Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

‘আয়নাঘর’–এর সত্য কি জানা যাবে (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: মারুফ মল্লিক।

স্কটিশ নির্মাতা কেভিন ম্যাকডোনাল্ডের দ্য মৌরিতানিয়ান সিনেমাটি অনেকেই দেখেছেন নিশ্চয়ই। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে, নায়ক মোহাম্মাদু উলাদা সিলাহাই জঙ্গি সম্পৃক্ততার সন্দেহে মার্কিন কারাগার গুয়ানতানামো বেতে ১৪ বছর জেল খাটেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ২ মাস পর ২০০১ সালের নভেম্বরে মৌরিতানিয়া থেকে গুম হয়েছিলেন স্লাহি। এক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে পরিবারের সদস্যদের সামনেই মৌরিতানিয়ার পুলিশ সিলাহাইকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর তাঁকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ফরাসি আইনজীবী এমানুয়েলের অনুরোধে মার্কিন আইনজীবী ন্যান্সি হল্যান্ডার সিলাহাইকে গুয়ানতানামো বেতে খুঁজে বের করেন।

অনেকটা সিলাহাইয়ের মতোই ঘটনার শিকার হয়েছেন গাজীপুরের শেখ মো. সেলিম। ২০১৬ সালের মে মাসে দিনের আলোতেই সেলিমকে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আর তাঁর কোনো হদিস পায়নি পরিবার। কয়েক মাস পর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সেলিমকে আটক দেখায়। এরপর সেলিম জেল থেকে বেরিয়ে মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। উল্লেখ্য, দেশে বিয়ে করতে এসে গুম হয়েছিলেন সেলিম।

সম্প্রতি নেত্র নিউজ–এর প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদনে শেখ মো. সেলিম গুম হওয়ার লোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছেন। সেলিমের সঙ্গে ছিলেন দুবার গুম হওয়া সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান। দুজনই অভিযোগ করেছেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক গোপন আস্তানায় তাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল। এই গোপন আস্তানার নাম ‘আয়নাঘর’। আটক করে নিয়ে যাওয়া ও আটক-পরবর্তীকালে যে নির্যাতনের বিবরণ দুজন দিয়েছে, তা যেন বাংলাদেশের গুয়ানতানামো বে বা আবু গারিব কারাগার।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, হঠাৎ কী মনে করে এই দুজন মুখ খুললেন। এর পেছনে উদ্দেশ্যই-বা কী রয়েছে। তবে নানা আলোচনা ও সমালোচনার পরও বলতে হচ্ছে, এক যুগ ধরে চলা গুম নিয়ে নানা সন্দেহ, অভিযোগ ও জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটাতে প্রতিবেদনটি সহায়তা করতে পারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবমতে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জন গুম হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১০ বছর ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটক করে রাখা ৮৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। গুমের তালিকায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী ও অরাজনৈতিক মানুষও রয়েছেন। গুম অবস্থা থেকে সেলিমের মতো যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের অনেককেই জঙ্গি হিসেবে আটক দেখানো হয়েছে। তবে বেশ কয়েকজনকে আটক দেখানো না হলেও মুক্তজীবনে ফিরে আসার পর আর মুখ খোলেননি। এমনকি তাঁদের কোনো কিছু মনে পড়ছে না বলেও পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন। এ তালিকায় বুদ্ধিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকও রয়েছেন।

কিন্তু এই প্রথম কেউ গুমের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বললেন এবং নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন। গুমজীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মো. সেলিম জানিয়েছেন, গোপন বন্দীশালার দেয়ালে অনেক মানুষের বিভিন্ন তথ্যসংবলিত বার্তা তিনি দেখতে পেয়েছেন। অনেকেই ফোন নম্বর লিখে রেখেছিলেন। সেলিমের পূর্ববর্তী বন্দীরা আকুতি জানিয়েছেন তাঁদের আটকাবস্থার তথ্য বাড়িতে জানাতে।

দ্য মৌরিতানিয়ান-এর নায়ক সিলাহাই গুয়ানতানামো বে থেকে বেরিয়ে বিভীষিকাময় সেই নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে আত্মজীবনী গুয়ানতানামো ডায়েরি লিখেছিলেন। আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার এই ডায়েরির বিবরণের ওপর নির্ভর করেই পরিচালক কেভিন ম্যাকডোনাল্ড নির্মাণ করেন দ্য মৌরিতানিয়ান। এরপরই গুয়ানতানামো বে কারাগারের নির্মম নির্যাতন চাক্ষুষ করেন দর্শকেরা।

এদিকে সেলিম ‘আয়নাঘর’ থেকে বেরিয়েই বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি হাসিনুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন। এই দুজনই আয়নাঘরের নাম জনসমক্ষে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও ডরকে অতিক্রম করে আয়নাঘর নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। বিএনপি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়েছে, কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এত দিন গুম নিয়ে কমবেশি সবাই নিশ্চুপ থাকলেও অনেকেই এখন কথা বলতে শুরু করেছেন। সবার দাবি হচ্ছে, দেশে গুমের সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। কেউ কোনো অপরাধ করলে আইন অনুসারে তাঁর সাজা হবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ধরে নিয়ে গোপন আস্তানায় আটক রাখা মানবাধিকারের পরিপন্থী।

এ রকম গুমের পদ্ধতি গত শতকে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স প্রয়োগ করেছিল। পরবর্তীকালে ফরাসিরা এ সংস্কৃতি দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এরপর গুয়াতেমালা, নিকারাগুয়া, এল সালভেদর, চিলি, আর্জেন্টিনায় গণহারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বামপন্থী বিপ্লবীদের গুম করা হয়। ওই সব দেশের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা গণতন্ত্রপন্থীদের বিমানে করে নিয়ে আটলান্টিকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দিতেন। ফরাসিরা ফেলে দিতেন ভূমধ্যসাগরে। গুম করার এই নির্মম পদ্ধতি ‘গোস্ট ফ্লাইট’ হিসাবে পরিচিত। গোস্ট ফ্লাইটের যাত্রীরা আরা কখনোই ফিরে আসতেন না।

আমাদের এখানে গুমের আরও তথ্য হয়তো ভবিষ্যতে বেরিয়ে আসবে। সেলিম ও হাসিন কেবল কিছুটা ধারণা দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করার বিষয়ও আছে। তবে সেলিম ও হাসিনের বক্তব্যের বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ দিক আছে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সামরিক বাহিনী নিয়ে যেকোনো ধরনের অভিযোগ বা এ ধরনের কথাবার্তা বলা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এখনো দেশের মানুষ সামরিক বাহিনীকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বলে মনে করে। আমাদের সামরিক বাহিনী বিশ্বের আর অন্যান্য সামরিক বাহিনীর মতো শুধু সাধারণ ঐতিহ্য বহন করে না, এই সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এর অনন্য দিক হচ্ছে এটি একটি জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গঠিত হওয়া বাহিনী।

১৯৭১ সালের দেশমাতৃকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তৎকালীন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এই সামরিক বাহিনী সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে সংগঠিত হয়েছে। এরপরই বিভিন্ন সময় জাতির ক্রান্তিলগ্নে সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সময় সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যায় সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও গোটা সামরিক বাহিনী এসবে অংশ নেয়নি। আর এই সামরিক বাহিনীর সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, ১৯৭১ সালে জনসাধারণকে ভরসা দিয়ে যে পথচলা শুরু করেছিল, এরপর কখনোই দেশের জনসাধারণের বিপক্ষে যায়নি বা সরাসরি বললে কখনোই বন্দুকের নল জনগণের দিকে তাক করেনি। ক্ষমতা দখল, পাল্টা দখল বা রেষারেষি, দ্বন্দ্ব, ফ্যাসাদ—এসব রাজনীতিবিদ ও কিছু স্বার্থান্বেষী জেনারেলদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। জনসাধারণ কখনোই এর আঁচ অনুভব করেনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সম্ভবত এই প্রথম কোনো ধরনের বিশেষ অভিযান বা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই সাধারণ মানুষদের গুম করার অভিযোগ উঠল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে বরং গুরুত্ব দিয়ে এ অভিযোগ বিবেচনা করতে হবে। কেন ও কী কারণে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তা তদন্ত করা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই তা প্রয়োজন। তা না হলে জাতিসংঘের শান্তি মিশনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সামরিক বাহিনীর মান-মর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

**** ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৩, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ