Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নারী কি নারীর শত্রু না মিত্র !

Share on Facebook

কৈশোরে ঈদের ছুটিতে একবার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। একদিন বিকেলে মা-চাচিদের সঙ্গে হাঁটতে বের হয়েছি। হঠাৎ সামনে একটি জটলা চোখে পড়ে। উচ্চকণ্ঠে ঝগড়া করছেন দুই নারী। জানতে পারলাম সম্পর্কে তাঁরা সতিন। ‘সতিন’ শব্দটির সঙ্গে সেই প্রথম পরিচয়। ঝগড়ার বিষয়, সংসারে দুই নারীর কাজের বণ্টন। ঝগড়ার তীব্রতা বাড়তেই থাকল। প্রবীণ এক নারী কী বুঝে মন্তব্য করলেন, ‘এ জন্যই বলি মেয়েমানুষ মেয়েমানুষের শত্রু।’ তাঁকে সমর্থন করলেন উপস্থিত কয়েকজন নারী ও পুরুষ। ধন্দে পড়ে গেলাম। চিন্তা করে কূলকিনারা পেলাম না। নারী দুজন একে অন্যের শত্রুর খেতাব পেলেও যাবতীয় সমস্যার মূলে থাকা পুরুষটির দিকে আশ্চর্যজনকভাবে কেউ আঙুল তুলল না।

আমাদের সমাজে ‘নারীই নারীর শত্রু’ কথাটি যেন এক স্বীকৃত সত্য হয়ে গেছে। অবাক হই, দুনিয়ায় রোজ লাখ লাখ পুরুষ অন্য পুরুষের সম্পত্তি আত্মসাৎ করছে, হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করছে; অথচ ‘পুরুষই পুরুষের শত্রু’ এমন কথার চল হয়নি কিন্তু। অথচ নারীরা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ‘নারীর শত্রু’ উপাধি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে।

ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমস ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল স্টাডি অন হোমিসাইড: জেন্ডার রিলেটেড ক্রাইম অন উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। গবেষণায় উঠে আসে, সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ জন নারী তাঁদের পুরুষসঙ্গী বা পার্টনার অথবা পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হচ্ছেন। জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে ৮৭ হাজার নারী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ৩০ হাজার নিহত হয়েছেন তাঁদের খুব কাছের পুরুষসঙ্গী বা পার্টনারের হাতে এবং ২০ হাজার নিহত হয়েছেন তাঁদেরই কোনো না কোনো আত্মীয়ের হাতে এবং এই আত্মীয়রাও অধিকাংশই পুরুষ। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঘনিষ্ঠ কোনো পুরুষ সঙ্গী বা পার্টনারের হাতে খুন হওয়া প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে আটজনেরও বেশি নারী।

নারীর প্রতি সংঘটিত এসব অপরাধ পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটিতে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয় ‘নিজেদের ঘরই নারীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান।’ বাংলাদেশের চিত্র আরও ভয়াবহ। এ দেশের ৭০ শতাংশ নারী স্বামী কিংবা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের যেসব দেশে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার বেশি, সেই তালিকায় বাংলাদেশের স্থান এখন চতুর্থ। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ; যেখানে প্রায় ৫২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। প্রতিদিন হাজার হাজার নারী ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হন। পুরুষের সহিংস আচরণের ফলে নিজের ঘর নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ স্থানে পরিণত হলেও নারী অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ‘নারীর শত্রু’ খেতাবটির অধিকারী হন।

এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। নারী নারীর শত্রু নন; পুরুষও নারীর শত্রু নন। নারীর শত্রু মূলত পুরুষতান্ত্রিকতা, যা নারীর দুর্বল সামাজিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নারীকেই নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে আর পুরুষের অত্যাচার-নির্যাতনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে শেখায়। এই চর্চা নারীকে নারীর শত্রুর কাঠগড়ায় এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় যেন নারী বারবার পুরুষের মধ্যেই নির্ভরতা খুঁজে পায়। যেখানে ঘরের বাইরের পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে পুরুষের হানাহানি-মারামারি নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে শাশুড়ি-বউ-ননদ সম্পর্ক কিংবা মামুলি কিছু সমস্যার জন্য কেন এক নারীকে অন্য নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো?

নারীর দুর্বল সামাজিক অবস্থান তাঁকে শেখায়, সংসারটাই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। তাই সেই সংসারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই নারীতে নারীতে শুরু হয় যুদ্ধ। আবার অনেক নারী আছেন যাঁরা পুরুষের শাসন-শোষণকেই আদর্শ পারিবারিক ব্যবস্থা বলে মনে করেন। এই শাসন-শোষণ করার প্রবণতা পুরুষের আচরণে না থাকলে তাঁরা অনেক সময় দুর্বল পুরুষের আখ্যা লাভ করেন। অন্যদিকে সব পুরুষ যেমন পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চা করেন না, ঠিক একইভাবে এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যে শুধু পুরুষই লালন করেন, তা-ও কিন্তু নয়। কখনো কখনো নারীর মধ্যেও পুরুষতান্ত্রিক চর্চা প্রবলভাবে লক্ষ করা যায়। যে মানসিকতা একজন নারীকে অন্য একজন নারীর প্রতি সহিংস কিংবা বিরূপ করে তোলে তার উৎসমূলে পুরুষতান্ত্রিকতা; যা নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা তৈরি হওয়ার আগেই এক নারীকে অন্য নারীকে শত্রু ভাবতে শেখায়। দ্বন্দ্বের এই শিক্ষা পুরুষতন্ত্রকে আরও পাকাপোক্তভাবে টিকিয়ে রাখছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার জীবনে শত্রু নারীটির দেখা আজও পাইনি। আমার মা আমার আশ্রয়, আমার শাশুড়ি আমার প্রশ্রয়দাত্রী, আমার বোন আমার ভালোবাসা, আমার বান্ধবী আমার অনুপ্রেরণা, আমার সহকর্মী নারীটি আমার সহযাত্রী, আমার গৃহকর্মী নারীটি আমার নির্ভরতা। জীবনকে আলোকিত করে রাখা এত অসাধারণ নারীদের শত্রু ভাবা যায় কি! শুধু শাশুড়ি-বউ-ননদ সম্পর্ক আর মামুলি কিছু সমস্যা নিয়ে কেন এক নারীকে অন্য নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাই আমরা! নারীকে যতই ‘নারীর শত্রু’ বলা হোক না কেন, সত্য এই যে নারী-পুরুষকে যেমন ভালোবেসেছে, ঠিক তেমনি ভালোবেসেছে নারীকে। তাঁর এই মহানুভবতাই টিকিয়ে রেখেছে সভ্যতা। তাই আর নারীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় না করাই। নারী কখনোই নারীর শত্রু নয়, হতে পারেন না। নারী, নারীর বন্ধু ছিলেন, আছেন, আর চিরকাল তা-ই থাকবে। শুধু বদলাতে হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

লেখক: নিশাত সুলতানা লেখক ও উন্নয়নকর্মী
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ৩০, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ