Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

উন্নয়নের ঢাক বেসুরো বাজে আজ (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মহিউদ্দিন আহমদ

উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, ভাবমূর্তি—এ শব্দগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই নাড়াচাড়া হচ্ছিল। আমাদের নেতারা প্রায়ই বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে আমরা সবার ওপরে; আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল; পদ্মা সেতু আমাদের ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিয়েছে ইত্যাদি। আমি এ কথাগুলো বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কথার কথা। কেউ কেউ এসব বলে আনন্দ পান। কিন্তু মানুষ তাতে গা করে না। অনেক সময় এমনও শুনি, আমরা এত করছি, তারপরও অমুকের মন পাচ্ছি না। তারা কি চোখে উন্নয়ন দেখে না?

কয়েক দিন আগে খবরের কাগজে একটা তথ্য পেলাম। তাতে মনে হলো বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান তলানিতে। একটা সময় ছিল, যখন আমরা লন্ডন, ব্যাংকক, সিউল ও হংকং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখালে অন অ্যারাইভাল ভিসা পেতাম। এখন তাদের কাছে আমাদের পাসপোর্টের কোনো কদর নেই। আমরা আমাদের ভাবমূর্তি নিয়ে যত চোঙা ফুঁকি না কেন, বিদেশিরা তো আমাদের তেমন গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না!

বিদেশিরা আসলে কী দেখে? যখন তারা শোনে, ঢাকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পুলিশ পাহারায় পূজাপার্বণের উৎসব করতে হয়, একটা বিনিয়োগ প্রকল্পের ছাড়পত্র পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, যানজটে রাজধানীতে গাড়ি চলে ঘণ্টায় তিন থেকে চার কিলোমিটার, তখন তাদের সামনে আমাদের ভাবমূর্তির অবস্থাটা কী দাঁড়ায়?

এ দেশে উন্নয়নের ঢোল বাজানো শুরু হয় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমল থেকে। তাঁর আমলে দেশের চাকচিক্য কিছুটা বেড়েছিল, সন্দেহ নেই। তিনি আগারগাঁওয়ে সংসদ ভবনসহ একটা বড়সড় কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। কুর্মিটোলার নতুন বিমানবন্দরের কাজে হাত দেন। এখন যেটা ময়মনসিংহ রোড, যা কিনা ঢাকা শহরের ধমনি, এটাও তাঁর সময়ে করা। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তাঁর শাসনামলের। যমুনা সেতু আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিন্তাও আসে তখন। আমরা এখন এসবের অনেক কিছু নেড়েচেড়ে খাচ্ছি।

কিন্তু আইয়ুব খান যা করেছেন, তাতে আমরা খুব খুশি ছিলাম না। আমাদের অভিযোগ ছিল, আমাদের পাট বেচা টাকার অল্প অংশই আমাদের এ অঞ্চলে খরচ হয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয় পশ্চিম পাকিস্তানের (এখন পাকিস্তান) উন্নয়নে। এই বৈষম্য, এই প্রতারণা দিয়ে উন্নয়নের ঢোল বেশি দিন বাজানো যায়নি। ১৯৬৮ সালে সারা দেশে আইয়ুব খানের ‘উন্নয়ন দশক’ উদ্‌যাপিত হলো। কিন্তু দেখা গেল, ভেতরটা ফাঁপা। কিন্তু ‘উন্নয়ন’ শব্দটি শাসকদের খুব পছন্দ। এর ধারাবাহিকতায় ‘উন্নয়ন’ আমাদের রাজনীতিতে টেকসই হয়ে গেছে।

১৯৭২-৭৫ সময়ে উন্নয়ন শব্দটি বেশি চাউর হয়নি। কারণ, সময়টা ছিল পুনর্বাসন আর পুনর্গঠনের। কিন্তু তার পর থেকে আমরা কেবলই উন্নয়নের চমক দেখছি। জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথমবারের মতো উচ্চারণ করলেন—উন্নয়নের রাজনীতি। দেশ স্থিতিশীল থাকলে উন্নয়ন হবে, এ ধারণা প্রথম আসে তাঁর কাছ থেকে। তাঁর সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক লেন থেকে দুই লেন হয়। ফেনী ও কুমিল্লায় হয় বাইপাস। পরপর কয়েক বছর কৃষিতে বাম্পার ফলন হওয়ায় তাঁকে খুব একটা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়নি। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মধ্যে সাতটি কৌণিক দেয়াল দিয়ে বানানো যে স্থাপনাটি এখন আমাদের পরিচয়ের একটি লোগো, তার ডিজাইন ও বাস্তবায়ন তিনি শুরু করেছিলেন।

এরপর আসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জমানা। তিনি তো উন্নয়ন বলতে ছিলেন অজ্ঞান। তাঁর আমলে মহাসড়কে একটা বিপ্লব হয়ে গেল। পশ্চিমে বাঁধ দিয়ে তিনি ঢাকার নাগরিকদের বন্যার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিলেন। যমুনা সেতু (এখন বঙ্গবন্ধু সেতু) তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু কেন জানি তিনি মানুষের মন জয় করতে পারলেন না। একসময় তাঁর পতন হলো।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কিন্তু থেমে থাকেনি। খালেদা জিয়ার আমলে দুই দফায় বেশ কিছু স্থাপনা তৈরির উদাহরণ দেখি, যেমন লালন শাহ সেতু, কর্ণফুলী সেতু। যমুনা সেতুর বাস্তবায়নের বেশির ভাগই হয় তাঁর শাসনামলে। পরে শেখ হাসিনার সরকার তাতে রেললাইন জুড়ে ফিনিশিং টাচ দেয়।

এক-এগারোর সরকার ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। তারা একটা যুগান্তকারী কাজ করেছে—ভোটার পরিচয়পত্র। এখন আমরা এর সুফল পাচ্ছি। তা ছাড়া তেজগাঁও বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে নতুন একটি সড়ক বানিয়ে মিরপুর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগসুবিধা বাড়ানো এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা না বললেই নয়। আমরা এখন যে বোয়িং বিমানগুলো পাচ্ছি, এগুলোর চুক্তি হয় তখন। এর আগে বাংলাদেশ বোয়িং থেকে কোনো বিমান কিনত না। কারণ, বোয়িং কোনো কমিশন দেয় না, এজেন্টের মাধ্যমে কারবার করে না। এতে কারও কারও মহা অসুবিধা বরং সেকেন্ডহ্যান্ড বিমান কেনার কিংবা লিজ নিয়ে বিমান চালালে অনেকেরই সুবিধা। বিমান কেন পথে বসেছে, এর গূঢ় রহস্য এখানে খোঁজা যেতে পারে। ২০০৯ সাল থেকে সরকারে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। তিনি একটা কথার ওপর প্রায়ই জোর দেন—সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন হয়। তো এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নানা আয়োজন দেখা যায়। তবে এ সময়ে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে, অনেক স্থাপনা তৈরি হয়েছে। আরও হচ্ছে।

আমরা যারা অর্থনীতির ছাত্র, আমরা অর্থনীতির কিছু নিয়ামক সূত্রে বিশ্বাস করি, রাজনীতির স্তোকবাক্যে নয়। শূন্য থেকে কোনো বড় ধরনের উল্লম্ফন হয় না (ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে)। অর্থনীতি একটু একটু করে চাঙা হয়। তার ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া গত ৫০ বছরের তথ্য মিলিয়ে দেখলেই এটা বোঝা যায়।

আজ আমরা তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী শ্রম থেকে পাওয়া আয়ের রমরমা দেখি, এর ভিতটা তৈরি হয়েছে সত্তর দশকের শেষ দিকে। দিনে দিনে এটা বেড়েছে। এখন মনে হয়, এটা একটা চরম সীমার মধ্যে পৌঁছে গেছে। এখন সংবিৎ ফিরে পাওয়া দরকার। দরকার রপ্তানির বহুমুখীকরণ।

এসব তো দৃশ্যমান উন্নয়ন। কিন্তু এর মধ্যেও আমরা অনেক ফাঁকা আওয়াজ শুনি। অনেক বছর ধরে শুনে আসছি, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। তথ্য–উপাত্ত দেখলে বোঝা যায়, এটা কত বড় একটা বাগাড়ম্বর। আমাদের খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ধান, মাছ, সবজি, দুধ ও ফলমূলে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। এর পেছনে আছে কৃষকের পরিশ্রম আর কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণা। কিন্তু খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। কখনো ছিলাম না।

আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা প্রতিবছর চাল আমদানি করি। বছর বছর গম আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর চাল-গমের ঘাটতি প্রায় ২০ লাখ টন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ঘাটতি বেড়ে হবে ৩০ লাখ টন। ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা এমনকি কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। গুঁড়া দুধও আমদানি করতে হয় অনেক। খাদ্যে আমদানিনির্ভরতা কমছে না, তবে এটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো টাকা থাকলে বিশ্ববাজার থেকেই কেনা যায়।

কিন্তু বিশ্ববাজারে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা এখন পড়তির দিকে, দেশের ও মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়েছে। মানুষ তার গৃহস্থালি বাজেট কাটছাঁট করছে। আমরা অনেকেই ভালো নেই। এই মন্দা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। ভাষণ দিয়ে তা থামানো মুশকিল হবে। পেটে ভাত না থাকলে উন্নয়নের ঢাক বেসুরো বাজবে।

শেষতক আইএমএফের কাছে ধরনা দিয়ে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, উন্নয়নের ভেতর ঘাটতি আছে অনেক।

● ****মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ; আগষ্ট ০৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ