Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ভারতের কুখ্যাত ‘দস্যুসম্রাট’ মালখান সিংয়ের আত্মসমর্পণের গল্প (২০২১)

Share on Facebook

গত শতকের আশির দশকের শুরুর দিকের কথা। ভারতীয় আলোকচিত্রী প্রশান্ত পানজিয়ার তাঁর দুই সহকর্মীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। মধ্য ভারতের দুর্গম এলাকা চষে বেড়ান। অঞ্চলটিতে তখন কুখ্যাত সব দস্যু-ডাকাত দলের রাজত্ব। ডাকাতদের জীবনযাপন স্বচক্ষে দেখার পাশাপাশি সেই চিত্র ধারণ করা ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।

তখন ডাকাতের বেশির ভাগের বসবাস মধ্যপ্রদেশের চম্বল এলাকায়। সেখানে থেকে তাঁরা ডাকাতি করতেন। পুলিৎজারজয়ী লেখক পল স্যালোপেকও চম্বল এলাকা নিয়ে লিখেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, পর্বতসংকুল ও নদীঘেরা ‘নিষিদ্ধ এলাকা’ চম্বল ছিল ডাকাত, খুনি, গ্যাংস্টার ও কুখ্যাত সব দস্যু দিয়ে ভরা।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্ত ও তাঁর সহকর্মীদের জন্য এলাকাটিতে পৌঁছানো ছিল কঠিন ও দুঃসাধ্য এক কাজ। কয়েক মাসের চেষ্টার পর ১৯৮২ সালের মে মাসে তাঁরা এলাকাটিতে পৌঁছে মালখান সিংয়ের সাক্ষাৎ পান। তখন মালখান ছিলেন কুখ্যাত ডাকাত সর্দার। যিনি ভারতের ‘দস্যুসম্রাট’ নামে পরিচিত ছিলেন।

শুধু মধ্যপ্রদেশে নয়, পাশের রাজ্য উত্তর প্রদেশেও ডাকাতদের এমন দল ছিল। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই ডাকাতি করত।

এক বছর আগে ১৯৮১ সালে উচ্চবর্ণের ২২ হিন্দুকে একসঙ্গে হত্যার মধ্য দিয়ে কুখ্যাত হয়ে ওঠেন ফুলন দেবী। কয়েকবার গণধর্ষণের শিকার হয়ে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তারপর বদলা নিতে তিনি গণহত্যা চালান। এ ঘটনার পর তিনি ‘দস্যুরানি’ নামে কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।

ভারতে তখন অনেক ডাকাত দল থাকলেও চম্বলের মালখান ও তাঁর দলই ছিল সবচেয়ে দুর্ধর্ষ। তাঁরা হেঁটে হেঁটে ডাকাতি করতেন। তাঁদের ঘরবাড়ি বলে কিছু ছিল না। ছিল না কোনো স্থায়ী আবাস। পথ চলতে চলতে গিরিখাতে তাঁবু গেড়ে তাঁরা থাকতেন।

মালখানের দলের অবস্থা যখন রমরমা, তখন তাঁর দলের সদস্য ছিল প্রায় ১০০। তিনি ‘দস্যুসম্রাট’ উপাধি পান তাঁর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। ১৯৮২ সাল নাগাদ তাঁর দলের বিরুদ্ধে ৯৪টি মামলা করে পুলিশ। ডাকাতি ছাড়াও তাঁর দলের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল।

অস্ত্রসমর্পণের জন্য তৎকালীন মধ্যপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মালখানের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ১৯৮২ সালের গ্রীষ্মের কথা। সেবার ফোসকা পড়ার মতো গরম পড়েছিল। এমন সময় প্রশান্ত ও তাঁর দুই সহকর্মী কল্যাণ মুখার্জি ও বিরিজরাজ সিং মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের সঙ্গে মালখানের আলোচনার মধ্যস্থতাকারীতে পরিণত হন। তাঁরাই মালখানের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করেন।

প্রশান্ত জানান, তিনি ওই ডাকাত দলের সঙ্গে কয়েক দিন কাটিয়েছিলেন।বিশ্বাসঘাতকতা এড়াতে তাঁকে তারা জিম্মি করে রেখেছিল। আর তিনিও এই সময় তাঁর কাঙ্ক্ষিত ছবিগুলো পাচ্ছিলেন বলে খুশি ছিলেন।

চম্বলে এক চাঁদহীন রাতে ডাকাত দলের সঙ্গে প্রশান্তের প্রথমবার দেখা হয়। সে রাতের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, মালখান ছিলেন লম্বা। তবে তাঁর শরীর ছিল হালকা ও পেটানো। দুদিকে প্যাঁচানো গোঁফ, স্বভাবে গম্ভীর। কাঁধে বেলজিয়ামের তৈরি বন্দুক। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী কিন্তু বেশ জেদি।

মালখানের দলের সদস্যরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মূলত রাতের আঁধারে চলাচল করতেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন: বিছানা, কাঁথা-কম্বল, অস্ত্র ও হালকা খাবার সব সময় তাঁদের সঙ্গে থাকত। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে থাকত ত্রিপল। ডাকাত দলটি ঘুমাত উন্মুক্ত স্থানে।

প্রশান্ত বলেন, মালখান ছিলেন চম্বলের ধ্রুপদি এক গল্পের নায়ক। তিনি ছিলেন নিম্নবর্ণের এক তরুণ। তবে নিজেকে ডাকাত বা দস্যু বলতে নারাজ ছিলেন তিনি। মালখানের ভাষ্য ছিল, আত্মমর্যাদা ও নিজেকে রক্ষা করতে তিনি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। উচ্চবর্ণের এক হিন্দু তাঁকে যে যন্ত্রণা দিয়েছিল, তিনি তার বদলা নিতে চেয়েছিলেন।

প্রশান্তের সঙ্গে ছিল নিজের পেনট্যাক্স ও ধার করা একটি নিকন ক্যামেরা। প্রায় এক সপ্তাহে তিনি এ ক্যামেরা দিয়ে ডাকাত দলের ছবি তোলেন। সে সময়ের কিছু বিরল ছবি প্রশান্তের লেখা ‘দ্যাট হুইজ ইজ আনসিন’ বইয়ে স্থান পেয়েছে।

অবশেষে সে বছরের জুনে হাজারো মানুষের সামনে মালখান ও তাঁর দল আত্মসমর্পণ করে। অন্যান্য শর্তের সঙ্গে মালখান সরকারকে শর্ত দিয়েছিলেন, তাঁরা আত্মসমর্পণ করলে দলের কোনো সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।

‘ইন্ডিয়া টুডে’ সেই দিনের বর্ণনা দিয়ে লিখে, বিজয়ী বীরের বেশে সমবেত জনতার সামনে হাজির হন মালখান। লম্বা ও পাতলা মালখানের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। দীর্ঘদিন যে অস্ত্র নিয়ে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন, তাঁকে বিদায় জানালেন মালখান।

মালখানের মধ্যে রসবোধ ছিল। আত্মসমর্পণের পর তাঁকে খোঁচা দিয়ে সাংবাদিকদের করা অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিল ‘আপনার এখন কেমন লাগছে?’ পরে মালখানের সঙ্গে প্রশান্ত ও তাঁর সহকর্মীদের দেখা হলে তাঁদেরও একই প্রশ্ন করতেন তিনি।

মালখান ও তাঁর দলের সদস্যদের কিছু অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়। তাঁদের পাঠানো হয় রাজ্যের উন্মুক্ত এক কারাগারে। মালখান কয়েক বছর কারাভোগ করেন।

মালখানের বয়স এখন ৭৮ বছর। তিনি এখন রাজনীতিতে যুক্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।

২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে মালখান বলেন, ‘আমি ডাকাত ছিলাম না। আমি ছিলাম বিদ্রোহী। যে তাঁর আত্মসম্মান ও আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। প্রকৃত ডাকাত কারা, তা আমি জানি। আর তাঁদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটাও আমি জানি।’

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ০২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ