Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আফগানিস্তান কি আফগান জনগণের হাতে এখন! (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: এ কে এম জাকারিয়া

আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা চলে গেছেন। ২০ বছর ধরে দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানে নিজেদের মতো শাসনকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী। এই কাজে তারা সফল হতে পারেনি। যাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছিল তারা, সেই তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা করে এবং তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়েই বিদায় নিতে হলো যুক্তরাষ্ট্রকে। বিদেশি শক্তির ‘কবরস্থান’ হিসেবে বিবেচিত আফগানিস্তান এখন ‘আফগানদের’ নিয়ন্ত্রণে।

আফগানিস্তান সম্পর্কে সাধারণ কথা হচ্ছে, তারা বিদেশিদের কখনো মেনে নেয়নি, তারা স্বাধীনচেতা। আমরা দুই শ বছর বিদেশিদের গোলামি করেছি, কিন্তু আফগানরা তা করেনি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এরপরও আফগানিস্তানে বিদেশিরা ফিরে ফিরে এসেছে। আর সেখানে বিদেশি শক্তির ‘কবর’ আগেও কয়েক দফা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এবার তালেবানের কাবুল দখলের পর কি আফগানিস্তানে বিদেশি শক্তির চিরতরে কবর হলো? নাকি নতুন কোনো শক্তির ফিরে আসার পথ তৈরি হলো? অথবা আফগানিস্তানে কি সত্যিই সেখানকার জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলো?

আফগানিস্তান অসংখ্য জাতি, উপজাতি ও গোত্রে বিভক্ত একটি দেশ। পশতুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, প্রায় ৪২ ভাগ। এই পশতুদের মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন উপজাতি ও গোত্র। তাজিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২৩ ভাগ। ১০ ভাগ হাজারা ও ৯ ভাগ উজবেক। নানা জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে রাষ্ট্র গড়ে ওঠার অনেক দৃষ্টান্ত বিশ্বে রয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সমাজকাঠামো ও ভৌগোলিক গঠন একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র বা নেশন স্টেট গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সব সময় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় গেছে, তাদের কারও পক্ষেই পুরো দেশটির ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। আগের তালেবানের শাসনেও হয়নি, ২০০১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত সরকারের সময়ও হয়নি।

এখন তালেবান আবার ক্ষমতায়। তারা মূলত পশতুদের নিয়ে গড়ে ওঠা কট্টর ইসলামপন্থী একটি রাজনৈতিক শক্তি। আফগানিস্তানে একক জাতি হিসেবে পশতুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে এই ৪২ ভাগ পশতুদের সবাই যে তালেবান সমর্থক, এমনও নয়। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে আফগানিস্তানে তালেবানের সমর্থন আসলে কত ভাগ? তালেবান এরই মধ্যে পরিষ্কার করেছে যে তারা নির্বাচন বা গণতন্ত্র দেবে না। ফলে তাদের প্রতি কত ভাগ আফগান জনগণের সমর্থন রয়েছে, সেটা জানার সুযোগ থাকছে না।

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বিদায় নিল, তা পরাজয় এবং মাথা নিচু করে চলে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই পরাজয় আফগান জনগণকে কতটুকু বিজয়ী করল? আফগান জনগণ ব্রিটিশ ও সোভিয়েতের পর তৃতীয়বারের মতো তার দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিকে ‘কবর’ দিয়ে কী পেতে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় আফগানিস্তানে তালেবানকে ক্ষমতায় বসাল, এর সঙ্গে জনগণের শাসন বা তাদের ইচ্ছা–অনিচ্ছার আদৌ কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন।

তালেবানের আগের আমলের শাসন ছিল শতভাগ জবরদস্তির শাসন। সেই শাসন থেকে তারা আসলে কতটুকু সরবে? গণতন্ত্র যে তারা দেবে না, তা তো তারা বলেই দিয়েছে। গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া জনগণের শাসন কায়েমের পথ কী? এবারের তালেবান আগের মতো হবে না—এমন একটি কথা তালেবানের কাবুল দখলের আগে থেকেই প্রচার পেতে শুরু করেছে। কিন্তু যে আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে দলটি গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে তারা কতটুকু সরে আসতে পারে? দোহায় বসে তালেবানের যে নেতা ও মুখপাত্ররা বিশ্ববাসীকে আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন, তার সঙ্গে মাঠের তালেবানের যে অনেক ফারাক রয়েছে, তা এরই মধ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে। আগের তালেবান শাসনের মতোই সংগীত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মাঠপর্যায়ের তালেবান বিভিন্ন অঞ্চলে সংগীতশিল্পীদের খোঁজাখুঁজি এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে।

তালেবানের শাসন আফগানিস্তানকে বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকেই–বা কতটুকু মুক্তি দেবে? আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান যেমন দেশটির সবচেয়ে বড় সম্পদ, তেমনি এটাই দেশটির দুর্ভাগ্যের কারণ। তালেবান সেই অবস্থান বদলাতে পারবে না। আফগানিস্তানকে ঘিরে চলমান ভূরাজনীতির কোনো না কোনো পক্ষের ঘুঁটি না হয়ে তালেবানের টিকে থাকা কঠিন হবে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে একসময় গড়ে ওঠা তালেবানের ওপর যে আগের মতোই পাকিস্তানের একটা নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থাকবে, তা এরই মধ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে। ‘স্বাধীনচেতা’ আফগান জনগণের কাছে তালেবানের পাকিস্তানপন্থী অবস্থান কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? পাকিস্তানের সঙ্গে আফগান জনগণের মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ ঐতিহাসিক। আফগানরা ব্রিটিশদের ভাগ করা দুই দেশের সীমান্তরেখা ডুরান্ট লাইনকে মেনে নিতে পারেনি।

আবার আদর্শগত দিক বিবেচনায় নিলে চীনের সঙ্গে তালেবানের মৈত্রী খুবই বিস্ময়কর। যে চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ আছে, সেই দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে হচ্ছে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবানকে। এমনকি আগাম ঘোষণা দিতে হচ্ছে উইঘুর চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কারণ, তালেবান জানে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের অর্থসহায়তা সামনে আর মিলবে না। টিকে থাকার জন্য চীনের সাহায্য ছাড়া পথ নেই। সামনে আর্থিকভাবে যে দুর্দশার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে আফগানিস্তান, সেখান থেকে দেশটিকে টেনে তোলার শক্তি-সামর্থ্য একমাত্র চীনেরই রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তারা কি আফগানিস্তানে চীনের একক আধিপত্যকে এত সহজেই মেনে নেবে? আফগানিস্তানে নিজের সামর্থ্যের বিবেচনায় যথেষ্ট বিনিয়োগ করা ভারতের ভূমিকাই–বা কী হবে? বিদেশি দখলদার সেনা হয়তো আফগান মাটি থেকে বিদায় নিল, কিন্তু ভূরাজনৈতিক খেলোয়াড়েরা কি তাদের খেলার মাঠ হিসেবে এ দেশকে ব্যবহার করা থেকে সরে আসবে?

পানশির প্রদেশ এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তালেবানবিরোধী বিভিন্ন আফগান জাতিগোষ্ঠীর লোকজন সেখানে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যে যুদ্ধবাজ নেতাদের ওপর নির্ভর করেছিল, তারা নিশ্চয়ই পরাজয় মেনে বসে থাকবে না। তালেবানকে শিক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্র আইএস বা এমন কোনো শক্তিকে কাজে লাগাবে না, এমন নিশ্চয়তা কি আছে! কাবুল বিমানবন্দরে আইএস–কের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ আমেরিকান সেনা মারা গেছেন। এরপরও এই ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহের চেখে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আফগানিস্তানের দুর্ভাগ্য, বিদেশি শক্তিকে ‘কবর’ দিয়ে অতীতেও আফগানিস্তানের দুঃখের দিন শেষ হয়নি, এবারও হবে বলে মনে হচ্ছে না।

এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ