প্রায় দু’দশক পর আফগানিস্তানে আবার শুরু হচ্ছে তালেবান শাসন। এর আগেই রাজধানী কাবুলের দেয়ালে থাকা নারীদের ছবি মোছা হচ্ছে।
রোববার টোলো নিউজ নামে আফগান বার্তা সংস্থার প্রধান লোৎফুল্লাহ নাজাফিজাদা একটি ছবি টুইট করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, কাবুলের একটি দেয়ালে থাকা নারীদের ছবি সাদা রঙ দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন একজন লোক।
তালেবানের হাতে আবার ক্ষমতা গেলে দেশটির নারীরা অধিকার হারাবেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
তবে রোববার তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা নারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবেন।
মুখপাত্রটি বলেন, নারীদেরকে একা বাড়ির বাইরে যেতে দেয়া হবে এবং তাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগও বহাল থাকবে।
মনে করা হচ্ছে, তালেবানকে নিয়ে সারা বিশ্বে যে উদ্বেগ রয়েছে তা অবসানের জন্যই এ বিবৃতি।
তবে ইতোমধ্যে তালেবানে দখলে চলে যাওয়া কান্দাহার থেকে খবর পাওয়া গেছে যে সেখানে ব্যাংকে কর্মরত নারীদের বলা হয়েছে, এখন থেকে তাদের জায়গায় কাজ করবে পুরুষ আত্মীয়রা।
আফগানিস্তানের অন্য জায়গা থেকেও মেয়েদের বাইরে যেতে না দেয়ার এবং বোরকা পরতে বাধ্য করার খবর এসেছে।
তালেবান মুখপাত্র আরো বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমকে অবাধে সমালোচনা করতে দেয়া হবে, তবে তারা ‘চরিত্র হননে’ লিপ্ত হতে পারবে না।
নারী-সংখ্যালঘুদের নিয়ে মালালার শঙ্কা
একুশ বছর পর তালেবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে, তখন শান্তিতে নোবেলজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, এটা তার কাছে এক বড় আঘাত হয়ে এসেছে।
রোববার এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তালেবান। এটি আমার কাছে বড় একটি আঘাত। আমি সেখানকার নারী, সংখ্যালঘু ও মানবাধিকারকর্মীদের নিয়ে খুবই শঙ্কিত।’
আফগানিস্তানের চলমান সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মালালা বলেন, ‘বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা। মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা, শরণার্থী ও আফগানদের রক্ষা করা।
২০০৮ সালে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকা অঞ্চলে তালেবানের প্রভাব নিয়ে বিবিসির উর্দু ওয়েবসাইটে নিয়মিত ব্লগ লিখতে শুরু করেন মালালা। ছদ্মনামে লেখা ব্লগে উঠে আসে শিক্ষা ও নারী অধিকারের বিরুদ্ধে তালেবানের ফতোয়ার কথা। তার এই লেখনীর জন্য ২০০৯ সালে পাকিস্তানের যুব শান্তি পুরস্কার পান তিনি। এরপর মালালা প্রকাশ্যে তালেবানের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় তালেবান।
২০১২ সালের ৯ অক্টোবর পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাসে উঠে তাকে গুলি করে তেহরিক-ই-তালিবানের সদস্যরা। মারাত্মকভাবে আহত মালালাকে নিয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্যে। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সেরে উঠেন তিনি।
মালালা সেরে উঠার পর তেহেরিক-ই-তালিবান আবার ঘোষণা দেয়, সুযোগ পেলে মালালাকে আবারও গুলি করবে তারা। মালালা ততদিনে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কাড়েন। নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে তিনি জাতিসংঘে ভাষণ দেন। ‘১২ জুলাই’কে মালালা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। পরে বিশ্বের নানা প্রান্তে শিক্ষা বিস্তারে গঠন করা হয় মালালা ফাউন্ডেশন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে মালালা পান নোবেল শান্তি পুরস্কার।
রোববার সকালে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদ দখলে নেয় তালেবান। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই তালেবান শহরটির দখল নিতে সক্ষম হয়। জালালাবাদ দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২৮টির রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে। পরে বিকেল ৪টার দিকে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আশরাফ গনি। এরপর তালেবান রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে খবর আসে।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: আগষ্ট ১৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,