Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

এলিভেন মিনিটস-পাওলো কোয়েলহো-পর্ব-দুই।

Share on Facebook

পাওলো কোয়েলহো এর এলেভেন মিনিটস
অনুবাদে: ইললু

দ্বিতীয় অধ্যায়

মারিয়ার বয়স এখন উনিশ-স্কুলের পড়া শেষ করে চাকরী নিল এক পর্দা তৈরীর দোকানে,চাকরী নেওয়ার কদিন পরেই দোকানের মালিক প্রেম নিবেদন করলো।এর মধ্যেই সে রপ্ত করে নিয়েছে কি ভাবে ব্যাবহার করা যায় পুরুষ মানুষদের,পুরোনো বোকা মেয়েটা সে আর নয়।ঘুরে বেড়ায় মালিকের আশেপাশে,যখন তখন ঢলাঢলি করে তার সাথে,তবে ওটুকুই,তার বেশী নয়-কোন ভাবেই ছোঁয়াছুয়ির এলাকায় নয়।মারিয়া সব সময়ই সচেতন ছিল তার সৌন্দর্য নিয়ে,হায়রে সৌন্দর্য,অসুন্দরী মেয়েদের স্থানটা কোথায় এ জগতে?তার বান্ধবীদের মধ্যে কজন ছিল যাদের হয়তো কুৎসিত বলা যাবে না,তবে চোখে পড়ার মতও নয়।কেউ একটা আমন্ত্রন জানায় না তাদের অনুষ্ঠানে-তাদের জীবনে ভালবাসার স্বপ্নটাই সব,সেটা হারাতে রাজী নয় তারা।প্রত্যাখান ভেঙ্গে দেয় যদিও তাদের মনটা প্রায়ই-তবে নিজেদের সাজিয়ে নিয়ে তারা আবার অপেক্ষা করে থাকে ভালবাসার নতুন দিনের জন্যে।যদিও তারা অনেক স্বর্নিভর,নিজেদের মধ্যে অনেকটা খুঁজে নেয় নিজেকে,কিন্ত মারিয়ার পৃথিবীটা হয়তো অসহ্য তাদের কাছে।

মারিয়ার বেশ অহংকার ছিল তার সৌন্দর্য নিয়ে-মা এর অন্যান্য কোন কথা না শুনলেও,মায়ের একটা কথায় বিশ্বাস ছিল তার, “সৌন্দর্য ক্ষনিকের-চিরন্তন নয়,আসে কদিনের জন্যে,তবে ছুটে যায় চিরদিনের জন্যে”।সব কিছু মনে রেখেই মারিয়া ব্যাবহার করা আরম্ভ করলো তার মালিককে,যতটুকু সম্ভব-বেতনটা বাড়িয়ে নিল,এটা ওটা উপকার যা আদায় করা যায়(জানা নেই তার সৌন্দর্যের স্রোত কতদিন ভাসবে লোকটা)।

মালিকের মনে মনে আশা ছিল আজ হউক কাল হউক মারিয়া দ্বিধা করবে না শরীর বিলিয়ে দিতে-বেতন বাড়ানো,নানান উপঢৌকন দেয়ায় আপত্তি কোন ছিল না তার,ক্ষন কয়েকের যৌনমিলনের আশায়।দুটো বছর মারিয়া চাকরী করে গেল,কঠোর এক শ্রমিকের মত,দিনের আলো ছাড়িয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে।মা বাবাকে সংসারে সাহায্য করাতেও কার্পন্য ছিল না তার।ঠিক করলো-কিছুটা বাঁচানো পয়সা দিয়ে ছুটি কাটাতে যাবে তার স্বপ্নের শহরটায়,টিভি,সিনেমায় দেখা অভিনেতা অভিনেত্রীদের এলাকায়ঃরিও ডি জেনোরোয়।

মালিক প্রস্তাব দিল সেও যেতে চায়-সমস্ত খরচ বহন করবে,আর তা ছাড়া রিও ডি জেনোরোর মত ভয়ানক জায়গায় মারিয়ার মত একটা মেয়ের একা যাওয়াটাও ঠিক হবে না।মারিয়ার মা এর একটাই শর্ত ছিল শুধু-আর যাই করুক থাকবে তার এক আত্মীয়ের বাসায় জুডোতে যার পারদর্শীতায় বেশ নামডাক আছে।

কিন্ত মারিয়া সেটা চায় না কজনের অযথা নাক গলানোয়,চায় না সম্পুর্ন স্বাধীনতার সুযোগটা হারাতে।সে চায় সম্পুর্ন স্বাধীনতায়-সমুদ্রে সাঁতার কাটতে,অজানা পথিকের সাথে গল্পে হাসিতে সময় কাটাতে,দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা দেখা,এমনও তো হতে পারে কোন এক স্বপ্নের রাজকুমার এসে তাকে কোলে করে নিয়ে যাবে তার স্বপ্নের দেশটায়।

“ভেবে বেশ ভালই লাগছে,ছুটির দিনগুলোর কথা”,একটা আমেজ নিয়ে ভাবছিল মারিয়া।
মালিককে বুঝিয়ে বললো,“ছুটি ফুরোলেই,আমি তো ফিরে আসবো কাজে”।তা ছাড়া কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতের সস্তা হোটেলগুলোতে তার মালিকের মত সম্মানিত ব্যাক্তির একটুকুও ভাল লাগবে না,আর মানাবেও না।

কথাগুলো শুনে মালিকের মনটা যদিও বেশ কিছুটা খারাপ ছিল প্রথম দিকে,কিছুটা বাঁধা দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজী হলো মারিয়ার প্রস্তাবে।এটাও মিথ্যে করে বানিয়ে বললো মারিয়া-ফিরে আসার পর হবে তাদের বিয়েটাও,মালিকের চোখমুখের উজ্জলতায় যা লেখা ছিল-সেটাই হয়তো ভালবাসা।

দুই দিন বাসে কাটিয়ে মারিয়া পৌঁছালো রিও ডি জেনোরের কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতে,
পৌছানার পর পরই গোছানো সুটকেস থেকে বিকিনিটা কোন রকমে পরেই ছুটে গেল সমুদ্রে।প্রথম সমুদ্র দেখা মারিয়ার,অবাক চোখে দেখা অজানা জানাগুলো।সমুদ্রের সোচ্চার সুর,জলের ফেনায় লুকোনো অজানা ছবিগুলো,যদিও সমুদ্র সৈকত দেয় নি তাকে যৌনমিলনের আনন্দ,বলে দেয়নি তাকে তার ঘর সংসারের খবরটা,তবে নিয়ে গেছে তাকে অভিযান স্বপ্নের নতুন সৈকতে।মারিয়া বলে যাচ্ছিল জলদেবী ইমানজিয়ের সাথে মনের কথাগুলো,চারপাশের কেউ জানেনি,জানতে পারেনি দেবী ইমানজিয়ের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎকারটা।মনে মনে ঠিক করলো মারিয়া আর ফিরে যাবে না পুরোনো কাজে,যদিও খারাপ লাগবে হারাতে তার কাজের বন্ধুদের।সমুদ্র স্নান শেষ করে ফিরে আসার সময়,দুজন ছেলে তাকে আমন্রন জানালো তাদের সাথে ডাবের জল খাওয়ার জন্যে।

সুযোগ এলো যখন কোন কথা ছিল না মারিয়া্র ঠোঁটে-সাহস হারালো আবার স্বপ্নগুলোকে কাছে টেনে আনায়।নিজের কাছে কোন ব্যাখ্যা ছিল না তার অদ্ভুত এই ব্যাবহারের,সমুদ্রের ধারে একা বসে থাকলো সূর্যাস্তের মাদকীয় রং এর খেলা দেখার আশায়।এবার এক বিদেশী লোক নিয়ে এলো ডাবের পানি,বোঝা যাচ্ছিল যদিও পর্তুগীজ ভাষা তার অজানা,তবু আকারে ইঙ্গিতে সে বোঝানোর চেষ্টা করছিল কথাগুলো,বেশীর ভাগটাই ছিল মারিয়ার অবোধগম্য।কিছুক্ষন পর লোকটা পকেট থেকে ছোট একটা বই দেখে বলা আরম্ভ করলো,“তুমি সুন্দরী,তুমি অপূর্ব সুন্দরী”।

একটু হাসলো মারিয়া-এই কি তার স্বপ্নের রাজকুমার,যদি ভাষাটা অন্তরায় না হতো, কথা সাজানো যেত তার মনের কথাগুলো,বদলানো যেত স্বপ্নের সুর।লোকটা তার হাতের অনুবাদের বই ঘেটে ঘেটে বললো,“রাতের খাবার-আজকে?সময় আছে তোমার”।

“সুইজারল্যান্ড”।

“আমি”।

কথাগুলো মারিয়ার কাছে মনে হচ্ছিল স্বর্গ থেকে ভেসে আসা কোন এক দেবতার কথা অদ্ভুত এক আমেজে ভঁরা।
“কাজ?ডলার”?
সুইজারল্যান্ড বলে কোন রেশ্তোরার নাম মারিয়ার জানা ছিল না।
মারিয়া সাধ্যমত বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলো,“সে কাজ করে,কাজের দরকার নেই তার।আর ডলার কেনার কোন দরকারও নেই”।

বোঝাই যাচ্ছিল,মারিয়ার কোন কথাই বোধগম্য হচ্ছিল না লোকটার,বেশ অধৈর্যই হয়ে পড়ছিল সে,দুজনে দুজনার কাছে ছিল অবোধ্য দুই চরিত্র।কিছুক্ষন চোখাচোখি,একটু হাসাহাসি তার পর লোকটা একজন দোভাষীকে জোগাড় করে নিয়ে এলো।দোভাষী মারিয়াকে বুঝিয়ে বললো,লোকটার বাড়ী সুইজারল্যান্ড(সুইজারল্যান্ড একটা দেশ,কোন রেস্তোরা না),তাকে রাতের খাবারের জন্যে আমন্ত্রন জানাচ্ছে,সুইজারল্যান্ডে সম্ভাব্য চাকরী দেয়া নিয়ে আলোচনা করতে চায় তার সাথে।

দোভাষী,পাশের একটা নামকরা হোটেলে বিদেশীদের জন্যে দোভাষী হিসেবে কাজ করে, এটাও বললো সে কোন সন্দেহ নেই,এটা মারিয়ার জন্যে একটা বিশেষ সুযোগ,“আমি হলে এক কথায় লুফে নিতাম”।

দোভাষী বললো,লোকটার কাজ হলো চলচিত্রের জন্যে নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা,মারিয়াকে সে সুইজারল্যাণ্ডে প্রতিপত্তিশালী মানুষদের আলাপ করিয়ে দিতে সাহায্য করবে-সুইজারল্যান্ডের সুস্বাদু পনির আর চকলেটের কথাটাও মনে করিয়ে দিতে সে ভুলে যায় নি।

অভিনয়ের অভিজ্ঞতা বলতে মারিয়া জানে শুধু গীর্জার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দু একটা কথা বলায়।বাসে ঠিকমত ঘুম হয়নি,সমুদ্র যদিও নিয়ে এসেছে মনে নতুন উত্তেজনা,তবে কত খাওয়া যায় শুধু পাউরুটি।সে জানে পুরূষদের প্রতিজ্ঞার কোন দাম নেই আর এই কথাগুলো তো শুধু কথা,এর কতটুকু আছে বাস্তবতায় কেই বা জানে।

তবু মারিয়া ধরে নিল এটা “মা মেরীর” প্রেরিত আর্শীবাদ,আর ভাল একটা রেস্তোরায় খাওয়ার সুযোগ ছাড়ার কোন মানে হয় না-বাড়িতে ফিরে গিয়ে অন্ততঃ গল্প বলার কিছু একটা থাকবে,আমন্ত্রন্টা গ্রহন করলো মারিয়া।

একটাই সমস্যা ছিল-নামীদামী রেস্তোরায় বসে খাবার মত কোন পোষাক মারিয়ার ছিল না।কিন্ত কোন মেয়েমানুষের পক্ষে এটা কি বলা সম্ভব(মেয়েরা বলতে পারে তার স্বামীর প্রতারনা তবে পোষাকের অভাবের কথা না),তবে লজ্জা কি,ওরা তো কেউ তাকে চেনে না।অনেক ভেবে নিয়ে মারিয়া বললো,“আমি সদ্য এসেছি উত্তরের একটা শহর থেকে, ভাল রেস্তোরায় যাবার মত কাপড়চোপড় আমার নেই তেমন একটা”।

মারিয়ার হোটেলের ঠিকানাটা জেনে নিয়ে,দোভাষীর মাধম্যে লোকটা বললো,চিন্তা করার কোন কারণ নেই,সবকিছুর বন্দোবস্ত হবে।সেদিন সন্ধ্যায় মারিয়া পেল এমন একটা পোশাক যা ছিল তার স্বপ্নের বাইরে-সাথে ছিল আবার সাজানো জুতো,পোষাকটার দামই হয়তো তার সারা বছরের বেতনের সমান।

এটাই তার ছোটবেলার স্বপ্নে দেখা দেশটা-ব্রাজিলের ছোট্ট শহর সেরাতোয় বসে দেখা অজানা স্বপ্ন রাজ্যটা।তার সেরাতোয় ফিরে যাওয়ার কিইবা আছে,ঐ দৈনন্দিনতা,এটা তো রাজকুমারী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।অনেকটা রুপকথার “সিনড্রেলা” গল্পটার মত একটা অজানা কেউ তাকে জুতো, পোষাক সবকিছু এনে দিয়েছে!যথাযথ প্রসাধনের জিনিষপত্র ছিল না,হোটেলের এক কর্মচারী সেটাও জোগাড় করে দিল।এটাও মারিয়াকে বুঝিয়ে বললো,রিও ডি জেনোরোর সমুদ্রধারে সবাই যেমন ছিনতাইকারী না,ঠিক তেমনি সব বিদেশি মানুষও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সর্তকতার বানী মারিয়ার কাছে তখন অযথা কটা কথা,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে ছুটে গেল বিদেশীর হোটেলটার দিকে।মনে শুধু একটাই দুঃখ ছিল তার,একটা ক্যামেরা আনা হয়নি,যদি ছবিগুলো তুলে রাখতে পারতো,বড়াই করে দেখানো যেত সবাইকে।

বিদেশী লোকটার হোটেলে-দোভাষী জানালো সে যেতে পারছে না রাতের খাবারে।তাকে এটাও বুঝিয়ে বললো,“শোন ভাষাটা কোন ব্যাপারই না এখানে,তোমার সাথে তার মেলামেশার স্বচ্ছন্দতা হলোই প্রধান”।
“ও যদি আমার কথা বুঝতেই না পারে,তবে স্বচ্ছন্দতা আসবে কেমন করে”?
“শোন এজন্যেই বলে রাখছি,বেশী কথা বলার দরকার নেই,ভাবভঙ্গী দিয়েই চালিয়ে নিবে”।
দেহভঙ্গী দিয়ে কি ভাবে কথা বলা যায় জানা ছিল না তার,তাদের ছোট্ট শহরটায় কথাটাই প্রধান,প্রশ্ন উত্তর এভাবেই তো মানুষকে চেনা যায়,বোঝা যায়।কিন্ত ম্যালিসনের(দোভাষী)
মতে শুধু রিও ডি জেনোরো না-পৃথিবীর অনেক জায়গায় শরীরের ভাষা দিয়ে প্রকাশ করে মনের ভাষা।

“তা ছাড়া,সব কিছু তোমার বোঝার দরকার নেই,জেনে রাখ লোকটা বিপত্নীক,ছেলেমেয়ে নাই,জেনেভায় নাইট ক্লাবের ব্যাবসা আছে,বেশ অবস্থাপন্ন,এটাই তো যথেষ্ট।ব্রাজিলের মেয়ে পচ্ছন্দ লোকটার,যদিও আমি তাকে বলেছি তোমার হয়তো আগ্রহ প্রকাশ নাও হতে পারে, তোমাকে বড়ই পচ্ছন্দ তার,তোমার বিকিনি পরা চেহারাটা মুগ্ধ করেছে, মানুষটাকে”।

একটু থেমে নিয়ে বললো দোভাষী ম্যালিসন,“আরেকটা কথা বলি,মনে হয় প্রেমিক খোঁজার জন্যে ঐ বিকিনি চলবে না,এই সুইস লোকটা ছাড়া আর কারও পচ্ছন্দ হবে না ঐ বিকিনি”।

মারিয়া ভাব দেখালো যেন সে শোনেনিই দোভাষীর কথা।
ম্যালিসন বললো, “দেখ আমার মনে হয় লোকটা তোমাকে শুধু এক রাতের খেলার জন্যে খুঁজছে না,ওর ধারণা নাইট ক্লাবে তোমাকে নিয়ে যেতে পারলে তুমি হবে সেখানে বিশেষ আর্কষন।
যদিও তোমাকে নাচ বা গান করতে সে দেখেনি,নাচ,গান না জানলেও তুমি শিখে নিতে পারবে।তোমার আছে সৌন্দয্য,ওটা তো শিখিয়ে দেওয়া যায় না,ওটা তো ঈশ্বরের দেয়া।
জান, ইউরোপের বেশীর ভাগ লোকজন ভাবে ব্রাজিলিয়ানের মেয়েরা সবাই বেশ কামুক আর সামবা নাচে পারদর্শী।শোন যদি লোকটা সত্যি তোমাকে নিয়ে যেতে চায়,তবে অবশ্যই একটা চুক্তি সই করে নেবে,আর সইটা দেখিয়ে নিও সুইস এমব্যাসীতে।কালকেও আমাকে পাবে হোটেলের সামনে যদি কোন কিছু আলাপ পরামর্শ করতে চাও,যদি কোন দরকার থাকে”।

সুইস লোকটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে ট্যাক্সি অপেক্ষা করছে।
দোভাষী বলে দিল মারিয়াকে, “আর যদি ওর অন্য কোন ইচ্ছা থাকে,তিনশ ডলারের নীচে রাজী হবে না,একটা ডলারও কম নিবে না”।

কোন কিছু বলার আগে ট্যাক্সি আরম্ভ করলো রেস্তোরার দিকে-মারিয়া মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছিল কথাগুলো,
“কাজ?ডলার।আমি ব্রাজিলের বিশেষ তারকা”।

মারিয়া ভাবছিল একরাত্রির যৌন সহবাসে-তিনশ ডলার!সেটাতো মণিমুক্তা খুঁজে পাওয়া!
যন্রনা নেই,ভালবাসার কান্না নেই,খুব একটা কঠিন হবে না শরীরের খেলা ঐ মানুষটার সাথে।আর যদি বিয়ে হয় শুধু সে নয় তার বাবা মা ও আনন্দে কাটাবে বাকী জীবনটা, হারাবার কিই বা আছে?মানুষটা এমনিতেই বুড়ো-আর কদিনই বা বাঁচবে,শুনেছে সুইজারল্যান্ডের লোকজনের পয়সা আছে- হয়তো মেয়ে মানুষের অভাব সেখানে।

খাবারের টেবিলে খুব একটা কথাবার্তা হচ্ছিল না-মাঝে মাঝে একটু হাসি,মাঝে মাঝে একটু ছোঁয়া।বুঝতে পারলো মারিয়া “দেহভঙ্গী” বলতে কি বোঝাতে চেয়েছিল ম্যালিসন।

ছবির একটা এলবাম দেখানো আরম্ভ করলো লোকটা,বিকিনি পরা মেয়েদের ছবি(তবে বিকিনিগুলো তার মত না,শরীরের সবকিছু খুলে দেখানো অনেকটা),খবরের কাগজের ছেঁড়া পাতা,লিফলেট,শুধু “ব্রাজিল” কথাটা ছাড়া অন্য কিছুই বোধগম্য হয় নি মারিয়ার,যদিও বানানটা ছিল, “ব” না “ভ” দিয়ে লেখা।বেশ মদ খেল মারিয়া,যদিও এমনটা কোনদিন করেনি সে,তবে এটাও ঠিক এ রকম তিনশ ডলার উর্পাজনের সুযোগ ও হয়নি তার।সুইস মানুষটার ব্যাবহার ছিল সত্যিই এক ভদ্রলোকের মত,কোন অশোভনীয় আচরন করেনি কোন সময়।ভাবে ভঙ্গীতে বললো মারিয়া-সে ক্লান্ত আর পরের দিন দেখা হবে তাদের সমুদ্র সৈকতে,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টাও দেখিয়ে দিল।

ফিরে গিয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েনি মারিয়া-তার মনে হলো সবটুকুই একটা স্বপ্ন,ঘুমের ঘোরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নিল কিছু সময়।চেয়ারের ওপর পড়ে থাকা,পোশাক জুতোটা তাকে মনে করিয়ে দিল-ঘটনার বাস্তবতা।

এটা মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়া,যে দিন সুইস মানুষটার দেখাঃ

“আমার চার পাশের পরিস্থিতিটা আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে,একটা ভুল করতে যাচ্ছি,একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি হয়তো,আমি।জানি না আমার ভাগ্য-আমার পৃথিবী কি বলতে চায় আমাকে?
আমার পৃথিবী কি চায় না আমি একটা ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাই জীবনে।আমার ভাগ্য কি আমাকে ঠেলে দিতে চায় আমার পুরোনোয়,যেন ফিরে যাই হতাশায়।

প্রথম ভুলটা তো করেছি এগার বছর বয়সে,উপেক্ষা করা,আমার প্রথম পচ্ছন্দের ছেলেটা যখন একটা পেন্সিল চাওয়ার নামে ভালবাসার হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছিল।আমি বুঝতে পেরেছি দ্বিতীয় সুযোগ জীবনে তো আসে না,ভাগ্য যা দেয় সেটা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।কোন সন্দেহ নেই তাতে বিপদ আছে অনেক,কিন্ত সেটা আমার দুই দিনের বাস যাত্রায় দুর্ঘটনা,ছাড়িয়ে আমাকে রিও ডি জেনোরো আনার চেয়ে হয়তো বা কম।জীবনে বিশ্বাস ছাড়া চলা সম্ভব নয়,কোথাও না কোথাও কার উপর আস্থা রাখতেই হবে”।

০০০০০

দেখা হলো মারিয়ার-পরের দিন সমুদ্র সৈকতে দোভাষী ম্যালিসন,সাথে সুইস ভদ্রলোক।
পরামর্শদাতার কথামত মারিয়া জানিয়ে দিল সুইস এমব্যাসীর দেওয়া চুক্তিপত্র থাকলে তার কোন আপত্তি নেই সুইস ভদ্রলোকের প্রস্তাবে।বিদেশী সুইসের কাছে এটা অভাবনীয় কিছু না-সুইস মেয়েদের তো আর সামবা নাচে বিশেষ কোন দক্ষতা নেই,সুইস এমব্যাসী থেকে কাগজ পেতে কোন ঝামেলা হবে না।মারিয়ার পরামর্শদাতা ম্যালিসন-বলে দিল চুক্তিপত্র সই হওয়ার পর,চুক্তির ৫০০ ডলারের তিরিশ ভাগ তার প্রাপ্য।
“মনে রেখ এটা তোমার এক সপ্তাহের বেতন,এক সপ্তাহ বুঝলে তো?এখন থেকে তুমি প্রতি সপ্তাহে ৫০০ ডলার পাবে,আমি শুধু এই প্রথম সপ্তাহের বেতনের তিরিশ ভাগ নিলাম”।

মারিয়ার কাছে ভ্রমণ-দূরে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারটা ছিল একটা স্বপ্ন,আর স্বপ্ন দেখতে কে না ভালবাসে।স্বপ্ন-কল্পনা বাস্তবতায় টেনে আনায় যন্ত্রনা অনেক,দোষ দেওয়া যায় ভাগ্যকে, পারির্পাশ্বতাকে।চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্বপ্ন,কোনদিন ভাবেনি যা সামনে আসছে তার।বুঝে উঠতে পারছিল না এটা কি উত্থান,না পতন তাকিয়ে আছে,তার পুরোনো চেনা সব ফেলে দিয়ে সে ছুটে যাবে কোন এক অজানায়।কেন যে ভাগ্য-কেন যে “মা মেরী” তাকে ছুঁড়ে দিল এতদূরে।

নিজের মনকে সান্তনা দিল মারিয়া,তেমন একটা অসুবিধা নেই,সে তো যে কোন সময় মন বদলাতে পারে,এটা তো একটা খেলার মত,অন্ততঃ বাড়ী ফিরে বলতে পারবে বান্ধবীদের তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা।এমন কিছু না,হাজারখানেক কিলোমিটার দূরে তার বাড়ী আর তার সাথে তো ৩৫০ ডলার তো আছেই।সকাল বেলায় ঐ টাকাটা নিয়ে সে যদি চলেই যায় তাকে খুঁজে বের করা কোন ভাবেই সম্ভব বা হবে না কারও।এমব্যাসীতে চুক্তি সই করার পর মারিয়া বিকেলটা একলাই কাটালো সমুদ্রধারে-ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটে বেড়াচ্ছিল বালুর খেলায়,কজন আবার ভলিবল খেলায় ব্যাস্ত,চারপাশে বেশ ভিখারীর দল ছড়ানো ছিটানো,দল বেঁধে আড্ডার মানুষেরা,ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী কুটীরশিল্পের হকারে(যদিও সবকিছু তৈরী করা চীনে),তাস খেলায় ব্যাস্ত অবসরপ্রাপ্ত বুড়োরা সমুদ্র সৈকতের শেষ দিকটায়।

দু দিন বাসে চেপে মারিয়া রিও ডি জেনোরোতে এসেছে,নাম করা হোটেলে রাত কাটিয়েছে,এমব্যাসীতে গিয়ে কাগজপত্র সই করেছে,নতুন পোষাক,নতুন জুতা উপহার হিসেবেও পেয়েছে,কিন্ত এটা কেউ জানে না,কাউকে জানাতে পারেনি সে,বাড়ীতে কারও পক্ষে সম্ভব না এটা কল্পনা করা।এখন কি হবে?

সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মারিয়া ভুগোলের জ্ঞানে হিসেব করে দেখলো,সোজা চলে গেলে সে পৌছাবে হয়তো আফ্রিকায়,সিংহ,জঙ্গল ভরা গরিলা যেখানে।একটু বা দিকে গেলে পৌছে যাবে ইউরোপে,আইফেল টাওয়ার,ইউরো ডিসনী,পিসার হেলান টাওয়ারের দিকে।হারানোর সম্ভাবনা কোথায়?আর যে কোন ব্রাজিলিয়ান মেয়ের মত মারিয়া শিখেছে সামবা,সেটা “মা” বলার আগেই।আর যখন পারবে না,না হয় ফিরেই আসবে,নতুন কিছু জানা দেখার এই সুযোগ ছেড়ে দেয়ার কোন মানে নেই!

চিন্তা করে দেখলো,তার জীবনের অনেক কিছুতেই সে “না” বলে গেছে যেখানে হয়তো বলা উচিত ছিল,“হ্যা”।এখন এই জীবন সমুদের নতুন নাবিক সে,সমুদ্রের নাবিকদের মত,তার চোখদুটো আটকে আছে অজানার না দেখা জগতটায়।“না” বলাটা তো বেশ সহজ,”হ্যা” বলে দেখতে চায় সে জীবনের অন্য দিকটা।

ব্রাজিলের ছোট্ট অজানা শহরের একটা মেয়ে,জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে যার-স্কুল,টিভির ধারাবাহিক ছাড়া আর কিছু নেই-তার কাছে এটা তো একটা বিরাট সুযোগ।মারিয়া জানে সৌন্দর্য আছে তার,তবে সেটা জীবনে কতটুকুই বা সাফল্য এনে দিতে পারে।দেখলো পাশে দাঁড়ানো বেশ কজন ছেলেমেয়ে ঠেলাঠেলি করছে,সাহস করতে পারছে না সমুদ্র স্নানের,কদিন আগের পুরোনো মারিয়া।

এখন সেই ভয়টা আর নেই তার,ইউরোপের মারিয়া কি সেই একই রকম হবে না,কেন হবে না?মনে মনে প্রার্থনা করলো সে, “মেরীর” কাছে,তার কাছে উপদেশ চাইলো,বেশ কিছুটা আশ্বস্তি এলো মনে তার।মনে কোন দ্বিধা ছিল না আর,এখন যদি ঐ সুইস ভদ্রলোক তার মনটা না বদলায়।

এতই উচ্ছাস ভরা মনটা ছিল তার,সে সুইস ভদ্রলোককে রাতের খাবারের আমন্রন জানালো।হাত দুটো ধরে তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো সে,কিন্ত বিদেশী সুইস সরে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,“সামবার রানী,তুমি সামবার রানী,যাবে সুইজারল্যান্ডে,সামনের সপ্তাহে”।
সব কিছুই ঠিক আছে,তবে “সামনের সপ্তাহে”,সেটা তো একেবারেই অসম্ভব।মারিয়া ভাবে ভঙ্গীতে বিদেশী সুইসকে বুঝিয়ে বললো-তার বাবা মা এর সাথে আলাপ আলোচনা না করে সব কিছু সেই মুহুর্তে ঠিক করা সম্ভব হবে না তার পক্ষে।বেশ খেপে গিয়ে সুইস লোকটা,হাতের সই করা চুক্তিপত্র নেড়ে নেড়ে মারিয়াকে বলে গেল একগাদা কথা।
“মনে রেখ এটা সই করা চুক্তিপত্র”।

মারিয়া ঠিক করেছিল বাড়ি ফিরে যাবে,পরামর্শদাতা ম্যালিসনের সাথে আলোচনাও করেছে সে আগে,তা ছাড়া ম্যালিসনকে তো এজন্যেই পয়সা দেওয়া তার।ম্যালিসনকে খুঁজতে গিয়ে দেখলো,ম্যালিসন তখন ব্যাস্ত বিদেশীদের সমুদ্রধারে উন্মুক্ত বক্ষ ব্রাজিলিয়ান সুন্দরী দেখানো নিয়ে,বেশ কষ্টই হলো মারিয়ার তাকে খুঁজে সব কিছু বোঝাতে।
জিজ্ঞাসা করলো, “আমি কি আমার মন বদলাতে পারি না”?
“আমার মনে নেই চুক্তিপত্রে কি লেখা আছে,তবে চুক্তিভঙ্গের জন্যে জেলে যেতে পারো তুমি,সেটা মনে রেখ”।
“আমাকে খুঁজে পাবে না কোনদিন!”

এদিকে সুইস ভদ্রলোক বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে-৫০০ ডলার,একটা দামী পোশাক,জুতো,
এমব্যাসীকে কাগজপত্রের খরচ,সবটাই কি জলে গেল,নাকি।মারিয়া বেশ জোর দিয়েই বলছিল,বাবা মা এর সাথে কথা না বলে তার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না।সব কিছু ভেবে নিয়ে সুইস লোকটা ঠিক করলো দুটো বিমানের টিকিট কিনে মারিয়ার সাথে যাবে,ছোট্ট শহরটায়।একটু হাসি, একটু মাথা নাড়াচাড়া তবে মারিয়া এটুকু বুঝলো,
অনূভূতি,মন ভোলানো আর চুক্তিপত্র কোনটাই ছেলেখেলা নয়।অবাক হওয়ার পালা ছিল ছোট্ট শহরটার মানুষদের-মারিয়ার জন্যে বিরাট গর্ব একটা,একটা বিদেশির সাথে ফিরে এসেছে, ছোট্ট শহরের মেয়েটা।সবাই জানতে পারলো,নামকরা তারকা হবে মারিয়া একজন আর সেটা ঐ বিদেশীর কল্যানেই।স্কুল বান্ধবীরা সবাই জানতে চাইলো,“ বল না,কি ভাবে,কি ভাবে ঘটলো,সব”?
“ভাগ্য,বলতে পারিস আমি হয়তো ভাগ্যবতী”!
বান্ধবীরা জানতে চাইলো রিও ডি জেনোরো এ ধরনের ঘটনা কি প্রায়ই ঘটে,যে ভাবে দেখায় টিভির ধারাবাহিকগুলোতে।নিজেকে অত নীচে নামাতে চায় নি,সে বুঝিয়ে বললো তার বিশেষত্ব আছে বলেই সম্ভব হয়েছে সবকিছু,এটা খুব একটা সহজ ব্যাপার না।বিদেশী সুইস মারিয়ার মাকে বিকিনি পরা ছবিগুলো দেখানো আরম্ভ করলো,নগ্নতার চরমে সাজানো ছবিগুলো দেখার কোন ইচ্ছা ছিল না মারিয়ার মায়ের,ফিরিয়ে দিল সাথে সাথেই।
“ওর নাম কি”?
“রজার”।
“রজারিও,আমার এক আত্মীয় ছিল,রজারিও নামে”!
বিদেশী সুইস হাসি মুখে হাততালি দিয়ে চললো কথায় কথায়,কোন কথা বোঝা সম্ভব ছিল না তার পক্ষে।
মারিয়ার বাবা মন্তব্য করলোঃ
“দেখে মনে হয় ও আমার বয়সীই হবে হয়তো”।
মারিয়ার মা তাকে বুঝিয়ে বললো মেয়ের জীবনের আনন্দে অযথা নাক গলানোটা ঠিক হবে না।মেয়েকে বললো মাঃ
“মনে রাখিস,একজন প্রতিপত্তিশালী স্বামীর সাথে বরং অসুখী হওয়া ভাল,গরীব স্বামীর সুখের চেয়ে।আর যদি সম্পুর্নই ব্যার্থ হয় সম্পর্কটা তা হলে বাসে করে সোজা ফিরে আসবি”।
একটু হেসে মাকে বুঝিয়ে বললো মারিয়া,“মা,ইউরোপ থেকে বাসে কি আসা যায়? ওতো অনেক দুরের রাস্তা,আর তা ছাড়া আমার বিয়ে করার ইচ্ছে নেই এখন,আমি চাই একজন নামকরা অভিনেত্রী হতে”।

মা এর চোখে ছিল শুধু হতাশাঃ,
“মারিয়া যখন যাওয়ার রাস্তা আছে নিশ্চয় ফিরে আসার রাস্তাও আছে।অভিনেত্রী,তোকে অনেক কবার বলেছি,সৌন্দয্যের চমক-খুব বেশী হলে তিরিশ বছর তারপর হারাবে সব।
যতদিন আছে এই রুপের বাহার,চমক ঠিকমত সাজিয়ে নিবি জীবনের সুযোগগুলো।ভালবাসার কথা বলছিস,ভালবাসা আর কিছু না,শুধু সাজানো কটা কথা।তোর বাবাকে ভালবেসে এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছি,পয়সা বদলে দেয় সবকিছু এমন কি ভালবাসাটাও”।

একটা বান্ধবীর জন্য সেটা খারাপ পরামর্শ,তবে নিঃসন্দেহে এক মায়ের তার মেয়ের জন্য ভাল উপদেশ।দু দিন পর মারিয়া ফিরে গেল,রিও ডি জেনোরোয়,তার কাজের জায়গায় মালিককে জানিয়ে দিল তার ইস্তফার কথা।দোকানের মালিক বললো,“শুনেছি,একজন নামকরা ফরাসী পরিচালক তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে প্যারিসে তার ছবির জন্যে,তোমার স্বপ্ন খোঁজার পথে বাঁধা হতে চাই না আমি।তোমার আনন্দে আমারও আনন্দ।তবে দাঁড়াও আমার একটা উপহার আছে তোমার জন্যে”।

একটা লকেট পকেট থেকে বের করে হাতে তুলে দিল তার দোকানের মালিক,
“এটা প্যারিসের এক গীর্জা থেকে আনা,তোমার বিপদে আপদে কাজে আসবে।প্যারিসের গীর্জায় যেয়ে ‘মা মেরীর’ কাছে প্রার্থনা করো,এই দেখ এর পেছনে কিছু আর্শিবাদের কথাও লেখা আছে মনে হয়”।
পড়ে দেখলো মারিয়া লেখা। “সব প্রশংসা মেরীর জন্যে,গর্ভধারণ করা যার কোন পাপ ছাড়া,আমাদের জন্যে প্রার্থনা করো তুমি,আমরা যারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি”।
“শোন সময় পেলেই এই প্রার্থনাটা করো”।
কিছুটা থেমে নিয়ে মারিয়ার পুরোনো মালিক বললো,
“তবে…যদি ফিরে আসার ইচ্ছা হয় কোনদিন,মনে রেখ আমি তোমার জন্যে অপেক্ষায় থাকবো।যদিও কোনদিন বলা হয়নি আমার, ‘ভালবাসি,ভালবাসি আমি তোমাকে’।হয়তো দেরী হয়ে যাওয়া কিছুটা তবুও আমি তোমাকে বলতে চাই কথাটা”।
এ কথাগুলো মারিয়া অনেকবার শুনেছে তার এই বাইশ বছর বয়েসে,জানে ভালবাসা কথাটা একেবারেই মুল্যহীন।ধন্যবাদ জানালো সে তার মালিককে,এটাও বললো কথাগুলো ধরে রাখবে স্মৃতির পাতায়(জীবনের চলার পথে কখন কি দরকার হবে কেই বা জানে),গালে একটা আলতো একটা চুমু দিয়ে ফিরে গেল তার যাওয়ার পথে।

পরের দিন মারিয়া ফিরে গেল রিও ডি জেনোরোতে,পার্সপোটের ব্যাবস্থা হয়ে গেল,সব কিছুই যেন বেশ সহজেই।বিদেশি সুইস কিছুটা ভাঙ্গা পর্তুগীজে,কিছুটা দেহভঙ্গীতে বললো, “বেশ বদলে গেছে ব্রাজিল,কিছুদিন আগে হলে এটা লেগে যেত কমপক্ষে মাসখানেক”।মারিয়া তার দোভাষী,পরামর্শদাতা ম্যালিসনের সাথে বেশ কিছু কাপড়চোপড়,জুতা,প্রসাধন কেনাকাটা করলো।

তাদের যাওয়ার আগের দিন রাতে তারা সবাই গেল এক নাইট ক্লাবে,মনের আনন্দে নেচে গেল মারিয়া।মারিয়ার নাচ দেখে,রজারের চোখে মুখে ছিল বেশ স্বস্তি,আনন্দের একটা চেহারা।রজারের মনে আর কোন সন্দেহ ছিল না,তার সামনে ভবিষৎ এর একজন নামকরা ক্যাবারে নর্তকী।আলো আধারী চেহারার মেয়েটার ঝকঝকে চোখ দুটো,চুলগুলো ব্রাজিলের কাল গ্রানা পাখীর রং রঙ্গিয়ে দেওয়া যেন।সুইস এমব্যাসীতে মারিয়ার কাজ করার অনুমোদন পত্রেও সময় লাগেনি,চলে গেল তারা চকলেট,ঘড়ি আর পনীরের দেশে।মনে মনে ভাবছিল মারিয়া যদি রজারকে প্রেমের মোহে যদি টেনে আনা যায় খুব একটা খারাপ হবে না,এমন কিই বা বুড়ো সে,আর তা ছাড়া টাকাপয়সাও তো আছে মন্দ না,এর বেশি কিই বা আছে তার চাওয়ার!

সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত চতুর্মাত্রিক।
তারিখঃ জুলাই ১৬, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ