Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নিরাপত্তার জন্য ঝুমন দাশকে বন্দীই রাখতে হবে?- সুলতানা কামাল (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: সুলতানা কামাল

ঝুমন দাশের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রথমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, তারপর রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ঝুমন দাশের গ্রামের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ ও অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। অবশ্য এই আক্রমণ ও অত্যাচারকে তখনই অকথ্য বলা যায়, যখন সমাজ ও রাষ্ট্র সেটাকে তেমন মাত্রার আচরণ বলে মনে করে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা এ ধরনের আক্রমণ-নির্যাতনকে ‘হতেই পারে’ বা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই আখ্যায়িত করে থাকেন।

মজার ব্যাপার হলো, দুর্বৃত্তপনা ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য স্বয়ং রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযুক্ত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এবং এ রকম উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেই ঝুমন দাশ পোস্টটি লিখেছিলেন।

এ কথা স্পষ্ট করতে চাই যে ঝুমন দাশের বক্তব্যের ধরন বা ভাষার অনেকাংশই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমার আজকের আলোচনায় তার বিস্তারিত বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। লক্ষ করার বিষয় হলো, রাষ্ট্র মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের যেসব কারণ দেখিয়েছে, ঝুমন দাশ আনীত অভিযোগের অনেকগুলোর সঙ্গেই তার আশ্চর্য রকম মিল রয়েছে। ভেবে অবাক না হয়ে পারা যায় না, রাষ্ট্র যেসব কার্যকলাপ বা কথাবার্তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে রেখেছে, সেই অপরাধেরই প্রতিকার চাওয়ার কারণে ঝুমন দাশকে রাষ্ট্রই বিনা ওয়ারেন্টে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারারুদ্ধ করে রেখেছে।

সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানতে পারি, গত ১৬ মার্চ থেকে ঝুমন দাশের বন্দিদশা চলছে। এর মধ্যে ছয়বার নিম্ন আদালতে ঝুমনের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা নিম্ন আদালতের বিচারিক কর্মকর্তারা পরম নিষ্ঠার সঙ্গে ছয়বারই সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। ধন্য বটে আমাদের বিচারব্যবস্থা!

সংবাদসূত্রে আরও জানা যায়, প্রশাসন ও পুলিশের নজরে নিয়ে আসা সত্ত্বেও সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নয়াগাঁও হিন্দু গ্রামে যেদিন পরিকল্পিত নারকীয় হামলাটি চালানো হলো, সেদিনের তারিখটি ছিল ১৭ মার্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। জাতি যখন পরম শ্রদ্ধাভরে, উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে জাতির জনককে বিশেষভাবে স্মরণ করছে, সেই একই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে শুধু একটি বিশেষ ধর্মে জন্মগ্রহণ করার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রকাশ্য দিবালোকে সবার চোখের সামনে ঝুমন দাশের গ্রামের হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকায় ঘৃণ্য তাণ্ডব চালাতে পারল কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হয়ে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কথাটা উল্লেখ করা এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক এই কারণে যে আজকের আলোচনার বিষয়টা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে কে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা, সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারের প্রশ্নসংক্রান্ত, যা প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রামের নির্যাস বলেই আমরা মানি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বছরটি ঘিরে দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ পরিচালিত হবে, যা আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে বুকের গভীরে ধারণ করি, লালন করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাণপণে প্রতিদিন তাঁর প্রতিটি কথায়, বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই চেতনা ও আদর্শ দেশের সব মানুষের মধ্যে সঞ্চারণ করার কী উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা, যাঁরা সংসদে, মন্ত্রিসভায়, নানান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সামরিক অথবা বেসামরিক প্রশাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন?

দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এ ব্যাপারে আমরা প্রতিনিয়ত হতাশাব্যঞ্জক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা দিনের পর দিন অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধি ও মানবিক বোধসম্পন্ন সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ও তৎপরতাকে অসম্মানিত ও ভূলুণ্ঠিত হতে দেখছি। উদার নাগরিক সমাজের দেশ গড়ার স্পৃহা ও কর্মোদ্যমকে সংকুচিত করার আইনি-বেআইনি নানা তৎপরতা চলছে বাধাহীনভাবে। এ প্রবণতা প্রশ্রয়প্রাপ্ত হচ্ছে এমনকি নীতিনির্ধারকদের দ্বারাও। মানবাধিকারের শর্তগুলো খোলাখুলিভাবেই অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার মানসিকতা দৃশ্যমান রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি স্তর বা প্রতিষ্ঠানে। শুধু তা–ই নয়, রাষ্ট্র এবং মানবাধিকারকে পরস্পরের বৈরী অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেখানোর চেষ্টারও কোনো কমতি নেই। নিপীড়নমূলক যত আইনেরই শুধু নয়, সাধারণ আইনেরও অপব্যবহার হতে দেখি যত্রতত্র। আর এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের চোখে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত যদি হয় নারী, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানের, ভিন্ন ধর্ম বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ের মানুষ, তাহলে এর মাত্রা যে কী উৎপীড়নমূলক হতে পারে, তা একেবারে জোর করে চোখ বন্ধ করে না রাখলে না দেখতে পাওয়ার উপায় নেই।

এ কেমন রাষ্ট্র, যেখানে দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে সাধারণ নাগরিককে সুরক্ষা দিতে সেই নাগরিককেই গরাদের পেছনে ঢুকিয়ে রাখতে হয়? এ কেমন সমাজ, যে সমাজে দুর্বৃত্তদের এমনই দাপট যে নাগরিকের মুক্তজীবন সুরক্ষিত রাখতে পারে না রাষ্ট্র এবং সে কথা উচ্চারণ করতেও সংকোচ বোধ করে না কর্তৃপক্ষ?

অধুনা রোজিনা ইসলাম, পরীমনি এবং সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অনেকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা থেকেই এর একটা ধারণা পাওয়া যায়। এর মধ্যেই গণমাধ্যমে দেখলাম, জনৈক ব্যক্তিকে পবিত্র কোরআন শরিফের অবমাননা করার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে সেই ব্যক্তির শবদেহটি পুড়িয়ে ফেলার যিনি হোতা, উচ্চতর আদালত তাঁর জামিন বহাল রেখেছেন। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও জামিনের বিরোধিতা করি না। কিন্তু একই অবস্থান থেকে প্রশ্ন তুলতে চাই, তাহলে ঝুমন দাশের জামিন বারবার নামঞ্জুর হচ্ছে কেন? কোন যুক্তিতে? একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে ঝুমন দাশের সুরক্ষার জন্যই তাঁকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কথাটা এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে ঝুমন দাশের নিরীহ স্ত্রী বিশ্বাস করে নিয়েছেন, আদালত থেকে এই ঘোষণা এসেছে। এ কথা যদি মেনে নিতেই হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে, এক নাগরিক, যাঁকে বিনা বিচারে ছয় মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে, তঁাকে বন্দী রেখে কার কাছ থেকে সুরক্ষা দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে?

এ কেমন রাষ্ট্র, যেখানে দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে সাধারণ নাগরিককে সুরক্ষা দিতে সেই নাগরিককেই গরাদের পেছনে ঢুকিয়ে রাখতে হয়? এ কেমন সমাজ, যে সমাজে দুর্বৃত্তদের এমনই দাপট যে নাগরিকের মুক্তজীবন সুরক্ষিত রাখতে পারে না রাষ্ট্র এবং সে কথা উচ্চারণ করতেও সংকোচ বোধ করে না কর্তৃপক্ষ? সাম্প্রদায়িকতা, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, নারীর ওপর অকথ্য নির্যাতন, শিশুনিগ্রহ এতই গ্রহণযোগ্য হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশের সমাজে? সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা কী করে একটি অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ানুগ, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সমাজ তৈরি করবেন? এ জন্য যে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনের প্রয়োজন ছিল, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিইনি। এই দিকের অবক্ষয়ের প্রতি কখনো অনিচ্ছায়, কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিরাট দায়িত্ব অবহেলা করেছি, অস্বীকার করেছি। নিজেদের চেহারাটার সত্য রূপটা দেখতে চাইনি। অনেক ক্ষেত্রেই মনগড়া রূপটাকে তুলে ধরেছি জোরজবরদস্তি করে হলেও। চর্চা করেছি মুখে—জাতি, ধর্ম, বর্ণ যেকোনো পরিচয়নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা, বিশ্বাসে তার দুঃখজনক অনুপস্থিতির অসত্য সংস্কৃতি।

এর ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করাটাও প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে আবার স্মরণে আনি। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর একটি স্তবক, ‘যে দেশের বিচার ও ইনসাফ মিথ্যার ওপর নির্ভরশীল, সে দেশের মানুষ সত্যিকারের ইনসাফ পেতে পারে কি না, সন্দেহ।’ (পৃষ্ঠা ১৯০)

এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। সাহস করে, সততার সঙ্গে নিজের পানে দেখে সৎভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও লালন করার পরিবেশ, মনন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব স্বীকার করে তার ভিত্তি রচনা করার ব্রত গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি থাকবেই। রাষ্ট্র তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা অবশ্যই নেবে। এর অন্যথা হলে ঠিক ঝুমন দাশকে নিরাপত্তার নামে যেভাবে আটক রাখার ভয়ানক পন্থা স্বাভাবিক নিয়ম বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রয়াস দেখছি, তেমনিভাবেই সাধারণ নাগরিকদের বন্দিদশায় প্রেরণ করে দেশটাকে দুর্বৃত্তের চারণভূমি করে তোলার অপচেষ্টার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়, সেটা আমরা হতে দিতে পারি কি না!

এই প্রত্যয়ের সমর্থনে স্মরণ করি পরীমনির অযৌক্তিক রিমান্ডকে কেন্দ্র করে উচ্চ আদালতের ন্যায়ানুগ ভূমিকা। আশা করি, উচ্চ আদালতের অভিভাবকত্বে ঝুমন দাশের মতো বিনা বিচারে আটক মানুষেরা ন্যায়বিচারের সুযোগ পাবেন।

লৈখক: সুলতানা কামাল মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৮, ২০২১

অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ঝুমন দাশ (২৫)। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে তিনি সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে জামিন দেন।

৬ মাস ১২ দিন কারাবাসের পর কারাগার থেকে বের হয়েই ঝুমন দাশ তাঁর মা নিভারানী দাশকে জড়িয়ে ধরেন। মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন। নিভারানী দাশ তখন ছেলের কপালে চুমো খান। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মুক্তির পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঝুমন দাশ প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কারা ফটকে ঝুমন দাশের মা নিভারানী দাশ বলেন, ‘ছয় মাস ধরে ছেলের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই আশা পূরণ হলো। খুব কষ্টে দিন গেছে, বলে বোঝাতে পারব না। ঝুমন মুক্তি পাওয়ায় আমি খুশি। তবে নিঃশর্ত মুক্তি পেলে আরও বেশি খুশি হতাম।’

সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাশ বলেন, ‘ঝুমন দাশের কারামুক্তিতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমরাও খুশি। তবে আরও আগেই তার জামিন হওয়া উচিত ছিল। এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় ঝুমন ন্যায়বিচার পাবেন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন দাশ গত ১৭ মার্চ থেকে সুনামগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে।

হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শহরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। মামুনুল হকের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে পরদিন ১৬ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ১৭ মার্চ সকালে নোয়াগাঁওয়ে আশপাশের তিনটি গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

এ ঘটনায় ঝুমন দাশকে ১৬ মার্চ রাতেই আটক করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালতের আদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ২২ মার্চ শাল্লা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। পরে তাঁর মুক্তির দাবিতে সুনামগঞ্জ, সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁর মুক্তির দাবি জানান। সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশ একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তাঁর জামিন হয়নি। পরে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।

এ দিকে নোয়াগাঁও গ্রামে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় থানা ও আদালতে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় আসামি প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে ঝুমন দাশের মা নিভারানী দাশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এসব মামলায় এ পযন্ত ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঝুমন দাশ একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রেতার কাজ করতেন। পরে নিজেই প্রসাধনসামগ্রী বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী সুইটি রানী দাশ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়েন। তাঁদের এক বছর বয়সী এক ছেলে আছে। এ ছাড়া পরিবারে তাঁর মা, এক ভাই ও দুই বোন আছেন। ঝুমনের আয়েই সংসার চলে।

মঙ্গলবার কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কারা ফটকে ঝুমন দাশকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ