Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কফি ‌ও জনপ্রিয় পানীয় !

Share on Facebook

কফি পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। বহুভাবে বহু স্বাদে এটি খাওয়া হয় পৃথিবীব্যাপী। কিন্তু কোথায় তার উদ্ভব, কোথায় তার বিস্তার? গুগলের জামানায় সবাই মোটামুটি সেসব তথ্য জানেন। কিন্তু একটা অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ করেছেন কি? কফি আবিষ্কারের যে একাধিক গল্প পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রতিটিতে একজন করে সুফি-সন্ত চরিত্রের উল্লেখ আছে! শুধু তা–ই নয়। মক্কা থেকে রীতিমতো ‘পাচার’ হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে কফি এসেছিল যাঁর হাত ধরে, তিনিও একজন সুফি সাধক, নাম বাবা বুদান!

পল ক্রিস্টালের লেখা একখানা বই আছে, বেশ পুরোনো; নাম ‘কফি: আ ড্রিংক ফর দা ডেভিল’। কফি নিয়ে প্রাচীন সব সূত্রের আকর সম্ভবত এই বইখানিই। যদিও পল আমাদের শুনিয়েছেন ‘কিংবদন্তির’ গল্প, কিংন্তু আমরা কিংবদন্তি বাদ দিয়ে সেটাকে ‘সত্য’ বলেই জেনে আসছি। কিংবদন্তি হলো, নবম শতকে কালডি নামক ইথিওপিয়ার এক মেষপালক অবাক বিস্ময়ে দেখল তার মেষগুলো কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। খুঁজতে খুঁজতে সে আবিষ্কার করল যে গাছের নিচে পড়ে থাকা একধরনের ছোট ছোট ফল খেয়েই মেষগুলোর আচরণে পরিবর্তন এসেছে।

মেষপালক কোচর ভরে সে ফল নিয়ে গেল স্থানীয় সুফি সাধকের কাছে। ফলগুলো দেখে সাধকের মাথায় দ্রুতই এক চিন্তা খেলে গেল। তিনি সেগুলোকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিলেন। তারপর সেই শুকনো ছোট ছোট ফলগুলো আগুনের হালকা আঁচে ভেজে নিলেন। আগুনে পুড়তে পুড়তে সেই ফলগুলো রাতের নির্জনতায় ছড়িয়ে দিল এক অদ্ভুত মাদকতাময় সুঘ্রাণ। সে সুঘ্রাণকেই পরবর্তী সময়ে পৃথিবী চিনবে রোস্টেড কফির ঘ্রাণ হিসেবে। এরপর সেই ভাজা ভাজা ফলগুলোকে সাধক ভেজালেন পানিতে। তৈরি হলো পৃথিবীর প্রথম রোস্টেড কফির প্রথম মগটি। নিজের বানানো রোস্টেড কফির মগে চুমুক দিয়ে তিনি নিশ্চয়ই ভাবেননি যে তাঁর আবিষ্কারকে একদিন ‘মতান্তর’ যোগ করে পড়তে হবে এবং মতান্তরে যোগ হওয়া নামগুলোতে থাকবেন তাঁর তরিকার মানুষেরাই। কফি আবিষ্কারের লাইনে পরের নামটি গোতুল আকবর নূরউদ্দীন আবু আল-হাসান আল-শাদিলি।

গোতুল আকবর নূরউদ্দীন আবু আল-হাসান আল-শাদিলি নামে ইয়েমেনের এ সুফি সাধক নিজেকে কফির আবিষ্কর্তা হিসেবে দাবি করেছিলেন। তিনি দাবি করেন যে একধরনের ফল খেয়ে তাঁর গ্রামে পাখিরা দারুণ ফুর্তি নিয়ে ওড়াউড়ি করছে। পাখিদের এই অস্বাভাবিক ফুর্তির কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি সেই ফল আবিষ্কার করেন এবং নিজেও চেখে দেখে কিছুটা ফুর্তি বোধ করেন। যাহোক, বাংলায় সব ‘কার’ বাদ দিয়েও চব্বিশটি অক্ষরে লেখা গোতুল আকবর নূরউদ্দীন আবু আল-হাসান আল-শাদিলি নামের সেই সুফি সাধকের নাম রয়ে গেছে কফি আবিষ্কারের ইতিহাসে।

এবার এক শেখের কথা বলা যাক। তিনিও ছিলেন সুফি। মজার ব্যাপার, তিনি গোতুল আকবর নূরউদ্দীন আবু আল-হাসান আল-শাদিলির শিষ্য ছিলেন বলে জানা যায়, নাম তাঁর শেখ ওমর, ছিলেন মোকা বন্দর এলাকার অধিবাসী আর সে দেশটির নাম ইয়েমেন। এই ওমর নামের সুফি সাধকের ছিল প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষের অসুখ সারানোর এক বিরল গুণ। কিন্তু কোনো কারণে তিনি একবার নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে ওসাব এলাকার কাছাকাছি এক মরুগুহায় দিন কাটাতে থাকেন।

প্রতিদিনের মতো একদিন ক্ষুধাতুর হয়ে ছোট ছোট কিছু ফল চিবিয়ে খাচ্ছিলেন ওমর। কিন্তু সেগুলো বেশ তিতা স্বাদের ঠেকছিল তাঁর কাছে। পরে সেগুলোকে তিনি ভাজলেন খানিক। কিন্তু ফলগুলো হয়ে গেল শক্ত। অনেক ভেবে সে শক্ত ফল তিনি পানি দিয়ে সেদ্ধ করলেন। সে পানি হয়ে গেল বাদামি। কিন্তু সে পানীয় থেকে এক দুর্দান্ত সৌরভ ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। তিনি মোহিত হয়ে খানিকটা পান করে পেলেন, পেয়ে যান স্ফূর্তিকারক এক স্বর্গীয় টনিকের সন্ধান। ওমর ফিরে গেলেন নিজের এলাকায়। এই অলৌকিক পানীয় আবিষ্কারের কারণে তাঁর সব অপরাধ ক্ষমা করা হলো। বলা বাহুল্য, সে পানীয়টি ছড়িয়ে পড়েছিল মোকা ছাড়িয়ে আরও বহু দূরের জনপদে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বময়।

আবিসিনিয়া থেকে নাম বদলে যাওয়া ইথিওপিয়াই হোক আর ইয়েমেনই হোক, সুফিরাই আগে কফিবীজের নির্যাস পান করেছিলেন, এটা বলা যায় কোনো সন্দেহ ছাড়াই। অন্তত গল্পগুলো সেটাই বলে।

আবিষ্কারের এসব ঘটনা ষোলো শতকের আগের। ষোলো শতকে আরব বিশ্বে কফি ‘দ্য বেভারেজ অব চয়েস’ হয়ে ওঠে। মক্কায় হজ করতে যাওয়া হাজিরা এই পানীয় পান করতেন। তেমনি হজ করতে গিয়েই সাতটি কফিবীজ নিয়ে ফিরেছিলেন বাবা বুদান, ভারতে। বর্তমান দক্ষিণ কর্ণাটকের পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার ছোট্ট গ্রাম চিকমগলুর ছিল বাবা বুদানের বাড়ি। সেখানেই চাষ হয় ভারতের প্রথম কফির, কিংবদন্তি সে রকমই বলে। সেই থেকে ভারতে শুরু হয় কফির চাষ এবং ধীরে ধীরে ভারত কফি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে ওঠে।

যত সহজে বলা হলো, ঘটনা যে তত সহজ ছিল না, সেটা না বললেও চলে। কফি তখন ছিল আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস। ফলে বন্দরে বন্দরে মোকামে মোকামে ঘাটে ঘাটে ছিল কফি নিয়ে কড়াকড়ি। এই কড়াকড়ির মধ্যেই বাবা বুদান খুব সঙ্গোপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাতটি কফিবীজ নিয়ে ফিরেছিলেন নিজের গ্রামে। চেয়েছিলেন আরব বিশ্বের মতো তাঁর গ্রামের মানুষও যেন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয় কফি চাষে। প্রজ্ঞাবান সুফি সাধক বাবা বুদানের সে ইচ্ছা যে পূরণ হয়েছিল, ভারতের কফি রপ্তানির এখনকার তথ্য–উপাত্ত তা–ই বলে।

অজ্ঞাত কেউ একজন বলেছেন, ‘যারা বলে টাকায় সুখ কেনা যায় না, তারা আসলে ভুল বলে। টাকায় কফি কেনা যায়। আর কফি আমাকে সুখী রাখে।’ সুতরাং টাকায় সুখ কেনা যায়। বাংলাদেশেও চাষ শুরু হয়েছে কফির। আশা করা যায় অচিরেই দেশীয় কফির মায়ায় আচ্ছন্ন হব আমরা। সুখী হবে আমাদের স্বাদকোরক, ফুর্তি আসবে মনে।

অধ্যাত্মবাদ-প্রেম-সম্মান-সৌহার্দ্যের হাত ধরে পৃথিবীর আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়েছিল সুফিবাদ। জয় করেছিল বহু সংস্কৃতির বহু জনপদ। কফিও তেমনি জয় করেছে পৃথিবীর তামাম পানীয়প্রেমীর হৃদয় তার স্বাদের অনন্যতা আর গুণের জন্যই।

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: অক্টোবর ০২, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ