Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতির গেম চেঞ্জার-১৮, তিনি ( কাজী জাহেদুল হাসান) দেশের পোলট্রিশিল্পের রাজা (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: ফখরুল ইসলাম।

শৈশব থেকেই মেধাবী ছাত্র কাজী জাহেদুল হাসান। চেয়েছিলেন চিকিৎসক হতে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে নেন নিজেই। হয়ে যান প্রকৌশলী। ষাটের দশকের গোড়ার দিকের উত্তাল সময়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যান তিনি। স্থপতি হয়ে দেশে ফেরেন ১৯৬৭ সালে। শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বুয়েটে। সত্তরের দশকে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও করেন শিক্ষকতা।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই পুরোদমে পাল্টে যেতে থাকেন। ১৯৮৫ সালে জাহেদুল হাসানের বাবা মারা যান। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর বিদেশ করবেন না। ছোট ভাইয়ের এক বন্ধুর পরামর্শে নামেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়। ভালোও করছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরে এক দিন কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় হতাশা আসে, কিন্তু দমে যাননি। যদিও একসময় ছেড়ে দেন পোশাক খাতের ব্যবসা। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি নামেন ভিন্নতর এক ব্যবসায়ে। পোলট্রি খাতের ব্যবসা তখন সারা দেশের জন্যই নতুন। তখন তাঁর বয়স ৫৩। এত বেশি বয়সে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ব্যবসায় নামার চ্যালেঞ্জ নিতে দৃঢ় ছিলেন কাজী জাহেদুল হাসান।

এরপর আর তাঁকে পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি। ১৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসার আকার এখন কয়েক হাজার কোটি টাকা। থেকে থেকে পোলট্রি থেকে হ্যাচারি, ফিডমিল, আইসক্রিম, হিমায়িত খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে কাজী ফার্মস গ্রুপ। যে গ্রুপ আজ দেশের ঈর্ষণীয় ও পরিণত এক শিল্পগোষ্ঠীর নাম। পোলট্রি খাতের মোট বাজারের ২৫ শতাংশই বর্তমানে এ গোষ্ঠীর দখলে। যে কাজী ফার্মস গ্রুপ ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, সে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান কোনো দিন চিন্তাও করেননি তিনি ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি হবেন।
তিনি চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন

কাজী জাহেদুল হাসান চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হননি। পেছনে একটি গল্প রয়েছে। তাঁর এক খালাতো বোন পড়তেন মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর কাজী জাহেদুল যখন অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন, ওই সময়ে খালাতো বোন এক দিন হাসপাতালে একটা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেন। দেখতেও গেলেন তিনি। দেখলেন, কীভাবে পেটের অস্ত্রোপচার হয় এবং নাড়িভুঁড়ি কাটাছেঁড়া হয়।

কাজী জাহেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাক্তারিকে তখন বীভৎস একটা ব্যাপার মনে হলো। সহ্যই করতে পারছিলাম না। এই সিনেমা দেখার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে দিয়ে ডাক্তারি হবে না।’
দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা

১৯৫৮ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) ভর্তি হয়ে পুর প্রকৌশল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগ থেকে পাস করে বের হন ১৯৬২ সালে। ওই বছরই কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়। পরে তিনি গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। ১৯৬৭ সালে ফিরে এসে বুয়েটে যোগ দিলেন শিক্ষকতায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হার্ভার্ডে পিএইচডি করতে গেলেন তাঁর স্ত্রী। স্ত্রীর পিএইচডি শেষে ফিরে এলেন ১৯৭৮ সালে। একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওখানে থাকার সময় একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অধ্যাপক জুলতান নামের এক শিক্ষক। হাঙ্গেরির লোক তিনি। আমাকে কাজী বলে ডাকতেন। হঠাৎ বললেন, ‘কাজী, ওপরে এসো। জরুরি কথা আছে।’ গেলাম। তিনি বললেন, সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগ শুরু হবে। যোগ দেব কি না। আমি যোগ দিলাম।

এবার সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে শিক্ষকতা করলেন তিন বছর। একসময় শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এক কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি ওই দেশেই। ছিলেন ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত।

দেশে ফিরে করলেন পোশাক কারখানা

১৯৮৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আর বিদেশ করতে মন চাইল না কাজী জাহেদুল হাসানের। ফিরে এসে একটি আর্কিটেক্ট ফার্ম দিলেন দেশে। ভালো কিছু নকশাও করলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন কৌতূহলী। নতুন কিছু করার ব্যাপারে উদ্যমী। কিছুটা অস্থিরও। আর্কিটেক্ট ফার্মের পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের এক বন্ধুর পরামর্শে পোশাক কারখানা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। একসময় দুটিই ছেড়ে দিলেন।

দেশে তখন মাত্র ২০ থেকে ৫০টি পোশাক কারখানা। কাজী ফ্যাশনস লিমিটেড তাঁর কোম্পানির নাম। কাজী জাহেদুল হাসান পোশাক খাতের মধ্যে ভালো সম্ভাবনা দেখেন। কারখানা করার জন্য শ্বশুরের টিকাটুলীর পুরোনো একটি বাড়ি সাজালেন নতুন করে। ভালো ক্রয় আদেশও পাচ্ছিলেন। হঠাৎ একদিন পোশাক কারখানার কিছু পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পুড়ে যায়। বড় ক্ষতি হয়ে যায় তাঁর। কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, ‘আমার ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক। ব্যবসায়ী হিসাবে তখন আমিও নতুন, ব্যাংক হিসাবে ইসলামী ব্যাংকও নতুন। ইসলামী ব্যাংকের একজন বললেন, ‘মাল পুড়ে গেলেও আপনি বিমার টাকা পাবেন না। আমি তো হতাশ হয়ে গেলাম। বড় ক্ষতি হয়ে গেল। বিমার টাকা পেতে কোনো চেষ্টাও করিনি। পরে শুনলাম, বিমা কোম্পানি থেকে টাকাটা আমি পেতে পারতাম।’

অথচ ব্যবসা এত ভালো হচ্ছিল যে বিদেশি ক্রেতারা ক্রমাগত কারখানা বড় করার কথা বলে আসছিলেন কাজী জাহেদুল হাসানকে। কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটা একসময় তাঁকে হতাশ করে দেয়। ফলে একটা সময় এ কারখানাও বন্ধ করে দেন তিনি। এটা ১৯৮৬ সালের ঘটনা।
বাঁক পরিবর্তন

১৯৯৫ সালের ঘটনা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে এক বন্ধুর আমন্ত্রণে গেলেন ভারতের দিল্লিতে। গাড়িতে তিন ঘণ্টার দূরত্বে হরিয়ানায় মরুভূমির মধ্যে ছিল একটি পোলট্রি ফার্ম। বন্ধুর এক বন্ধু সেখানে যাওয়ার দাওয়াত দিলেন। ওই ফার্ম দেখেই তাঁর মনে হলো, বাংলাদেশে এর ভালো একটি সম্ভাবনা আছে। দেশে ফিরে আর দেরি করেননি। পোলট্রি ব্যবসা শুরু করে দিলেন, যা নিয়ে তাঁর আগে কোনো ধারণাই ছিল না।

তখন বিদেশ থেকে এক দিনের মুরগির বাচ্চা উড়োজাহাজে করে এনে বিক্রি করতেন কাজী জাহেদুল হাসান। যেদিন আনতেন, সেদিনই বিক্রি হয়ে যেত। উৎসাহ পাচ্ছিলেন তিনি। পরে তিনি দেশেই মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের ফার্ম দেন। বেশি দিন সময় লাগেনি পোলট্রি খাতের ৩৩ শতাংশ বাজার এ গ্রুপের দখলে চলে আসে। এখনো ২৫ শতাংশ বাজার এ গ্রুপেরই। গ্রুপের আওতায় শুরু হয় ব্রয়লার, লেয়ার, পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাদ্য উৎপাদনের ব্যবসা। ২০২৬ সালের মধ্যেই পোলট্রি খাতের বর্তমান বাজার দ্বিগুণ হওয়ার বাস্তবতা আছে বলে তিনি মনে করেন।

পরে চালকল ও ময়দাকল করেন। বিস্কুট, আইসক্রিম ইত্যাদি উৎপাদনেও হাত দেন। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবসায়েও নামেন, যেগুলো মূলত তাঁর ছেলেরা দেখেন। কাজী ফার্মস গ্রুপ থেকে ডালপুরি, আলুপুরিসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করা হয় ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশে। প্রবাসী বাঙালিরাই এগুলোর প্রধানতম ভোক্তা।
১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান

একটা করে বছর ঘুরতে থাকে আর ব্যবসা বড় হতে থাকে। কাজী ফার্মস গ্রুপে বর্তমানে আছে ৫০টির বেশি ফার্ম-হ্যাচারি। সহজে জমি পাওয়া যায় বলে উত্তরবঙ্গেই এগুলো বেশি। মাঝেমধ্যে হ্যাচারিতে গিয়ে কর্মজীবী মানুষের উজ্জ্বল মুখ দেখেন কাজী জাহেদুল হাসান। দেখেন ফার্ম-হ্যাচারিতে কাজ করা মানুষের পাড়াগাঁয়ে একটা মূল্যায়ন আছে, বিষয়টি তাঁর মনে আনন্দ জোগায়।

কাজী জাহেদুল হাসান গভীরভাবে দেশের মানুষের কর্মনিষ্ঠার প্রতি আস্থাশীল। গ্রামের মানুষও যে এখন অনলাইনে ব্যবসা করছে এবং কোথা থেকে, কীভাবে তারা তা শিখল, এটা ভেবে বিস্মিত তিনি। তবে তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে দেশের অর্থনীতির জন্য একটা আশীর্বাদ হচ্ছে পোশাক খাত। দেশে একটা সময় শুধু পণ্য মজুতের ব্যবসা ছিল। সেই জায়গা থেকে পোশাক খাতের হাত ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসা করার একটা অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে এ দেশের মানুষের। ধানসহ কৃষিপণ্য, মাছ, গরু, ছাগল, ফলমূল ইত্যাদিতেও বাংলাদেশ ভালো করছে বলে তিনি আপ্লুত।

তবে আক্ষেপ এখনো রয়ে গেছে কাজী জাহেদুল হাসানের। প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের নির্মাণ খাত এখনো পুরোনো ধারাতেই রয়ে গেছে। আমাদের এখানে ১০ থেকে ১২ তলা ভবন তৈরি করতে তিন বছরের মতো লেগে যায়। এটা আসলে তিন মাসের কাজ। দেশে ভালো ভালো পুর প্রকৌশলীও রয়েছেন। এই দিকে ভালো একটা সম্ভাবনা আছে। তুরস্কের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্প্রতি আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। পরিকল্পনা আছে এ বিষয়ে কিছু একটা করব।’

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ২৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ