Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের সন্তানের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ (২০২৫)

Share on Facebook

আল জাজিরাআত্তারি–ওয়াঘা সীমান্ত।

মুহূর্তটা ছিল বিদায়ের। কালো নেটের বোরকা পরে তপ্ত রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সায়রা শক্ত করে স্বামী ফারহানের হাত ধরে রেখেছিলেন। ভারত ও পাকিস্তানের প্রধান সীমান্ত চেকপোস্টের মধ্যে আরও কিছুটা সময় দুজনে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করছিলেন।

সীমান্ত ক্রসিংটির নাম আত্তারি-ওয়াঘা। একদিকে ভারতের আত্তারি গ্রাম, অন্যদিকে পাকিস্তানের ওয়াঘা। এই সীমান্ত পথ বহু বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণের একটি গেটওয়ে ছিল। তবে আজ সেই আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশ তাদের নাগরিকদের সীমান্তের ওপারের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। হাজারো পরিবারের ওপর এর প্রভাব পড়ছে, যাদের কিছু সদস্য ভারতের, আবার কিছু সদস্য পাকিস্তানের।

ভারত সরকার গত মঙ্গলবারের মধ্যে প্রায় সব পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ৯ মাসের ছেলে আজলানকে নিয়ে সায়রা ও ফারহান নয়াদিল্লি থেকে সারা রাত ভ্রমণ করে সীমান্ত ক্রসিংয়ে পৌঁছান। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সায়রার দিকে তাকিয়ে ফারহান বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের দেখা হবে।’ এরপর শিশুপুত্র আজলানের গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানালেন ফারহান। বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, খুব শিগগির দেখা হবে। আমি তোমাদের দুজনের জন্য দোয়া করব।’
তিন বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমের পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা সায়রার সঙ্গে নয়াদিল্লির ফারহানের প্রেম হয়। এরপর বিয়ে। সায়রা চলে আসেন নয়াদিল্লিতে। তবে গত মঙ্গলবার আত্তারি সীমান্তে দাঁড়িয়ে সায়রা ও ফারহান যখন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন, তখন দুজনেরই চোখ ভিজে উঠেছিল। সেই মুহূর্তে এক সীমান্তরক্ষী তাঁদের তাড়া দিয়ে বললেন—‘চলুন, সময় নেই।’

কাঁটাতার আর ব্যারিকেডে ঘেরা সেই চেকপয়েন্টে এ দম্পতির পরিচয়ের একমাত্র চিহ্ন ছিল পাসপোর্টের রং—সায়রার সবুজ, ফারহানের নীল।

সায়রার দিকে তাকিয়ে ফারহান বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের দেখা হবে।’ এরপর শিশুপুত্র আজলানের গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানালেন ফারহান। বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ, খুব শিগগির দেখা হবে। আমি তোমাদের দুজনের জন্য দোয়া করব।’

ঠিক তখনই এক নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে এসে আজলানের পাসপোর্টের দিকে ইশারা করলেন। সেটি ছিল নীল রঙের—মানে ভারতীয়।

নিরাপত্তারক্ষী সায়রাকে বললেন, ‘বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম।’ সায়রা তখনো বাঁ হাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছেন।

এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দম্পতিকে আলাদা করে দেওয়া হয়। এরপর সায়রা চললেন করাচির পথে, আর ফারহান তাঁদের দুধের সন্তান আজলানকে নিয়ে ফিরে গেলেন নয়াদিল্লিতে।

‘এক নির্বাসিত জীবন’

গত ২২ এপ্রিল অস্ত্রধারীরা পেহেলগামের এক পর্যটন শহরে গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে। তাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

ঘটনার জেরে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া বহু বছরের পুরোনো সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানও অন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে এনেছে এবং কার্যত একে অপরের বেশির ভাগ নাগরিককেই বহিষ্কার করেছে। আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত এখন পুরোপুরি বন্ধ। সেখান দিয়ে মানুষের পারাপার ও পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে।

২২ এপ্রিলের পর এ পর্যন্ত আনুমানিক ৭৫০ জন পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। আর পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরেছেন প্রায় ১ হাজার ভারতীয় নাগরিক।

এ সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের মধ্যে আছেন দুই দশক পর ভারতে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা পাকিস্তানি নারী, ভারতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা দুই বোন—যাঁদের অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়েই ফিরতে হয়েছে এবং ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বয়স্ক পাকিস্তানি রোগীরাও।

৪৮ বছর বয়সী হালিমা বেগমও এ তালিকায় আছেন। ওডিশা থেকে দুই দিন ধরে দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ (প্রায় ১ হাজার ২৫০ মাইল) পাড়ি দিয়ে আত্তারি সীমান্তে পৌঁছেছেন তিনি।

হালিমা বেগম ২৫ বছর আগে করাচি ছাড়েন। সেই সময় ওডিশার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। জীবন মোটামুটি ভালোই চলছিল। এর মধ্যেই সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে তাঁর হাতে ভারত সরকারের ‘ভারত ছাড়ো’ নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছেন।

সীমান্তের কাছে একটি ট্যাক্সিতে বেশ কিছু ব্যাগ নিয়ে বসে ছিলেন হালিমা। তিনি বলেন, ‘আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ওনাদের বলেছিলাম, আমি তো এখানে এমনি এমনি আসিনি—আমার বিয়ে হয়েছে ভারতে। ভারত সরকার যে আমার এত বছরের গড়ে তোলা জীবনকে এক ঝটকায় ছিঁড়ে ফেলছে এবং আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, তা কি ন্যায্য হচ্ছে?’

২৫ বছর ভারতে কাটানো হালিমা বলেন, দেশটা তাঁরও দেশ হয়ে গেছে।

হালিমার সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই ছেলে—২২ বছর বয়সী মুসাইব আহমেদ ও ১৬ বছরের যুবায়ের আহমেদ। আট বছর আগে তাঁদের বাবা মারা গেছেন। দুই ভাই মিলে ঠিক করেছেন, যুবায়ের মায়ের সঙ্গে সীমান্ত পার হবে, যেন সে মায়ের দেখাশোনা করতে পারে।

দুই ছেলের পাসপোর্টই নীল (ভারতীয়)। আর হালিমার পাসপোর্ট সবুজ (পাকিস্তানি)। মুসাইব ও যুবায়ের শুরুতে সীমান্তরক্ষীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন, এমনকি শেষে তর্কেও জড়ান। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ হয়নি।

কাঁপা গলায় মুসাইব বলেন, ‘মা কখনো একা কোথাও যাননি। আমি জানি না, উনি কীভাবে এই ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে করাচি পৌঁছাবেন।’

করাচিতে হালিমার যাওয়ার মতো কোনো ঘর নেই। তাঁর মা–বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ভাই নিজের ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে মাত্র দুটি কক্ষে থাকেন।

চোখ মুছতে মুছতে হালিমা বলেন, ‘হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। কিন্তু একটারও উত্তর নেই। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি—আমার সন্তানদের যেন রক্ষা করেন। খুব শিগগির আবার এক হব আমরা।’

রাতারাতি টানা সীমান্তে ভাগ হয়ে যাওয়া মানুষের গল্প নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘মিডনাইটস বর্ডারস’ বইটি। এর লেখিকা সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে এমন অসংখ্য হৃদয়বিদারক কাহিনি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

সুচিত্রার মতে, ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকে যেসব মুসলিম নারী ভারত কিংবা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে অন্য দেশের পুরুষদের বিয়ে করে সেদিকে চলে গেছেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠানো হয়, তখন তাঁদের অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়।

‘(বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর) আপনি এমন এক জায়গায় বন্দী হয়ে পড়েন, যা আর আপনার ঘর নয়—অথবা এমন একটা ঘর, যেটাকে আপনি চিনতেও পারেন না। নির্বাসন হয়ে ওঠে আপনার জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা’, বলেন সুচিত্রা।

সায়রা ও ফারহানের মতো করে বিগত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বহু পরিবার এ আশায় বুক বেঁধে থেকেছে যে অচিরেই তারা আবার মিলিত হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে তা ঘটেনি।

সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ‘সবচেয়ে বেদনাদায়ক যে কথা বারবার শুনবেন, সেটা হলো—অনেকে ভেবেছিলেন যে তাঁরা সাময়িকভাবে যাচ্ছেন।’

‘শুধু একজন মা-ই যন্ত্রণা বুঝতে পারেন’

আবারও আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্তে ফিরে যাওয়া যাক। সেখানে ফারহান তাঁর ছেলের ফিডারটি উড়োজাহাজের মতো করে বানিয়ে খেলা করার চেষ্টা করছিলেন। ৯ মাসের ছেলে আজলানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে শিশুটি বিরক্ত হয়ে উঠছিল। ফারহানের বোন নুরিন বলেন, ‘সে ফিডার পছন্দ করে না, সে তার মায়ের স্পর্শ চেনে।’

নুরিন ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও সায়রা, ফারহান ও আজলানের সঙ্গে সীমান্তে এসেছিলেন।

নুরিন বলেন, ‘দুটি বড় দেশ আর শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আর আমাদের নিষ্পাপ শিশুরা আটকা পড়ে আছে। ধিক তাদের। শুধু একজন মা-ই জানেন, তাঁর ৯ মাসের সন্তানকে ফেলে আসার কষ্ট কী।’

হঠাৎ ফারহানের চোখে একঝলক আশা দেখা গেল। একজন নিরাপত্তারক্ষী তাঁর নাম ধরে ডাকছিলেন। নেভি ব্লু রঙের কটন টি-শার্ট পরা ফারহান দৌড়ে গেলেন, হাতে আজলানের নীল পাসপোর্ট। দৌড়ে যাওয়ার সময় হাসি দিয়ে ফারহান বলেন, ‘অবশেষে, আমাদের পরিবারের ওপর দয়া দেখানো হয়েছে।’ ফারহান ধারণা করেছিলেন, হয়তো এবার সায়রা ও আজলান একসঙ্গে সীমান্ত পার হতে পারবে।

কিন্তু এক ঘণ্টা পর, ফারহান ফিরে এলেন। তাঁর চোখে অশ্রু। ছেলে আজলান তখনো তাঁর কোলে, গরমে সে বিরক্ত।

ফারহান বলেন, ‘সীমান্ত পার হওয়ার সময় ও (সায়রা) অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তারা আমাকে বললেন, ও জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর কান্না থামাতে পারছিল না।’

কাঁদতে কাঁদতে ফারহান বলেন, সায়রাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার আগে জীবন কতটাই না ভিন্ন ছিল।

কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’
২৮ এপ্রিল ২০২৫

ফারহান দিল্লির শতবর্ষ পুরোনো ওল্ড দিল্লির একজন ইলেকট্রিশিয়ান। সায়রা করাচি থেকে স্নাতক করেছেন। ফারহানের বোন নুরিন বলেন, তাঁর ভাই-ভাবি এমন এক দম্পতি, যাদের কোনো কিছু আলাদা করতে পারত না।

ফারহান বলেন, বিয়ে করে সায়রা দিল্লিতে আসার পর তাঁর জীবন, দুনিয়া, সবকিছু বদলে গিয়েছিল।

আর এখন সবকিছু আবারও বদলে গেছে। এমনভাবে সবকিছু বদলেছে, যা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। আজলানকে কোলে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ফারহান। পাশে তাঁর মা আয়েশা বেগম চুপচাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি পা ভাঙা অবস্থায়ও সীমান্তে এসেছিলেন।

হিন্দিতে আয়েশা বলেন, ‘ইয়ে সব পেয়ার কে মরে হ্যায় (এরা সব প্রেমের বলি)।’

ভারত-পাকিস্তান টানাপোড়েনে একেকটি পরিবারকে ছিন্নভিন্ন হতে দেখা আয়েশা বেগমের উপলব্ধি, ‘নরকেও প্রেমে পড়া যাবে, কিন্তু কখনো এখানে নয়।’

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ০১, ২০২৫

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ