Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

শিপ্রা দেবনাথের অনুভূতি ২০২১ এ

Share on Facebook

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শিপ্রা দেবনাথ কাঁদতে চান না। তিনি বলেছেন, সিনহাকে অন্যায়ভাবে খুন করা হয়েছে। আর সেই অন্যায়কে জায়েজ করতে সাজানো হয়েছে একের পর এক ঘটনা। রাষ্ট্র এই অন্যায়ের কী প্রতিকার করে, তা-ই দেখতে চান তিনি।

গত বছরের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা তিন তরুণকে নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। ভ্রমণবিষয়ক একটি ইউটিউব চ্যানেলের কাজে তাঁদের এই ভ্রমণ। এই দলেরই অন্যতম সদস্য শিপ্রা দেবনাথ। সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ঢাকার এক রেস্তোরাঁয় বসে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

সিনহা হত্যাকাণ্ড এখন বিচারাধীন। সে কারণে মামলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন বিবরণ সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। শিপ্রা বলেছেন, ‘আমি আসলে কেঁদে কেঁদে বিচার চাইব না। একটা স্বাধীন দেশে সিনহা মো. রাশেদকে মেরে ফেলা হয়েছে। সেই ভুলের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে একটার পর একটা ঘটনা ঘটানো হলো। কিন্তু কেন?’ তিনি জানান, তাঁকে অনেকে দেশ ছাড়তে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। পালাতে চান না শিপ্রা, মুখোমুখি হতে চান বিচারপ্রক্রিয়ার। তিনি সব জানেন, সব বলবেন। এক দশক বা দুই দশক পর যখনই সুযোগ পাবেন।

সিনহার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত কীভাবে? শিপ্রা দেবনাথ বলে যান। তাঁদের পরিচয় হত্যাকাণ্ডের বছর খানেক আগে। এক ভ্রমণে গিয়ে। সিনহার হাতে জনাথন সুইফটের বই দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন শিপ্রা। গল্প-কবিতা-দর্শন আর ভ্রমণ নিয়ে বিস্তর কথা হয় তাঁদের। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিপ্রার মাধ্যমেই পরে সিনহার সঙ্গে পরিচয় হয় সিফাত ও রুফতির। তাঁরাও স্ট্যামফোর্ডের ছাত্র ছিলেন। কথায় কথায় শিপ্রা তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সিনহাকে। তিনি বিশ্বভ্রমণ করতে চান আর সেই ভ্রমণ নিয়েই বানাতে চান তথ্যচিত্র। মনে আশা, এত ভালো হবে সেই তথ্যচিত্র যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি থেকে ডাক পাবেন। শিপ্রার এই বিশ্বভ্রমণের স্বপ্নের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল সিনহা মো. রাশেদের স্বপ্নও। কোভিডের কারণে দেশের বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তখন। তাই সিদ্ধান্ত হয় দেশ থেকেই কাজটা শুরু করবেন।

উকুউকু প্রডাকশনের নামে কাজে নামেন সিনহারা। তিনি নিজে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ফিল্মটা বানাতে যা যা প্রয়োজন, তার জোগানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। শিপ্রা ছিলেন প্রডাকশন ডিরেক্টর, সিফাত সিনেমাটোগ্রাফার এবং রুফতি এডিটর। প্রতিষ্ঠানের আইটি দেখার জন্য আরও একজন ছিলেন। তিনি কখনো সামনে আসতে চাননি। গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি তাঁরা ঢাকা ছাড়েন। ১০ থেকে ১১ দিন কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় ভিডিও ধারণের কাজ করেছিলেন।

সিনহা যেদিন খুন হন, সেদিনও সিফাতকে নিয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন সিনহা। শিপ্রা ও রুফতি থেকে গিয়েছিলেন রামুর মোটেলে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শিপ্রাকে ফোন করে সিনহা জানান, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে কাজ সেরে ফিরে আসবেন। ওই শেষ।

শিপ্রার জীবনে ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে? জবাবে শিপ্রা বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে মোটেলের সামনে পুলিশের গাড়ি এসে থামে। তাঁরা তল্লাশি করতে চান। শিপ্রা কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি সিনহা ও সিফাত, দুজনকেই ফোন করেন। ও প্রান্তে তাঁদের কেউ ফোন ধরেনি। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। একটা শব্দে থমকে যান শিপ্রা, ‘গোলাগুলি’। তিনি জানতে চান, সিনহা-সিফাত কোথায়। কোনো উত্তর না দিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে গাড়িতে উঠতে বলেন। মোটেলে থেকে যান রুফতি।

শিপ্রা জানান, ওই রাতে রামু থানা থেকে তাঁকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘুরে তাঁকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শিপ্রা বলেন, ‘রাত আড়াইটা নাগাদ আমি জানতে পারি, সিনহা মারা গেছেন। কীভাবে জানি না। আমার শুধু মনে আছে, হাতজোড় করে একবার আমি শুধু লাশটা দেখতে চেয়েছিলাম। আমার কথা কেউ শুনল না। সিফাত কোথায়, তখনো আমি জানি না।’

জেলের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শিপ্রা জানান, একটা কক্ষেই ১২ থেকে ১৩ জন নারী একসঙ্গে ছিলেন। অনেকেরই স্বামী ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন। নির্যাতনের কারণে এক নারীর পায়ের ওপরের দিকটা পচে গিয়েছিল। প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হতো। সব সময় তাঁকে ঘুমোতে হতো একদিকে পাশ ফিরে। জেল থেকে মুক্তি পেলেও বন্দিজীবন থেকে শিপ্রা মুক্তি পাননি অনেক দিন, এমনটাই বললেন প্রথম আলোকে। পাঁচতারকা হোটেলে থেকেছেন লম্বা সময়, কিন্তু পরিস্থিতি ছিল গুমোট আর দমবন্ধকর। বন্ধুর জন্য নীরবে একান্তে শোক করবেন, সেই সুযোগ পাননি। এর মধ্যেই তাঁর বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে থাকা ক্লিপ ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

হয়রানির শিকার হন শিপ্রার বাবা-মা। শিপ্রা আবিষ্কার করেন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা মিমে পরিণত হয়েছেন। সবাই চেনে তাঁকে। সব জায়গায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা। অথচ এই জীবন তিনি চাননি।

কথায় কথায় শিপ্রা বলেন, তিনি ঢাকায় এসেছিলেন পুরকৌশলে পড়তে। কিন্তু কুষ্টিয়ার ফেলে আসা যৌথ পরিবারে থেকে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নই তাড়া করে বেড়াত শিপ্রাকে। তিন বছর বুয়েটে পুরকৌশলে পড়লেও আড্ডা দিতেন সিনেমার লোকজনের সঙ্গে। একসময়ে পুরকৌশলের লেখাপড়া ছেড়ে স্ট্যামফোর্ডের ফিল্ম স্টাডিজে ভর্তি হয়ে যান। পরিবারের মত ছিল না। কিন্তু শিপ্রা ছিলেন অনড়। ‘পাপ-পুণ্য’ নামের একটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা আছে সামনে। বরাবর নেপথ্যে থেকে কাজ করতে চেয়েছেন। সিনহা হত্যাকাণ্ড সবকিছু বদলে দেয়।

শিপ্রা বলছিলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। যেমন তিনি তাঁর নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছেন। আগে কোথাও গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে সিভিটা বাড়িয়ে দিতেন। বলতেন তিনি স্ক্রিপ্ট লেখেন বা নির্দেশনা দেন। এখন আর তেমনটা হয় না। তাঁর ভাষায়, এখন শিপ্রা দেবনাথের পরিচয় নেই কোনো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে কাজের যে স্বপ্ন, তা নিয়েও ভাবেন না এখন। একটা রাত শিপ্রার জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। কোনো কিছুই যে পরিকল্পনামাফিক এগোয় না, তা তিনি বোঝেন এখন।

মা–বাবার জন্য খুব কষ্ট হয় শিপ্রার। মফস্বল এলাকার বাড়িতে পুলিশ আর গোয়েন্দা সংস্থার যাওয়া–আসায় ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়ে তাঁর পরিবার। ঢাকাতেও শিপ্রা খুব মুক্ত জীবন যাপন করেন না। অনেকেই তাঁকে হুমকি মনে করে, এমন আশঙ্কা তাঁর। সে কারণেই কেউ না কেউ তাঁকে অনুসরণ করেন। অনেকে তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। অনেকে বলেছিলেন ফোন নম্বর বদলে ফেলতে। শিপ্রা কিছুই করেননি। যা কিছুই ঘটুক, তার মুখোমুখি হতে চান তিনি।

ঘটনার পর থেকে একদল তাঁকে দেখলে প্রশংসা করে, কেউ কেউ সেলফি তুলতে চায়। আবার কেউ চিৎকার করে বলে, ওই যে সিনহার খুনি যায়। সকালে যখন দৌড়াতে যান, তখন আশপাশ থেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালির শব্দ আসে কানে।

কেন মানুষের এ ঘৃণা? শিপ্রা জানান, অনেকে সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর পর প্রশ্ন তুলেছিলেন এ ঘটনায় তাঁর নীরবতা নিয়ে। একটা দীর্ঘ লেখায় বহুদিন পর শিপ্রা এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, লেখাটাকে সিনহার এপিটাফ হিসেবে গ্রহণের মিনতি ছিল তাঁর। শিপ্রা লিখেছেন, ‘এ লেখাকে মনে করতে পারেন শ্রান্ত কোনো কবরখানা, যেখানে নিঃশব্দে শোকের ফুল নামিয়ে রেখে ফিরে যাওয়াই শ্রেয়। যদিও বন্ধুতার এপিটাফের সামনে কেমন ফুল মানানসই, তা আমার জানা নেই। কেবল বলতে পারি, মাত্র এই বয়সেই এসে মনে হয়, চোখের জল বড় প্রতারক। সে এমনভাবে ঝাপসা করে দেয় দৃষ্টি, বন্ধুর কফিনকে নিজের বলেই মনে হয়। এটুকুই।’

লেখক: শেখ সাবিহা আলম
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ৩১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ