দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়ার সারিয়াকান্দির নদ-নদীতে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষেত। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙছে পাড়। নদীতে বিলীন হচ্ছে জমিসহ বসতভিটা। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ক্রমেই ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এ ছাড়া ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতেও বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
কুড়িগ্রাম: জেলার চিলমারী পয়েন্টে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। ফলে জেলার ১২টি ইউনিয়নের চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের অর্ধ লাখ মানুষ। এ ছাড়া বন্যার পানিতে জেলার ২৫ হাজার ১৫০ হেক্টর বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর রোপা আমন, ১১৫ হেক্টর আমন বীজতলা এবং ২৮০ হেক্টর শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, শুক্রবার ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিড়া, আধা লিটার তেল এবং আধা কেজি চিনি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, জেলার বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ২৮০ টন চাল এবং ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র নদ, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে আগের দিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার পানি বেড়েছে কম। পাউবো জানায়, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল এবং চর এলাকায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জেলা ত্রাণ অফিস জানিয়েছে। বাড়িঘর ও রাস্তায় পানি ওঠায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গবাদি পশু নিয়েও তারা বিপাকে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। লোকজন বন্যার পানিতে সাঁতরে অথবা নৌকায় করে আশপাশের বাঁধ কিম্বা উঁচু স্থানে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জানান, চার উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৮০ টন চাল এবং ২ লাখ টাকা বিতরণের কাজ চলছে।
সারিয়াকান্দি (বগুড়া): সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দুপুরে যমুনার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, বাঁধ রক্ষায় পাউবো ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁশের পাইলিং এবং বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
বাঘা (রাজশাহী): দ্বিতীয় দফায় পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাশখালী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও কালিদাশখালী গ্রাম। জিওব্যাগ ফেলে তা রক্ষার চেষ্টা করছে পাউবো। গতকাল পর্যন্ত ১২ হাজার ২৮৪টি বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, কালিদাশখালী গ্রামের সোলেমানের দোকানের পশ্চিম পাশ থেকে সামাদের বাড়ি পর্যন্ত ভাঙন এলাকার ২২০ মিটার পর্যন্ত জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে।
ফরিদপুর: গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিদৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পানি বেড়ে সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব এলাকার শতাধিক গ্রাম, ফসলি জমি, রাস্তা তলিয়ে গেছে। সরকারিভাবে এসব এলাকায় ৫০ টন চাল ও সাড়ে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ী: অব্যাহতভাবে পানি বাড়তে থাকায় রাজবাড়ীর চারটি উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাউবো জানিয়েছে, দৌলতদিয়া পয়েন্টে আট সেন্টিমিটার বেড়ে বন্যার পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দুই পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাত হাজার ৫১৫টি পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সাহায্য হিসেবে চাল ও নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,