আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হবে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। এরপরও কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর দেশটি থেকে সামরিক–বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে আনতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পেছনে বাইডেন প্রশাসনের মোটাদাগে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তিনটি ভুল রয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে–
তালেবানের সক্ষমতা বুঝতে না পারা
মার্কিন ও ন্যাটো সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে আসার পর দেশটিতে তালেবানের উত্থান ঘটতে পারে, এটা মোটামুটি অনুমিত ছিল। তবে সেটা কবে নাগাদ ঘটতে পারে বা এর জন্য কত সময় লাগবে, সে সম্পর্কে ধারণা করতে চরম ভুল করেছে বাইডেন প্রশাসন।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পুরো আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তালেবানের অন্তত ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এর ফলে সেনা প্রত্যাহার, আফগানদের নিরাপত্তা প্রদান ও বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে আনতে যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে, কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয়নি। তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটতে দুই সপ্তাহের কম সময় লেগেছে। এ কারণে কাবুল বিমানবন্দরকেন্দ্রিক চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়েছে মার্কিনরা। তালেবানের সক্ষমতা বুঝতে না পারা বাইডেন প্রশাসনের বড় একটি ভুল।
আগাম পরিকল্পনা না থাকা
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমটি, বাইডেনের বেঁধে দেওয়া ১১ সেপ্টেম্বরের সময়সীমার দুই মাস আগেই আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ৩ হাজার ৫০০ তে নামিয়ে আনা হবে। এর জেরে আফগানিস্তানের বাঘরাম সেনাঘাঁটি ছেড়ে চলে আসে মার্কিন সেনারা। দ্বিতীয়টি, আফগানিস্তান ছেড়ে আসার পরও কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম চালু রাখতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়েছিল, সেখানে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা দিতে কিছু সেনা রয়ে যাবে। যেহেতু ধরে নেওয়া হয়েছিল তালেবানের আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় লাগবে, তাই জরুরি ভিত্তিতে দেশটি থেকে আফগান নাগরিক ও বিদেশিদের সরিয়ে আনার ইচ্ছা কিংবা আগাম পরিকল্পনা, কোনোটাই ছিল না বাইডেন প্রশাসনের। যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে।
গনির প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও অস্ত্রে—আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল, তালেবানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে আফগান সরকারি বাহিনী। এর ফলে রক্তপাতের পথ ছেড়ে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে তালেবান। রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগির চেষ্টা চলবে। আশরাফ গনিও মার্কিন প্রশাসনকে এমনটাই বুঝিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলেছে। দ্রুততম সময়ে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে কাবুলের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা। আশরাফ গনি আকস্মিক দেশ ছাড়লে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। আশরাফ গনির প্রশাসন ও আফগান বাহিনীর সক্ষমতার ওপর ওয়াশিংটনের আত্মবিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলে কাবুল বিমানবন্দরের চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও প্রাণহানি নিয়ে দেশ–বিদেশে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাইডেনকে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,