Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

এখন রিকশাওয়ালাও মোটা চাল খায় না, মোটা চাল এখন গরুকে খাওয়ানো হয় (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:শওকত হোসেন।

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘সারা দেশে আমন ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। এ সময়ে সাধারণত দেশে চালের দাম কম থাকে। তবে এবার সব ধরনের চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই সরু ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। খুচরায় মোটা চালের কেজি আবারও ৪৮ টাকায় পৌঁছে গেছে। এ হিসাব খোদ সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। তবে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বড় আবাসিক এলাকাগুলোতে ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না।’

অবশ্য মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণটা তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত রোববারই বলে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘এখন রিকশাওয়ালাও মোটা চাল খায় না, মোটা চাল এখন গরুকে খাওয়ানো হয়। বাংলাদেশে এখন আর কুঁড়েঘর নেই, কুঁড়েঘর শুধু কবিতায় আছে। আজ সেই কুঁড়েঘরে লাকড়ি, গরু রাখা হয়, কিন্তু মানুষ থাকে না।’

সুতরাং মোটা চালের দাম বাড়া নিয়ে আর কেউ উচ্চবাচ্য করবেন বলেই ধরে নিয়েছিলাম। তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর এ নিয়ে কথা যত কম বলা যায়, ততই আসলে ভালো। তারপরও চালের দাম নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এর কারণ অবশ্য তথ্যমন্ত্রী নন, কৃষিমন্ত্রী।

গত মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। বিষয় হচ্ছে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডি-৮–এর বৈঠক। এ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক অনলাইনে এক প্রেস ব্রিফিং করেছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সে কথাই বলা হয়েছে। চোখ আটকে গেল বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশে এসে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চালের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চালের উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। বাজারে চালের পর্যাপ্ততা রয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে। গমের দাম বাড়লে চালেরও দাম বাড়ে। দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যানিমেল ফিড হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। এসব বিষয় ও কিছুটা মুদ্রাস্ফীতির কারণে চালের দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু বাজারে গেলে চাল পাওয়া যায় না বা মানুষ কিনতে পারে না, এমন পরিস্থিতি নেই। এ মুহূর্তে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই।’

এ বক্তব্যটুকু পড়ে মনে হলো অর্থনীতিই আসলে নতুন করে পড়ার সময় এসেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে চালের দাম বেশি—এটি একটি নতুন আবিষ্কার। কেননা, অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় আরেকটি নির্দিষ্ট সময়ে সামগ্রিক দাম স্তরের যে পরিবর্তন, সেটাই মূল্যস্ফীতি। আর মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় অর্থনীতির নীরব ঘাতক। আয় না বাড়লেও আগের চেয়ে একই পণ্য কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় হয় বলে তাকে বাধ্যতামূলক করও বলা হয়। অর্থনীতিবিদ মিলটন ফ্রিডম্যান বলেছিলেন, প্রতিনিধিত্ব নেই, এমন করের নামই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি।

দেশে সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ হয়েছে ২০১৬ সালে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত এ জরিপ অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে একটি পরিবারের মোট মাসিক আয়ের ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশ খরচ হয় খাদ্য কিনতে। আর গরিব বা অতি গরিব যাঁরা, তাঁদের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্তই ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। খাদ্যপণ্যে চালের পরিমাণই বেশি। সুতরাং চালের দাম বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির প্রধান শিকার হন গরিব মানুষেরাই।

আবার মূল্যস্ফীতি গণনার ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্যের অংশ সবচেয়ে বেশি—৫৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। সুতরাং খাদ্য, বিশেষ করে চালের দাম বাড়লেই মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। সরকারি হিসাবে, দেশে এখন মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কয়েক মাস ধরেই এ হার বাড়ছে। অতএব মূল্যস্ফীতি কিছু বেশি, আর এ কারণে চালের দাম বেশি—কৃষিমন্ত্রীর এ বক্তব্য যথেষ্ট গোলমেলে। বরং উল্টো। চালের দাম বেড়েছে বলেই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি। আর জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বলে খাদ্যবহির্ভূত সূচকেও মূল্যস্ফীতি বেশি। কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য মানলে মূল্যস্ফীতির সংজ্ঞাই পালটে দিতে হবে বা নতুন করে শিখতে হবে অর্থনীতি।

তবে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষ অংশটুকু পড়ে কষ্ট হলো অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জন্য। কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, বাজারে চাল পাওয়া যাচ্ছে, সবাই কিনতে পারছে এবং দেশে খাদ্যসংকট নেই। অথচ ৩০ বছর ধরে অমর্ত্য সেন বারবার বলে আসছেন, বাজারে চাল পাওয়া যাওয়াই শেষ কথা নয়। সেই চাল কেনার সক্ষমতা আছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ কারণেই স্বত্বাধিকার বিষয়টিকেই তিনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। অমর্ত্য সেন লিখেছিলেন, ‘বাজারে খাদ্যদ্রব্য কেনাবেচা হয়। যাঁরা খুবই গরিব, তাঁদের আয়ের বেশির ভাগই চলে যায় খাদ্যদ্রব্য কিনতে। মানুষের খিদে যে মেটে না, অনেক সময়েই তার কারণ আয়ের অভাব।’ অমর্ত্য সেন এভাবে শুরু করেছিলেন। আর এখন সব অর্থনীতিবিদই বলেন, দুর্ভিক্ষের কারণ খাদ্যসংকট নয়, বরং বণ্টনের সমস্যাই বড় কারণ। মূল কথাই হচ্ছে স্বত্বাধিকার।

অমর্ত্য সেন এত বছর ধরে বলে আসছেন, কিন্তু লাভ তো হলো না। কেননা, এখনো খাদ্যসংকট নেই—এর মধ্যেই আটকে আছেন আমাদের মন্ত্রীরা। অথচ করোনার দুই বছরে কত মানুষের আয় কমেছে, কত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন, কত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে—তার তো কোনো হিসাবই নেই। তবে এর কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় টিসিবির ট্রাকের সামনে গেলে। মন্ত্রীরা কি যাবেন সেখানে?

‘ভালো আছো, গরিব মানুষ?’ নামে তারাপদ রায়ের একটি কবিতা আছে। সেই কবিতা বরং উপসংহার হিসেবে পড়ি—

অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে,
গরিব মানুষ,
এবার তোমার হিল্লে হয়ে গেল।
গরিব মানুষ,
তোমার কি খিদে পায়, কত ক্যালরির খিদে পায়,
খিদে পেলে তোমার কি খুব কষ্ট হয়?
তোমার কি ছেলেমেয়ে আছে,
তারা কি ইস্কুলে যায়?
তারা কি ওষুধ পায় অসুখে-বিসুখে?
তাদের জননী কি তোমার সমান ভাত খায়,
সমান ক্যালরির?
অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে,
গরিব মানুষ,
এবার তোমার দিন এসে গেছে, ক্যালেন্ডার দ্যাখো,
তোমার ঝুপড়িতে কিংবা কুঁড়েঘরে হয়তো মানাবে না।
তবু,
অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে,
মন্ত্রিসভা, সচিব ও সাংসদ
সবাই তোমায় খোঁজে, খুঁজে হয়রান।
তুমি কী রকম আছো, ভালো আছো ,
গরিব মানুষ?

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ১৪, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ