Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

প্রকৃত উন্নয়নের দিকে কি দেশ! (২০২১)

Share on Facebook

প্রবৃদ্ধি যে জনগণের গড়পড়তা জীবনমানের একটি বিভ্রান্তিকর সূচক, তা এখন অনেক পুরোনো বিষয় এবং মোটামুটি প্রায় সবারই জানা। এমনকি দেশে উন্নয়ন হয়েছে বললেও প্রশ্ন উঠবে—কার উন্নয়ন? মুষ্টিমেয় লোকের, না সবার? উন্নয়ন অর্থনীতিতে এই কথাটা খুব প্রচলিত: ডেভেলপমেন্ট ফর দ্য ফিউ অর ডেভেলপমেন্ট ফর অল। উন্নয়ন একটা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হতে পারে, কিন্তু জীবনের লক্ষ্য তো শুধু উন্নয়ন নয়। জীবনের লক্ষ্য হলো সুখী হওয়া, একটি শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারা। এ জন্যই উন্নয়ন অর্থনীতিতে গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্টের পরিবর্তে গ্রস ডমেস্টিক হ্যাপিনেস কথাটা চালু আছে অনেক দিন আগে থেকেই।

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে বিদেশি পত্রিকায় বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প পড়তে ভালো লাগে। মার্কিন সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিস্টফ নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতামত কলামে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য বিমোচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের উন্নয়নকে ধাঁধা হিসেবে অভিহিত করেছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প বহির্বিশ্বে অমর্ত্য সেনই সবচেয়ে বেশি বলে থাকেন। উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রায় সব লেখাতে ও বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আরেক বাঙালি অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুও প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে ‘হোয়াই বাংলাদেশ ইজ বুমিং’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতিকে ‘টাইগার ইকনোমি’ অভিহিত করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আসলে কতটা সুখে আছে বাংলাদেশ, কতটা সুখে আছেন এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ?

আমার মতে, উন্নয়ন ধারণায় বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনই বর্তমান বিশ্বে একেবারে শীর্ষে। কিন্তু এই অমর্ত্য সেন প্রদত্ত প্রধান উন্নয়ন সূচকগুলো পূরণেই বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বিরোধী দলের উপস্থিতি, উন্মুক্ত গণমাধ্যম ইত্যাদি অমর্ত্য সেনের উন্নয়ন ধারণার অপরিহার্য শর্ত, যা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ক্ল্যাসিক্যাল কমিউনিজমের প্রতি অমর্ত্য সেনের যে অকুণ্ঠ সমর্থন নেই, তার কারণ এই অনুষঙ্গগুলোর অনুপস্থিতি।

আবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও বৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করে না বলে পুঁজিবাদী অর্থনীতিকেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা সফল হলেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ও বৈষম্য দূরীকরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস ২০২০ সালে বাংলাদেশকে আংশিকমুক্ত দেশ হিসেবে দেখিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই স্বীকৃতি দেয়নি। ফ্রিডম হাউসের পর্যবেক্ষণও একই। দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেসি স্কোরের তালিকায় বাংলাদেশের নামই নেই।

বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ৩৯, যা নিচের দিক থেকে নবম। ৩৭ পেয়ে দুই ধাপ নিচেই পাকিস্তান। ৩৪ পেয়ে সর্বনিম্নে তানজানিয়া। আংশিকমুক্ত দেশ হিসেবে ৭১ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে উঁচুতে আছে সেনেগাল।

উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদির ভারতও আংশিকমুক্ত দেশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশ মাত্র ১৫ ও ২৪ স্কোর, যেখানে এই দুই ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ স্কোর যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৩। সর্বনিম্ন স্কোর তানজানিয়ার—১২ ও ২২।

উল্লেখ্য, ভুটান রাজতন্ত্র সত্ত্বেও স্বাধীনতা সূচক, রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতায় যথাক্রমে ৬১, ৩০, ৩১ পেয়ে তালিকার ওপরের দিকে অবস্থান করছে।
মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ভিটালির মতে, বৈষম্য মানুষকে অসুখী করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট ব্যবস্থা আর পুঁজিবাদী রাশিয়ার বর্তমান ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখা অশীতিপর এই অধ্যাপক ডেমনস্ট্রেশন এফেক্ট তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন কীভাবে বৈষম্য মানুষকে অসুখী করে। ওয়েলথ-এক্স নামের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলছে, ২০১২ থেকে পরবর্তী ৫ বছরে অতি ধনীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীনকে হারিয়ে বিশ্বের ১ নম্বর দেশ এখন বাংলাদেশ।

একই সঙ্গে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। তার মানে হলো, এমন বৈষম্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। এ থেকে আন্দাজ করা যায় কী রকম সুখে আছে বাংলাদেশের মানুষ। অমর্ত্য সেনের গুরু প্রফেসর জন রওলসের থিওরি অব জাস্টিসের ভিত্তি হলো মানুষে মানুষে সমতা। অর্থাৎ জীবনের সব ক্ষেত্রে সমতা বিধান ছাড়া মানুষের সুখ নিশ্চিত করা যায় না।

সাবজেক্টিভ ওয়েলবিয়িং তথা সুখ সম্পর্কে প্রফেসর সেন আরও বলেন, মানুষ তার অস্তিত্বকে অর্থবহ দেখতে চায় আর চায় সমাজ ও রাষ্ট্র তার অস্তিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করুক। একজন মানুষ যা করতে চায়, তা করতে পারার সক্ষমতা যাতে সে নিজে নিজেই অর্জন করতে পারে, তার জন্য দরকার সেই রকম একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা। না হলে সে সুখী হবে না।

অমর্ত্যের সুখের ধারণা নিছক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে প্রাপ্ত উপযোগিতাকে অতিক্রম করে, ইচ্ছা পূরণের মাধ্যমে জীবনকর্ম থেকে অখণ্ড আনন্দ পাওয়ার কথা বলে। অমর্ত্য মনে করেন, স্বাধিকার এবং ব্যক্তির জীবনে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার কর্তৃক নাক না গলানোর নীতি ছাড়া মানুষ সুখী হতে পারে না। শুধু নিজের নয়, অন্যকে সুখী দেখার মধ্যেও মানুষ সুখ পায় এবং সমাজে এ জন্যই সমতা বিধানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে—এটাও অমর্ত্যীয় সুখের ধারণার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির সুখ শুধু তাঁর নিজের জীবনের অবস্থার ওপর নির্ভর করে না; তাঁর সুখ নির্ভর করে অন্যের সুখের ওপর, সমাজের ওপর, সমষ্টির ওপর, পরিপার্শ্বের ওপর, সারা পৃথিবীর সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

এই নিরিখে অমর্ত্য সেনের প্রিয় বাংলাদেশ কি একটি সুখী দেশ? এখানে প্রবৃদ্ধি আছে, সমৃদ্ধি আছে, উন্নয়ন সূচকে উল্লম্ফন আছে কিন্তু সুখ নেই। কারণ, সুখ নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। স্বাধিকার, ভোটের অধিকার, সম্পদের অধিকার, কথা বলার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার, নিজের ইচ্ছেমতো জীবন পরিচালনার অধিকার। শুধু নিজের নয়, অন্যকে সুখী দেখার সুখ, যা সমাজের এই পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য অসম্ভব করে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে মাথাপিছু আয় কম হওয়া সত্ত্বেও স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলোর মানুষ অনেক বেশি সুখী। বৈষম্যের মাত্রা কম বলেই তা সম্ভব হয়েছে।
এটা সত্য যে ’৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের সরকারগুলো অনেক উন্নয়নমুখী নীতি নিয়েছে, বিশেষ করে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে। নারীশিক্ষার ও নারীর ক্ষমতায়নের মূল কাজটা করেছে এনজিও। পোশাকশিল্পে নারীরা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে করে তুলেছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, স্বদেশে এনেছেন বিপ্লব।

প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো অর্থ অতিমারির মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত বাড়িয়ে চলেছে। কৃষক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফলন বাড়িয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষকবান্ধব নীতিও আমাদের প্রশংসা পাবে। কিন্তু বাংলাদেশের এই উন্নয়নের প্রধান কারিগর এ দেশের শ্রমজীবী মানুষ। অথচ এ দেশের মতো এত নিম্ন মজুরি পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। যাঁরা ওপর থেকে প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়নের গল্পে বিমোহিত, তাঁরা ভেতরের গল্প জানেন না। তাঁরা জানেন না যে এই প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়নের ভিত্তি হলো শ্রম শোষণ।

লেখক: ড. এন এন তরুণ রাশিয়ার সাইবেরিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর ও সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ১৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ