Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

গর্বাচেভকে ঘিরে যত আলোচনা-বিবিসির বিশ্লেষণ (২০২২)

Share on Facebook

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম মিখাইল গর্বাচেভ। তাঁর সময়েই পতন হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। প্রায় ৭০ বছর ধরে এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিখাইল গর্বাচেভ ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সংস্কার, পতন, স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে গর্বাচেভের ভূমিকা বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সংস্কারে হাত দেন গর্বাচেভ। সে সময় তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলো পর্যালোচনা করা। তবে তাঁর এসব প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অবসান হয়।

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে স্তাভরোপোলে ১৯৩১ সালের ২ মার্চ মিখাইল সের্গেইভিচ গর্বাচেভের জন্ম। তাঁর মা-বাবা দুজনেই যৌথ খামারে কাজ করতেন। কৈশোরে গর্বাচেভ ফসল কাটার কাজ পরিচালনায় অংশ নিতেন।

১৯৫৫ সালে মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন গর্বাচেভ। তিনি কমিউনিস্ট দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

স্তাভরোপোলে নতুন স্ত্রী রাইসার সঙ্গে ফিরে আসেন গর্বাচেভ। আঞ্চলিক পর্যায়ে দল গঠনের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। দলে দ্রুত উত্থানও হতে থাকে।

গর্বাচেভ দলের মধ্যে নতুন প্রজন্মের একজন কর্মী ছিলেন। দলের শীর্ষপর্যায়ে প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকায় যাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল তাদের একজন ছিলেন গর্বাচেভ।

১৯৬১ সালের দিকে ইয়ং কমিউনিস্ট লীগের আঞ্চলিক সম্পাদক হন গর্বাচেভ। তিনি পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিও হন। কৃষি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতার কারণে তিনি নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রচলিত করার সুযোগ পান। এসব দক্ষতার কারণে ওই অঞ্চলে তিনি সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।

১৯৭৮ সালে সেন্ট্রাল কমিটিজ সেক্রেটারিয়েট ফর এগ্রিকালচারের সদস্য হিসেবে মস্কোতে যান গর্বাচেভ। দুই বছর পর তিনি পলিটব্যুরোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। ইউরি আন্দ্রোপভের ক্ষমতাকালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গর্বাচেভ বেশ কয়েকবার বিদেশ সফর করেন।

১৯৮৪ সালে তিনি লন্ডন সফরে যান। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের নজরে পড়েন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্গারেট থ্যাচার বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বাচেভকে পছন্দ করি। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’

১৯৮৪ সালে ইউরি আন্দ্রোপভের মৃত্যুর পর গর্বাচেভ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তার বদলে কনস্তান্তিন চেরনেনকো দলের সাধারণ সম্পাদক হন। এক বছরের মধ্যে চেরনেনকোও মারা যান। এরপর তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পলিটব্যুরোর সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হন গর্বাচেভ।

গর্বাচেভই প্রথম সাধারণ সম্পাদক যার ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পরে জন্ম। কয়েক বছর ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিওনিড ব্রেজনেভের নিষ্ক্রিয়তার পর গর্বাচেভের যুগকে নতুন আলোর সূচনা হিসেবে মনে করা হয়েছিল।

গর্বাচেভের কেতাদুরস্ত পোশাক, খোলামেলা মনোভাব তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা ছিল। আর তাঁর স্ত্রী হিসেবে রাইসার আচরণ ছিল অনেকটা মার্কিন ফার্স্ট লেডির মতো।

গর্বাচেভের প্রথম কাজ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মৃতপ্রায় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা। গর্বাচেভ এটাও জানতেন তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা সফল করতে গোড়া থেকে কমিউনিস্ট দলের সংস্কার প্রয়োজন।

গর্বাচেভের সময়ে দুটি রুশ শব্দ জনপ্রিয় হয়। তিনি বলতেন দেশের পেরেস্ত্রোয়িকা বা পুনর্গঠন প্রয়োজন। আর এই পুনর্গঠনের জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল গ্লাসনোস্ত বা উদারীকরণ।

লেনিনগ্রাদে (সেন্ট পিটার্সবার্গের আগের নাম) কমিউনিস্ট দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে আছেন। পুরোনো চিন্তাধারা এখন বাতিল।’ তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার তাঁর লক্ষ্য ছিল না। ১৯৮৫ সালে দলের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন গর্বাচেভ।

ওই বক্তব্যে গর্বাচেভ বলেছিলেন, ‘আপনাদের মধ্যে অনেকে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় হিসেবে মুক্তবাজারের কথা ভাবছেন। তবে কমরেড আপনাদের জীবনরক্ষাকারী লাইফবোটের কথা না ভেবে জাহাজের কথা ভাবতে হবে। আর সেই জাহাজ হলো সমাজতন্ত্র।’

অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবিলার জন্য গর্বাচেভ আরেকটি অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। আর সেটি হলো গণতন্ত্র। প্রথমবারের মতো কংগ্রেস অফ পিপলস ডেপুটিজে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল।

শাসনব্যবস্থার এই শিথিলতা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে কাজাখস্তানে দাঙ্গা হয়। সেখান থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্থিতিশীলতা শুরু হয়।

গর্বাচেভ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান চেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন।

অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি হয়। গর্বাচেভ সোভিয়েত বাহিনীতে একতরফা কাটছাঁটের ঘোষণা দেন। আফগানিস্তান থেকে সেনাও সরিয়ে নেওয়া হয়।

তবে যে দেশগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছিল সে দেশগুলোর পক্ষ থেকে কঠিন চাপের মুখে পড়েন গর্বাচেভ। উন্মুক্ততা ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এই দেশগুলো স্বাধীনতার ডাক দেয়। প্রাথমিকভাবে গর্বাচেভ তা সামলে নেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরে বাল্টিক দেশগুলো থেকেই ভাঙন শুরু হয়। লাটভিয়া, লিথুনিয়া ও এস্তোনিয়া মস্কো থেকে আলাদা হয়ে যায়। ওয়ারশ জোটভুক্ত চুক্তির অধীনে থাকা মিত্র দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই উত্তেজনার অবসান হয় ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভাবিত পূর্ব জার্মানির নাগরিকেরা পশ্চিম বার্লিনে অবাধে ঢোকার অনুমতি পায়। গর্বাচেভ সে সময় ঘোষণা দেন দুই জার্মানির এক হওয়া তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

১৯৯০ সালে পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় গর্বাচেভকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে ১৯৯১ সালের আগস্টে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গর্বাচেভকে আটক করা হয়। সে সময় তিনি কৃষ্ণসাগরে অবকাশযাপন করছিলেন।

এই সুযোগ কাজে লাগান দ্য মস্কো দলের প্রধান বরিস ইয়েলিৎসিন। তিনি সেনা অভ্যুত্থানের অবসান ঘটান। বিক্ষোভকারীদের আটক করেন। আর মুক্তির বিনিময়ে গর্বাচেভের প্রায় সব রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণ করেন। ছয় মাস পরে গর্বাচেভ রাশিয়া ছেড়ে চলে যান। কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যায়।রাশিয়া নতুন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ায়।

গর্বাচেভ সব সময়ই রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনায় সরব ভূমিকা রেখেছেন। তবে তাঁর ভাবমূর্তি দেশের চেয়ে দেশের বাইরে বেশি উজ্জ্বল ছিল। ১৯৯৬ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গর্বাচেভ। সে সময় তিনি ৫ শতাংশের কম ভোট পান।

১৯৯০ এর দশকেও গর্বাচেভের ভাবমূর্তি ছিল উজ্জ্বল। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। যারা রুশপন্থী নয় তাদের কাছে তিনি ছিলেন নায়ক। অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন গর্বাচেভ।

১৯৯৯ সালে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী রাইসার মৃত্যু হয়। রাইসার মৃত্যুতে বড় ধরনের ধাক্কা খান গর্বাচেভ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ। তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে দমনমূলক শাসনের অভিযোগ তোলেন। গর্বাচেভ বলেন, ‘রাজনীতি মেকি গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। নির্বাহী শাখার হাতে ক্ষমতা চলে যাচ্ছে।’

২০১৪ সালে গর্বাচেভ ক্রিমিয়ার রাশিয়ায় সংযুক্ত হওয়াকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘জনসাধারণের মতামত বিবেচনা না করে সোভিয়েত আইন তথা দলীয় আইনের ওপর ভিত্তি করে ক্রিমিয়া ইউক্রেনে যোগ দিয়েছিল। এখন জনগণ নিজেরাই ভুল শোধরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

গত বছরের মার্চ মাসে ৯০ তম জন্মবার্ষিকীতে অবশ্য গর্বাচেভ পুতিনের প্রশংসা করেন। তিনি পুতিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আধুনিক যুগের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক যিনি আমাদের দেশের ইতিহাস ও বিশ্বে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন।’

নিজের শাসনামলেরও মূল্যায়ন করেছেন গর্বাচেভ। বলেছেন স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ও পরমাণু অস্ত্র কমিয়ে আনা সঠিক ছিল। তবে সেনা অভ্যুত্থান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার অনেকে এখনো গর্বাচেভকে দায়ী করেন।

বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী রাজনীতিবিদ গর্বাচেভ এটা বুঝতে পারেননি যে কমিউনিস্ট ব্যবস্থাকে না ভেঙে সংস্কার আনাটা অসম্ভব ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এর বাইরের লাখ লাখ মানুষ এই ভাঙন চায়নি।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ:আগষ্ট ৩১, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ