Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

একটা পঙ্গু মানুষের জীবন আমাকে দেওয়া হলো: তসলিমা নাসরিন (২০২৩)

Share on Facebook

লেখক তসলিমা নাসরিন গুরুতর অসুস্থ—এমন একটি খবর কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছিল। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একাধিক পোস্টে অভিযোগ করেছেন। গত শুক্রবার এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কিন্তু আপাতত বেঁচে তো আছি। এ–ইবা কম কিসে!’

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘লাখ লাখ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব কিনে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। হোঁচট খেয়ে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসকেরা ঠিকমতো পরীক্ষা–নিরীক্ষা না করেই একটি এক্স–রের ভিত্তিতে বলে দিয়েছিলেন তাঁর হিপ ভেঙেছে, হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে।’

তসলিমা নাসরিন একই পোস্টে লিখেছেন, তিনি প্রথম এক্স-রে রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। এতে পুরোনো একটা ফ্র্যাকচার দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পুরোনো ফ্র্যাকচারকে আড়াল করে নতুন ফ্র্যাকচারের গল্প শুনিয়ে গত সপ্তাহের শনিবার দুপুরেই তড়িঘড়ি টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করে দেন চিকিৎসক। এখন তাঁর হিপ জয়েন্ট আর ফিমার গেছে চিরতরে, জীবন আর আগের জীবন নেই, চলাফেরা শ্লথ হবে যদি কোনো দিন হাঁটতে পারেন, স্থবির জীবনে অজস্র রোগশোকে আক্রান্ত হবেন। তসলিমা নাসরিনের আক্ষেপ, তাঁকে এখন এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে হবে যে যেদিন হোঁচট খেয়েছিলেন, সেদিন হয়তো মাথা মেঝেতে লেগে ফেটে যেতে পারত, তিনি মরে যেতে পারতেন।

ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বা কোন চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা করেছেন তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। তবে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের একটি নিউজ পোর্টাল ডেইলিও–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়া দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন তসলিমা নাসরিন।

বাংলাদেশি এই লেখক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি বেসরকারি হাসপাতালের ‘টার্গেট মার্কেট’-এর শিকার হয়েছেন। লেখক ও চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে তাঁর নাম লেখা হয়নি। ‘বাংলাদেশি রোগী’ হিসেবে লেখা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘অগত্যা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে রাজি হতে বাধ্য হতে হলো। তারপর কী হলো, আমার হিপ জয়েন্ট কেটে ফেলে দিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হলো। একটা পঙ্গু মানুষের জীবন আমাকে দেওয়া হলো।’
তসলিমা নাসরিনের অসুস্থতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগের তদন্ত এবং লেখিকার দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হচ্ছে এসব পোস্টে

তসলিমা নাসরিনের অভিযোগ, টাকার লোভে কিছু অসৎ চিকিৎসক তিনি যে রোগের রোগী নন, সেই রোগের রোগী বানিয়ে সর্বনাশ করেছেন। তাঁর আয়ু অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন। জীবনকে দুর্বিষহ করেছেন, জীবন যাপনের আনন্দ অনেকটাই নষ্ট করেছেন। তবে তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু আমি তো আমিই থাকব, সে যত দিনই বাঁচি। দীর্ঘজীবন না পাব, না পেলাম। কিন্তু অল্প কদিনই মাথা উঁচু করেই বাঁচব। নিজের আদর্শ নিয়েই বাঁচব। কোনো আদর্শ বিসর্জন দেব না, মৃত্যু এলে আসুক।’

নিজে চিকিৎসক হয়েও প্রতারণার শিকার হওয়ায় নিজেকে ধিক্কার দিয়ে তসলিমা লিখেছেন, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না বড় ডাক্তাররা এমন ভয়াবহ ক্রাইম করতে পারেন। আর আমি জানি না আমারও বুদ্ধিসুদ্ধি কোথায় উবে গিয়েছিল যে, এমন ক্রাইমের শিকার হতে নিজেকে দিলাম!’

শুক্রবারের পোস্টের আগেও একাধিক পোস্ট দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন। কিছু পোস্ট মুছে দিয়ে পুনরায় পোস্ট করেছেন। তাঁর পোস্ট ধরে অন্যরা বিভিন্ন মন্তব্য বা নতুন করে পোস্ট দিচ্ছেন। তসলিমা অন্য আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, একটুও বাড়িয়ে বলছি না, মাথায় ব্যথা পেয়ে এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য, আমার মাথাটা কেটে নেওয়া হয়েছে। সার্জনদের যুক্তি হলো, মাথা ফেলে দিলে মাথা ব্যথা করবে না।’

তসলিমা নাসরিন কোন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তা-ও লিখেছেন ফেসবুকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকার ছবি দেখে অনেকে ভেবেছিলেন তাঁর হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে। তবে সেসব কিছুই যে হয়নি, তিনি তা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বড় আকারের পায়জামা পরে ঘরে হাঁটছিলেন। পায়জামা চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছিল বলে আইস প্যাক দিয়েছিলেন, ব্যথানাশক স্প্রে করেছিলেন। হাঁটুর লিগামেন্টে লেগেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এক্স-রে করাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

এক্স-রে আর সিটিস্ক্যান রিপোর্ট দেখে হাড়ের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় ক্র্যাক হয়েছে। চিকিৎসক সমাধান বললেন, ইন্টারনাল ফিক্সেশন মানে ফাটলের জায়গাটা স্ক্রু লাগিয়ে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া অথবা হিপ রিপ্লেসমেন্ট বা হিপ কেটে ফেলে দিয়ে কিছু প্লাস্টিক মেটাল দিয়ে একটা নকল হিপ বানিয়ে দেওয়া। তসলিমা অভিযোগ করে লিখেছেন, চিকিৎসক শুরু থেকেই ইন্টারনাল ফিক্সেশনের বিপক্ষে অজস্র বাজে কথা এবং হিপ রিপ্লেসমেন্টের পক্ষে অজস্র ভালো কথা বলতে থাকেন।

নিজে চিকিৎসক, তাই জোর দিয়ে তসলিমা ফিক্সেশন করতে চাইলেও ওই চিকিৎসক এর বিপক্ষে কথা বলতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। চিকিৎসকের কথা উল্লেখ করে তসলিমা লিখেছেন, ‘চিকিৎসক তাঁকে বলেছিলেন, ফিক্স না হলে কিন্তু আবার অপারেশন করতে হবে, আবার ওই হিপ রিপ্লেসমেন্টেই যেতে হবে।’

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর ফিক্সেশন করা হবে বলেই কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক আবারও হিপ রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে সেই একই কথা বলেন। রিপ্লেসমেন্টের পরদিনই তসলিমা হেঁটে বাড়ি চলে যেতে পারবেন বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। এ অবস্থায় দ্বিতীয় কোনো চিকিৎসকের মতামত নেওয়া যায় কি না, তার চেষ্টাও করেছিলেন তসলিমা নাসরিন। হাসপাতালে তাঁর পরিচিত দুজন চিকিৎসক ছিলেন। তাদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরাও ওই চিকিৎসকের উপদেশ মেনে নিতে বলেন। কারণ, ওই চিকিৎসক ‘অনেক বড় সার্জন’ বলেও পোস্টে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশি এই লেখক।

অস্ত্রোপচারের পর তসলিমা নাসরিন ঘটনা তলিয়ে দেখার পর আসল সত্যটা বুঝতে পারেন বলে লেখায় উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হিপ জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা, বছরের পর বছর হাঁটতে বা চলতে ফিরতে পারে না, হিপ জয়েন্ট যাদের স্টিফ হয়ে গেছে জয়েন্টের রোগে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে টিউমার বা ক্যানসার তাদের- সেই অতি বয়স্ক মানুষদের, টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হয়, যাতে কিছুদিন জয়েন্টের যন্ত্রণা কমিয়ে হাঁটাচলা করতে পারে।’

তসলিমা নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করা, সাঁতার কাটা কর্মঠ একজন মানুষ। তাঁর ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ফাইব্রোসিস এসব কিছু নেই। অথচ সেই তাঁকে অস্ত্রোপচারের পর সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, চিন্তার কিছু নেই, তিনি হাঁটতে পারবেন। তবে ফাঁকে এ-ও বলে দেওয়া হয়েছে, তিনি কমোডে বসতে পারবেন না। উবু হতে পারবেন না। পায়ের ওপর পা রাখতে পারবেন না। ওজন বহন করতে পারবেন না। স্বাভাবিক চেয়ারে বসতে পারবেন না। তসলিমা নাসরিন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, এ কেমন জীবন তাঁকে দেওয়া হলো, এই পঙ্গু জীবন পেতে তো তিনি বেসরকারি হাসপাতালে লাখ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে যাননি।

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, তিনি যখন বুঝতে পারেন চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে অন্যায় করেছেন, ভয় পাইয়ে দিয়ে হিপ কেটে নিয়েছেন, তখন তার ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। চিকিৎসক উত্তরে জানিয়েছিলেন, তাঁর নাকি মনে হয়েছিল ফিক্সেশন কাজ করবে না। ফিক্সড বা জোড়া না লাগলে আবার অস্ত্রোপচার করতে হতো, সেই ঝামেলায় না গিয়ে পরে যেটা করতে হবে তা আগেই করে দিয়েছিলেন।

ওই চিকিৎসক তসলিমাকে উপদেশ দিয়েছেন, তিনি যাতে একটু ‘পজিটিভ’ হন। একথা উল্লেখ করে তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পঙ্গুজীবন নিয়ে ঠিক কী করে পজিটিভ হওয়া যায়, সেটা বুঝতে পারছি না।’

আরেক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘যে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেই সমস্যার ট্রিটমেন্ট না করে ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে আমার শরীরের সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে।’

তসলিমা নাসরিনের ভুল চিকিৎসার বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করছেন, এ ঘটনার প্রতিকার চাচ্ছেন। এই লেখিকা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন, সেই শুভকামনাও জানিয়েছেন অনেকে।

গতকাল শনিবার হোম সুইট হোম লিখে আরেক পোস্টে তসলিমা নাসরিন বিড়ালের সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। তবে আজ রোববার আবার অন্য আরেক পোস্টে লিখেছেন, শনিবার দুপুর বেলায় কিছু লোক এসে হাত-পা, চোখ বেঁধে অন্ধকারে নিয়ে খুলি খুলে মস্তিষ্ক বের করে নিয়েছে। হৃদপিণ্ড বের করে নিয়েছে। তবে তিনি বেঁচে আছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখনো চিৎকার করতে পারছি, বলতে পারছি, কার কী ক্ষতি করেছিলাম?’

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ২২, ২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ