Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আসল রূপে মিয়ানমার ! (২০২১)

Share on Facebook


মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী নেত্রী হিসেবে পরিচিত অং সান সু চি সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান মেনে নিয়েই ২০১৫ সাল থেকে তাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আসছিলেন। ২০০৮ সালের সংবিধানে পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসনের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত মন্ত্রণালয়ও সেনাবাহিনীর হাতে রেখে দেওয়া হয়। এই সংবিধানের অধীনে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অং সান সু চির দল অংশ নিতে পারেনি। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর সমঝোতা হয় এবং তাঁকেসহ দলের ৪৪ জন সদস্যকে উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনা হয়। মিয়ানমারের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যাঁরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁরা একে ‘সিভিল মিলিটারি হোলি ম্যারেজ’বলে অভিহিত করেছিলেন।

ওই সংবিধানের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে এলেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে। সংবিধানে আছে, বিদেশিকে বিয়ে করেছেন, এমন কোনো নাগরিক দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। মূলত, সু চিকে প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য করার জন্যই এই বিধান জারি করা হয়েছিল। তারপরও সু চি গণতন্ত্রের স্বার্থে তা মেনে নিয়ে তাঁর অনুগত নেতা উ উইন মিন্টকে প্রেসিডেন্ট করে তিনি হয়েছিলেন স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তাঁকে সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকেই বাস্তবায়ন করতে হয়েছে।

গত পাঁচ বছরে এনএলডি নেত্রী এমন কোনো পদক্ষেপ নেননি, যাতে সেনাবাহিনী বিরাগভাজন হতে পারে। ক্ষমতায় আসার আগে সু চির রাজনৈতিক দর্শন ছিল অহিংস। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্টে যখন সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালায়, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করে, তখন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি এর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আমরা তাঁকে সেনাবাহিনীর অভিযানের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখেছি। ১৫ বছরের বন্দিজীবনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করে যে সু চি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছিলেন, তিনিই আবির্ভূত হলেন একটি জনগোষ্ঠী নির্মূলে অভিযানকারী শক্তির ক্রীড়নক হিসেবে।

এত কিছুর পরও মিয়ানমারের ‘গণতন্ত্রের নেত্রী’ অং সান সু চির শেষ রক্ষা হলো না। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর দল ৮০ শতাংশ ভোট পায় এবং সেনাসমর্থিত ইউএসডিপি অনেক কম আসন পায়। নির্বাচনের এই ফলাফল প্রমাণ করে বহির্বিশ্বে সু চি যত নিন্দিতই হোন না কেন, দেশের ভেতরে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটাই সেনাবাহিনীর মাথাব্যথার বড় কারণ। সেনা নেতৃত্ব নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের কাছে নালিশ জানান। সুপ্রিম কোর্ট নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেন। তারা তদন্ত করে জানিয়ে দেয় নির্বাচনে জালিয়াতির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।

এ অবস্থায় সেনা নেতৃত্ব তাদের ভবিষ্যৎ কর্তৃত্ব নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সু চির কাছে আরও ‘ছাড়’ দাবি করে। বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের মেয়াদ আছে মাত্র এক বছর। এরপর তিনি তাঁর জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সু চি রাজি হননি। এই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার যেদিন নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল, সেদিন ভোরেই সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং রাষ্ট্রক্ষমতা পুরোপুরি তাদের দখলে নিয়ে নেয়।
বহির্বিশ্ব মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের নিন্দা করেছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। এর আগে সু চি বন্দী বা গৃহান্তরীণ থাকাকালে বিশ্বজনমত যেভাবে তাঁর পক্ষে সোচ্চার ছিল, এবার তেমনটি লক্ষ করা যায়নি। এর অর্থ হলো ক্ষমতার বাইরে থাকা সু চি অধিক ক্ষমতাবান ছিলেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে তিনি নিজের আপসহীন নীতি বিসর্জন দিয়েছেন। মিয়ানমারের সব জনগোষ্ঠীর নেত্রী না হয়ে আধিপত্যবাদী বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হয়েছেন।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনাকালে সু চি একটি বই লিখেছিলেন ‘ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার’ —ভয় হতে অভয় পথে। আত্মজীবনীমূলক সেই বইয়ে মিয়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও সু চির বাবা অং সানের কথা আছে, দেশে ও বিদেশে নিজের সংগ্রামের কথা আছে, সেনাবাহিনীর হাতে নিগৃহীত মানুষের কথা আছে, আছে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কথা। সেই সময় যে বন্দুকের নল তাঁকে তাক করেছিল, তাঁর শাসনামলে সেই বন্দুকের নল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার পরও সু চি টুঁ শব্দটি করেননি। এটাই ইতিহাসের ট্র্যাজেডি।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং নির্বাচনে জালিয়াতির যে অভিযোগ এনেছেন, অনেকে তাকে চ্যাম্পিয়ন অভিযোগ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছেন। আর মিয়ানমারের জেনারেল অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে সেনা শাসন জারি করেছেন। সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ওয়াদা করেছেন, তার প্রতি আস্থা রাখা যায় না। যেই সেনাবাহিনী জনরায়ের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে, সেই সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বেশির ভাগ সময়ই দেশটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাঝ মধ্যে ছদ্মবেশী বেসামরিক মোড়ক দেওয়া হলেও মূল ক্ষমতা বরাবর সেনাবাহিনীর হাতেই ছিল। তারপরও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অতীতের মতো মিয়ানমারের জেনারেল শাসন সহজ হবে না, যার আলামত ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই ভিডিও করা এক বিবৃতিতে সু চি সেনা আইন প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাবাহিনী প্রথমে এনএলডির পার্লামেন্ট সদস্যদের রাষ্ট্রীয় গেস্টহাউসে বন্দী করার ঘোষণা দিলেও পরে বলেছে, ‘তাঁরা ইচ্ছা করলে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।’ মিয়ানমারে সেনাশাসন জারির প্রতিবাদে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। মিয়ানমারে সেনাশাসন প্রত্যাহার করা না হলে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিন্দা জানিয়েছে। উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত ও আসিয়ান দেশগুলো। একমাত্র চীন একে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করে বাইরের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছে।

সেনা শাসন জারির পর থেকে প্রধান শহরগুলোয় সেনাবাহিনীর টহল চলেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা গাড়ির হর্ন ও থালাবাসন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান। মিয়ানমারের তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। ফেসবুক পেজে তাঁদের এই কর্মসূচিতে এক লাখেরও বেশি লাইক পড়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় কর্মরত চিকিৎসকেরা সু চির মুক্তি দাবিতে বুধবার থেকে অসহযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কিছু চিকিৎসাকর্মী নীরব প্রতিবাদ জানাতে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সাগাইং অঞ্চলে মংগিওয়া হাসপাতালের অবেদনবিদ নায়িং হিতু অং পদত্যাগ করেছেন। তিনি বিবিসি বার্মিজকে বলেন, ‘এ ধরনের অভ্যুত্থান আর সহ্য করা যায় না। সেনাশাসকের অধীনে আমি কাজ করতে পারব না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। সেনাশাসক দেশের ও জনগণের কথা ভাবে না। পদত্যাগ করেই আমি তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।’

মিয়ানমারের জেনারেল শাসন আগের মতো নির্বিঘ্ন হবে না— সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষের মুখ বন্ধও করা যাবে না।

সূত্র: প্রথম আলো
লেখক: সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক

তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ