Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ভারতে মুসলিম এবং ভোটব্যাংক (২০২১)

Share on Facebook

মার্কিন একটি জনসংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণায় ২০২০-এ ভারতের জনসংখ্যা অনুমিত হয়েছে ১৩৯ কোটি। এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ১৪-১৫ শতাংশ ধরে ১৯-২০ কোটি। বিশ্বব্যাপী ৪৯টি রাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইন্দোনেশিয়ার পর ভারত ছাড়া একক কোনো রাষ্ট্রে এত মুসলমান নেই। ভারত পৃথিবীতে নিজেদের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করলেও ভারতের সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলমানরা প্রতিনিয়ত নানা সামাজিক নিপীড়ন ও জীবনযাপনে নানা বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যের চরম অবস্থার কথা বাদ দিলেও দক্ষিণের কটি প্রদেশ বাদে সর্বত্র মুসলমানরা একধরনের অধস্তনতার শিকার। ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে ভিন্ন রকম, প্রকার ও প্রকরণের নির্যাতন ও অধস্তনতার চিত্র। আসামে মুসলমান মানেই বাংলাদেশের বেআইনি অভিবাসী।

আসামের বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশ’ জাতিগত বিদ্বেষের একটি প্রতীক। ২৭-২৮ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতির একটি প্রধান ইস্যু ‘মুসলিম বিদ্বেষ’। কারণ, বিধানসভার ২৯৪ আসনের ১১০টিতে ভোটের জয়-পরাজয় নির্ধারণে মুসলিম ভোট প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুসলমানরা দীর্ঘদিন কংগ্রেসের ‘ভোটব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত ছিল। বেশ কিছু মুসলিম অভিজাত কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বও করেছেন। বাম জোট পরে সে ভোটব্যাংক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। গত ১০ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল নানাভাবে মুসলিম তোষণ শুরু করে। একসময় মুসলমান ভোটাররাও মমতামুখী হয়। এভাবে মূলধারার রাজনীতির কারও না কারওর ভোটব্যাংক হিসেবে ক্ষমতার অনুগ্রহভাজন হয়ে থেকে বৃহত্তর মুসলিম সমাজ পশ্চিমবঙ্গে বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি। জনতুষ্টি তথা পপুলিস্ট বাতাবরণে একধরনের মানসিক নিরাপত্তাবোধ হয়তো সৃষ্টি হয়। কিন্তু জীবনের মৌলিক ও বাস্তব প্রয়োজনগুলোর ঘাটতি থেকেই যায়।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটব্যাংক হয়ে বিশেষ নজর কাড়ার বা বিশেষ সহানুভূতির দিনও বোধ হয় মুসলমানদের শেষ হতে চলল। একদিকে বাম এবং কংগ্রেস প্রভৃতি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক শক্তির ব্যাপক অবক্ষয় এবং বিপরীতে হিন্দুত্ববাদের নব উত্থান ক্রমাগত মুসলিম রাজনীতির পালের হাওয়ায় ভিন্ন গতিমুখ দিয়েছে। অপর দিকে মমতার পপুলিস্ট মুসলিম তোষণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজকে কিছুটা বিরক্ত ও মুসলিমবিদ্বেষী করে গেরুয়ামুখী করেছে। মাথায় কাপড় দিয়ে হজ কাফেলার অভ্যর্থনা, রমজানে রোজা রাখা, ইফতার করা, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসাপ্রীতি ইত্যাদির কারণে মমতাকে বিজেপি এখন ব্যঙ্গ করে মমতাজ বলছে। মমতার লোকদেখানো, ভোটভোলানো মুসলিম আদিখ্যেতার বিষক্রিয়া মুসলমানদের রাজনৈতিকভাবে কিছুটা ব্রাত্য ও কোণঠাসা করেছে। এটা কাটানোর সক্ষমতা এককভাবে মুসলমানদের নেই।

একদিকে বিজেপির আগ্রাসী নীতি, দিশেহারা বা অতি সাবধানী বাম ও কংগ্রেসের ‘দেখি না কী হয়’ নীতি এবং মমতার পপুলিজম প্রভৃতিতে বীতশ্রদ্ধ বিক্ষুব্ধ মুসলমান কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমন সময় মুসলমানদের মুখপত্র হিসেবে আব্বাস সিদ্দিকীদের আবির্ভাব কিছু কিছু পকেটে মুসলিম আন্দোলনের সাময়িক উত্তাপ সৃষ্টি করলেও ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজের বাস্তবতায় তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে আসামের অভিজ্ঞতা প্রণিধানযোগ্য। বদরুদ্দিন আজমলের দল লোকসভায় একটি আসন ধরে থাকলেও আসাম বিধানসভায় ক্রমাগতভাবে মাটি হারাচ্ছে। এভাবে একটি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমাজ যদি একটি সংখ্যালঘুর প্রতি চরমভাবে বৈরী হয়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্বল সংখ্যালঘুর ওপর চড়াও হয়, সেখানে তাদের টিকে থাকার অবলম্বন কী হতে পারে? শোনা যায়, বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে জোটে থাকার কারণে, অনেক কংগ্রেস সমর্থক আসামে দল ত্যাগ করছেন। ত্রিপুরা ও আসাম এখন বিজেপির কবজায়।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস সবার ঘাড়ে বিজেপির উষ্ণ নিশ্বাস। সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপে বিজেপির অগ্রগামিতার আভাস স্পষ্ট। তৃণমূল ও বিজেপির ভোট ৪২-৪৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাম এবং কংগ্রেস ৫-৭ শতাংশের বেশি নয়। ৭-৮ শতাংশ দোদুল্যমান। তৃণমূল ও বিজেপি আসনের ব্যবধান দ্রুত কমছে। যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তখন কি তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস একসঙ্গে কোয়ালিশন করতে পারবে? যদি তা করতেই হয়, তবে নির্বাচনের আগে মোর্চা করলে তো বিজেপি ভোট পেলেও আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যেত! তৃণমূলের একগুঁয়েমি ও বামদের ওপর লাগাতার সন্ত্রাসের ক্ষতে কোনো মলম দেওয়ার চেষ্টা মমতার দিক থেকে ছিল না। অথচ পশ্চিমবঙ্গে লাগাতার ৩৪ বছর বাম শাসনের সফল কৌশলই ছিল বৃহত্তর ঐক্য। মুসলমান ভোটব্যাংকের ওপর ভর করে মমতার একলা চলো নীতি আখেরে মুসলমানদের সর্বনাশ করে ফেলতে পারে। এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই, কিন্তু এ লড়াইয়ে তারা দিকনির্দেশনাহীন। আসামের সংখ্যালঘু মুসলমানের রাজনৈতিক কোনো আশ্রয় এখন খুব একটা আর অবশিষ্ট নেই। আসামের দশা না হলেও পশ্চিমবঙ্গে ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ভারতের তরুণ সাংবাদিক গাজালা ওয়াহাব সম্প্রতি একটি যুগান্তকারী বই লিখেছেন। নাম বর্ন আ মুসলিম: সাম ট্রুথস অ্যাবাউট ইসলাম ইন ইন্ডিয়া। পুরো বইটি আমি এখনো দেখিনি। পত্রপত্রিকায় সমালোচনা এবং করণ থাপারের সঙ্গে লেখিকার একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকার দেখেছি। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বইটির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। লেখক বলতে চাচ্ছেন, ‘মুসলমানদের ভারত’ পাল্টে যাচ্ছে। মুসলমান পরিচয় মুছে দিয়ে ভারতীয় হওয়ার একটি প্রবণতা তাদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম পরিচয় ধরে রেখে ভারতের গরিব দিনমজুর শ্রেণি জীবন বাঁচাতে পারছে না। নাম ও ধর্ম পরিচয়ের কারণে তারা কাজ পাচ্ছে না। প্রকাশ্যে ধর্মান্তরিত না হলেও গোপনে মুসলিম নাম পরিবর্তন করে নিচ্ছে। মুসলিম বস্তি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পারিবারিক নানা বিপর্যয়কর অভিজ্ঞতা, ইতিহাসের নানা দলিল, নানা পেশা ও শ্রেণির মুসলমানদের সাক্ষাৎকার—সব মিলিয়ে

মোহাম্মদ আহমদ (ছদ্মনাম) নামক একজনের জবানিতে জানাচ্ছেন, তিন-চার পুরুষ আগে পূর্বপুরুষ নিম্নবর্গের হিন্দু ছিলেন। বর্ণ হিন্দুদের কাছে কোনো মান-মর্যাদা ছিল না। ইসলাম তাঁদের মর্যাদা ও পরিচয় দিয়েছিল। এখন জীবনের তাগিদে, বাঁচার তাগিদে আবার সে পূর্ব পরিচয়ে ফিরে যাচ্ছি। ধর্মের চেয়ে টিকে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর প্রদেশের কোনো এক শহরের একটি অভিজাত পরিবার হিসেবে ওয়াহাবরা পরিচিত ছিলেন। জেলার ডিএম-ডিসি-এসপি সবাই তাঁদের পরিচিত এবং পারিবারিকভাবে আসা-যাওয়া ছিল। কিন্তু যেদিন তাঁদের বাড়ি আক্রমণ করে ভাঙচুর করা হয়, সেদিন তাঁদের ফোন তাঁরা কেউ রিসিভ করেননি। ঘটনার পরও খোঁজখবর নেননি। অথচ তাঁর পিতা অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ, ওই শহরের অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এই তিনি সবাইকে অবাক করে জীবনসায়াহ্নে বললেন, ভারত ওদের দেশ, এখানে আমরা ‘অপর’! এ বইটি সমসাময়িক ভারতে মুসলমানদের সামাজিক অবস্থা বিশেষত নিত্যদিনের ‘ভীতিপ্রদ’ জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ভারতের যেকোনো দলের সরকার নিয়ে আমাদের মতো নিরীহ মানুষের মাথাব্যথার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সাম্প্রদায়িক কোনো সুড়সুড়ি দিতে নয়, বরং নির্যাতিত একটি সম্প্রদায়ের জন্য এ উদ্বেগ স্বাভাবিক ও মানবিক। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনও নিন্দনীয়। উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তা মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ যারই হোক, কখনো কারও জন্যই তা মঙ্গলকর নয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি আমাদের নিকট প্রতিবেশী। যত কিছুই হোক প্রতিবেশী পরিবর্তন তো সম্ভব নয়। তাই হয়তো প্রতিবেশীদের নির্বাচন ও রাজনীতির গতি-প্রকৃতি আমাদের ভাবায়!

লেখক: ড. তোফায়েল আহমেদ শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ০১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ