Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইউক্রেন নিয়ে ভারতের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ দশা – শশী থারুর (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: শশী থারুর

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ভারতের কৌশলগত দুর্বলতাকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। বিশ্বে ভারতের অবস্থান কী, দেশটির আঞ্চলিক নিরাপত্তা কেমন অবস্থায় আছে এবং বিশ্বের সঙ্গে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কবিষয়ক প্রজ্ঞা কতখানি—এসব মৌলিক প্রশ্ন এখন উঠে আসছে। ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার পরিষদে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দাসূচক ভোটদানে বিরত ছিল। ভোটদানে বিরত থাকার প্রাথমিক ‘ব্যাখ্যায়’ দেশটি রাশিয়ার নামটি পর্যন্ত উল্লেখ করেনি বা আকার-ইঙ্গিতেও রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা জানায়নি।

রাশিয়ার নিন্দা না করে ভারত নিছক গড়পড়তা মানের আনুষ্ঠানিক ভাষায় ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষকে’ সংঘাত কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের এ আহ্বানের ভাষা এমন ছিল, যেন ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই সমান শক্তিমত্তা নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর বাইরে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে রাশিয়ার আগবাড়িয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়েও ভারত আপত্তি তোলেনি।

পরে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ভারতের দীর্ঘস্থায়ী নীতির পুনরাবৃত্তি করেছে। সেখানে ‘কূটনৈতিক আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার জন্য সব পক্ষ থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টার’ আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউক্রেনে যখন রাশিয়ার হামলায় নিরপরাধ মানুষ মরছে, এমনকি খারকিভে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ভারতীয় ছাত্র যখন রাশিয়ার গোলায় নিহত হলেন, তখনো মোদির সরকার শান্তির জন্য অর্থহীন আপ্তবাক্য আওড়ে যাচ্ছে। একবারও রাশিয়ার সমালোচনা করছে না।

রাশিয়ার সমালোচনায় ভারতের এ অনাগ্রহের কারণগুলো বোঝা খুবই সোজা। প্রথমত, ভারতকে তার অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রায় ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে রাশিয়া। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ঐতিহ্যগতভাবেই অনেক বেশি আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ। ক্রেমলিনের সঙ্গে সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আমল থেকেই ভারত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো বহুবার কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে রক্ষা করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তখন ভারতকে ক্রেমলিন সুরক্ষা দিয়েছিল। তাই চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা এবং ভূরাজনৈতিক সখ্য ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় ফেলেছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার চীনের সঙ্গে তার ‘বিশেষ আত্মীয়তা’ আছে বলে ঘোষণা করেছে। অথচ এই জান্তাদের পূর্বসূরিরা ভারতকে চীনের হুমকি মোকাবিলায় একটি মূল্যবান ভারসাম্যমূলক শক্তি হিসেবে দেখত। এ দেশগুলোর ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এটিই ইঙ্গিত করে যে ভারত তার নিজের ‘উঠানেই’ তার কূটনৈতিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করছে।

ক্রেমলিন চীনের ‘খদ্দের রাষ্ট্র’ পাকিস্তানকেও দৃশ্যত উষ্ণতা দিচ্ছে। রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে হামলা চালায়, সেদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মস্কোতে ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। এটি একটি স্পষ্ট লক্ষণ যে উপমহাদেশে রাশিয়ার হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে গেছে। ভারত মনে করছে, রাশিয়ার আশীর্বাদের ছায়া পুরোপুরি হারানো এড়াতে মস্কোকে আঁকড়ে ধরা দরকার।

তবে ভারতও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমের দিকে ঝুঁকেছে। মোদি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে। সেই অংশীদারিতে ক্রমবর্ধমান উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা সম্পর্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীনকে রুখে দেওয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন ‘কোয়াড’ গ্রুপে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় নেতারা বুঝতে পারছেন, রাশিয়ার আক্রমণের বিরোধিতা করতে ভারতের ব্যর্থতা কোয়াড অংশীদারদের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ককে বিপন্ন করে বসতে পারে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ ভারতের জন্য আরেকটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। গত বছরের শেষের দিকে সংকট বাড়তে শুরু করে। এ সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক হুমকি এবং ইউরোপের দিকে দৃষ্টি রাখা কিছুটা কমিয়ে তার বদলে ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। তবে আমেরিকা এখন রাশিয়ার প্রতি তার বিরুদ্ধাচরণকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। এটি ভারতের প্রতিবেশী শত্রুদেশ চীনের (যে দেশটি বিতর্কিত হিমালয় সীমান্ত বরাবর ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে, এমনকি দুই বছরের কম সময় আগে বিনা উসকানিতে ২০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে) প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা কমাতে পারে। এটিও ভারতের জন্য বড় চিন্তার বিষয়।

এসব এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আফগানিস্তানের নিরাপত্তা হুমকি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এ অঞ্চলে চীনের সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা, তালেবানকে চীনের পক্ষ থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া এবং কাশ্মীরে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত ভারতকে প্রতিরক্ষামূলক বেকায়দায় ফেলেছে। আরও দুশ্চিন্তার কথা হলো, সম্প্রতি ভারত মহাসাগরে যৌথ নৌমহড়া করেছে রাশিয়া, চীন ও ইরান।

এ অঞ্চলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী মিত্ররা বুঝতে পারছে, বাতাস কোন দিক থেকে বইছে। নেপাল চীনকে তার উত্তর সীমান্ত এলাকায় বড় বড় রেললাইন ও হাইওয়ে নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। ভুটান গত অক্টোবরে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যার শর্ত অনুযায়ী, দেশটি চীনকে এমন একটি অঞ্চল ছেড়ে দেবে যা ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যেকোনো সংঘর্ষে চীনকে সামরিক সুবিধা দেবে। ভারতের অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর অধিকাংশই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) স্বাক্ষর করেছে, যেটির কঠোর বিরোধিতা করে ভারত।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার চীনের সঙ্গে তার ‘বিশেষ আত্মীয়তা’ আছে বলে ঘোষণা করেছে। অথচ এই জান্তাদের পূর্বসূরিরা ভারতকে চীনের হুমকি মোকাবিলায় একটি মূল্যবান ভারসাম্যমূলক শক্তি হিসেবে দেখত। এ দেশগুলোর ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এটিই ইঙ্গিত করে যে ভারত তার নিজের ‘উঠানেই’ তার কূটনৈতিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করছে।

সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ভারতকে একটি সংকটময় অবস্থানে ফেলেছে। একদিকে ভারত পশ্চিমা গণতন্ত্র, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার অংশীদারি জোরদার করতে চাইছে। অন্যদিকে ভারতের মূল অংশে চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে দিল্লি মস্কোর সঙ্গে তার ঐতিহ্যবাহী ঘনিষ্ঠতাও ধরে রাখতে চায়। কিন্তু ইউক্রেন সংকট জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার নিন্দা না করায় ভারত পশ্চিমাদের বন্ধুত্ব হারাতে পারে। আবার চীন যেভাবে রাশিয়ার সঙ্গে মিশছে, তা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দূরত্ব তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের এবং ভারতের একসময়ের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোদি সরকারের বিরোধিতায় বেপরোয়া করে তুলতে পারে। ইউক্রেনের এ সংঘাত ভারতের কৌশলের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। যে দেশের প্রতিবেশী শত্রুভাবাপন্ন এবং তার ভূখণ্ড দখলের জন্য সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেই দেশের পক্ষে জোট নিরপেক্ষ থাকা বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়।

বড় বড় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পক্ষ বেছে নেওয়ার যে ঐতিহ্যগত অনিচ্ছা ভারত লালন করে থাকে, তার জন্য অদূর ভবিষ্যতে তাকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। ভবিষ্যতে ভারত অন্য দেশের সাহায্য চাইলে এ নিরপেক্ষতার কারণে অনেক ক্ষমতাধর দেশ এগিয়ে আসবে না।

****ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

শশী থারুর জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ১০, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ