধরা যাক, কোনো একসময় আমাদের সামর্থ্য হলো, আর বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার ব্যবস্থা করে ফেললাম। জাতিসংঘের দলিল–দস্তাবেজ, আলোচনা, বক্তৃতার সব বিবরণ এরপর বাংলায়ও ছাপা হবে। তাতে কি আমাদের বা বাংলা ভাষার কোনো উপকার হবে? পৃথিবীর লোক কি এর ফলে বাংলা শেখা শুরু করবে? করবে না। বিপুল ব্যয়ে আমরা শুধু একটি আত্মতৃপ্তি কিনব যে হ্যাঁ, আমাদের বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। এর ফলে বাকি পৃথিবীও যে আমাদের খুব সমীহের চোখে দেখবে, সে সম্ভাবনাও কম। বরং গরিবের ঘোড়ারোগ হিসেবেই এটা প্রতীয়মান হবে। এই বাস্তবতাবিবর্জিত, অপ্রয়োজনীয় স্বপ্নবিলাস থেকে তাই আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার।

বাংলা নিয়ে বরং দেশের ভেতরে অনেক কিছু করার আছে। কয়েক বছর আগে নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় আমার গ্রামে একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যে ৭০ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, তাদের ২০ জন ভালোমতো বাংলা পড়তে পারে না। অথচ এরা সবাই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। সহজ ইংরেজি পড়তে পারে না অর্ধেকের বেশি। দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বই নিয়ে শিক্ষকদের তাদের সঙ্গে বসতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, গ্রামাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছাত্রেরই এই অবস্থা। এর থেকে উত্তরণ দরকার। পঞ্চম শ্রেণি পাস করবে যে ছাত্র, তাকে সক্ষম করে তুলতে হবে, যেন সে সহজে যেকোনো বাংলা বই পড়তে পারে। পড়তে না পারলে, পড়া উপভোগ না করলে, পড়ায় আগ্রহী হবে কী করে।

ইংরেজির পক্ষে কিছু বলা ফেব্রুয়ারি মাসে রীতিবিরুদ্ধ। এখন মার্চ মাস, কথাটা বলা যায়। দোহায় কাতার এয়ারওয়েজের বিজনেস লাউঞ্জে দুটো ছেলে কাজ করছিল। দুজনের একই কাজ। বাংলাদেশের আবদুল আলী (প্রকৃত নাম নয়) তিন লাখ টাকা খরচ করে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গেছে, বেতন ১ হাজার ২০০ রিয়াল, থাকা ফ্রি, নিজের পয়সায় খেতে হয় শুধু এক বেলা। সে যথেষ্ট খুশি। ভারতীয় ছেলেটাও খুশি। সে সরাসরি কাতার এয়ারওয়েজে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছে, কোনো খরচ হয়নি, বেতন ৩ হাজার ৫০০ রিয়াল। বাঙালিকে বৈষম্যের কারণ জিজ্ঞেস করলাম। সে জানাল, যে ‘কফিলের’ সঙ্গে চুক্তিতে সে এসেছে, কাতার এয়ারওয়েজ তাকে দেয় ৩ হাজার ৬০০ রিয়াল, তা থেকে কফিল তাকে দেয় ১ হাজার ২০০। এটা সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ। সে–ও কেন ইন্টারভিউ দিয়ে এল না? করুণ স্বরে সে জানাল, ইন্টারভিউ ইংরেজিতে আর সে ইংরেজি পারে না।

ইংরেজির এই প্রকট ঘাটতি আমাদের চাকরির বাজারে সর্বত্র। এ ঘাটতি পূরণের জন্য ১০ বছর মেয়াদি একটা প্রকল্প নিলে কেমন হয়? শুরু করতে হবে গোড়া থেকে। ৩৮ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি থেকে একজন করে শিক্ষককে বছরব্যাপী শুধু বাচ্চাদের ইংরেজি শেখানোর নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা শুধু ইংরেজিই পড়াবেন। প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর পেছনে তিন লাখ টাকা করেও যদি খরচ পড়ে, মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কম। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা এ কাজে সহায়তা করতে পারে।

বাংলাদেশে মোট হাইস্কুলের সংখ্যা ২৪ হাজারের মতো। বেশ কিছু স্কুল মানসম্মত। সমস্যা প্রধানত গ্রামাঞ্চলের বেসরকারি স্কুলগুলো নিয়ে। এমন যদি ২০ হাজার স্কুল থাকে, ইংরেজি পড়াতে প্রতিটির জন্য ২ জন করে মোট ৪০ হাজার অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ করুক না এই প্রকল্প। চাকরির বাজারের যা অবস্থা, মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন দিলে মোটামুটি ইংরেজি জানা এমএ পাস তরুণদের পাওয়া যাবে এ কাজে। বছরে ব্যয় হবে কমবেশি ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রশিক্ষণে যাবে আরও কিছু। সব মিলিয়ে বার্ষিক ব্যয় কিন্তু পাঁচ হাজার কোটির অনেক কমই হবে। কেমন হয়, ভেবে দেখুন তো। ইংরেজি জানা কর্মচারীর জন্য চাকরিদাতাদের হাপিত্যেশ দূর হয়ে যাবে অনেকটা। আবদুল আলীদেরও আর নগণ্য বেতনে ‘কফিলকে’ দাসখত দিয়ে কাজ করতে যেতে হবে না মধ্যপ্রাচ্যে।

লেখক মো. তৌহিদ হোসেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ০৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ