**** ইউক্রেন ন্যাটোতে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও যুদ্ধ বন্ধ করবে না রাশিয়া: মেদভেদেভ।
**** সেনাবাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশ পুতিনের।
ইউক্রেনের সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও যুদ্ধ বন্ধ করবে না রাশিয়া। গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করা হয়। খবর রয়টার্সের।
মেদভেদেভ বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান। ফ্রান্সের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত রাশিয়া।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। হামলা শুরুর আগে মস্কো স্পষ্ট করে বলেছিল, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
মেদভেদেভ বলেন, নর্থ আটলান্টিক জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ এখন গুরুত্বপূর্ণ, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি ইতিমধ্যে অপর্যাপ্ত হয়ে গেছে।
রাশিয়া বলেছে, দেশটির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুতিন বলছেন, তিনি ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে চান, তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্ব এই অভিযোগকে যুদ্ধ জয়ের ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে মন্তব্য করেছে।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়, তবে এতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিগগিরই ওই সংলাপ পুনরায় শুরু হওয়ারও তেমন সম্ভাবনা নেই।
মেদভেদেভ বলেন, ‘সামনের ঘটনাপ্রবাহের ওপর সংলাপের বিষয়টি নির্ভর করছে। জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
মেদভেদেভ আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার হিমার্সের মতো অস্ত্র উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি, তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র এর চেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানে।
রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, যখন এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে, তা এক বিষয়। কিন্তু ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার হলে সেটা আরেক বিষয়। তখন এটি রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডের প্রতি সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দিন আগে আরও ৩০০ কোটি ডলারে অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে।
কিয়েভকে সরবরাহ করা ওয়াশিংটনের অস্ত্রের মধ্যে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন রুশ বাহিনীর অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৭, ২০২২
সেনাবাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশ পুতিনের
রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ১০ শতাংশ সদস্য বৃদ্ধির বিষয়ে এক ডিক্রিতে সই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের সই করা ডিক্রি অনুযায়ী, আগামী মাসগুলোতে দেশটির সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩৭ হাজার সেনা নিয়োগ করা হবে। খবর বিবিসির।
বর্তমানে রাশিয়ার ১০ লাখের মতো সামরিক কর্মকর্তা ও ৯ লাখের মতো বেসামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। পুতিনের ডিক্রি জারির ফলে দেশটিতে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বাড়বে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য আগ্রহী ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের নগদ অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে রাশিয়ার ৭০ থেকে ৮০ হাজার সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। গত বুধবার এ হামলার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
রুশ বাহিনীতে সেনাসদস্য হিসেবে নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। মুক্তি প্রদান ও নগদ অর্থের প্রস্তাব দিয়ে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কারাবন্দীদের।
দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। একটি নতুন সেনা কোর তৈরির উদ্দেশ্যেই এ ব্যাটালিয়ন তৈরি করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটালিয়নে যোগ দেওয়া লোকের সংখ্যা সীমিত। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর জন্য নতুন সেনা পাওয়া কঠিন হবে দেশটির জন্য।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন বলা হয়েছিল, তাদের এটি বিশেষ সামরিক অভিযান। স্বল্প সময়ে এ অভিযান শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্রেমলিন। কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। বর্তমানে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সম্মুখযোদ্ধারা খুব বেশি এগোতে পারছেন না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে সম্প্রতি নতুন ডিক্রি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫৮ করা উচিত। এর মধ্যে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৬২৮ কর্মকর্তা থাকবেন। বর্তমানে দেশটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যসীমা নির্ধারণ করা রয়েছে ১০ লাখ ১৩ হাজার ৬২৮ জন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে এই সংখ্যা ৯ লাখের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
ওই ডিক্রিতে সেনাবাহিনীর জন্য তহবিলের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে সেনাসংখ্যা বাড়াতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে নাকি পদ বাড়ানো হবে, তা স্পষ্ট নয়।
বর্তমানে ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী রুশ পুরুষদের সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়। অনেকেই এক বছর মেয়াদি এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণকে নানাভাবে এড়িয়ে যান। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধে যেতে সেনাসদস্যদের বাধ্য করার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা ও কিছু ক্ষেত্রে রুশ সেনাদের বন্দী হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,