Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বসের কি হিংসে হয় (২০১৮)

Share on Facebook

সাংঘাতিক মন খারাপ জাকিরের (ছদ্মনাম)। অফিসে এমন ঘটনা ঘটছে যে, তিনি মন থেকে তা মানতেই পারছেন না! অকারণে অফিসের বসের ত্যাঁড়া কথা হজম করতে হচ্ছে তাঁকে। কম্পিউটারের কাজ বেশ ভালোই পারেন জাকির। সে যোগ্যতাই যেন তাঁর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে!

দুদিন আগে অফিসের এক মিটিংয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিলেন জাকিরের বস। কিছু ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে, সেটিকে আরও নিখুঁত করতে চেয়েছিলেন জাকির। কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বসের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন জাকির। আজকাল তাঁকে যেন সহ্যই করতে পারছেন না বস। চোখের সামনে পড়লেই করছেন অযথা চেঁচামেচি, চলছে ছিদ্রান্বেষণ!

জাকিরের মতো পরিস্থিতিতে হয়তো অনেকেই পড়েন। অন্তত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় তাই দেখা গেছে। এই গবেষণার বিষয়ে সম্প্রতি হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে গবেষকেরা বলেছেন, অনেক অফিসেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধীন কর্মচারীদের কাউকে কাউকে ঈর্ষা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে যেসব কর্মীর যোগ্যতা বসের চেয়ে বেশি, তাদের ওপরই কোপ পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অধীন কর্মীর যোগ্যতায় বিরক্ত থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিজের ঘাটতি তারা মেনে নিতে পারেন না। এবং ঘাটতি পূরণের জন্য ওই নির্দিষ্ট কর্মীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন বস। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। কিছু কিছু বস এভাবে কর্মীকে চাপে রেখে নিজের ঘাটতি পূরণ করতে আগ্রহী হোন না। তারা উল্টো কর্মীকে প্রেরণা দিয়ে সত্যিকারের নেতা হয়ে ওঠেন।

বসের হিংসের ওপর এই গবেষণাটি করেছেন লিংটাও ইউ, মিশেল কে. ডাফি ও বেনেট জে. টেপার। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি করেছেন লিংটাও ইউ, কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। অন্যদিকে মিশেল কে. ডাফি কার্লসন স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের একজন শিক্ষক। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন বেনেট জে. টেপার। এই তিন শিক্ষক মিলে খুঁজে বের করেছেন, কেন বসেরা তাদের কর্মীদের হিংসে করেন।

গবেষকেরা বলছেন, যখন একজন সাধারণ কর্মী অসাধারণ কাজ করতে থাকেন এবং নেতৃত্বগুণের প্রকাশ ঘটান—ঠিক তখনই ঈর্ষার বীজ বপন হয় ঊর্ধ্বতনের মনে। ওই কর্মীকে নিজের জন্য হুমকি বলে মনে করতে থাকেন বস। তিনি বুঝতে পারেন, ওই কর্মীর এমন কিছু অসামান্য গুণ আছে, যা তাঁর নেই। আর তাতেই হয় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ বলছে, বেশ কয়েক মাস ধরে এই গবেষণা চলেছে। গবেষণা শেষে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, সত্যিই বসদের হিংসে হয়। কিন্তু সেই হিংসায় যে সব সময় অধঃস্তনেরা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছেন—বিষয়টি তেমন নয়। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেশি হলেও, কিছু বস এই ঈর্ষাকে ইতিবাচকভাবেও ব্যবহার করে থাকেন। আর তাতে পাওয়া গেছে ব্যাপক সাফল্য। এতে করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠান ও যোগ্য কর্মী লাভবান হয়, অন্যদিকে লাভের গুড়ে ভাগ বসাতে পারেন বসও।

গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
গবেষকেরা বলছেন, কিছু বিষয়ে কর্মীর চেয়ে পিছিয়ে থাকলে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই ধরনের ঈর্ষার উদ্ভব হয়। এক ধরনের ঈর্ষায় থাকে জিঘাংসা, আর আরেক ধরনের ঈর্ষায় থাকে অনুপ্রেরণা। প্রথমটিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীন কর্মীর সঙ্গে অবমাননাকর আচরণ করতে থাকেন। ফলে কর্মীর আত্মসম্মানে ঘা লাগে এবং কর্মক্ষেত্রে তিনি ধীরে ধীরে নিভে যান। এতে করে বস ও কর্মীর মধ্যে পার্থক্য আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয়টিতে কর্মীর যোগ্যতাকে স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে আরও অনুপ্রেরণা দেন বস, সবার সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ওই কর্মীকে দিয়ে। সূচনা হয় সুস্থ প্রতিযোগিতার। সেই সঙ্গে চলে বসের আত্মউন্নয়নের কাজ। এভাবে নিজের দোষ-ত্রুটি মেনে সবাইকে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যান বস, সবার নেতা হয়ে ওঠেন তিনি।

গবেষণায় চীনের দুটি কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর জরিপ চালানো হয়। একটি ছিল ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট পরামর্শদাতা কোম্পানি, অন্যটি ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি। কয়েক মাসের জরিপের পর দেখা যায়, যখন তত্ত্বাবধায়ক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতিবাচক ঈর্ষা হয়, তখন যোগ্য কর্মী নিপীড়নমূলক আচরণের শিকার হোন। এসব ক্ষেত্রে কথিত ‘চুপচাপ স্বভাবের’ কর্মীটি উপযুক্ত সাড়া দেন না বলে মনে করেন বস। অফিসের কর্তৃপক্ষকে তখন বোঝানো হয় যে, ওই কর্মী যোগ্য হলেও বন্ধুভাবাপন্ন নয়! আর এই ঢালের নিচেই চলে কর্মীর প্রতি বাজে ব্যবহার।

কিন্তু যদি কোনো বস এমন কোনো যোগ্য কর্মীকে হিংসে করেন, যে কিনা স্বভাবে চটপটে—তার ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটে। এ ক্ষেত্রে বস নিজের উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগ দেন। ধীরে ধীরে নিজেকে তুলে ধরতে শুরু করেন বস এবং ঘাটতিগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টায় থাকেন। কর্মীকে অসুবিধায় ফেলার প্রবণতা এ সময় কম দেখা যায়।

কেন বসের এমন হয়?
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই একটি ক্ষমতার বলয়ে নিজেকে দেখতে চায়। নিজের অবস্থানকে সুসংহত করার চেষ্টা সবার মধ্যেই থাকে। যখন অধীন কর্মী বা সহকর্মী বেশি ভালো কাজ করে বা তার যদি সম্ভাবনা বেশি থাকে, তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুমকি অনুভব করতে পারেন বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন। হুমকি বলতে এক ধরনের উদ্বেগ তাঁর মধ্যে কাজ করতে পারে। তখন ওই ব্যক্তি যার জন্য এ ধরনের হুমকি অনুভব করেন, তাঁর সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করতে পারেন। এটি যে সব সময় সচেতনভাবে করা হয়, তা নয়। অনেক সময় অবচেতনভাবেও এ ধরনের আচরণ সংঘটিত হতে পারে।’

এমন নেতিবাচক আচরণ কর্মীর ওপর বাজে প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন মেখলা সরকার। এই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, যে কর্মীর সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করা হচ্ছে, তিনি কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি তার কাজের পরিমাণ ও মান কমে যেতে পারে। তখন আর ওই যোগ্য কর্মী ভালো ও বেশি বেশি কাজ করার প্রেরণা পান না। অন্যদিকে ক্ষতি হয় প্রতিষ্ঠানের।

এই মনোরোগবিদ মনে করেন, অধীন কর্মীর কারণে মানসিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি তাদের ঈর্ষাকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করেন, তবেই সবার মঙ্গল। কোনো দক্ষ কর্মীকে দমন করে রাখার কৌশল একেবারেই কার্যকরী নয়। নিজের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এরপর নিজের অন্যান্য শক্তিমত্তার জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। ঘাটতি নিয়ে না ভেবে অভিজ্ঞতাসহ নিজের অন্যান্য যোগ্যতার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবেই ঈর্ষার প্রভাব হবে ইতিবাচক।

প্রতিষ্ঠান কী করবে?
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকেরা প্রতিষ্ঠানের করণীয় বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, কিছু ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের নজর দেওয়া জরুরি। প্রথমত, কর্মস্থলে সঠিক আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অধীন কর্মীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। ঈর্ষার শিকার হয়ে কর্মীরা যেন নিজেদের প্রতিভা গুটিয়ে না ফেলেন, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ কর্মী যদি যোগ্যতার আলো নিভিয়ে ফেলেন, তবে ক্ষতি হবে প্রতিষ্ঠানেরই।

দ্বিতীয়ত, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতিবাচক ঈর্ষা ও এর প্রভাব সম্পর্কে জানাতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। ঈর্ষা যে সব সময় লাল চোখওয়ালা দৈত্য নয়—সেই বিষয়টি বোঝাতে হবে। একে কীভাবে সুস্থ প্রতিযোগিতায় রূপান্তর করা যায়, দেখিয়ে দিতে হবে সেপথ। তবেই আর হিংসার বলি হতে হবে না কাউকে!

সূত্র প্রথম আলো তারিখ- নভেম্বর ০৯, ২০১৮

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ