Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

তাজমহল না তেজো মহালয় (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাজমহলের ২২টি বন্ধ ঘর আপাতত বন্ধই থাকছে। সেখানে কী আছে, তা খুলে দেখার অনুমতি পাওয়া গেল না। ফলে জানা যাবে না, বন্ধ কুঠুরিগুলোতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে কি না। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। শুধু মামলা খারিজই নয়, দুই বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় ও সুভাস বিদ্যার্থী মামলাকারীকে ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘জনস্বার্থ মামলাকে এভাবে উপহাসে পরিণত করবেন না।’ ক্রুদ্ধভাবে তাঁরা বলেন, ‘এরপর তো আমাদের চেম্বার খুলে দেখতে চাওয়া হবে, কী রয়েছে!’

ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য তাজমহলের ‘আসল ইতিহাস’ অনুসন্ধানের অভীপ্সায় দায়ের হয়েছিল এই মামলা। মামলাকারী অযোধ্যাবাসী। নাম রজনীশ সিং। বিজেপির ‘মিডিয়া ইনচার্জ’। তাঁর দাবি, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই স্থাপত্যের অন্দরে ২২টি প্রকোষ্ঠ অনন্তকাল ধরে বন্ধ রয়েছে। সেই ঘরগুলো খোলা হোক। দেখা হোক তার অভ্যন্তরে কী কী আছে। তাঁর স্পষ্ট দাবি, আজ যার পরিচয় তাজমহল, তা আসলে ‘তেজো মহালয়’ নামে এক প্রাচীন শিবমন্দির, যার ওপরে নির্মিত হয়েছে তাজমহল। তাঁর আবেদন ছিল, তাজমহলের ‘প্রকৃত ইতিহাস’ অনুসন্ধানে দায়িত্ব দেওয়া হোক আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআইকে। তারাই বন্ধ ঘর খুলে দেখুক সেখানে কী লুকানো রয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা হোক, কোনো হিন্দু মন্দিরের কাঠামোর ওপর মোগল সম্রাট শাহজাহান এই বিস্ময়কর স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন কি না।

রজনীশের আইনজীবী রুদ্র বিক্রম সিংয়ের আরজি, বহু হিন্দু সাধুসন্তের বিশ্বাস, ওই খানে ছিল তেজো মহালয় নামে শিবমন্দির, যা ১২১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা পরমর্দি দেব। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ গতকাল জানান, সত্য উদ্‌ঘাটনের দায়িত্ব ইতিহাসবিদদের ওপরেই থাকুক।

তাজমহল নিয়ে গত বুধবার আসর সরগরম করেন রাজস্থানের জয়পুর রাজপরিবারের রানি দীয়া কুমারীও। বিজেপির লোকসভা সদস্য জয়পুরের শেষ মহারাজা মান সিংয়ের এই নাতনির দাবি, যে জমিতে তাজমহল তৈরি, একসময় তা ছিল জয়পুর রাজপরিবারের। এ–সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাঁদের রাজ পরিবারে রয়েছে। প্রয়োজনে তা দাখিলও করতে পারবেন। দীয়া কুমারী বলেন, ‘আমি বলছি না তাজমহল ভেঙে ফেলা হোক। কিন্তু সত্য উদ্‌ঘাটনে বন্ধ দরজা খোলা দরকার। সব রহস্য ওখানেই।’

কিন্তু সেই রহস্য উদ্‌ঘাটনে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালেন না দুই বিচারপতি। গতকাল শুনানির সময় আবেদনকারীকে তাঁরা বলেন, ‘এ নিয়ে তর্ক করতে হলে আপনি বাড়িতে আসুন। বৈঠকখানায় আপনারা স্বাগত। কিন্তু আদালতে নয়।’ আবেদনকারী তথ্য জানার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিচারপতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘সেই গবেষণা করতেই পারেন। এমএ করুন, পিএইচডি করুন। গবেষণার বিষয় পছন্দ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। কেউ যদি গবেষণার সেই অধিকার না দেয়, তখন আমাদের কাছে আসবেন।’

প্রিয় বেগম মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে সম্রাট শাহজাহান ১৬৩১ সালে যে কাজে হাত দিয়েছিলেন, ২২ বছর ধরে ২২ হাজার শ্রমিকের উদয়াস্ত পরিশ্রম শেষে তা শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। সেই বিস্ময়-স্থাপত্য তাজমহলকে ঘিরে বিতর্ক অবশ্য এই প্রথম নয়। মাঝেমধ্যেই তা মাথাচাড়া দেয়। ২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের একদল আইনজীবীও এ নিয়ে মামলা করেছিলেন। তাঁদেরও দাবি ছিল, তাজমহল আসলে এক শিবমন্দির।

২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের কট্টরবাদী বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন তাজমহলের অভ্যন্তরে কোনো হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে। ২০১৯ সালে কর্ণাটকের বিজেপি নেতা অনন্ত কুমার হেগড়ে দাবি করেন, শাহজাহান নাকি আদৌ তাজমহল তৈরি করেননি। ওটা তিনি কিনেছিলেন রাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে।

ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে পুরাতত্ত্ববিদেরা কেউই কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে সহমত হননি। ২০১৮ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া আগ্রা কোর্টে এক হলফনামা পেশ করে জানিয়েছিল, শাহজাহানই তাজমহলের নির্মাতা। আদালতের কাছে রজনীশের আরও আবেদন ছিল তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, আগ্রা ফোর্ট যেসব কেন্দ্রীয় আইনে ‘ঐতিহাসিক সৌধ’ বলে সংরক্ষিত, তা বাতিল করা হোক।

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন শহর, জেলা, জনপদ, রাস্তার নাম বদলের একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ইসলামি নামের সঙ্গে যা কিছু যুক্ত, ‘ভারতীয়করণ’–এর নামে তার ‘হিন্দুত্বকরণ’ হচ্ছে। এলাহাবাদের নাম বদলে করা হয়েছে প্রয়াগরাজ।

ফৈজাবাদ জেলার নাম বদলে করা হয়েছে অযোধ্যা। প্রবল দাবি উঠেছে মুজাফফরনগরের নাম বদলে ‘লক্ষ্মীনগর’, আহমেদাবাদের নাম বদলে ‘কর্ণাবতী’, আগ্রার নাম পাল্টে ‘অগ্রবন’ করার। দুই দিন আগে এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন কুতুব মিনারের নাম বদলে ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’ করার দাবি তোলে। এই স্থাপত্য থেকে গণেশের দুটি মূর্তি সরানোর দাবি উঠেছিল। দিল্লির আদালত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে আপাতত তা না করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে বিজেপি থেমে নেই। দিন তিনেক আগে দিল্লি বিজেপির সভাপতি আদেশ গুপ্ত রাজধানীর ছয়টি রাস্তার নাম বদলের দাবি দিল্লি সরকার ও নতুন দিল্লি পৌরসভার কাছে পেশ করেন। তাঁর দাবি, শাহজাহান রোড হোক ‘জেনারেল বিপিন রাওয়াত রোড’, হুমায়ুন রোড ‘মহর্ষি বাল্মীকি রোড’, আওরঙ্গজেব লেন ‘ড. এপিজে আবদুল কালাম লেন’, তুঘলক রোডের নাম হোক ‘গুরু গোবিন্দ সিং রোড’, আকবর রোডের নতুন নাম হোক ‘মহারাণা প্রতাপ রোড’ এবং বাবর লেনের নামকরণ হোক ‘বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বোস লেন’। শুধু রাস্তাই নয়, বিজেপি চায় দিল্লির মধ্যে অন্তত ৪০টি অঞ্চলের নাম স্বাধীনতাসংগ্রামী, দেশপ্রেমিক, খেলোয়াড়, শিল্পীদের মতো গুণী মানুষের নামে রাখতে। ওই ৪০টি অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ইউসুফ সরাই, হুমায়ুনপুর, বেগমপুরা, হাউজ খাস, আজাদপুর, সাইদুল আজবের মতো পরিচিত এলাকা। এই আদেশ গুপ্তই দিল্লি পৌরসভাকে চিঠি লিখে ‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি’দের উচ্ছেদ করতে জাহাঙ্গীরপুরীতে বুলডোজার চালাতে বলেছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে রামমন্দির আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার সময় ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নরসিংহ রাও সরকার ধর্মস্থান আইন পাস করে। তাতে বলা হয়, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন দেশের যেখানে যে ধর্মস্থান ছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি। আইনটি করা হয়েছিল যাতে ভবিষ্যতে ধর্মস্থান বা ঐতিহাসিক স্থাপত্য ঘিরে অনর্থক বিতর্ক না সৃষ্টি হয়।

কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আইন অগ্রাহ্য করে বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি ‘উদ্ধার’ করতে নব উদ্যোগে নেমেছেন। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদের অভিন্ন দেয়ালে খোদাই করা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বছরভর পূজা করার অধিকার দাবি করে এক আবেদন দায়ের করা হয়েছিল বারানসি আদালতে। বিচারক আবেদন মেনে মসজিদের অভ্যন্তরের জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভিডিওগ্রাফ করার কথাও বলা হয়েছিল। সে জন্য কমিশনার নিযুক্ত করা হয়। গতকাল আদালত জানান, ১৭ মের মধ্যে জরিপের কাজ শেষ করতে হবে।

সংঘ পরিবারের ঘোষিত কর্মসূচির অন্যতম অযোধা, কাশী ও মথুরার ‘শৃঙ্খলমোচন’। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোধ্যা মুক্ত। কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদের জরিপের কাজ সেই লক্ষ্যে এক কদম এগোনো বলে বিজেপি মনে করছে। প্রস্তুতি চলছে মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থানের লাগোয়া শাহি ঈদগাহ মসজিদেরও জরিপের। স্থানীয় আদালতে এ জন্য মামলা হয়েছে। কাশী ও মথুরা নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের দাবি ও মামলা কেন্দ্রীয় আইনের লঙ্ঘন হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এখনো নীরব।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ১৩, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ