গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের সময় ভারতেই ছিলেন তিনি। কড়া ভাষায় নিন্দা করেছিলেন সন্ত্রাসবাদী হামলার। ঘটনার ১০ দিন পরে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স সংযত থাকার বার্তা দিলেন নয়াদিল্লিকে।
আমেরিকার ফক্স নিউজ়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার ভান্স জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন পহেলগাঁও নাশকতার জন্য ভারত ‘জবাব’ দেবে পাকিস্তানকে। কিন্তু সেই সঙ্গেই নয়াদিল্লিকে ‘বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত’ এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকার বার্তাও দিয়েছেন। ভান্সের কথায়, ‘‘আমাদের আশা, ভারত এই সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব এমন ভাবে দেবে, যাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি না হয়।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পহেলগাঁও কাণ্ডের জন্য সরাসরি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকারকে দায়ী করেননি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের তৎপরতার অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন। ইসলামাবাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আমরা আশা করি, পাকিস্তান দায়বদ্ধতা মেনে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। তাদের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীদের খুঁজে বার করে মোকাবিলায় সাহায্য করবে।’’
পহেলগাঁও কাণ্ডের চার দিন পরে গত ২৬ এপ্রিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘একটি খারাপ ঘটনা ঘটেছে।’’ কিন্তু পহেলগাঁও-পরবর্তী পর্যায়ে ভারত-পাক সীমান্ত এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) উত্তেজনা যে তাঁর কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘১,৫০০ বছর ধরে সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে। তারাই (ভারত এবং পাকিস্তান) কোনও না কোনও ভাবে বিষয়টির সমাধান করবে। আমি নিশ্চিত।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথা বহুল প্রচারিত হলেও শাহবাজ়ও যে তাঁর ঘনিষ্ঠ, সে কথাও সে দিন স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘দুই নেতাকেই আমি দীর্ঘ দিন ধরে চিনি। আপনারা জানেন, আমি ভারতের খুব কাছের। আমি পাকিস্তানেরও খুব কাছের।’’ পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডের পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও বুধবার রাতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সংঘাতমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সরাসরি হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেননি।
কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্তরে ইতিমধ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) টানা আট দিন ধরে চলছে গুলির লড়াই। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতীয় সেনাকে যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের ছাড়পত্র দিয়েছেন। এই আবহে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত যে ওয়াশিংটনের কাম্য নয়, বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে তিনি জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির ‘আত্মরক্ষার অধিকার’কে সমর্থন করলেও সংঘাতের এই আবহে ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ নেবে ট্রাম্প সরকার। ভান্সের কথাতেই শুক্রবার সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আমেরিকা জানে সরাসরি ভারতের পক্ষ নিলে পাকিস্তান আরও বেশি করে চিনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। শুল্কযুদ্ধের আবহে সেই ঝুঁকি নিতে চান না ট্রাম্প।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
তারিখ: মে ০২, ২০২৫
রেটিং করুনঃ ,