Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মোদিবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যের সূচনা কি খুব কাছে !(২০২১)

Share on Facebook

সম্প্রতি ভারতে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো চারটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। কিন্তু সব আলোচনা যেন শুধু পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও ভারতে শিক্ষা সংস্কারের জন্য খ্যাত লর্ড মেকলে বলেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে ভারত তা ভাববে আগামীকাল। যদিও বক্তব্যটি ছিল অখণ্ড ভারত নিয়ে, তবু ধরে নেওয়া যৌক্তিক যে এই গৌরবের সম–অংশীদার বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম দুই অংশই। ২ মে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরপরই সুপরিচিত ভারতীয় লেখক সলিল ত্রিপাঠি এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে আশাবাদ প্রকাশ করেন যে হিন্দুত্ববাদী বিভাজনের রাজনীতির ধারক বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানের সূচনা, যা পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু হলো, তা ভারতের অন্যান্য অংশেও অনুসৃত হবে। কেরালা ও তামিলনাড়ুতেও বিজেপি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আসাম অবশ্য ব্যতিক্রম হয়েই রইল।

সলিল ত্রিপাঠির মতো আশাবাদীর সংখ্যা অনেক। অনেকে এমন কথাও বলতে শুরু করেছেন যে এই পাহাড়সম প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নির্বাচন জয়ের মাধ্যমে ভারতে মোদিবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার লাভ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দিদি, ও দিদি’ বলে দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাঁকে ব্যঙ্গ করেছেন, সেই মমতাই হতে পারেন তাঁর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিজয়ী হলে পরিস্থিতি এতক্ষণে কী হতো, তা অনুমান করা কঠিন। তবে সীমান্তের উভয় পারেই একটা সর্বব্যাপী শঙ্কা ও উদ্বেগ যে ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় তাঁর প্রতি অভিনন্দন ও শুভকামনা জানানোয় কার্পণ্য করা চলে না। তবে একটু নৈর্ব্যক্তিক হলে বলতেই হয় যে তাঁর সাফল্যে মানুষ যতটা উচ্ছ্বসিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্বস্তিবোধ করেছে বিজেপির পরাজয়ে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজয় স্বস্তিদায়ক বটে, কিন্তু নিশ্চিন্ত বোধ করার মতো নয়। নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে রাজ্যটিতে হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদের যে ক্রম-উত্থান দৃশ্যমান হচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। বিজেপি জায়গা করে নেওয়ার আগে রাজ্যটিতে যেখানে তিনটি দল মোটামুটি শক্তিশালী ছিল, সেখানে দুটি দল সিপিএম ও তার জোট এবং কংগ্রেস—ক্ষমতাকাঠামোয় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান নয়, একমাত্র বিরোধী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিজেপি। এর মানে হচ্ছে বিজেপিই এখন শাসক দলের বিকল্প।

এ অবস্থা তৈরির কৃতিত্ব অথবা দায় যা-ই বলা হোক না কেন, তা প্রধানত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গত ১০ বছরে তিনি বাম ফ্রন্ট এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে যে কঠোর দমন–পীড়নের নীতি অনুসরণ করেছেন, তা তাদের প্রায় দিশেহারা করে ফেলেছে। বাম ফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের এই ছত্রখান হয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে কংগ্রেসও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসের এই ব্যর্থতা অবশ্য তাদের জাতীয় পর্যায়ে যে বন্ধ্যাত্ব চলছে, তারই প্রভাবেও প্রভাবিত। বিপরীতে বিজেপির সহযোগী নানা রকম সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় গোষ্ঠী অরাজনৈতিক খোলসে রাজ্যটিতে ঠিকই তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের এই নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যটিতে কার্যত দ্বিমুখী মেরুকরণ হয়েছে। ভোটের হিসাবে তৃণমূল যেমন একক দল হিসেবে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে, তেমনই বিজেপির ভোটও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূলের ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটের বিপরীতে বিজেপির ভোট ছিল মাত্র ১০ দশমিক ২ শতাংশ এবং তিনটি আসন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই বিজেপির ভোটের হার ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশ এবং আসনসংখ্যা ৭৪ আসন। অনেকে বিজেপির এই ফলকে বলছেন জয়ের সমান হার।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জয়ের পরও উদ্বেগ বা শঙ্কার কারণ কী, তা এক টুইটে ব্যাখ্যা করেছেন আউটলুক সাময়িকীর রাজনৈতিক সম্পাদক সাবা নাকভি। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির কাছে বিজেপি পরাজিত হওয়ার পর বিজেপির সমর্থকেরা নানা ধরনের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। বিজেপির যে নেতা ওই দাঙ্গার অগ্রভাগে ছিলেন, সেই কপিল মিশ্র যথারীতি অবাধে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। কিন্তু দাঙ্গার শিকার এবং প্রতিবাদকারীদের অনেকেই এখনো বিচারাধীন হিসেবে কারাগারে আটক রয়েছেন। গুজব ছড়িয়ে, নানা ধরনের স্পর্শকাতর অজুহাত তুলে হাঙ্গামা তৈরি করা এখন তাঁদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। কেননা, রাজ্য সরকারের বিকল্প তাঁরাই। তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যটিতে ঘটে যাওয়া নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফলকে, অর্থাৎ ‍তৃণমূলের বিজয়কে ইতিবাচকভাবে দেখায় কোনো ভুল নেই। কিন্তু বিজেপির জয়ের সমান হারকে স্বস্তিদায়ক হিসেবে দেখলে বড় ধরনের ভুল হবে। দিল্লির পরিকল্পিত মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঢেউ আমাদের স্পর্শ করেনি বলে সীমান্তের অপর পারের অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনার আঁচ আমাদের গায়ে লাগবে না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন হামলা বা হয়রানির বিষয়ে ভারত যেভাবে প্রতিবাদ জানায়, আমাদেরও এখন সে রকমটিই ভাবতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, এমন রাজনীতির বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা সময় থাকতে জানানোর ক্ষেত্রে দ্বিধা থাকলে তা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

এ ধরনের আশঙ্কা আরও যে কারণে বাড়বে তা হলো, ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী এবং জাতীয় রেজিস্ট্রার বাস্তবায়নে বিজেপির অঙ্গীকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবেন না বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার আলোকে বিজেপি কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করে, সেটিও একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়েই থাকছে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফলে দ্বিতীয় যে বিষয়টি ভাবনার কারণ হয়ে আছে তার আঁচ মিলেছে মূলত সেখানকার নির্বাচনী প্রচারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়কার কিছু বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ক্ষোভ নিয়ে কোনো রাখঢাক করেননি। সেই সময় নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বক্তব্য দেন, তা নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর দল আপত্তিও জানিয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকেরা এমন কথাও জানিয়েছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা হিসেবে দেখেছেন এবং ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেছেন, যত দিন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তিনি তাঁর সঙ্গে ঢাকায় যাবেন না। স্পষ্টতই ইঙ্গিত মেলে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রশ্নে তিনি বিজেপিকে সহায়তা করতে নিরুৎসাহী হবেন। আর তার চেয়েও খারাপ হতে পারে এ ক্ষেত্রে তাঁর সম্ভাব্য অসহযোগিতা।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির প্রশ্নে তাঁর বিরোধিতার কথা সবারই জানা। তবে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য এ বিষয়ে যৌক্তিক বলেই মনে হয়। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জয়ী হলেও রাজ্যের রাজনীতির প্রয়োজনে তিস্তার পানি চুক্তিতে সম্মত হতো না। তিস্তা ছাড়াও অন্যান্য নদীর পানি ভাগাভাগিসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা, যা এই অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি তৈরি করেছে। কার্যকর গণতন্ত্রে অবশ্য এ ধরনের বিভ্রান্তির জবাবদিহি এড়ানো সম্ভব ছিল না।

লেখক: কামাল আহমেদ সাংবাদিক
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ০৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ