Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে আমাদের অবাক নীরবতা (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: মোশতাক আহমেদ।

১৫ সেপ্টেম্বর ছিল ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’। কিন্তু অনেক খুঁজেও এ বিষয়ে কাগজে পড়ার মতো কোনো লেখা দেখলাম না। অথচ প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কোনো না কোনো ‘দিবস’ নিয়ে লেখা আমাদের নজরে আসে। অবস্থা এমনই যে অনেক সময় দিবসের ভিড়ে ‘দিন’-কেই খুঁজে পাওয়া যায় না। মনে পড়ে, সেই দূর শৈশবে যখন দিন, সপ্তাহ, মাস ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান নেওয়া শুরু হয়, তখন দিবস বলতে দিনকেই বুঝতাম। আরও পরে বুঝলাম, যেসব দিনের বিশেষ গুরুত্ব থাকে, সেগুলো হয়ে যায় দিবস। ছোটবেলায় পাকিস্তানের এক অংশের অধিবাসী হিসেবে প্রথম যে দিবসের সঙ্গে পরিচিত হই, সেটা হলো ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস। আরও পরে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর আরেকটা নতুন দিবসের সঙ্গে পরিচয় হলো, ৬ সেপ্টেম্বর ‘প্রতিরক্ষা দিবস’। এ দুটি দিবস সরকারিভাবে পালন করা হতো।

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে দিবসের সংখ্যা বেড়ে গেল স্বাভাবিকভাবেই। প্রথম দিকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস—তিনটি দিবসই ছিল প্রধান। পঁচাত্তরের শোকাবহ পটপরিবর্তনের পর দেশে নতুন নতুন দিবস জন্ম নিতে শুরু করল। এরপর সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন দিবস যুক্ত হয়েছে। দিন দিন দিবসের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনা শুরুর আগে আমার এলাকার প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষকের সঙ্গে এসব দিবস নিয়ে কথা হচ্ছিল। ভদ্রলোক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘দেখুন, প্রতি মাসেই আমাদের দু-তিনটা দিবস পালন করতে হয়। আর এ জন্য প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে সভায় যেতে হয়। তারপর স্কুলে এসে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলতে হয়। এই করতে গিয়ে আমাদের সপ্তাহের অন্তত তিন দিনই ব্যস্ত থাকতে হয় একটা না একটা দিবস উদ্‌যাপনে। এত সব করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দিকে নজর দেওয়ার আর সময় থাকে না।’

এদিকে আন্তর্জাতিকভাবেও জাতিসংঘ বিভিন্ন সময় নতুন নতুন দিবস ঘোষণা করছে। আমার জানামতে, জাতিসংঘ-ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসের সংখ্যা ১৮০ বা তারও বেশি। এতে যেমন আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, তেমনি আছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস; আছে মৌমাছি দিবস, আছে শান্তিতে বসবাস দিবস। যাক, আমার আজকের আলোচনার বিষয় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস জাতিসংঘ-ঘোষিত একটা দিবস, যা ২০০৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশে পালিত হয়ে আসছে। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬২তম অধিবেশনের ৭ নম্বর রেজল্যুশনে ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী প্রতিবছর জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। কিন্তু এ বছর আমি ঢাকার বেশ কয়েকটি নামীদামি পত্রিকা ঘেঁটেও এ-সংক্রান্ত কোনো লেখা পেলাম না। কয়েক বছর আগেও এদিনে কাগজে কিছু না কিছু লেখা থাকত। তাহলে কি নীরবেই পার হয়ে গেল দিবসটি? অথচ এমন তো হওয়ার কথা নয়! জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস করা যেকোনো রেজল্যুশন সব সদস্যরাষ্ট্রের জন্যই অবশ্য-অনুসরণীয়, তাহলে এমন হলো কেন?

প্রসঙ্গত, দিবসটির ইতিহাসের দিকে একবার তাকানো যেতে পারে। সে ১৯৮৮ সালের কথা। সে সময় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো প্রথমবারের মতো স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হওয়া রাষ্ট্রসমূহ নিয়ে একটা সম্মেলনের আয়োজন করেন। নাম দেওয়া হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন নিউ অ্যান্ড রেস্টোর্ড ডেমোক্রেসি বা আইসিএনআরডি’। সেই সম্মেলনে নতুন গণতন্ত্র পাওয়া দেশগুলোর গণতন্ত্র সংহতকরণের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের আন্তসংসদীয় ইউনিয়ন বা আইপিইউ ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অন ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে এক প্রস্তাব গ্রহণ করে। এর ১০ বছর পর ২০০৭ সালে জাতিসংঘ ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো দিবসটি পালন করে আসছে।

জাতিসংঘ-ঘোষিত অন্য সব দিবসের মতো গণতন্ত্র দিবসেরও প্রতিবছর একটি করে প্রতিপাদ্য থাকে। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক সহনশীলতা শক্তিশালীকরণ’ (স্ট্রেংদেনিং ডেমোক্রেটিক রেজিলিয়েন্স ইন দ্য ফেস অব ফিউচার ক্রাইসিস)। জানি না কী কারণে বাংলাদেশে দিবসটি এত অবহেলার বিষয় হলো। সরকার বা রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি। বলা বাহুল্য, এবারের প্রতিপাদ্যে এই যে ‘গণতান্ত্রিক সহনশীলতা’ বিষয়টি আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যবহ। কারণ, রাজনীতিতে সহনশীলতার বিষয়টি অনেক আগেই মরে গেছে। সামান্য সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতাও আমাদের নেই। একটু মুখ খুললেই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’-এর খড়্গ ঘাড়ের ওপর এসে পড়ে। তাই আজ অনেকেই মনে করেন, সহনশীলতা তো দূরের কথা, খোদ গণতন্ত্রই চলে গেছে আইসিইউতে। মধ্যরাতের ভোট, ভোটারবিহীন ভোট—এসব কথা তো খোদ নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরাই এন্তার বলে চলেছেন। আজ তাই এ ব্যবস্থার ওপর কারও কোনো আস্থা নেই। এমনকি সরকারের নিজেরও যে খুব একটা আস্থা আছে, তা-ও মনে হয় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র তথা নির্বাচনী ব্যবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে সাধারণ মানুষ একে এক হাস্যকর তামাশার বিষয় ছাড়া আর কিছু মনে করে না।

জানতে পারলাম, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৪৩টিতে সরকারি দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একজন ‘ডক্টর টার্নড পলিটিশিয়ান’ কুমিল্লা-৭ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আসলে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কথিত মধ্যরাতের নির্বাচনের পর দেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে গণতন্ত্র জিনিসটাই তার সব গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। তাই হয়তো ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালনের আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। সরকারও তাই এ নিয়ে নীরব থেকেছে। অন্যরাও হয়তো নীরব থেকেছে সেই আপ্তবাক্য স্মরণ করে যে ‘বোবার কোনো শত্রু নেই’। কিংবা গণতন্ত্র দিবস পালন করতে গিয়ে আবার কোনো রোষানলেই না পড়তে হয়, সেই আশঙ্কাও থাকতে পারে। আর আমাদের রাজনীতি এমন জায়গায় চলে গেছে যে বিষয়টির গুরুত্বই যেন সবাই ভুলে গেছে।

● মোশতাক আহমেদ জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ