Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মরার আগে না মরে, কফি শপে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন।

Share on Facebook

লেখক: ড. সুব্রত বোস।

সকাল ছয়টা। রেস্তোরাঁতে ঢুকতে বেশ লম্বা লাইন। প্রাতরাশের জন্য সব রেস্তোরাঁতেই সকালে ভিড় একটু বেশি। বার্লিন সব সময়ই পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কাজের তাগিদেও আমার মতো প্রচুর লোক আসে। করোনার টিকা দেওয়া থাকলে জার্মানিতে আসতে এখন আর তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারপরও এত ভিড় হবে ভাবিনি।

রেস্তোরাঁর পাশেই স্প্রি নদী। নদী দেখা যায় এমন একটি টেবিলে আমি বসলাম। আমার পাশের টেবিলেই সত্তরোর্ধ্ব এক দম্পতি। চোখাচোখি হতেই হাসি দিয়ে ‘শুভ সকাল’ বললেন ভদ্রলোক। প্রথম দিনে আলাপ আর বাড়েনি। পরের দিন সকালে প্রাতরাশের সময় আবার দেখা। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া থেকে এসেছেন ঘুরতে। জার্মানি হয়ে যাবেন ইতালি আর স্পেনে। দুজনেই নিয়মিত ঘুরে বেড়ান। করোনার কারণে অনেক দিন কোথাও যেতে পারেননি। বিধিনিষেধ শিথিল হতেই বেরিয়ে পড়েছেন। বললেন, দুজনে হেঁটে সারা দিন বার্লিন ঘোরেন, মানুষ দেখেন, মিউজিয়ামে যান। দুপুর আর রাতের খাবার বাইরেই খান। রাতে হোটেলে ফেরেন ঘুমোতে।

পাশের নদী দিয়ে ছোট দুটো নৌকা যাচ্ছে। আমাদের দেশের ডিঙি নৌকার মতো। দুটো নৌকাতেই দুজন দুজন চারজন। বেশ বয়স্ক। নদীর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, আসলেই তো তাই, জীবনকে উপভোগ করতে বয়স তো কোনো বাধা হওয়া উচিত নয়। ইউরোপে দেখি, অবসরের পর বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রাণ খুলে জীবনকে উপভোগ করেন। বয়সের জন্য নিজের গণ্ডিকে কখনোই তাঁরা সীমিত রাখেন না। নিজের যা ভালো লাগে, তাই করেন। কর্মজীবনে হয়তো অনেক কিছু করার শখ ছিল, কিন্তু করতে পারেননি। সেই শখগুলো তাঁরা মেটান অবসরজীবনে।

লরা কুকস বিলেতে আমার একসময়ের সহকর্মী ছিলেন। বহুজাতিক কোম্পানির উঁচু পদ থেকে অবসরে গেলেন। অবসরে যাওয়ার কয়েক মাস পর, হঠাৎ এক দিন সন্ধ্যায় লরার ফোন। লরার কথা শুনে আমি হতবাক। লরা আর তাঁর স্বামী মিলে ইংল্যান্ডের ছবির মতো সুন্দর এক গ্রামে প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো একটি রেস্তোরাঁ কিনেছেন। বিলেতে একে পাব বলে। রেস্তোরাঁ চালানো খুবই কঠিন কাজ। লরা বললেন, কাজটা কঠিন হলেও সারাজীবন তিনি একটি রেস্তোরাঁর মালিক হতে চেয়েছিলেন। পাব হলো বিলেতি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। স্থানীয় লোকজন পাবে শুধু খেতেই আসেন না। পাব হলো ভাব আর ভাবনা আদান-প্রদানের জায়গা। চেনা ও অচেনা মানুষের মিলনস্থল।
বিজ্ঞাপন

আধুনিক ফুটবলের যে নিয়মগুলো এখনো প্রচলিত, এর অনেকগুলোই ১৮৬৩ সালে লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেনের ফ্রিম্যাসনআর্মস পাবে আলোচনার মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল। ১৯৫৩ সালে কেমব্রিজের ‘দ্য ঈগল’ পাবে বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক ও জেমস ওয়াটসন ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার আমি নিজে লরার রেস্তোরাঁতে গিয়ে সত্তরের কাছাকাছি দম্পতিকে দারুণভাবে নিজের কাজ, কাজ বলা ভুল হবে, আসলে জীবনকে উপভোগ করতে দেখেছি। বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই। একজন খাবারের অর্ডার নিচ্ছেন, আরেকজন খাবার টেবিলে টেবিলে দিয়ে যাচ্ছেন। দুজনেই মাঝে মাঝে ক্রেতাদের সঙ্গে গল্প করছেন, হাসিতে ফেটে পড়ছেন।

বহু বছর আগে, লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে তখন কাজ করি। সারা বিশ্বের মেধাবী মুখ পিএইচডির জন্য ইম্পিরিয়াল কলেজে আসে। নতুন পিএইচডি ছাত্রদের মধ্যে দেখি সত্তরোর্ধ্ব একজন, অলিভার ওয়াইজ। লন্ডনের নামকরা এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে সারাজীবন চাকরি করে সবে অবসর নিয়েছেন। গবেষণা করার ইচ্ছা থাকলেও জীবিকার প্রয়োজনে গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি করতে হয়েছিল, অবসরের পরে সেই ইচ্ছা অলিভার পূর্ণ করতে চান। পিএইচডির চাপ অলিভার নিতে পারবেন কি না, এ ব্যাপারে অনেকের মনেই সংশয় ছিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অলিভার নির্দিষ্ট সময়ে সাফল্যের সঙ্গে তাঁর পিএইচডি শেষ করেছিলেন। পরে শুনেছি গবেষণাতেও বেশ ভালো করেছেন।

বাংলাদেশে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। দিনযাপন গৎবাঁধা কিছু কাজে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় অসংখ্য কফি শপ হয়েছে। রেস্তোরাঁর সংখ্যা অগণিত। কফি শপে, শুধু দুজন বয়স্ক দম্পতি একসঙ্গে বসে কফি খাচ্ছেন এ রকম দৃশ্য মনে হয় সচরাচর চোখে পড়ে না। শেষ কবে আপনি আপনার শহরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো বয়স্ক লোককে আইসক্রিম খেতে দেখেছেন?

লন্ডনে আমাদের পাড়াতে, বেশ কয়েকজন একা থাকেন। অধিকাংশেরই বয়স ৬০ থেকে ৮০র কাছাকাছি। প্রত্যেকেই প্রাণ খুলে বাঁচেন। নিয়ম করে থিয়েটার, সিনেমা আর কনসার্টে যান। একদম সেজেগুজে। এমনকি পাড়ার দোকানেও অত্যন্ত পরিপাটিভাবে যান। নিজেকে সাজানো, অন্যের জন্য নয়, শুধু নিজের ভালো লাগার জন্য।

ইউরোপের প্রায় শহরেই সন্ধ্যার পর পানশালা, রেস্তোরাঁ বা কফি শপে বয়স্ক মানুষের ভিড় থাকে। কখনো দল বেঁধে, কখনো একা নিজের ভালো লাগার কাজটি তাঁরা করে থাকেন। আমাদের প্রতিবেশী ভেনেসার বয়স আশির ওপর। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা—প্রতিদিন ঘণ্টাখানেকের জন্য নিজের সাইকেল নিয়ে বের হন। পাশের বাড়ির অ্যালান গত বছরে মৃত্যুর আগপর্যন্ত খেলনা ট্রেন সংগ্রহ করে গেছেন। সিঙ্গাপুরের চায়না টাউনে দেখেছি, সন্ধ্যায় বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেদের গানের ব্যান্ড নিয়ে খোলা জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রাণ খুলে গান গাইছেন। অন্যরাও তাঁদের গান উপভোগ করছেন।

বাংলাদেশে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। দিনযাপন গৎবাঁধা কিছু কাজে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। নিজের ভালো লাগার কাজ করতে বিব্রত বোধ করেন। লোকে কী ভাববে এই ভয়ে। ঢাকায় অসংখ্য কফি শপ হয়েছে। রেস্তোরাঁর সংখ্যা অগণিত। কফি শপে, শুধু দুজন বয়স্ক দম্পতি একসঙ্গে বসে কফি খাচ্ছেন এ রকম দৃশ্য মনে হয় সচরাচর চোখে পড়ে না। শেষ কবে আপনি আপনার শহরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো বয়স্ক লোককে আইসক্রিম খেতে দেখেছেন? বিউটি পারলারে আপনার পাশে মায়েদের কি সচরাচর দেখেন?

জাপানের গবেষকেরা একাধিক গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে না নিয়ে পছন্দের কাজকর্মে যাঁরা নিজেকে ব্যস্ত রাখেন, তাঁদের গড় আয়ু অন্যদের থেকে বেশি, মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যক্ষম আর অবসাদও কম। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ, এই গ্রুপে। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের, জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী তাদের আগের প্রজন্ম থেকে অনেক বেশি রোমাঞ্চকরভাবে জীবনকে উপভোগ করতে চাইছে।

কেউ শুরু করছেন নতুন ক্যারিয়ার, কেউবা অবসরে নতুন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অবসরের পরে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ডিগ্রি করার সংখ্যা ইংল্যান্ডে অনেক বেড়েছে। এই প্রবণতাকে উৎসাহ দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগাতে স্বল্প সুদের ঋণে বয়সের সীমা তুলে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সে। কর্নেল স্যান্ডার্স মধ্য ৬০–এ গিয়ে ফাস্ট ফুডের চেইন কেএফসি শুরু করেছিলেন, যা এখন বিশ্বখ্যাত। জেমস বন্ডখ্যাত অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চ খ্যাতির মধ্যগগনে পৌঁছান সেই ৬০ বছর বয়সে গিয়ে।

মরার আগে না মরে, জীবনকে উপভোগ করুন। আজ বা কাল, শুরু যেকোনো দিনই হতে পারে।

ড. সুব্রত বোস প্রবাসী বাংলাদেশি ও বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ০৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ