Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বিজেপির বিস্ময়কর জয় (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় নয়াদিল্লি।

ভোটের আগপর্যন্ত জনপ্রিয় ধারণা ছিল, কোভিডের ছোবল, ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভ, অভূতপূর্ব বেকারত্ব, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষত্রীয়বাদী প্রশাসনজনিত অসন্তোষ এবং বিরোধীদের জাতভিত্তিক জোটবদ্ধতা উত্তর প্রদেশে শাসক বিজেপিকে ভাসিয়ে দেবে। ক্ষমতায় আসবে সমাজবাদী পার্টি ও তাদের জোট শরিকেরা। সাত দফা ভোট পর্বের শেষ দিনে বুথফেরত জরিপ জনপ্রিয় ধারণায় প্রথম যে ধাক্কা দিয়েছিল, বৃহস্পতিবার তা বিস্ময়করভাবে সত্য হলো। প্রতিশ্রুতি পালনে অন্যথা না হলে দীর্ঘ ৬২ বছর পর দেখা যাবে, টানা পাঁচ বছর শাসনের পর কেউ উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন।

যোগী আদিত্যনাথ হতে চলেছেন সেই বিরল রাজনীতিক, উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গোবিন্দবল্লভ পন্থ ও সম্পূর্ণানন্দর পর যিনি পরপর দুবার মুখ্যমন্ত্রিত্ব লাভ করবেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে পন্থ দুবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর সম্পূর্ণানন্দ ১৯৫৪ থেকে ১৯৬০ মধ্যে। দুজনই ছিলেন কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা। সেই কংগ্রেস, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত যে দল উত্তর প্রদেশ দাপিয়ে বেরিয়েছে, দীর্ঘ ৩২ বছর তারা রাজ্যে ক্ষমতাহীন শুধু নয়, এবারের ভোটে আরও ক্ষয়ে গিয়ে দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো দৃশ্যমানতা হারিয়েছে। দেশের প্রাচীনতম দলের রাহুর দশা অব্যাহত।

এক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মোদি-যোগী নেতৃত্ব কেন সফল? এ জিজ্ঞাসার উত্তর নির্দিষ্ট কোনো একটি কারণ হতে পারে না। তবু যে বিষয়টি তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত, তা হলো শাসকের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা। রাজ্যবাসীর ক্ষোভ ততটা তীব্র হয়নি, যা মোদি-যোগীর যুগলবন্দীর বিপ্রতীপে অন্য শক্তিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহজতর হয়। এবারের ভোট ছিল দুটি শক্তির মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া। পছন্দের সেই তালিকায় জাত-ধর্মনির্বিশেষে উত্তর প্রদেশের জনতা মোদি-যোগীর ওপর ভরসা রাখতে পছন্দ করেছে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে জাট-মুসলমানের জোটবদ্ধতার মোকাবিলায় ওই সিদ্ধান্ত কতটা সহায়ক, তার প্রমাণ ওই তল্লাটে সমাজবাদী জোটের ৩২ শতাংশের মোকাবিলায় বিজেপির ৪৬ শতাংশ ভোট পাওয়া! বস্তুত, রাজ্যের চারটি অঞ্চলের প্রতিটিতেই অখিলেশদের জোটকে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। লড়াই মুখ্যত দ্বিমুখী হওয়ায় মোদি-যোগীর মোকাবিলায় বিরোধীরা ভেসে গেছে।

বিজেপির অবিশ্বাস্য ভালো ফলের পাশাপাশি কংগ্রেসের সংকট কতটা গভীরতর, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাঞ্জাব। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের পাশাপাশি তৃতীয় যে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন ছিল, তা পাঞ্জাব। সীমান্তবর্তী এ রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখা কংগ্রেসের পক্ষে কঠিনও ছিল না। আট মাস আগেও মনে করা হচ্ছিল, কংগ্রেসের পাঞ্জাব জয় স্রেফ সময়ের প্রতীক্ষা। কৃষক আন্দোলনের জেরে অকালি দল ও বিজেপির বিচ্ছেদের পর কংগ্রেসের সামনে মাঠ যখন ফাঁকা, তীব্র দলীয় কোন্দলের সামাল দিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তখন ব্যর্থ হয়। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অমরিন্দর সিংকে অপসারণ করে দলিত চরণজিৎ সিং চান্নিকে বসালেও প্রদেশ সভাপতি নভজ্যোৎ সিংয়ের উচ্চাশা ও বিদ্রোহে লাগাম টানতে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস। ওই রাজ্যে গোকুলে বাড়ছিল আম আদমি পার্টি। কংগ্রেসের কালিদাসচিত মূর্খামির সুযোগে বাজিমাত করে তারা ভারতীয় রাজনীতিতে ইতিহাস তৈরি করে গেল। নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতাই তারা শুধু আদায় করেনি, প্রথম আঞ্চলিক দল হিসেবে ‘আপ’ দ্বিতীয় কোনো বড় রাজ্যের ক্ষমতা দখলের বিরল দৃষ্টান্তও স্থাপন করল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, এনসিপি, জেডি (ইউ), তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেডি, ওয়াইএস আর কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় তেলেঙ্গানা সমিতি বা তামিলনাড়ুর দুই দ্রাবিড় দল যা পারেনি, আম আদমি পার্টি তা করে দেখাল।

দিল্লির পর পাঞ্জাবের মতো বড় রাজ্য দখলই শুধু করল না, গোয়া ও উত্তরাখন্ডে পদচিহ্ন রাখার মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিল, আগামী দিনে তারা জাতীয় পর্যায়ে বিকল্প হওয়ার দাবি নিয়ে এগোচ্ছে।

সেই কারণে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির জয় যতটা বিস্ময়কর, ততোধিক অবাক উত্থান আম আদমি পার্টির উপস্থিতি। আশ্চর্যজনকভাবে ‘আপ’-এর প্রাণপুরুষ অরবিন্দ কেজরিওয়াল তুলনীয় হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি ‘গুজরাট মডেল’ তুলে ধরে ভারত জয় করেছিলেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল গুজরাট মডেলের মতোই শোকেস করেছেন ‘দিল্লি মডেল’।

টানা তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লির সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় তিনি স্বকীয়তার ছাপ রেখেছেন। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে প্রশাসনে তিনি এমন কিছু পরিবর্তন এনেছেন, যা প্রান্তিক জনসমষ্টির পক্ষে মঙ্গলজনক। এই মডেল, যার কেন্দ্রে রয়েছে জনমুখী বহুবিধ কর্মসূচি, যা দিল্লির মতো ‘ধনী’ রাজ্যে বলবৎ করা সহজ, তা পাঞ্জাবের মতো সমস্যাদীর্ণ রাজ্যে কতটা ফলদায়ী হবে, তা পরের কথা। আসল কথা হলো, পাঞ্জাববাসীর কাছে তিনি বিকল্পের স্বপ্ন ফেরি করতে সফল হয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির মতো তিনিও হয়ে উঠেছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

এই ফেরিওয়ালা আগামী দিনে মোদির বিকল্প হয়ে উঠতে পারেন। আপ নেতারা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, কংগ্রেসের শূন্যস্থান তাঁরাই পূরণ করবেন। উত্তরাখন্ড ও গোয়ায় তাঁরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। আগামী দিনে কেজরিওয়ালের লক্ষ্য হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাট। সাত বছরের উদ্যোগে পাঞ্জাব দখল করে এ মুহূর্তে আপ উদ্দীপ্ত। কেজরিওয়াল উচ্চাশী। তাঁর এ উচ্চাশা ভবিষ্যতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাত্রদাহের কারণ হয়ে ওঠে কি না, তা দেখার বিষয়।

এবারের ভোটে একটা ‘মিথের’ও অবসান ঘটল। বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করলেন বহুজন সমাজের মুকুটহীন রানি মায়াবতী নিজেই। কী কারণে এবারের ভোটে তিনি সেভাবে আগ্রহী হননি, তা তিনিই জানেন। রাজ্যবাসী কিন্তু দেখল ‘জাটভ’ দলিত সমর্থন কীভাবে তাঁকে ছেড়ে গেল। ৪০ বছর আগে মায়াবতীকে সামনে রেখে কাঁসিরাম দলিত সমাজকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করেছিলেন। মায়াবতী তাতে সাফল্যের ফসল বুনেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন একাধিকবার। এ পর্যন্ত কোনো দিন উত্তর প্রদেশে ২০-২১ শতাংশের নিচে তাঁর দলের প্রাপ্ত ভোটের হার নামেনি। এই প্রথম জাটভ দলিতদের এক বড় অংশ তাঁর থেকে মুখ ফেরালেন। বেছে নিলেন সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপিকে। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস’ স্লোগান নরেন্দ্র মোদি তুলেছেন। উত্তর প্রদেশের দলিতরাও তাতে ভরসা রাখতে চেয়েছেন।

কংগ্রেসমুক্ত ভারত গঠনের কথা মোদি প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন। নেহরুবাদী রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করছেন সাড়ে সাত বছর ধরে। এবারের ভোট সেই লক্ষ্যে আরও এক বিরাট পদক্ষেপ। মোদির কাছে এই সাফল্য আরও গরিমার কারণ। ক্ষমতায় থাকার যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিড়ম্বনা পাশ কাটিয়ে জয়ের ধ্বজা কীভাবে পতপত করে উড়িয়ে রাখা যায়, তার প্রমাণ তিনি রাখলেন। পাঁচ রাজ্যের এই ভোট ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে সেমিফাইনাল বলে বিবেচিত হচ্ছিল। বলতেই হবে, বিজেপি যতটা সসম্মানে উত্তীর্ণ, প্রতিষ্ঠিত বিরোধীরা ততটাই ভূলুণ্ঠিত।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ১০, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ