গত সপ্তাহে ইউরোপে নতুন অ্যাকর্ডের জন্য চুক্তি হয়েছে। নতুন নাম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড।
রানা প্লাজা ধসের পর রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। সাত বছরের নানা টানাপোড়েন শেষে গত বছর দেশীয় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিলের (আরএসসি) কাছে কার্যক্রম হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছাড়ে অ্যাকর্ড। তারপর থেকেই নেদারল্যান্ডসে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালানো অ্যাকর্ডের চুক্তির মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা।
অবশ্য সেটি হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের চাপে নতুন রূপে ও আগের চেয়ে বড় পরিসরে আসছে অ্যাকর্ড। নতুন নাম হচ্ছে দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড। বর্তমান অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অনেক ব্র্যান্ডই নতুন চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইউরোপে দুই বছরের জন্য নতুন অ্যাকর্ডের চুক্তিটি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক জোট ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল কাউন্সিল ও ইউএনআই ব্র্যান্ডের মধ্যে এইচঅ্যান্ডএমসহ অনেক ব্র্যান্ড চুক্তিতে সই করেছে। তবে অন্যরা স্বীকার না করলেও চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে এইচঅ্যান্ডএম। নতুন অ্যাকর্ডের কার্যক্রম ১ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে।
ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল কাউন্সিলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বুধবার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, নতুন অ্যাকর্ড শুধু কারখানা ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা নয়, কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ও তদারকি করবে। তা ছাড়া প্রথম দুই বছরে অন্তত একটি দেশে কার্যক্রম চালু করবে অ্যাকর্ড। সে জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। আরএসসির কাজও তদারকি করবে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড।
জানা যায়, অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়াতে এক বছর ধরে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকনেতারা হুমকি দেন, অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানো না হলে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা আরএসসি থেকে বেরিয়ে যাবেন। সেটি হলে আরএসসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। শেষ পর্যন্ত ব্র্যান্ডগুলো নতুন অ্যাকর্ডের চুক্তিতে সম্মত হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড না হলে আরএসসি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে পরিণত হতো। নতুন অ্যাকর্ড পোশাক রপ্তানিকারক সব দেশেই কার্যকর হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটি হবে, শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটলে তৃতীয় কোনো পক্ষ সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আরএসসির প্রোটোকল অনুযায়ী সেটির মীমাংসা হবে।
নানা টানাপোড়েন শেষে গত বছরের ৩১ মে আরএসসির কাছে কার্যক্রম হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছাড়ে অ্যাকর্ড। জাতীয় উদ্যোগে গঠিত হলেও আরএসসিতে বিজিএমইএর নেতাদের প্রভাবই বেশি। গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা সংস্থাটি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত অ্যাকর্ডের প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়েছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরএসসিকে নজরদারি করবে অ্যাকর্ড ইন্টারন্যাশনাল। তবে পোশাকমালিকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। পুরো বিষয়টির ওপর আমরা নজর রাখছি।’
অ্যাকর্ডের পরিদর্শন ও সংস্কার কার্যক্রমের অধীনে ছিল ১ হাজার ৬২৯ কারখানা। গত বছর অ্যাকর্ড যখন বাংলাদেশ ছাড়ে, তখন কারখানাগুলোর অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত ত্রুটির ৯২ শতাংশ সংশোধনের কাজ শেষ হয়। আর ২৭৯টি কারখানা প্রাথমিক পরিদর্শনে পাওয়া সব ত্রুটি সংশোধন করেছিল। আরএসসি দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোর ত্রুটি সংশোধন ১ শতাংশ বেড়েছে। আর সব ত্রুটি সংশোধন সম্পন্ন করা কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,