Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

খুনি চক্রকে রক্ষার আড়ালে ছিলেন যারা (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: মতিউর রহমান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এ দীর্ঘ বছরগুলোতে জিয়াউর রহমানের সামরিক ও বিএনপি সরকার, এরশাদের সামরিক ও জাতীয় পার্টি সরকার এবং খালেদা জিয়ার দুই আমলের বিএনপি সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসের এ কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে দেয়নি; বরং এ সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশ-বিদেশে বহুভাবে সহযোগিতা করেছে।

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় হত্যাকারীদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে চাকরি এবং তাঁদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছিলেন। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড এবং দেশের ভেতরে অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরশাদ সরকারের আমলেও দূতাবাসগুলোতে খুনিদের পদোন্নতি ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থেকেছে। শুধু তা-ই নয়, এরশাদ সরকারের সহায়তায় তাঁরা দেশে ফিরে এসে একাধিক রাজনৈতিক দল (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি-প্রগশ ও ফ্রিডম পার্টি) গঠনের সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের সংসদে বসারও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। নব্বইয়ের পর খালেদা জিয়ার দুই সরকারও তাঁদের সহযোগিতা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে দেয়নি।

দূতাবাসে চাকরি প্রদান

আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ১৯৭৬ সালের ৮ জুন পনেরোই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পঁচাত্তরের নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে তাঁরা কর্নেল গাদ্দাফির লিবিয়ায় বসবাস করতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁদের কূটনীতিকের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা হলেন: ১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব, ২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, ৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, ৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, ৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, ৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, ৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, ৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, ৯. ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, ১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, ১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব, ১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ও পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রসচিব সমশের মবিন চৌধুরী। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতার জন্য ঢাকা থেকে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (পরে মেজর জেনারেল) নুরুল ইসলাম (শিশু) ঢাকা থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন। সে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব জানা গিয়েছিল।

তবে ১২ জন সেনা কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হলেও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই হোতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও চাকরি গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। তাঁরা লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফির সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি জিয়ার পর এরশাদ সরকারের আমলেও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা প্রত্যেকেই কূটনীতিকের দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন দেশে ছিলেন, পদোন্নতিও পেয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, মেজর ডালিমকে বেইজিং থেকে হংকংয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে পোল্যান্ডের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিয়োগ দেওয়া হলে সে সময়ে সমাজতান্ত্রিক পোল্যান্ড সরকার তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। পরে তাঁকে কেনিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মেজর নূর তখন ব্রাজিলে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তিনি আলজেরিয়ায় কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মেজর রাশেদ চৌধুরী টোকিওতে কাউন্সিলর পদে নিযুক্ত ছিলেন। মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন সৌদি আরবের মিশন উপপ্রধান হিসেবে (বেনজির ভুট্টোর সরকারও করাচিতে একই পদে তাঁর নিয়োগ গ্রহণ করেনি), মেজর শরিফুল হোসেন ওমানে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য, তাঁরা সবাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিনিস্টার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। পরে কোনো এক সময়ে লে. নাজমুল হোসেন ও ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেম বিদেশে দূতাবাসের চাকরি ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁরা কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশেই আছেন বলে জানা গিয়েছিল। লে. কর্নেল আবদুল মাজেদ বিদেশ থেকে ঢাকায় এসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। এক পর্যায়ে িতনি দেশ েথকে পািলয়ে যান। দীর্ঘ িদন ধরে তাঁর েকােনা েখাঁজ ছিল না। হঠাৎ গত বছরের ৬ এপ্রিল পুিলশ তাঁকে ঢাকার গাবতলী এলাকা েথকে গ্রেপ্তােরর কথা জানায়। ১১ এপ্রিল তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
হত্যাকারীদের অভ্যুত্থানের চেষ্টা

পঁচাত্তরের আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক-রশিদ একাধিকবার সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অসন্তোষ তৈরি করে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন।

তবে সত্তরের দশকের শেষে রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাসনামলে আমরা এ তথ৵ জেনেছিলাম যে বিদেশে অবস্থানরত খুনিগোষ্ঠীর শরিফুল হক (ডালিম), আজিজ পাশা, বজলুল হুদা, নূর চৌধুরীসহ এই অভিযুক্তরা ১৯৮০ সালের ১৭ জুন ঢাকা সেনানিবাসে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। সেনাবাহিনী অগ্রিম খবর পেয়ে তা ব্যর্থ করে দেয়। ঢাকায় সেনাবাহিনীতে কর্মরত কর্নেল দিদারুল আলমসহ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে সামরিক আইনে বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঢাকার রাজনৈতিক সূত্রগুলোর মাধ্যমে তখন আমরা এসব খবর জেনেছিলাম।

সেনাবাহিনীর অনুসন্ধানে শরিফুল হক (ডালিম), আজিজ পাশা, বজলুল হুদা ও নূর চৌধুরীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছিল। তাঁদের সঙ্গে ফারুক ও রশিদের সরাসরি যুক্ত থাকার তথ্যও পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা উগ্র বামপন্থীদের সঙ্গে মিলে এ অভ্যুত্থান করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের মে মাসে ইসলামাবাদ, পরে তেহরান ও আঙ্কারায় বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করে খুনিগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেছিল। এ সময় তাঁরা একাধিকবার ঢাকায় বৈঠক করেন। সর্বশেষ ১৯৮০ সালের মে মাসে ঢাকায়ও চূড়ান্ত সভা হয়েছিল; তাতে ডালিম, আজিজ পাশা ও বজলুল হুদা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা জেল থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক রহমান। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের কোনো এক সময়ে ফারুক গোপনে ঢাকায় এসে বনানীতে অবস্থানকালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে দেশে ‘ইসলামি সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা। এসব তথ্য আরও বিস্তারিত জানা যায় ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় গ্রন্থ থেকে। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনকে (সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কলাম লেখক) বিদ্রোহ-পরবর্তী সেনাসদস্যদের বিচারের জন্য সেনাবাহিনী থেকে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেলে ডালিম, হুদা ও নূর বিদেশে নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। আজিজ পাশা তখন ঢাকায় থাকায় গ্রেপ্তার হন। তিনি রাজসাক্ষী হতে রাজি হন এবং পরে তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে সরকার কূটনীতিকের দায়িত্ব দিয়ে রোমে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ঢাকায় পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। ডালিম, হুদা ও নূরকেও বিভিন্ন দেশে আবার কূটনীতিকের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয় এবং তাঁরা একাধিক পদোন্নতি পান। রাষ্ট্রপতি জিয়ার পর স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলেও তাঁদের চাকরি ও সব সুবিধা অব্যাহত থাকে।

শুধু অভ্যুত্থানচেষ্টা নয়, খুনি চক্রের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও ছিল যে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্ব পালনকালে তাঁরা বহু অনিয়ম, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শরিফুল হক (ডালিম), আজিজ পাশা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী ও মেজর খায়রুজ্জামান—এই ছয় অভিযুক্তকে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ

সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে খুনি রশিদ, ফারুক, শাহরিয়ার ও বজলুল হুদাকে দেশে ফিরে আসতে দেওয়া হয় এবং তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী গোষ্ঠীর শাহরিয়ার রশিদ ও বজলুল হুদার ১৯৮০ সালের ১৭ জুন অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাকায় আসতে দেওয়া হয়। তাঁরা ঢাকায় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগশ) নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তখনই এ কথা জানা গিয়েছিল যে এরশাদ সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে বজলুল হুদা ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেন।

পরে আমরা দেখি, ১৯৮৫ সালে কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদ ‘১৫ আগস্ট বিপ্লবের আদর্শ বাস্তবায়ন’ সংগঠনের নামে ঢাকায় এসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন । ১৯৮৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কর্নেল ফারুক প্রার্থী হন। ১৯৮৭ সালের ৩ আগস্ট শেরাটন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে কর্নেল ফারুক রহমানকে সভাপতি করে ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন কর্নেল রশিদ। ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে বজলুল হুদাকে ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-২ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়। অবশ্য এর আগে ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর কর্নেল রশিদ ও কর্নেল ফারুক তাঁদের রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে মুক্তির পথ নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন।

এটা তখনই বোঝা গিয়েছিল, স্বৈরাচারী এরশাদ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্রিডম পার্টিকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ফ্রিডম পার্টি গঠনের পরপরই ৭ নভেম্বর কর্নেল রশিদের নির্দেশে ঢাকায় প্রেসক্লাব চত্বরে একটি সভাকে কেন্দ্র করে ফ্রিডম পার্টির ক্যাডাররা পাজেরো থেকে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করলে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে একইভাবে বজলুল হুদা ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীর গুলিতে একজন ব্যবসায়ী মারা যান। সে সময়ের সংবাদপত্রের মাধ্যমে এসব খবর জানা গিয়েছিল।

এরপর আমরা দেখি, খালেদা জিয়ার শাসনামলেও খুনিচক্রের প্রধান রশিদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়। বিরোধী দলের আসনে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সে সময় ফারুক-রশিদ ঢাকায় নানা ধরনের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন। এবং একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। অন্যদের মধ্যে ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ খালেদা জিয়ার শাসনামলে (১৯৯১-৯৬) কেনিয়া, হংকং ও ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত বা কনসাল জেনারেল পদে নিযুক্ত ছিলেন।

বিভিন্ন সূত্রে তখন আরও জানা গিয়েছিল, ফারুক-রশিদ লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় ফ্রিডম পার্টির কর্মীদের লিবিয়া সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আরও জানা যায়, লিবিয়ায় কয়েক শ যুবককে ৩ থেকে ৬, এমনকি ৯ মাস পর্যন্ত সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লিবিয়ায় পিস্তল থেকে শুরু করে মেশিনগানসহ আধুনিক অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্যাডাররাই ছিল ফ্রিডম পার্টির প্রধান ভিত্তি। এসব তথ্য আমরা পেয়েছিলাম লিবিয়ায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত একাধিক ক্যাডারের সূত্রে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সরকারের আমলে কোনো তদন্ত হয়েছিল বলে জানা যায় না।

খুনি চক্রের এসব কর্মকাণ্ড থেকে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়া, স্বৈরাচারী এরশাদ ও বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের সময় দেশে-বিদেশে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসদ সদস্য হওয়া এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব কার্যক্রমের প্রকাশ্য সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র।

পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রায় দুই দশক ধরে নানা ঘটনায় আরও দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশে-বিদেশে যেখানেই থেকেছেন, সেখানে বসেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে, কখনোবা সামরিক বাহিনী বা সরকারের অভ্যন্তরে শক্তিগুলোর সহায়তা নিয়ে এ গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে অব্যাহতভাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এই গোষ্ঠীর এসব চক্রান্ত বন্ধ হয় ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী গোষ্ঠী বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল বলে জানা যায়। সে সময়ে ফারুক, রশিদ, ডালিম, শাহরিয়ার প্রমুখ ঢাকায় সেনাবাহিনীর ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। তাঁদের চক্রান্তের সংবাদ পেয়েই সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হয়েছিল।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জাতীয় পার্টির সহায়তায় সরকার গঠন করেছিল। নতুন সরকার গঠনের পরপরই ঢাকায় অবস্থানরত কর্নেল ফারুক ও শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে মেজর ডালিম ও অন্যরা গ্রেপ্তারের আগেই পালিয়ে বিদেশে চলে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার

১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সপ্তম সংসদে হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে রাখা কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) বিল বাতিল করার প্রস্তাব পাস করা হয়। তারপরই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার হত্যার বিচারের পথ সুগম হয়। তারপর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর সপরিবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আবেদন করেন মহিতুল ইসলাম। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। তারপর আবার সুপ্রিম কোর্টে এই বিচারের রায় কার্যকর করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আটকে থাকে। কারণ, ২০০১ সালের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। এবং বিএনপি সরকার আবারও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার পথ রুদ্ধ করে রাখে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আবার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর আবার ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পথ খুলে যায়।

এভাবে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়া, স্বৈরাচারী এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে তিন দশকের অধিক সময় ধরেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, খুনি চক্রকে তারা রক্ষা করেছে, সহযোগিতা করেছে।

* অনুসন্ধানমূলক রচনাটি পূর্বে মুদ্রিত একটি লেখায় নতুন তথ্য সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জন করে তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৫,২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ