Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কেন লোকসানে পোশাকের ক্রয়াদেশ নে‌ওয়া ! (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ।

কয়েক দিন আগে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সোয়া তিন লাখ টি-শার্ট তৈরির জন্য আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে দর পাঠাতে বলল। আমরা তাদের কাছে গড়ে ২ ডলার ৩০ সেন্ট দাম চাইলাম। তারা জানাল, ১ ডলার ৭০ সেন্টের বেশি দাম দেবে না। কয়েক দফা ই-মেইল চালাচালির পর আমরা সেই ক্রেতা প্রতিনিধিকে জানালাম, এ দামে কাজ করা সম্ভব নয়।

ক্রেতা প্রতিনিধির কাছে আমরা বিনীতভাবে জানতে চাইলাম, ‘আপনি যে দাম অফার করেছেন, সেটি দিয়ে কীভাবে টি-শার্টটি করা যায়, সেই অঙ্ক আমাদের বুঝিয়ে দিন।’ ক্রেতা প্রতিনিধি সরলভাবে আমাদের জানালেন, হিসাবটি তিনি মেলাতে পারছেন না। তবে বললেন, কিছু কারখানা ওই দামেই (১ ডলার ৭০ সেন্ট) কাজটি করতে রাজি আছে।

কয়েক দিন আগে পোশাকশিল্পের এক পরিচিত মালিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘আপনাদের মতো বড় কারখানার সঙ্গে ছোট বা মাঝারি আকারের কারখানা দরদামের প্রতিযোগিতায় কেন পারছে না?’ তিনি তাঁদের কারখানার হিসাব কষার একটা ধারণা আমাকে দিলেন। বললেন, বড় কারখানাগুলোর নিজস্ব ডায়িং মিল (কাপড়ে রং করার ব্যবস্থা) রয়েছে। তারা বড় ক্রয়াদেশগুলোর ক্ষেত্রে কাপড় ডায়িং করার বাজারমূল্যে যে মুনাফা করে, সেটাই তাদের প্রকৃত মুনাফা। আর পোশাক সেলাইয়ের খরচ উঠলেই তারা ক্রয়াদেশ নিয়ে নেয়। পোশাকশিল্পের সেই মালিক আরও বললেন, ‘আমরা সরকার থেকে যে নগদ সহায়তা পাই, তা দিয়ে দিন শেষে মোটামুটি ভালো অঙ্কের মুনাফা থাকে।’

বিষয়টি সহজ করে বলা যাক। বড় একটি পোশাক কারখানা এক হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে যদি ৫ শতাংশ মুনাফা করে, তাহলে টাকার অঙ্কে সেটি দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানা, যাদের ডায়িং মিল নেই, তারা শুধু পোশাক সেলাইয়ের অর্থ পায়। তবে অন্য কোনো মূল্য সংযোজন বিভাগ, যেমন প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি, ওয়াশিং ইত্যাদি না থাকলে তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তারা বড় কারখানাগুলোর বিপরীতে ক্রেতার সঙ্গে একটি পণ্যের প্রকৃত দামের অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। হিসাবটা হচ্ছে ১ কেজি কাপড় রং করতে ১০০ টাকা খরচ হলে সেখানে ছোট বা মাঝারি কারখানাকে পুরোটাই খরচ করতে হচ্ছে। তবে বড় কারখানা সেখানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাঁচিয়ে ফেলতে পারছে।

অবশ্য বড় কারখানার এ হিসাবের বেশ কিছু নেতিবাচক দিক আছে। প্রথমত, সরকারের দেওয়া বিভিন্ন প্রকার নীতিসহায়তা হিসেবে টাকা না পেলে বড় কারখানা লাভের মুখ দেখত না। দ্বিতীয়ত, দেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি জ্বালানি ব্যবহার করে একটি উৎপাদনমুখী শিল্প বাজারমূল্যের চেয়ে ভর্তুকি মূল্যে পণ্যের দাম প্রস্তাব করে। তৃতীয়ত, বড় কারখানাগুলো ঋণের বোঝা বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানোর নামে একের পর এক নতুন কারখানা খুলে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের নীতিসহায়তা বাবদ অর্থ, ব্যাংকঋণের অর্থ ও জ্বালানিতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির টাকা দিন শেষে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছি। এটি কোনোভাবেই আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নয়। হিসাবের আরেকটি বড় ভুল হলো রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) বা বিনিয়োগ ফেরতের বিষয়টি বিবেচনায় না নেওয়া। আপনি হয়তো ডায়িং মিল দিয়ে কাপড়ে ৩০ শতাংশ লাভ করছেন, কিন্তু আপনার বিনিয়োগ করা শতকোটি টাকা কবে উঠে আসবে, তা-ও হিসাব করা উচিত।

আরেকটি হিসাব দেখা যাক। প্রতিটি কারখানার প্রতি মিনিটের পরিচালন ব্যয় এক নয়। কারও কম, কারও বেশি। ধরুন, কারখানাভেদে প্রতি মিনিটে পরিচালন খরচ চার থেকে ছয় টাকা। এটির বড় কারণ, শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুপাত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বড় একটি কারখানা দৈনিক যদি পাঁচ লাখ পোশাক উৎপাদন করে, সেখানে শ্রমিকের ঘনত্ব বেশি থাকে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকে। অন্যদিকে যে কারখানা প্রতিদিন ১০ হাজার পোশাক উৎপাদন করে, সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী আনুপাতিক হারে বেশি থাকে। অর্থাৎ বেতন বাবদ বড় কারখানার তুলনায় ছোট ও মাঝারি কারখানার খরচ বেশি হয়। আবার জায়গার কারণেও খরচের ধরন ভিন্ন হয়। যেমন কারও কারখানা ভাড়া করা, কারও নিজস্ব ভবন ইত্যাদি। প্রতিটি কারখানার নিজস্ব স্বকীয়তায় তার প্রতিযোগিতার সূচকগুলো থেকে তার পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়।

ন্যায্যমূল্যের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্ক বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। নিজস্ব দক্ষতার ভিত্তিতে কারখানাগুলো পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু সমস্যা হলো যারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে, তারা বিনিয়োগের বিষয়টি মূল্যায়ন না করে শুধু খরচকে বিবেচনায় নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো পণ্যের উৎপাদন খরচ যদি ৩০ টাকা হয়, আর বড় কারখানা কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে যদি সেই ব্যয় ২০ টাকায় নামিয়ে আনতে পারে, তাহলে তারা হিসাব কষতে গিয়ে ২০ টাকাই ধরছে।

বিনিয়োগের মাধ্যমে যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াল, তা দিন শেষে ক্রেতার হাতেই তুলে দিল কারখানাটি। অথচ পণ্যের খরচ ও বিনিয়োগ হিসাব করে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। তবে আমরা তা শুধু ব্যক্তিস্বার্থে করতে পারছি না। আমার কারখানায় সারা বছর ভরপুর কাজ থাকবে, এটাই মূল কৌশল। এ জন্য শত শত ছোট-মাঝারি কারখানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। অন্যদিকে যেসব কারখানা উৎপাদনশীলতায় পিছিয়ে, তারা খরচ কমাতে শ্রমিকদের চাপে রাখছে। নতুবা বর্জ্য পরিশোধনাগার পরিচালন খরচ কমাতে রাতের আঁধারে নদী-নালায় কারখানার বর্জ্য ফেলে দূষণ করছে।

মোদ্দা কথা হচ্ছে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করে যদি কারখানা চলে, তাহলে কারখানার কর্মী, পরিবেশ-প্রতিবেশসহ সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার মানে কারখানার পরিচালনা টেকসই হয় না। প্রকৃতপক্ষে মুনাফা করাও সম্ভব হয় না। ফলে কারখানা রুগ্ণ হতে হতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

সমাধান কোথায়

প্রথম কথা হলো আমাদের নতুন করে পণ্যমূল্য নির্ধারণের হিসাব কষা শিখতে হবে। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে শিল্পমান অনুযায়ী একটা উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করতে হবে। সেই খরচের ওপর ভিত্তি করে ক্রেতাদের পণ্যমূল্যের প্রস্তাব দিতে হবে। যেসব ক্রয়াদেশে সেই মানের নিচে মূল্য প্রস্তাব করা হবে, সেসব ক্রয়াদেশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পোশাকশিল্পের মালিকেরা একজোট হয়ে যদি ন্যায্যমূল্যের বাইরে কোনো ক্রয়াদেশ গ্রহণ না করেন, তাহলেই ক্রেতারা জোর করে অন্যায্যমূল্য চাপাতে পারবে না। আমাদের শুধু ‘না’ বলা শিখতে হবে। তাহলে দেশ বাঁচবে, শিল্প বাঁচবে।

অন্যদিকে শিল্পোদ্যোক্তাদের খরচ কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যে বৈচিত্র্য ও বহুমুখীকরণে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারের সহায়তার দিকে তাকিয়ে না থেকে শিল্পকে যুগের পর যুগ টিকিয়ে রাখার কৌশল শিখতে নজর দেওয়া দরকার। সে জন্য পরিকল্পনা করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি নতুন ক্রেতা খুঁজতে মনোযোগী হতে হবে সবাইকে। দিন শেষে ক্রেতার সঙ্গে দর-কষাকষিতে আরও বেশি পারদর্শী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

অনেকে বলতে পারেন, এসব করে কি আমরা অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব? আমার উত্তর, আমরা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ব্যবসায়ীরা লোকসানে ক্রয়াদেশ নেন না।

*** লেখক: শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ২৬, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ