Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন মো: আকবর এবং কিছু তথ্য !

Share on Facebook

বইএর নাম: আকবর
লেখক: রাহুল সাংকৃত্যায়ন
অনুবাদ: আশরফ চৌধুরী
প্রকাশক: চিরায়ত প্রকাশন

বইকথা: #আকবর লেখক – দীপ্তেন্দু মণ্ডল

9 বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিল কেদারনাথ পান্ডে বলে একটা ছেলে পৃথিবী দেখবে বলে। 45 বছর ধরে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, তিব্বতেই প্রাচীন বৌদ্ধ পুঁথির খোঁজে গেছেন তিনবার মূলতঃ পায়ে হেঁটেই। এছাড়াও শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন, রাশিয়া, তেহরান, বালুচিস্তান ইত্যাদি দেশে গেছেন। রপ্ত করেছেন হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, তিব্বতী, রুশ, সিংহলী, ফ্রেঞ্চ প্রভৃতি। ভারতের ভ্রমণ সাহিত্যের এই জনক বৌদ্ধ দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাম নেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন। ‘ভল্গা থেকে গঙ্গা’ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই। এছাড়াও কিন্নর দেশে আমি, মাও সেতুং, স্তালিন, বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ ইত্যাদি অসংখ্য বই তিনি লিখেছেন। পদ্মভূষণ ও সাহিত্য অ্যাকাডেমিও পেয়েছেন। একই সাথে বৌদ্ধ ও মার্ক্সীয় দর্শনের সমান অনুরাগী মানুষ ছিলেন তিনি। আজকের বই আকবর।

লেখকের গভীর অনুসন্ধিৎসা ও মননশীলতার ফসল এই গ্রন্থ। বইখানি দুই পর্বে বিভক্ত– পূর্বার্ধ ও উত্তারার্ধ। পূর্বার্ধে আলোচিত হয়েছে পারিষদদের জীবন, চরিত্র, কার্যকলাপ ও বিশেষ কৃতিত্ব সম্পর্কে। তাদের মধ্যে যেমন আছেন আবুল ফজল, আব্দুর রহিম, কবিরাজ ফৈজী, টোডরমল, মানসিংহ তেমনি আছেন শেখ আবদুন নবী, মোল্লা আবদুল্লা সুলতানপুরী, হুসেন খাঁ টুকড়িয়া, মোল্লা বদায়ূনী প্রভৃতি। এদের মধ্যে কেউ আকবরের শুভানুধ্যায়ী, তাঁর মতাদর্শের সমর্থক; কেউবা ঘোর বিদ্বেষী, তাঁর মতাদর্শ বিরোধী। লেখক সুনিপুণ দক্ষতায়, কঠোর অধ্যাবসায়ে, বস্তুবাদী নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনেছেন সেই সব মূল্যবান তথ্য, যার সাহায্যে আকবরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, দেশ-কাল-সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে পাঠক সম্যক অবহিত হতে পারেন, তার গ্রন্থ পাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। তাই এটা আকবর সম্পর্কে জানার প্রস্তুতি পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব গ্রন্থের উত্তরার্ধ– এই পর্বে বিবৃত হয়েছে আকবরের জন্ম থেকে সিংহাসনে আরোহণ, তার রাজনীতি, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সমাজসংস্কারমূলক কাজ, সার্বজনীন ধর্ম পালনের উদ্যোগ ও তার প্রতিকূলতা ও তার বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত।

এই গ্রন্থ শুরুর আগে স্বয়ং লেখকের অসাধারণ একটি প্রাককথন আছে। তিনি বলেছেন অশোকের পরে আমাদের দেশে দ্বিতীয় মহান ধ্রুবতারা আকবরকেই দেখা যায়। কণিষ্ক আকবরের চেয়ে বড় বিজেতা ছিলেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতি দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। তবু তাকে সে সব পাহাড় ডিঙোতে হয়নি যা আকবরকে হয়েছিল। সমুদ্রগুপ্ত, হর্ষবর্ধন বড় বিজেতা ছিলেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাদের ও এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নি। মুসলিম বিজেতাগণ ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাবার মানসিকতা নিয়ে আসেননি, বরং জনসাধারণকে নিজেদের মধ্যে আত্তীকরনের চেষ্টা ছিল তাদের এবং তা এই শর্তে তুমি তোমার সংস্কৃতির চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট রাখতে পারবে না। ভারতের মত অতি উন্নত ও প্রাচীন সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটা দেশ এরূপ চ্যালেঞ্জ মেনে নিতে পারেনি। এভাবেই আমাদের দেশ সংস্কৃতির দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গুপ্ত অথবা প্রকাশ্য গৃহযুদ্ধের আখড়া হয়ে ওঠে। মুসলিম শাসনব্যবস্থা তার বিরোধী সংস্কৃতি পরায়ণ দলের মানুষকে স্বপক্ষে টেনে এনে নিজেদের সুদৃঢ় করার প্রয়াস চালায়।তিন দশক অতিবাহিত হতে না হতেই ভারতীয় জনগণের বেশ বড় অংশ সেদিকে ভীড়ে যায়। উভয়ের সংঘর্ষ চলতে থাকে। এটা উপলব্ধি করা কঠিন ছিল না যে অপরকে নির্মূল করে এখানে কেবল একটি সংস্কৃতি কায়েম করা সহজ হবে না। সে জন্য চায় উপযুক্ত সময় এবং যতক্ষণ সে সময়টা না আসে, ততক্ষণ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলতে থাকবে। আকবর এই মহান সমন্বয়ে গুরুভার নিজে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এবং বহুদূর পর্যন্ত তিনি সফল হয়ে ছিলেন। শেষে এই সাফল্যগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরেও তার চেয়ে প্রশস্ত কোন পথ আজও দেখা যায়নি।

এই বইএ 30 খানা পরিচ্ছদ আছে। গ্রান্ড টেক্সচারে লেখা। স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা যায় না,সম্ভবও না। 64 পাতায় বর্ণিত হুসেন টুকড়িয়া ও 236 পাতায় বর্ণিত সাংস্কৃতিক সমন্বয় নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা চেষ্টা করব। সব থাকতে এই দুটি বিষয় কেন! কারণ এরা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

হোসেন খাঁ টুকড়িয়া: আমাদের দেশে সর্বত্র মানুষের হাতে ভাঙা পাথরের মূর্তি পাওয়া যায়।একথা সকলেরই জানা আছে যে মুসলমান শাসকেরা সেগুলো ভেঙেছিল। ইসলাম ধর্মে মূর্তি ভাঙা সোয়াবের (পুণ্য) কাজ বলে মনে করা হয়। সে জন্য প্রত্যেক গাজী বিধর্মীদের এই পাপচিহ্নকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া কর্তব্য মনে করে।
অনেক মূর্তি ধ্বংসকারী ভারতে এসেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হুসেন খাঁ টুকরিয়া। টুকড়িয়া মূর্তি ভাঙার জন্য মন্দিরের ধনসম্পদ লুন্ঠনের জন্য আলমোড়া থেকে সোমেশ্বর, বৈজনাথ, বাগেশ্বর, দারাহাট– সব জায়গাতেই গিয়েছিলেন। গারোয়ালে, যোশীমঠে, তপোবন, বদরিনাথ, কেদারনাথের বহু মূর্তির ধ্বংস সাধন করেছিল টুকড়িয়া। কে এই টুকড়িয়া? তিনি ছিলেন পাঞ্জাবের হাকিম। একজন আদর্শ মুসলিম ধর্মবীর।জীবন শুরু হয়েছিল বৈরাম খাঁর চাকর হিসেবে। সেই সময় শাসককের দেখাদেখি হিন্দুরাও লম্বা দাড়ি রাখতো। দরবারে একদিন ঐ রকম দাড়িওয়ালা লোককে সম্মান জানানোর জন্য হুসেন খাঁ উঠে দাঁড়ান। পরে বুঝতে পারেন লোকটি হিন্দু। পার্থক্য বোঝানোর জন্য হিন্দুদের পোশাকে এক টুকরো রঙীন কাপড় এঁটে রাখার নির্দেশ দেন। সেই থেকে টুকড়িয়া নামেই খ্যাত। 1569-70 পর্যন্ত তিনি লখনৌএর জায়গির ছিলেন। জায়গির চলে যাবার পর তিনি খুব আঘাত পেয়েছিলেন। ঠিক করেন শাসকের চাকরির বদলে আল্লাহর চাকরি করবেন। তলোয়ার নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন জেহাদে। এই বইএ এ নিয়ে অনেক আলোচনা আছে।

আকবর: আকবরের জন্ম হয়েছিল 1542 সালের 28শে ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের অমরকোটে। জন্মের সময় বাবা হূমায়ুন যে কস্তুরী বিতরণ করেছিলেন অনুগামীদের মধ্যে সেই সুগন্ধ সারা জীবন ছড়িয়েছেন ছেলে আকবর। পড়াশোনায় কোন মনোযোগ ছিল না শৈশবে। সারাদিন বিভিন্ন খেলায় মেতে থাকতেন। 14 বছর বয়সে কালনারে তাকে বাদশা ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সিংহাসনে বসার পরেপরেই যে পরাক্রান্ত শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়েছিল তিনি হেমু, হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্য। দীর্ঘ বছর পর দিল্লির সিংহাসনে বসা কোন হিন্দু শাসক। দিল্লি পুনরুদ্ধারের লড়াইএ 6 ই নভেম্বর পানিপথ প্রান্তরে মোগল সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করা সত্ত্বেও পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল চোখের অনেক গভীরে হঠাৎ একটা তীর ঢুকে যাবার জন্য।নেতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়াতে সৈনরা হীনবল হয়ে দিশা হারিয়ে ফেলে। ইতিহাসের এ এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণ। এই ভারত হেমচন্দ্রের বদলে আকবরের মতো শাসক লাভ করেছিল যিনি অর্ধ শতাব্দী ধরে ভেদাভেদের গভীর খাতটাকে ভরাট করার চেষ্টা করেছিলেন। মাত্র 22 বছর পূর্ণ হতেই আকবর ধর্ম পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। আকবর নিরক্ষর হলেও অত্যন্ত সুশিক্ষিত ছিলেন। তিনি ফারসি ও তুর্কি ভাষায় সাহিত্য শ্রবণের মাধ্যমে ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। জন্মগত সৈনিক ছিলেন তিনি, মজবুত চেহারার অধিকারী। জীবজন্তু নিজে দেখতে যেতেন পশুলালায় প্রতিদিন। হাতির প্রতি খুব দুর্বলতা ছিল,যে কোন পাগলা হাতি সহজেই পোষ মানাতে পারতেন তিনি।যন্ত্রপাতির প্রতিও অনুরাগ ছিল। নিজে বসে বসে দেখতেন, কখন সখন হাতুড়ি নিয়ে বসেও পড়তেন। প্রচুর স্থাপত্য পরবর্তীকালে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়েছেন যা আজও ভারতের সম্পদ। সঙ্গীতে অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন। সেই জন্য তানসেনকে দরবারের এক রত্ন করে রেখেছিলেন। নিজেও ভালো পাখোয়াজ বাজাতেন। জেসুইট সাধু পেরুশচি আকবরের স্বভাব সম্বন্ধে বলেছেন: বাদশাহ খুব কমই ক্রুদ্ধ হোন, কিন্তু যখন ক্রুদ্ধ হোন তখন সেই ক্রোধ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে বলা মুশকিল। মন্দের ভালো এই যে খুব শীঘ্রই তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হয়।তার ক্রোধ ক্ষণস্থায়ী,দ্রুত দূর হয়ে যায়। বস্তুতঃ তিনি সজ্জন,কোমল ও দয়ালু স্বভাবের মানুষ।তিনি জীবনে কোনরূপ অস্পষ্টতা কপটতার আশ্রয় নিতেন না। তার সততা এবং দৃঢ়তা এমন ছিল যে কল্পনা করা যায় না।
হিন্দু-মুসলমান উভয়ের সংস্কৃতি-সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্প জ্ঞানবিজ্ঞানকে ভালোবাসুক সকলে, সকলেই তা সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখুক, এটাই ছিল প্রথম কাজ, আকবর সব আগে সেই কাজ শুরু করেছিলেন। তাছাড়া আকবর চেয়েছিলেন উভয় মিলেমিশে একজাতি হয়ে উঠুক – একটি ভারতীয় জাতিতে পরিণত হোক। সেজন্য তিনি খানাপিনা ও কন্যা সম্প্রদানের সম্পর্ক স্থাপন করে ছিলেন। তিনি নিজে আমেরে(জয়পুর) রাজা বিহারীমলের জ্যেষ্ঠা কন্যাকে বিবাহ করেন পরবর্তীতে এই কছওয়াহা রাজকুমারীর নাম হয় মরিয়ম জননী, যার গর্ভে জাহাঙ্গীরের জন্ম হয়। একটা কথা মনে রাখা দরকার এই বিবাহের প্রস্তাব স্বয়ং বিহারীমল নিজে আকবরকে দেন। এই বিয়ের ফলে ভগবান দাস ও মানসিংহ আকবরের কুটুম্ব হয়ে যান। এটাও ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ একটা ঘটনা। যাইহোক নিজের জড়তার কারণে হিন্দু তার সদ্ব্যবহার করতে অসমর্থ হয়। নিজেরা কন্যা দান করতেন, কন্যা গ্রহণ করতেন না। মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপারটা প্রথমে এক তরফাভাবে চলে আসতে থাকে, তাতে তাদের আপত্তি থাকারও কারণ ছিল না। আকবর তার সদিচ্ছা প্রমাণ করার জন্য মোল্লাদের সামনে কাফের পর্যন্ত হতে রাজি ছিলেন। তাঁর এইসব পদক্ষেপের জন্য প্রাণ ও সিংহাসন দুটোই বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাঁর দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। সবকিছু বাজি রাখতেই বদ্ধ পরিকর ছিলেন তিনি। সঙ্কট এতই গভীর ছিল যে আকবরের মত অদ্বিতীয় মহাপুরুষের দীর্ঘ জীবনও তা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই রকম আরও দুই মহাপুরুষের প্রয়োজন ছিল। তিনি ষোড়শ শতাব্দী নয়, বরং এই শতাব্দীর দেশের সংস্কৃতির পয়গম্বর।তাঁর দেখান পথই একমাত্র পথ যার দ্বারা আমাদের দেশ সামনে এগিয়ে যেতে পারতো।

আকবর প্রারম্ভিক জীবনে ইসলাম ও পীর ফকিরদের খুব ভক্ত ছিলেন। প্রতিবছর আজমীর শরীফে জিয়ারত করতে যেতেন তিনি। শেখের জুতো সোজা করে পেতে দিতেও কুন্ঠিত হতেন না।নিজে খুদবাও পাঠ করান মসজিদে একবার। কিন্তু বত্রিশ বছর বয়সে পৌঁছতে না পৌঁছতেই জীবনের ধর্মভীরু সুন্নী মুসলমান পর্ব শেষ হয়ে গেছিল তার।এ বিষয়ে ইবাদতখানায় চলতে থাকা শাস্ত্রালোচনা ও সৎসঙ্গ তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।

আকবর যেদিন সিংহাসনে বসেন সেই দিনটিতে নববর্ষ পালন করা হোত। সোনার তুলাদন্ডে বারোটা বস্তু (সোনা, ভংথধরূপা,রেশম, সুগন্ধি, লোহা, তামা, দস্তা, তুঁত, ঘৃত, মধু, চাল ও সপ্ত শস্য) দিয়ে ওজন করাতেন। স্বয়ং ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে মন্ত্রপাঠ শেখেন। সূর্যকে সমস্ত শক্তির আধার বলে মনে করতেন। মাঝরাত পর্যন্ত সূর্যমন্ত্র জপ করতেন। এখানে একটু বলে নিই সম্রাট ঘন্টা তিনেক ঘুমোতেন। উদিত সূর্যের বন্দনা করার জন্য প্রত্যূষেই শয্যা ত্যাগ করতেন তিনি। এই সময় মহাভারত ও পুরান ফারসিতে অনুবাদের কাজ শুরু করান। জিজিয়া কর তুলে দেন। তিনি বুঝেছিলেন গরু আল্লাহর কাছে নিশ্চয়ই পবিত্র। তানাহলে কুরানের সর্ব প্রথম আয়াত সুরা বকর অর্থাৎ গরু হতে হবে কেন? তারফলে তিনি গোমাংস হারাম করে দেন। এই সময় আকবর ইসলাম পরিপূর্ণভাবে ত্যাগ করেছিলেন। 1582 সালের আগে ইসলামের ঘোমটা যদিও তিনি খোলেননি, তার তিন বছর আগেই তার বিশ্বাস টলে গেছিল। তাই 1580 সালের শুরুতেই মোল্লা সুলতানপুরী ও শেখ আবদুন নবীকে মক্কায় নির্বাসিত করেন। হজের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করা হত শাহী রজকোষ থেকে। তাও তিনি বন্ধ করে দেন।

1578 খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে ফারসি মোবিদ (পারসি পুরোহিত)কে দরবারে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার কাছ থেকে আকবর পারসি ধর্ম বিষয়ে অনেক কথা জানতে পারেন। পারসিদের মতোই তাঁর কোমরে গুশতী বাঁধা থাকত। লোকে ভেবে নিয়েছিল আকবর জরাথুস্ট্রীয় ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কিছুকাল পরেই তিনি তিলক-উপবীত ধারণ করে দরবারে উপস্থিত হতেন। পোশাকেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল এই সময়। 1580 সালের মার্চে আকবর প্রকাশ্যে সূর্য ও অগ্নির সামনে দন্ডবৎ করতে শুরু করেন। সন্ধ্যায় যখন প্রদীপ জ্বালানো হোত তখন আকবর ও সমস্ত দরবারীরা জোড় হাত করে দাঁড়াতেন। আকবর বলেছিলেন– “প্রদীপ জ্বালানো সূর্যকে স্মরণ করায়।

পোর্তুগীজ পাদ্রীদের মতানুসারে, আকবর হিন্দু পূজাপাঠ ও রীতি রেওয়াজের দিকে বেশি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন এ সময়। 1575 – 1582 এর শেষ দিক পর্যন্ত ইবাদতখানায় শাস্ত্রচর্চা চলতে থাকে। তুর্কিরা তাদের আপনজনের মৃত্যুতে ভদ্র করত, সে জন্য আকবরও হিন্দুদের এই প্রথা গ্রহণ করেন।তিনি তাঁর মাতা মরিয়ম মাকানীর মৃত্যুতে ভদ্র করান। আকবরের দুগ্ধমাতা আনগার যখন মৃত্যু হয়, আকবর তখনও ভদ্র করান। আকবর প্রত্যূষে যমুনাতীরের দিকে পূর্বাভিমুখী জানালার কাছে বসতেন এবং সূর্যোদয় দেখতেন। তিনি হিন্দুদের কুপ্রথাগুলো দূর করতেও ইতস্ততঃ করতেন না। সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে দেন তিনি।

জৈন মুনি হীর বিজয় শূরী, বিজয়সেন শূরী ও ভানুচন্দ্র উপাধ্যায় আকবরের দরবারে এসেছিলেন। আকবরের উপর হীর-বিজয়ের প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়েছিল। এদের প্রভাবেই তিনি মৃগয়াপ্রীতি ত্যাগ করেন এবং মূলতঃ নিরামীষ আহারের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

আকবর 1578 সালের ডিসেম্বরে গোয়ার পোর্তুগিজ আধিকারিকদের নিকট খ্রীষ্টান ধর্মের পন্ডিত প্রেরণের জন্য একখানা পত্র পাঠান।অকভিভা ও তার দুই সঙ্গী গোয়া থেকে সমুদ্র পথে 1579 সালের 17ই নভেম্বর দমন পৌঁছান। 28 শে ফেব্রুয়ারি ফতেপুর সিক্রীতে পৌঁছন। পরদিন দেওয়ানীখাসে তাদের সাথে আকবরের দেখা হয়।3 রা মার্চ স্পেনের রাজা ফিলিপের জন্য ছাপানো সুন্দর জিলদ্ বাঁধাই বাইবেল আকবরকে উপহার দেওয়া হয়।

1593-94 সালে তিনি কতকগুলো আদেশ জারি করেন। এতে বোঝা যায় ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা তিনি কতটা স্মরণে রাখতেন–
1. শৈশবে অথবা অন্য কোনভাবে কোন হিন্দুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুসলমান করা হলে, যদি সে তার পিতা-পিতামহের ধর্মে ফিরতে চায় তাহলে অনুমোদনগ্রাহ্য।
2. ধর্মের কারণে কোন ব্যক্তির প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার ইচ্ছানুসারে যে কোন ধর্ম পালন করতে পারবে।
3. যদি কোন হিন্দু মহিলা কোন মুসলমানকে ভালোবেসে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে তাকে তার পতির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গিয়ে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে।
4. যদি কোন অমুসলিম নিজের গির্জা, ইহুদী ধর্ম মন্দির, দেবালয় কিংবা পারসি সমাধি নির্মাণ করতে চায়, তাহলে তাতে কেউ বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না।

দীন-ইলাহী(1682): প্রাচীন ধর্মগুলোর প্রত্যেকটির প্রতিই তিনি সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন এবং চেয়েছিলেন সকলেই সে রূপ আচরণ করুক। সেটা সম্ভব না হওয়ার জন্য সমস্ত ধর্মের সার বস্তু নিয়ে একটি নতুন ধর্ম দীন ইলাহী (ভগবানের ধর্ম)র প্রবর্তন করেন। এর আগে ধর্মীয় বিবাদ মেটানোর জন্য আলাউদ্দিন খিলজীর মনেও এরূপ ধারণার উদয় হয়েছিল। দীন ইলাহীতে আবুল ফজল থেকে বীরবল পর্যন্ত সকলেই যোগদান করেন। মানসিংহ করেননি। দীন ইলাহিতে যোগদানের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা পত্র লিখতে হতো।

1605 সালের 27 শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার মাঝরাতের সামান্য একটু পরে এই মহান সম্রাট প্রিয় ভূমি ছেড়ে চলে যান চিরকালের জন্য। রেখে যান মহান কীর্তি, তিনপুত্র সলীম, মুরাদ ও দানিয়াল এবং তিন কন্যা খানম সুলতান, শুকরুন্নিসা ও আরাম বানু। আরাম বানু আজীবন অবিবাহিতা ছিলেন। সেই থেকেই চল হয়ে যায় শাহজাদীদের বিবাহ না করার। উনি নিজে কিছু ফারসি পদ্য রচনা করেন। তার একখানা স্মরণ করেই তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে গেলাম:

গিরিয়া কর্দম জ-গমত মুজিবে-খুশ হালী শুদ্।/ রেখতম্ খুনে-দিল আজ -দিদ খালি শুদ্ ।
(তোমার দুঃখে আমি কেঁদেছি, এটা খুশীর কারণ হল। চোখ থেকে হৃদয় থেকে রক্ত ঝরিয়ে আমার মন এখন নির্ভার।)

সূত্র: সর্গৃহিত।

তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ