Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক—এই তিন অবস্থার সুস্থ সমন্বয়ের প্রয়োজন

Share on Facebook

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশি এক পরিবারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই লেখার উদ্যোগ। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত দুজন সন্তান তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। কানাডায় ২০১৯ সালে প্রায় একইরকম মর্মান্তিক একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। মানব সভ্যতার সুস্থ চেতনা প্রবাহের দিকটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এই ঘটনার আকস্মিকতায়।

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সামাজিক ও সাংগঠনিক প্রচারণায় আধুনিক সমাজ–রাষ্ট্র উন্নয়নে পূর্বশর্ত হিসেবে একটি দক্ষ জনগোষ্ঠী ও নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার দিকটি বারবার আলোচিত হয়। কিন্তু একটি দক্ষ নেতৃত্বের বিকাশ কীভাবে হয়? সফল জনগোষ্ঠী তো সুস্থ স্থিতিশীল ভারসাম্যময় সমাজ ও পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠে, তাই না? আধুনিক প্রজন্মকে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অবিশ্রান্তভাবে ছুটে চলতে হয় তারা। তাঁদের মনোসামাজিক পরিবেশ প্রভাব রাখে তাদের পরবর্তী জীবনে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনায় ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক—এই তিন অবস্থার সুস্থ সমন্বয়ের দিকটা উল্লেখ করা হয়।

সমাজের সফলতার জন্য সমাজের মানুষের ভারসাম্যময় মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। একজন শিশু বা কিশোরের সামাজিক ও পারিবারিক পরিমণ্ডল হতে শুধু যদি পরীক্ষায় বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর মনোজগতের মূল কাঠামো যদি বাবা–মায়ের অথবা তাঁর একান্তজনের হতে অজানা থেকে যায় এবং তার ইচ্ছা, আনন্দ–হতাশা, অভিযোগগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন না হয়, তবে তাঁর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছে বলে দাবি করা যায় না। দুঃখজনকভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এখনকার আধুনিক ও সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে তার সঠিক সহায়ক নয় অথবা এতটাই ভীতিকর যে, একজন শিশু, কিশোর বা তরুণ তাঁর সমস্যা ও প্রত্যাশাগুলো প্রকাশের ইতিবাচক ক্ষেত্র পায় না। আর পরিবারিক আর সামাজিক সংগঠনের মাত্রাতিরিক্ত নানামুখী চাপে প্রত্যাশার বলি হয়ে তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছা।

ফলস্বরূপ, অনেকেই ক্রমান্বয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে কোনো অস্বাভাবিক ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ক্রমাগত চাপযুক্ত সমাজও পরিবেশ থেকে সৃষ্ট নেতিবাচক আবহে একজন কিশোর, তরুণ, পরিণত বয়স্ক নারী অথবা পুরুষ বিভিন্ন মাত্রায় মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বাইপোলার ডিসঅর্ডার, স্কিৎসোফ্রেনিয়া, উদ্বেগজনিত সমস্যা, ট্রমা ও পোস্টট্রমাটিক ডিসঅর্ডার, অবসাদ, হতাশা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

পরিবারের কিশোর বা তরুণ সদস্যের ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষায় বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অর্জন করানো সম্ভবত সম্ভব। একজন মেধাবী ছাত্রের মধ্যে যদি অনুভূতি, সম্মানবোধ, নীতিশিক্ষা, মূল্যবোধ, শালীনতাবোধ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহমর্মিতা, আত্মবিশ্বাসর ভিত্তি গড়ে না উঠে, তাঁর মানবিকতার উন্মোচন হয়েছে বলা চলে না। পরিবারে বাবা–মায়ের পারস্পরিক সম্মানজনক আচরণ সন্তানের আচরণগত জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই সেদিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ দেওয়া প্রয়োজন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আধুনিক যুগে বাবা–মা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। ছুটির দিনে শিক্ষিত মা-বাবা অনেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সামাজিক বা লৌকিকতার আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকেন। আর এই বাস্তবতায় প্রায়শই কিশোর বা তরুণ সন্তানদের না বলা কথাগুলো অব্যক্ত থেকে যায়। এতে পরোক্ষভাবে প্রজন্মের প্রতি হয় অবিচার। এদিক থেকে ক্ষেত্রবিশেষে বাহবা পাওয়ার আশায় ছায়ার পেছনে দৌঁড়ে আমরা আমাদের জীবনের সারসত্য বা সাবস্ট্যান্সকে উপেক্ষা করছি। শিশু কিশোরদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে তাঁদের অপার সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করতে হবে। তাঁকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা না করে, হেয় প্রতিপন্ন না করে তার ছোট–বড় ভালো যেকোনো সৃজনশীল ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে কীভাবে ভালোভাবে মোকাবিলা করবে, সে ব্যাপারে তাঁকে শিক্ষা দিতে হবে, আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। শিশু, কিশোর বা তরুণটি বাইরের পরিবেশে কোনো সমস্যা বা হুমকির শিকার হচ্ছে কিনা, সে জন্য নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে সময় সুযোগ অনুসারে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিতে হবে। প্রতিটি মানুষ তাঁর জীবন পরিক্রমায় কোনো না কোনো মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে থাকে। সেটিই স্বাভাবিক আর তা আদৌ লজ্জা ও সংকোচের কোনো বিষয় নয়।

একজন মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সিলর আমাদের নিজের ওপরে বিশ্বাস রাখতে, সমাজের সঙ্গে সংগতি বিধান করে চলতে, স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু নির্দেশনা দিতে পারেন। বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত, ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মেডিটেশন, উৎপাদনশীল হয়ে নিজেকে ও সমাজকে সক্রিয় রেখে উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

সামাজিক ও সাংগঠনিক পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান প্রসারের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের পাঠক্রমে বা নিয়মিত রুটিনে মানসিক স্বাস্থ্য ও মূল্যবোধ নীতি, ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পন্ন শিক্ষার বিষয়টি এমনভাবে সংযুক্ত করা দরকার, যেন প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষক বা শিক্ষক কিছুটা হলেও মানসিক কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বভার নিতে পারেন। মানবিকতা ও মূল্যবোধের গুরুতর দিকটি নিয়মিত স্বল্পশিক্ষিত সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির জন্য সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে সমাজ উন্নয়ন কর্মীরা, সম্প্রচারমাধ্যম ও জননেতারা তাঁদের নিয়মিত আলোচনায় উপস্থাপনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখতে পারেন।

সর্বোপরি, সুস্থ ও উন্নত মানবিক পরিবেশ প্রসারের নিরিখে আরোপিত গতানুগতিক একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির বলয় থেকে বের হয় আগামী প্রজন্মকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন নয় বরং তাঁদের মনের দরজায় প্রবেশ করে সব কথা শুনে যথাযথ নির্দেশনা সমৃদ্ধ মানবিক সৎগুণের বিকাশে সাহায্য করা প্রয়োজন।

লেখক: ফারজানা নাজ
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ