Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বার্লিন প্রাচীর ভাঙার ইতিহাস (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: মহুয়া রউফ।

দুপুর পর্যন্ত অবসর। দুপুরের পর শুরু হবে পেশাগত দায়িত্ব। সকালে নাশতা সেরে বেরোলাম। কাছেই ঐতিহাসিক ব্রান্ডেনবুর্গ গেট। হোটেল থেকে গন্তব্য হাঁটার পথ বলা যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে খানিক সামনে গিয়ে হাতের বাঁয়ে হাঁটছি। গুগলে ঢুকে ‘বার্লিন এট্রাকশনস’ লিখে সার্চ দিলে প্রথম যে আকর্ষণটি ইন্টারনেট দেখায়, তা হলো ব্রান্ডেনবুর্গ গেট। প্রায় ১৫ মিনিট হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালাম ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনের অংশে।

পর্যটকের জটলা দেখেই বোঝা হয়ে যায়, ঠিক জায়গায় এসে গেছি। ১৮ শতকের শেষের দিকের বাটাভিয়ান বিপ্লবের স্মৃতিচিহ্ন। যার ফলে ডাচ প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি, বাটাভিয়ান প্রজাতন্ত্রের শুরু। সে সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অস্থিরতার চিত্র। একসময়ের জাতিগত বিভক্তির প্রতীক হলেও এখন এটি ঐক্য ও শান্তির প্রতীক। ফটকের নকশাতে এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের প্রোপিলিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। বেলেপাথরের স্মৃতিস্তম্ভটি ২৬ মিটার লম্বা।

ইতিহাসের কাছাকাছি গেলে এক অন্য রকম আবেগ ভর করে। আবেগ ঝেড়ে আবারও হাঁটতে শুরু করেছি। খুব বেশি ঠান্ডা পড়ছে এখানে, হালকা একটু বৃষ্টির মতোও। সঙ্গে হাওয়া। ইউরোপের শীতকালের এটিই স্বাভাবিক চিত্র, কিন্তু আমার মতো আগন্তুকের জন্য এটি বেশ বৈরী আবহাওয়া। ছবি তোলার জন্য মুখের ওপর থেকে চাদর সরানো কঠিন। ব্রান্ডেনবুর্গ গেট থেকে খানিক এগিয়ে গেলেই ঐতিহাসিক সেই বার্লিন প্রাচীর!

একটি কংক্রিটের প্রাচীর। প্রাচীরের ভগ্নাংশ! স্নায়ুযুদ্ধের প্রতীক। অর্থনৈতিক বিভাজনের নিশানা। দুই বিপরীতমুখী স্রোত। দুই বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে পৃথক করেছে যে প্রাচীর। এই প্রাচীরের পূর্বে ছিল সমাজতন্ত্র, পশ্চিমে পুঁজিবাদ। সোভিয়েত লাল মলাটের বইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় সেই কৈশোরে। স্বাভাবিকভাবেই সমাজতন্ত্রের আলোচনা, তর্ক, তত্ত্ব শুনতে শুনতেই কৈশোর পার করা এই আমি বিস্ময়ে দাঁড়িয়েছি। এখানে এসে সবাইকে থামতে হয়! বার্লিন প্রাচীরের খানিক অংশ এখনো অক্ষত আছে অর্থাৎ রাখা হয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে। বেশ কালো ছাই রঙের সেই প্রাচীর। অনেক কিছু লেখা প্রাচীরের গায়ে, আমাদের দেশের চিকা মারার মতো। কোনো অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম না সে বর্ণমালার। আঁকা আছে নানান চিত্র। সব স্মারকের দোকানে বিক্রি হয় বার্লিন প্রাচীরের ছোট ছোট টুকরা।

ইতিহাস বলে, পশ্চিম জার্মানির নাগরিক যাতে পূর্ব জার্মানিতে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আদর্শিক বিভাজন এই প্রাচীর। পূর্ব জার্মানি এই প্রাচীর নির্মাণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর চার শক্তির অধিকারে আসে জার্মানি। ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে চারটি আলাদা অংশে বিভক্ত করে ফেলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়ে ওঠে পূর্ব জার্মানি। অন্য তিন অঞ্চলের সমন্বয়ে পশ্চিম জার্মানি। এই দুইয়ের মাঝখানে নির্মিত এই দেয়াল। এটি ২৮ বছর ধরে ছিল পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে সীমানাপ্রাচীর। এই প্রাচীর টপকে পূর্ব জার্মানি থেকে পশ্চিম জার্মানি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বারবার। পশ্চিম জার্মানি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

প্রাচীর ভাঙার পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো? ১৯৮৯ সাল থেকে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হচ্ছিল। পশ্চিম জার্মানি ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞার ওপরেও গণদাবি ওঠে। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পূর্ব জার্মানির শাসক এরিক হোনেকার পদত্যাগ করেন। স্থলাভিষিক্ত হন এগোন ক্রেনজ। ক্রেনজের সহনশীল নীতির কারণে এবং কমিউনিস্ট চেকোস্লাভ সরকারের সহায়তায় পূর্ব জার্মানির শরণার্থীরা চেকোস্লাভাকিয়া হয়ে পশ্চিম জার্মানি যাওয়া শুরু করে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে শরণার্থীর চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার শরণার্থীর চাপ ঠেকাতে ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর পূর্ব জার্মানির পার্টি পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নেয় দুই জার্মানির মধ্যে দিয়ে সরাসরি শরণার্থীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ১০ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ব জার্মানি সরকারের প্রচারমন্ত্রী গুন্টার সাবোয়স্কিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাটি পাঠ করার। গুন্টার সাবোয়স্কি ৯ নভেম্বরের আগে পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ঠিক ৯ নভেম্বর তাঁকে ঘোষণাপত্রটি ধরিয়ে দেওয়া হয়। কত তারিখ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এ বিষয়ে তিনি সঠিকভাবে অবগত ছিলেন না। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি ঘোষণা দিয়ে বসেন এখন থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

টেলিভিশনে এ সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব জার্মানির হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। হাজার হাজার উৎসুক জনতা পশ্চিমে যাওয়ার জন্য ভিড় করে বার্লিন প্রাচীরের পাদদেশে। বার্লিন প্রাচীর খুলে দেওয়া দুই জার্মানির এক হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলে ধরা হয় এখনো।

ইতিহাস থেকে আমি বাস্তবে ফিরে আসি। খুব ঠান্ডা লাগছে আমার। ওভারকোটের ওপর আরেকটি চাদর জড়ালাম। চাদরের এক প্রান্ত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছি ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে। বার্লিন এসে চেকপয়েন্ট চার্লি জাদুঘরে না গেলে চলে? এবার আর হেঁটে না, ট্যাক্সিতে চেপে। জাদুঘরটি বার্লিন প্রাচীর পতনের ১৫ বছর পরে নির্মিত হয়। জাদুঘরের সম্মুখভাগ খুব সাদামাটা। না, সামনে আমাদের জাতীয় জাদুঘরের মতো গেট বা প্রশস্ত উদ্যান কিছুই নেই। নেহাত নাম লেখা না থাকলে বুঝতেই পারতাম না এটি একটি বিশাল জাদুঘর। ইতিহাসের নানান নথি বলে, পূর্ব জার্মানি থেকে পশ্চিম জার্মানি প্রবেশের পাঁচ হাজারটি ঘটনা ঘটেছে দীর্ঘ ২৮ বছরে। তার কিছু নমুনা পেলাম চেকপয়েন্ট চার্লি মিউজিয়ামে। মানুষ কীভাবে বার্লিন প্রাচীর টপকানোর চেষ্টা করেছে তার নানান নমুনা। কখনো কাঠের বাক্সে করে মাটির নিচে টানেল খুঁড়ে, কখনো কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে লাফিয়ে, কখনো তার বেয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে সে সময়। জাদুঘরের দেয়ালের গায়ে নানান ছবি সে ইতিহাসের জানান দিচ্ছে। একটি ছবিতে দেখা যায় তার বেয়ে প্রাচীর টপকানোর চেষ্টা। স্পোর্টস কার চালিয়ে চেকপোস্টের দরজা ভেঙে বার্লিন প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনাও ঘটত। এসব ঘটনা এড়াতে পূর্ব জার্মানি কর্তৃপক্ষ চেকপোস্টে একধরনের ধাতব বার সংযোজন করা হয়, যাতে গাড়ি বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিস্ময়াতীত এক ভাস্কর্যের দেখা মিলল জাদুঘরে। সেটা মহাত্মা গান্ধীর। ভারতের অহিংস আন্দোলনের এই নেতার আবক্ষ মূর্তি জার্মানিরা তাদের জাদুঘরে রেখেছে। আছে গান্ধীজির খড়ম, চরকি, সাদা ধুতি।

জাদুঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বার্লিন নগর দেখছি…। রবীন্দ্রনাথের মতো করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, ‘যাহা দেখিলাম না তাহার খেদ মিটিতে বিলম্ব হইল না, যাহা দেখিলাম তাহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট হইল।’

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: নভেম্বর ০৯, ২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ